Thirty first night

0 20
Avatar for Nipa1234
3 years ago

========

মাথা নীচু হতে হতে তনুর থুতনি প্রায় বুকের সাথে লেগে গিয়েছিল। ওর চোখ থেকে সমানে পানি গড়াচ্ছিল। এলোমেলো চুল, চোখের নীচের অনিদ্রাজনিত কালো দাগে ওকে খুব বিপর্যস্ত মনে হচ্ছিল। মেয়েটা যে খুব সুন্দরী সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আমি একবার গলা পরিষ্কার করে ব্যক্তিত্বের গলায় বললাম, "মিস তনু আমি মো. শরীফ হাসান। একজন জুনিয়র লইয়ার। আপনার পক্ষ হয়ে আমি মামলাটা লড়তে চাই। আশা করি প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আপনি আমাকে সাহায্য করবেন।"

তনু আমার কথা শুনতে পেল কীনা বুঝলাম না।ওর মধ্যে কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল না। মাথাও তুলল না।

ফের শান্ত গলায় বললাম, " ইচ্ছে হোক, অনিচ্ছায় হোক লাইফে যা কিছু ঘটে সবই লাইফের একটা পার্ট। জীবনে এমন অনেক অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে যা আমাদের মেনে নিতে কষ্ট হয়। হয়তো যে লোকটাকে আমি সবচে বেশি বিশ্বাস করি কিংবা যাকে আমি সবচেয়ে কাছের মনে করি তার দ্বারাই সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হই। সময়ই আমাদের চিনতে শিখায় কে আপন ও কে পর।"

একটু থেমে বললাম, " এত সহজে ভেঙ্গে পড়লে চলেনা মিস তনু। শেষ নিশ্বাস ফেলার আগ পর্যন্ত মানুষ বেচে থাকার লড়াই করে। শেক্সপিয়ার বলেছেন 'ভীরুরা মরার আগে বার বার মরে, আর সাহসীরা মরে একবার। যা হয়ে গেছে তা নিয়ে অনুশোচনা করে লাভ নেই। বরং সামনে কী করা যায় সেটাই ভাবা উচিত।"

এত কিছুর পরও ওর কোন সাড়া পাচ্ছিলাম না। ইতোমধ্যে আমার দু'জন মক্কেল জরুরী ফোন দিয়েছে। তাদের আমি চেম্বারে অপেক্ষা করতে বলেছি।

নিরাশ হয়ে আমার একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল। "আমার একটু তাড়া আছে। আমি তাহলে উঠি।" বিরুক্তি নিয়ে যখন উঠে দাঁড়ালাম তখন তনু বলল, " দাঁড়ান ।"

এই প্রথম মেয়েটা কথা বলল।

"থ্যাংকস।" বলে ফের চেয়ারটা টেনে বসলাম।

" কী জানতে চান?"তনু নির্লিপ্ত গলায় বলল।

"পুলিসের কাছে আপনি স্টেটমেন্ট দিয়েছেন আপনি ঠাণ্ডা মাথায় খুনটা করেছেন। আমার ধারনা মেয়েরা খুব কমই ঠান্ডা মাথায় এমন খুন করতে পারে। তারপর আবার কোন পুরুষকে।"

"হ্যা আমি ঠান্ডা মাথায়ই খুনটা করেছি।"তনু শান্ত গলায় বলল।

আমি আড়চোখে কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। বললাম, "আপনি এর জন্য অনুতপ্ত কীনা?"

"মোটেই না।" ক্রুদ্ধ গলায় ও বলল।

"দেখেন একজন অপরাধীর শাস্তি হয় অপরাধের তারতম্য, মাত্রা বা পরিস্থিতি বিচার করে। আপনি যদি আমাকে সবকিছু খুলে বলতেন তাহলে আইনি লড়াইটা আমার জন্য খুব সুবিধা হত।"

তনু হটাত মাথা তুলল। সামনের দেয়ালে একটা টিকটিকি একটা পোকা খাওয়ার জন্য ওৎ পেতে ছিল। তনু একদৃষ্টে সেদিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল। তারপর বলতে শুরু করল--

"ওর নাম রবিন। দীর্ঘ চার বছরের সম্পর্ক আমাদের। আমি ওকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসতাম। তিনদিন এক নাগাড়ে ওকে না দেখলে পৃথিবীটা অর্থহীন মনে হতো। সারাক্ষন ওকে নিয়ে সুন্দর একটা পরিবার গড়ার স্বপ্নে বিভোর থাকতাম ।

ঘটনাটা ঘটে থার্টি ফাস্ট নাইটে। সন্ধ্যা থেকেই ও আমাকে অনবরত ফোন দিতে থাকে--কাল নতুন বছর। আজ থার্টি ফাস্ট নাইটে বন্ধু জনির ফ্লাটে খুব মৌজ-মাস্তি করব। জনি,লিটনকে তো তুমি চিন। ওদের গার্লফ্রেন্ডও আসবে। তুমিও চলে আসো। তুমি ছাড়া আমি বড় একা বেবি।

হলে সিট পাইনি বলে এক বড় আপুর সাথে মহিলা কর্মজীবী হোস্টেলে শেয়ার করে থাকি। আমি বললাম এত রাতে আমার পক্ষে আসা সম্ভব না। ও বলল, ভয় নেই, আমি রাতে তোমাকে পৌঁছে দেব। প্লিজ লক্ষিটি চলে এসো। প্লিজ প্লিজ..

আমি ওর কোন অনুরোধ ফেলতে পারিনা। 'এক আত্মীয়ের বাসায় যাচ্ছি' বলে হোস্টেল থেকে রাত সাড়ে নয়টায় ওর বন্ধু জনির ফ্লাটে গেলাম। যদিও জনির ফ্লাটে আগেও একবার গিয়েছিলাম। চিনতে অসুবিধা হয়নি ।

এগারটার দিকে জনি আর লিটন কাচ্চি আর কি কি খাবার নিয়ে আসলো। কিন্তু বাসা থেকে অনুমতি না পাওয়ায় ওদের গার্লফ্রেন্ডরা নাকি আসতে পারেনি।

বারোটা এক মিনিটে আমরা সবাই হ্যাপ নিউ ইয়ারের উইশ করলাম। কাচ্চি খেলাম। ওরা ড্রিংকস টাইপের হাল্কা পানীয়ও এনেছিল। আমি এসব পানীয় পছন্দ করিনা। তারপরও ওরা বার বার বলছিল নতুন বছর সেলিব্রেট করতে জাস্ট একটু খাও। অনেক পীড়াপীড়িতে কয়েক চুমুক খেতে হল। খাওয়ার আধ ঘন্টা বাদে আমি সব ঝাপসা দেখতে লাগলাম। কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল। সমস্ত শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছিল। আমি অচেতন হয়ে গেলাম। ওরা তিনজন পুরো রাত আমার শরীরটা খুবলে খুবলে খেল। অচেতন, নিস্তেজ শরীরে বাধা দেয়ার মত বিন্দুমাত্র শক্তি ছিলনা আমার। বাকি রাত আমার আর হুশ ছিলনা। সকালে জ্ঞান ফিরতেই দেখি আমার সালোয়ার, বিছানা রক্তে লাল হয়ে আছে। বিছানা থেকে উঠার কোন শক্তিই পাচ্ছিলাম না আমি। আমার পাশে রবিন তখনো চিত হয়ে গভীর ভাবে ঘুমুচ্ছিল। ওর দুই বন্ধু রাতেই সরে পড়েছিল। অনেক কষ্টে নিজের শরীরটাকে বিছানা থেকে টেনে তুললাম। হটাত ডাইনিং টেবিলের উপর ফল কাটা চকচকে ছুড়িটার দিকে নজর গেল। মুহুর্তে সব হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। ছুড়িটা ওর কণ্ঠনালি বরাবর এক মুহুর্তে ঢুকিয়ে দিলাম। ফিনকির মত সমানে রক্ত বেরোচ্ছিল ওর গলা থেকে। কোরবানির গরুর মত গো গো শব্দে ওর শরীরটা নিস্তেজ হয়ে গেল। রক্ত দেখে উল্লাসে মেতে উঠলাম আমি। ঠিক কতক্ষন এভাবেই কেটে গেল আমি জানিনা। তারপর সেখান থেকে সরাসরি থানায় গেলাম। পুলিসের কাছে আত্মসমর্পণ করলাম। ফ্লাট থেকে রবিনের লাশ উদ্ধার করা হল। আমাকে পুলিস কাস্টডিতে নেয়া হলো ।

ওর কথা শুনতে শুনতে আমার মেরুদণ্ড হয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল। কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে রইলাম।

বললাম, "আপনি শুধু প্রতিশোধই নেননি রীতিমত পুলিসের কাছে আত্মসমর্পণ করে সাহসীকতার একটা কঠিন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কীভাবে এমন একটা ভয়ংকর প্রতিশোধ নিলেন কিছুতে আমার মাথায় আসছেনা।"

পাল্টা গলায় ও বলল, "যখন খুনটা করি তখন আমার হিতাহিত জ্ঞান ছিলনা। আর যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন পুলিসের কাছে আত্মসমর্পন করি।"

একটু থেমে বলল,"নিজের জীবন নিয়ে এখন আর পরোয়া করি না। ফাঁসি হলেও আমার কোন আপত্তি নাই। কিন্তু আমি শুধু সবাইকে মেসেজটা দিতে চাই থার্টি ফাস্ট কিংবা ভ্যালেন্টাইনস ডে'র নামে আর কোন মেয়ে যাতে আমার মত এমন ভয়ংকর নিষ্টুরতার শিকার না হয়। এমন গ্যাং রেপের শিকার না হয়। কাউকে বিশ্বাস করে এমন ভাবে যাতে আর ঠকতে না হয়।"

বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেলে যে মানুষ কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে ওকে দেখে ভাবছিলাম।

বললাম, "মিস তনু আপনার জন্য আমি কতটুকু কি করতে পারব জানিনা। কিন্তু কেসটাকে আমি সর্বোচ্চ চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলাম। "

ঠিক তখনি দু'জন মহিলা পুলিশ ঢুকলো। তনুকে দু'হাত ধরে প্রিজন ভ্যানে নিয়ে উঠাল। স্টার্ট নিয়ে প্রিজন ভ্যানটি চলতে শুরু করল।

আমি ওর চলে যাবার পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভালবাসার এপার ওপার নিয়ে ভাবছিলাম। ভালবাসা নাকি কখনো কখনো মানুষকে নতুন ভাবে বাচতে শেখায়। আবার কখনো জীবনও কেড়ে নেয়। তবু ভালবাসে মানুষ। ভালবাসা ছাড়া জীবন যে বড় অচল!

~মেহেরাব মাশুক

2
$ 0.00
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments