থ্রেশহোল্ড

0 1
Avatar for Nipa1234
3 years ago

আজকের গল্পটি লিখেছি বেশ কয়েক মাস আগে। ব্যস্ত দিনে যারা গল্পটি পড়তে পারেননি, তাদের জন্য আজকে গল্পটি রিপোস্ট করা হলো। আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন na

(১)

পাপ্পুর মনটা আজ খুব খারাপ। প্রতিদিনই বিকেলবেলা তার মনটা খারাপ হয়ে যায়। তবে আজ একটু বেশি খারাপ। সে ল্যাবরেটরি স্কুলে ক্লাস থ্রিতে পড়ে। তার রোল নাম্বার ৭। যখনকার কথা বলছি তখন স্কুল টি খুবই ঐতিহ্যবাহী একটি স্কুল ছিল। বোর্ডে প্রায় ৮/১০ জন ছেলে স্ট্যান্ড করত। যারা স্ট্যান্ড ব্যাপারটা জানেন না, তাদের অবগতির জন্য বলি, এক সময় বোর্ডে র প্রথম ২০জন কৃতকার্য ছাত্র ছাত্রীর তালিকা প্রকাশ করা হতো। সেই হিসাবে রোল নাম্বার ৭ খুব একটা খারাপ নয়। কিন্তু তার মা কঠিন এক মহিলা। তার ছেলের আগে আরও ছয়টি ছেলে আছে, ব্যাপারটা তিনি ঠিক মেনে নিতে পারেননি। তাই তিনি তার ছেলের জন্য একটি রুটিন করে দিয়েছেন। সেই রুটিন মোতাবেক, এখন তার টিভি দেখার সময়। কিন্তু যে সময়ের কথা বলছি তখন দেশে একটি মাত্র টেলিভিশন চ্যানেল ছিল।আসর আর মাগরিবের মধ্যবর্তী এই সময়টুকুতে তারা হিজল-তমাল নামে একটি অনুষ্ঠান প্রচার করতো। ক্লাস থ্রি এর একটি বাচ্চা র জন্য যে অনুষ্ঠান কখনোই আনন্দদায়ক হতে পারে না। সুতরাং সে তার রুটিনের বাইরে গিয়ে একা একা খেলা শুরু করলো।

(২)

এমনিতেই শিশুরা অনেক কল্পনাপ্রবণ হয়। তারা একটা অন্য জগতে বাস করে। পাপ্পুও তার ব্যতিক্রম নয়। সে কল্পনা করে নিল সে একজন ডাক্তার। মায়ের খালি হয়ে যাওয়া ডিজিপ্লেক্স এর বোতলে পানি ভরে সে ডাক্তার ডাক্তার খেলা শুরু করলো। তার একটাই রোগী। তাদের কাজের মেয়ে জোসনা। মেয়েটি কোন এক বিচিত্র কারণে পাপ্পুকে অসম্ভব আদর করে। হয়তো ওকে দেখলে তার গ্রামে ফেলে আসা ছোট্ট ছেলেটির কথা মনে পড়ে যায়।

(৩)

ডিজিপ্লেক্স ওষুধটি অত্যন্ত ধন্বন্তরি। পাপ্পুর মায়ের হজমের সমস্যা রয়েছে। তাই তিনি ওষুধটি সবসময় হাতের কাছে রাখেন। আজ দুপুরের খাবার পর থেকেই তার বদহজমের মত হচ্ছে। এক ধরনের চুনা ঢেকুর উঠে আসছে যার সাথে দুপুরের খাবারের স্বাদ তার মুখটাকে বিস্বাদে ভরে দিচ্ছে। তিনি জোসনাকে ডাকলেন ওষুধটি তাকে দিয়ে যাওয়ার জন্য।

(৪)

ওষুধটি তার বিছানার পাশের টেবিল টিতে থাকবার কথা। স্বভাবতই জোসনা প্রথমে সেখানেই খোঁজ করলো। সেখানে না পেয়ে সে পুরো বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখল। নেইতো নেই। কিন্তু কোথায় যাবে? তার মনটা এক অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠল। সে একটু আগে পাপ্পু কে দেখেছে ডাইনিং রুমের বেসিন থেকে পানি ভরে একটা ডিজিপ্লেক্স এর বোতল নিয়ে খেলতে। সে ভেবেছিল হয়তো খালাম্মার খালি হয়ে যাওয়া ঔষধের বোতল দিয়ে খেলছে। কিন্তু এখন ভয় হচ্ছে, এটা বলা মাত্র খালাম্মা পাপ্পুকে মারতে শুরু করবেন। ভদ্রমহিলা অসম্ভব সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত। তার ধারণা পৃথিবীর সবাই তাকে বোকা বানানোর জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে যখন ধীরে ধীরে খালাম্মকে গিয়ে বলল যে বোতলটি পাওয়া যাচ্ছে না তখন পাড়ার মসজিদগুলো থেকে মাত্র আসরের আযান ভেসে আসছে।

(৫)

পৃথিবী ধ্বংস করার জন্য সৃষ্টিকর্তা আসর ওয়াক্ত বেছে নেবেন বলে যে ধারণা প্রচলিত রয়েছে , সেটা সত্যি কিনা আমি ঠিক বলতে পারব না, কারণ আমাদেরকে না দেখেই এই ব্যাপারটার উপর বিশ্বাস আনতে বলা হয়েছে, এটাই ঈমান। সুতরাং ঈমানদার মানুষেরা যথা সময়ে এর সত্যতা জানতে পারবেন ইসরাফিলের বাঁশি শুনে। কিন্তু পাপ্পুর ছোট্ট জীবনে কেয়ামত যে আসর ওয়াক্তে নেমে এসেছিল সে ব্যাপারে আমার কোনোই সন্দেহ নাই। তার মা প্রথমে খুব নরম স্বরে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, "তুই যে বারান্দায় ডিজিপ্লেক্স এর বোতলে পানি ভরে নিয়ে বসে খেলছিলি, এটা তুই কোথায় পেয়েছিস?"

"তুমি বোতল শেষ হয়ে গেলে নোংরার ঝুড়ির মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলে। আমি সেখান থেকে উঠিয়ে রেখেছি খেলবো বলে।"

"সত্যি করে বল,আমি কিচ্ছু বলবো না!"

"সত্যি করে বলছি মা।"

"তুই তো জানিস আমি মিথ্যা কতটা ঘৃণা করি। তোকে আমি শেষ সুযোগ দিচ্ছি। ভেবে বল, আমার ওষুধ বেসিনে ফেলে সেই বোতলে পানি ভরে খেলছিস না তো?"

"ভেবেই বলছি মা।"

"এতোটুকু বয়স, এর মধ্যে মিথ্যা বলতে শিখেছিস। বড় হলে কি করবি, মানুষ খুন করবি?"

এই কথাটা বলে তিনি পাপ্পুর জাম্প রোপটা টেনে নিলেন। সাধারণত এই জিনিসটা নাইলনের তৈরি হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন টেকসই যেন হয় তাই পাপ্পু তার ঈদীর টাকা জমিয়ে একটি রাবারের জাম্প রোপ কিনেছিল। আজকে যদিও তার সেই সিদ্ধান্তের জন্য সে অনুতপ্ত হলো। রাবারের সেই জাম্প রোপটি চাবুকের মতো সপাং সপাং করে তার হাফপ্যান্ট পরা অর্ধনগ্ন পায়ে দাগ বসিয়ে দিতে লাগল।বাবার কথামতো কমদামি নাইলনের রশি কিনলে আজকে এত ব্যথা পেতে হতো না।

(৬)

সে খুবই চেষ্টা করছিল হাত নামিয়ে উপর থেকে নেমে আসা সেই জাম্প রোপটিকে আটকাতে। কিন্তু তখন তা সপাং সপাং করে তার হাতে কালশিটা দাগ কেটে দিচ্ছিল। ঠিক সেই মুহুর্তে ব্যথার চাইতেও অন্য একটা চিন্তা তাকে আচ্ছন্ন করে ফেললো। কাল স্কুলে বন্ধুদেরকে এই দাগগুলোর কথা কিভাবে ব্যাখ্যা করবে। পায়ের দাগ গুলো ডেস্কের নীচে থাকবে, হয়তো তারা লক্ষ্য করবে না, কিন্তু হাতের দাগ তো লুকানো যাবে না।

(৭)

আপনাদের আগেই বলেছি শিশুরা খুব কল্পনাপ্রবণ হয়। পাপ্পুর খুব ইচ্ছা করছিলো, তার যদি একটা টাইম মেশিন থাকতো,তবে সে সেই টাইম মেশিনে চড়ে সপ্তাহখানেক আগের জন্মদিনের দিনটিতে ফেরত চলে যেত। তার জন্মদিন গিয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। সেদিন সকালে তার মা এক অদ্ভুত ঘোষণা দিলেন। বললেন," তোমরা সবাই শোনো, আজকে পাপ্পুর জন্মদিন, তোমরা কেউ কিন্তু আজকে পাপ্পু কে মারবেনা।"

যদিও কথাটা ঘটা করে বলবার তার প্রয়োজন ছিল না। এ বাসায় তিনিই একমাত্র পাপ্পুর গায়ে হাত তোলেন। বাকি সবাই আদরে আদরে ভরিয়ে রেখেছিল পাপ্পুর শৈশব।

(৮)

শিশুরা খুব কল্পনা প্রবণ হয় তা আপনাদের আগেই বলেছি। শিশুদের আরেকটা কি সহজাত প্রবৃত্তি থাকে জানেন? তারা কখনো মিথ্যা বলতে পারে না। তার মা তার মুখে সত্যি শুনতে চাচ্ছিলেন। পাপ্পু মিথ্যা করে বলে দিলেই পারত, সে মায়ের ওষুধ ফেলে দিয়েছে। তাহলেই সব ঝামেলা মিটে যায়। কিন্তু ছোটবেলায় আমরা খুবই শুদ্ধ থাকি। চাইলেই হুটহাট মিথ্যা বলতে পারিনা। আর তাই কখনো কখনো অনেক চড়া দাম দিতে হয় আমাদের এই সত্যবাদী হবার কারণে। যেমন দিতে হয়েছিল পাপ্পুকে পুরো দুটো দিন।

(৯)

পানির একটা থ্রেশহোল্ড পয়েন্ট আছে। যে হাঁড়িতে আপনি পানি ফুটাবেন তাকে ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পৌঁছাতে হবে । তেমনি প্রতিটি মানুষের একটি থ্রেশহোল্ড পয়েন্ট থাকে, যেখানে পৌঁছালে মানুষটি ভেঙ্গে যায়। দুদিন ক্রমাগত শারীরিক অত্যাচারের ফলে সন্ধ্যার মুখে মুখে পাপ্পু সেই বিশেষ জায়গাটিতে পৌঁছাল। বিগত ৪৮ ঘন্টায় যখনই তার মায়ের মনে পড়ছিল ব্যাপারটা তখনই তিনি পাপ্পুকে শাস্তি দিচ্ছিলেন। কিন্তু ছেলেকে ক্রমাগত শাস্তি দেবার কারণে ক্লান্তি এসে ভর করছিল তার শরীরে। তখন পাপ্পু কিঞ্চিৎ বিরতি পাচ্ছিল। ক্রমাগত দুইদিন অত্যাচার সহ্য করে যখন চাবুকের বাড়ি সে আর নিতে পারছিল না তখন সে তার মাকে একটি মিথ্যা কথা বলে।"মা আমি সত্যির বদলে মিথ্যা বলছি, আমি তোমার ডিজিপ্লেক্স বোতল বেসিনে ঢেলে খালি করেছিলাম খেলবো বলে।"

(১০)

কথাটা বলা মাত্র পাপ্পুর ছোট্ট জীবনে শান্তি নেমে আসলো আর তার মায়ের ঠোঁটে র কোণে আত্মতুষ্টির হাসি।একটি ছোট্ট ছেলেকে ভাঙতে পেরে তিনি অত্যন্ত তৃপ্তি বোধ করলেন। আপনারা কি কখনো আলেক্স হালির রুটস উপন্যাসটির চিত্ররূপ দেখেছেন ? আফ্রিকা থেকে ধরে নিয়ে আসার পরে ক্রীতদাস বানানোর প্রক্রিয়া হিসেবে কুনটা কিনতে নামের মূল চরিত্র টির নতুন নামকরণ করা হয়েছিল টোবে। কিন্তু গোয়ার কুনটা কিনতে কিছুতেই তার নতুন নাম মেনে নিচ্ছিল না। একপর্যায়ে তাকে ঝুলিয়ে চাবুক দিয়ে পিটিয়ে তার থ্রেশহোল্ড পয়েন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। শেষমেষ সে যখন মনিবের দেয়া নতুন নামটি মেনে নেয় তখন ঝুলন্ত অবস্থা থেকে মুক্তি দেয়ার সময় মনিবের মুখে যে হাসি ফুটে উঠেছিল, সে হাসি আর তার মায়ের মুখে ফুটে উঠা হাসির মাঝে কোন পার্থক্য ছিল না।

(১১)

কোন বাবা-মাই সন্তানকে শাস্তি দিতে চান না। তবুও তাদের এই অপ্রিয় কাজটি করতে হয় । যখন করেন তখন নিশ্চয়ই তাদের খুব মন খারাপ করে। আর তাই পাপ্পুর মুখে স্বীকারোক্তি আদায় করা মাত্র তার মায়ের মন সন্তানের মায়ায় আর্দ্র হয়ে উঠল। তিনি তৎক্ষণাৎ পাপ্পুর জন্য সান্ধ্যকালীন দুধ বানাতে রান্নাঘরে গেলেন। সেখানে বেশ কিছু খালি দুধের কৌটা রয়েছে। তার কাজের মেয়েটি একেবারে অজপাড়া গ্রাম থেকে এসেছে। এটি তার প্রথম শহরে চাকরি। সে কোন কাজ গুছিয়ে করতে পারে না। তিনি বহুবার বলেছেন, নতুন দুধের কৌটাটি খালি হয়ে যাওয়া কৌটা গুলি থেকে দূরে রাখতে। এখন তাকে সবগুলো কৌটা ঝাঁকিয়ে দেখতে হবে কোনটায় দুধ আছে। এই পরীক্ষার মাঝখানে একটি অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল। তিনি যখন ডানোর খালি হয়ে যাওয়া কৌটা গুলো ঝাঁকিয়ে দেখছিলেন, কোনটা ভারী ঠৈকে, তখন একটি কৌটা থেকে ঠকঠক শব্দ আসতে শুরু করলো। সেই কৌটাটি খুলে তিনি তার হারিয়ে যাওয়া সেই নতুন ডিজিপ্লেক্স এর বোতলটি আবিষ্কার করলেন। কিন্তু বাবা-মায়েরা সন্তানের স্বীকারোক্তি যতটা পছন্দ করেন, নিজেরা কখনো সন্তানের কাছে স্বীকার করেন না যে তাদের কোনো ভুল হয়েছে বা ভুল হতে পারে। এটা কে তারা দুর্বলতা মনে করেন। পাপ্পুর মাও এর ব্যতিক্রম নন।সুতরাং তিনি পাপ্পুর কাছে হারিয়ে যাওয়া বোতলটি আবিষ্কারের পুরো ঘটনাটা চেপে গেলেন। গত দুদিন ধরে অন্যায় ভাবে শাস্তি পাওয়া সন্তানের থেকেও তার কাছে যে ব্যাপারটা বেশি গুরুত্ব পেল তা হচ্ছে বোতলটা দুধের খালি হয়ে যাওয়া কৌটায় ঢুকলো কিভাবে? তিনি অনেক ভেবে চিন্তে ও এই রহস্যের সমাধান বের করতে পারলেন না।

(১২)

এদিকে শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য মাকে মিথ্যে বলার অপরাধবোধ ছোট্ট পাপ্পুর মনোজগতে এক অদ্ভুত প্রভাব ফেলল। সারাটা জীবন এই ব্যাপারটা তাকে তাড়িয়ে বেড়ালো। তার মায়ের জীবদ্দশায় সে বহুবার ভেবেছিল সত্যি ঘটনাটা সে মাকে বলবে। কিন্তু অনেক অসম্পূর্ণ কাজের মতই এই কাজটিও সে তার মায়ের জীবদ্দশায় করে উঠতে পারে নি।তার মায়ের মৃত্যু সংবাদ যখন তার কাছে এসে পৌঁছল তখন সে দেশের পাট চুকিয়ে পাকাপাকিভাবে বাস করে আমেরিকায়। তাদের মাঝখানে রয়েছে বিশাল সমুদ্র।

(১৩)

সে যখন সেই বিশাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে মায়ের কাছে এসে পৌছালো ততোদিনে তার মায়ের স্থান হয়েছে মাটি থেকে বেশ অনেকটা নিচে। অন্ধকারাচ্ছন্ন সেই ছোট্ট ঘরটিতে চিরনিদ্রায় শুয়ে তিনি তখন চার দশক আগে ছেলেকে কি শাস্তি দিয়েছেন, তা নিয়ে ভাবছিলেন এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। তবুও নিজের মানসিক সান্তনার জন্য পাপ্পু যখন পুরান ঢাকায় তার মায়ের কবরের পাশে এসে দাঁড়ালো কাকতালীয়ভাবে তখনও আসরের আযান ভেসে আসছিল কবরস্থান সংলগ্ন মসজিদ থেকে। পাপ্পু যখন তার মায়ের কবরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার মাকে বলা বহু বছর আগে মিথ্যা ভাষণ এর ব্যাখ্যা দিচ্ছিল, আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। কারণ তিনি তো সত্যি ঘটনা আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু তবুও পাপ্পুর মানসিক শান্তির জন্য এই স্বীকারোক্তির প্রয়োজন ছিল। ইংরেজিতে এর নাম ক্লোজার।

রচনাকাল জুন ২০২০ ডালাস টেক্সাস ইউএসএ

1
$ 0.00
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments