Story- last wish

0 3
Avatar for Nipa1234
3 years ago

-হয়ত এটা আপনার ভালো লাগতে পারে।( দোকানদার)

-আচ্ছা দেখি তো সত্যি কাপড়টা তো খুব সুন্দর!

আমার পাগলিটাকে খুব মানাবে।(আমি)

-সবুজ রং কী ওনার ওর প্রিয়।

-হ্যা এটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে এটাই দিয়ে দাও।

-এই নিন ভাইয়া।

-ধন্যবাদ।

-ভাইয়া কিছু মনে না করলে একটা কথা জিঙ্গাসা করব ?

-হ্যা করো ।

-ভাইয়া আপনি সে দুইঘন্টা যাবত আমার দোকানের

এক একটা কাপড় দেখে অনেক যাচাই বাচাই করে এই ওড়নাটা কিনেছেন।

এটা কি স্পেশাল কারো জন্য কিনেছেন ?

-হ্যা এই ওড়নাটা যার জন্য কিনেছি সে আমার জন্য অনেক অনেক স্পেশাল।

আমার হুবু বউ আমার পাগলিটার জন্য এই ওড়নাটা।

এটা মাথায় দিয়ে আজকে ওর সাথে আমার বিয়ে হবে।

-ও আজকে আপনার বিয়ে অনেক অনেক অভিনন্দন ভাইয়া শুভকামনা রইল।

তা ভাইয়া আপনার পাগলিটার নাম কি ভাইয়া ?

-আমার পাগলিটার নাম খেয়া। আচ্ছা এখন আমি আসি।

দেরি হলে আমার পাগলিটা আবার যাতে মনে না করে যে আমি পালিয়েছি।

-আচ্ছা ভাইয়া ।

অবশেষে অনেক অপক্ষার পর আমার আর পাগলিটার বিয়ে হচ্ছে।

আমার পাগলি খেয়া এই ছোট থেকে পরিচয় আমাদের ইনফেক্ট ও আমার ছোট চাচা মেয়ে।

আমার আপন চাচা নয় আমার বাবার চাচাতো ভাই ছিল।

দূরসম্পর্কের হয়ে ও উনি আমাকে খুব যত্নের সাথে লালন পালন করেছেন।

আমার মা-বাবা এক দুর্ঘটনায় মারা যায় আমার বয়স তখন সবে মাত্র নয় বছর ছিল।

কেউ যখন আমার পাশে ছিল না তখন উনি আমার মাথায় পরম যত্নে হাত রাখেন।

সেই হাত আজও আমার মাথায় আছে আমি নতুন মা বাবা পায়, পায় নতুন পরিবার।

সেই সাথে পায় আমার এক নতুন বন্ধু আমার পাগলি খেয়াল।

যখন চাচা আমাকে প্রথম উনিদের বাসায় নিয়ে যায় আর

আমাকে চাচীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে তখন পর্দার আড়ালে

কে যেনো আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলো এমনসময় চাচা একজনকে ডেকে বললো,,,

-খেয়া মামনি ওইখানে কেনো দাড়িয়ে আছ এইদিকে আস দেখ কে এসেছে !

দেখলাম পর্দার আড়াল থেকে ৫ বছরের এক পিচ্ছি পরি বের হয়ে আসে।

চাচা বলে ও আমার মেয়ে খেয়া। খেয়া ও তোমার নতুন বন্ধু।

আজ থেকে ও আমাদের সাথে থাকবে আর ও আমাকে দেখে ও একটা মুচকি হাসি দেয়।

এরপর ধীরেধীরে দিন যেতে থাকে চাচা -চাচী আমাকে অনেক আদর করত।

আমার সবদিক থেকে খেয়াল রাখত।

কিন্ত তবুও আমার মা-বাবার জন্য মাঝে মাঝে খুব মন কাঁদত।

একদিন মা বাবার কথা মনে পরাই খুব খারাপ লাগছিল।

মন মরা হয়ে বসেছিলাম হঠাৎ কোথা থেকে খেয়া এসে আমার পাশে বসল।

আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।

আমি ওকে এইভাবে তাকিয়ে আছে কেন জিঙ্গাসা করলে ও বললো,

-তোমার কি মন খারাপ?

-আমার মা বাবার কথা খুব মনে পরছে।

-মন খারাপ করিও না আমরা আছি তো, আমি তোমার সাথে খেলব আমার বন্ধু হবে।

ওর কথা শুনে আমি হেসে দিই আমার হাসি দেখে ওইয়ো হাসতে থাকে।

এরপর থেকে আমরা অনেক ভালো বন্ধু হয়ে যায়।

একসাথে খেলতাম একসাথে বসে অনেক গল্প করতাম স্কুলে যেতাম আইস্কিম খেতাম।

ধীরেধীরে সময় পার হতে থাকে এইভাবে কেটে যায় ১১ বছর।

এই ১১ বছরে দেখতে দেখতে আমি কবে আমার

পাগলিটার প্রেমে পড়ে যায় আমি নিজে ও টের পাই নি।

আর কেনও বা ওর প্রেমে পরব না।

আমার পাগলি টা যে এমন ওর প্রেমে পরতে আমি বাধ্য হয়েছি।

আমি বলতে ও পাগল ছিল সবসময় আমার পেছনে পড়ে থাকত।

আমি বাইরে থাকলে প্রতি ঘন্টায় আমাকে কল করত।

-ভাই কখন আসবে? ? ভাই কি খাচ্ছ? ? ভাই বেশি স্পীডে বাইক চালাবে না।

আমাকে পাগল বানিয়ে ফেলত।

আর বাসায় থাকলে কিছুক্ষন পর ভাইয়া কি করছ? ? ভাইয়া তুমি কি ফ্রি আছ?

চল না বাইরে থেকে হেটে আসি।

আর রাতে মেডাম এর সাথে ছাদে গিয়ে প্রতিদিন আমাকে আকাশের তারা গুনতে হত।

আমার সবকাজ ও নিজেই করত আমি ধীরেধীরে ওর মায়ায় জড়িয়ে পরি।

ও হ্যা আমি ওকে যতভালোবাসি এর থেকে বেশি ভালো ও আমাকে বাসে।

এইকথা আমি টিকই কিন্তু বুঝতে পারেছি।

কিন্তু এই কথা আমি খেয়া কে বুঝেও বুঝতে দেয়নি।

কারন আমি চাচার কাছে ওর হাত চাওয়ার আগে ওর যোগ্য হয়ে উঠতে চেয়েছিলাম।

তাই ওর মনের কথা জেনে ও না জানার ভান করে থাকতাম।

কারন আমি চাইনি পরে ও কোন কষ্ট পাক।

আর আমার কারনে খেয়া আর ওর পরিবার এর মধ্যে কোন প্রকার অশান্তির হোক।

তাই আগে নিজেকে এমনভাবে করে তুলতে চেয়েছি যাতে চাচা

নিজে খুশি মনে খেয়া কে আমার হাতে তুলে দেয়।

একটা সুযোগের অপেক্ষাই ছিলাম নিজেকে যোগ্য করে তুলার।

একদিন সেই সুযোগ পেয়ে যায় আমি ফুলশিপ স্কলারশিপ পাই ইঞ্জিয়ারিং এর উপর

তাও আবার লন্ডন এ। আমি এইকথা চাচাচাচিকে জানলে ওরা খুব খুশি হয়।

কিন্তু একজন এর মন খুব খারাপ ছিল আর কেও নয় খেয়া এর।

আমি দূরে চলে যাব তাই এইভেবে ওর মন খুব খারাপ ছিল।

উপরে ও খুব খুশি এটা দেখালেও ভিতর ভিতর কতটা কষ্ট পাচ্ছিল টিকই বুঝতে পেরেছিলাম।

কিন্তু ও জানেনা আমি এইসব ওর জন্যেই করছি।

ওকে নিজের করে পাওয়ার জন্য আমাকে আগে ওর যোগ্য হয়ে উঠতে হবে

আর এর জন্যে আমাকে যে যেতে হবে।

যে দিন আমি চলে যাচ্ছিলাম ওইদিন ও শুধু একটা কথা বলেছিল,

- নিজের খেয়াল রেখ ভাই। ওইখানে এই খেয়া থাকবে না তোমার খেয়াল রাখার জন্য।

চারবছর পর আমি আমার পড়ালেখা শেষ করে আমি দেশে ফিরে আসি।

আমি দেশে ফিরে আসার কথা কাউকে জানায় নি কারন আমি সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। আমি খুব খুশি কারন আমি এখন চাচা বলতে পারব আমি খেয়াল কে বিয়ে করতে চাই।

আর দেরি সহ্য হচ্ছে না পুরো চারবছর পর আমি আমার পাগলিটাকে দেখতে পারব।

বাসায় গিয়ে কলিং বেল বাজাই খালা এসে দরজা খুলে দেয় উনি আমাকে দেখে অবাক হয়ে যায়।

আর বললেন,

-বাবা তুমি এসেছো

-তাহলে খেয়ার বাবাকি তোমাকে খেয়ার কথা বলে দিয়েছে ?

-খেয়া কি হয়েছে খেয়ার খেয়া কোথায় খালা? ?

হঠ্যাৎ এক ঝাঁকুনিতে ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে আসি।

-ভাই আমরা এসে গেছি।

আমি গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে যায়।

-চাচা সব টিক আছে খেয়া রেড়ি তো ?

-হ্যা বাবা তুমি ভিতরে যাও।

আমি রুমের ভিতরে গিয়ে দেখি আমার পাগলিটা শুয়ে আছে।

আজ আমাদের বিয়ে অথচ আমার পাগলিটার গায়ে এতটুকু শক্তি নেয় যে উঠে দাঁড়াবে।

কত স্বপ্ন ছিল আমার এই বিয়ে নিয়ে অথচ আজ আমাদের এই বিয়ে হচ্ছে হসপিটাল এ।

ব্রেন টিউমার আমাদের এই স্বপ্ন পূরন হতে দেয়নি।

আমার খেয়ার ব্রেন টিউমার হয়েছে আর কালকেই ওর অপারেশন হবে।

আজ দেশে ফিরে যখন এই কথা খালা থেকে জানতে পারি

এক মুহূর্ত দেরি না করে হসপিটালের দিকে ছুটে যায়।

গিয়ে সবার আগে চাচার সাথে দেখা হয়।

চাচা আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়।

খেয়ার কথা আমাকে জানায়নি কেন এই কথা চাচাকে জিঙ্গাসা করলে উনি জানায়,

-খেয়া নাকি মানা কিরেছে আমাকে কিছু না জানাতে

কারন আমি জানতে পারলে সব কিছু ফেলে চলে আসব এই কথা ও ভালো করে জানত।

তাই আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।

আমি খেয়ার কাছে গিয়ে দেখি কেমন হয়ে গেছে মেয়েটা চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে।

অনেক শুকিয়ে গেছে ও কিন্তু আগের থেকে ওকে আরো বেশি মায়াবি লাগছে।

ঘুমিয়ে ছিলও চাচী ওকে ডেকে তুলে চোখ মেলে তাকায় আমার দিকে।

আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

- তুমি এসেছ ভাই মনে করেছিলাম আর দেখা হবে না তোমার সাথে, না দেখেই চলে যাব।

আমি ওকে এক ধমক দিয়ে বলি,

-কোথায় যাবি তুই শুনি? ?

কোথাও যাবি না তুও শুনতে পেয়েছিস আমার কথা।

- আমাকে মিথ্যা সান্তনা দিও না ভাই কারন আমি জানি

আমার হাতে সময় অনেক কম আমি খুব তাড়াতাড়ি অনেক দূরে চলে যাব।

-এমন কথাবলিস না পাগলি এখনো তুই জীবনে কি দেখেছিস যে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবি ?

আর তোর আশা স্বপ্ন ওইগুল কে পূরন করবে।

-সত্যি বলতে কি ভাই আমার সব স্বপ্ন পূরন হয়েছে শুধু একটা স্বপ্ন এখনো পূরন করা বাকি আছে।

-কি সে স্বপ্নটা আমাকে একবার বল ?

-থাক ভাই ওটা আর পূরন করা হবে না।

-একবার আমাকে বলে দেয় হয়ত আমি তোর স্বপ্ন পূরনে কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারব।

বল আমাকে তোর কি ইচ্ছা আছে !

-আসলে আমার সেই স্বপ্ন হল তোমাকের বিয়ে করে তোমার বউ হওয়া।

ভাই পারবেন আমার এই স্বপ্নটা পুরন করতে।

অন্তত একদিনের জন্য হলেও আমি তোমার বউ হয়ে থাকতে চাই।

আমার সেই স্বপ্ন প্লাস শেষ ইচ্ছাটা কি আপনি পুরন করবেন।

ভাই আজ তোমাকে বলতে চাই আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

আর আমি অনন্ত কাল তোমাকে ভালোবেসে যাব।

ভাই কিছু বল আমার এই ইচ্ছা কি তুমি পুরন করবে ?

আমি ওর কথা শুনে ওর হাতটা ছেড়ে দরজার দিকে যায় আর যাওয়ার আগে বলে যায় ওই পাগলি রেড়ি থাকিস মআমি আসছি আমাদের বিয়ের কেনাকাটা করে।

আমি ওয়াসরুমে গিয়ে কলটা ছেড়ে কান্না করতে লাগলাম।

কেন যেন আজ চোখের বাধ মানতে চায়ছে না।

খেয়া আমার পাগলি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে এ হতে পারে না।

আমি পারব না থাকতে ওকে ছাড়া কিভাবে কাটাব সারা জীবন! !

না ও বাঁচবে আমাকে যা করতে হবে সব খুব দ্রুত করতে হবে।

ওর মধ্যে বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা জাগিয়ে তুলতে হবে সময় খুব কম।

-খেয়া উঠ দেখ আমি কি এনেছি তোমার জন্যেই বলে ওড়নাটা ওকে পরিয়ে দিলাম।

কাজি সাহেব এসে আমাদের বিয়েটা পড়িয়ে দিল।

সে দিন সারারাত ও আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে ছিল।

হইতো অনেক কিছু বলতে চেয়েছিল আমাকে কিন্তু দূর্বলতার কারনে বেশি কিছু বলতে পারে নি।

শুধু একটা কথা বার বার বলছিল,

-নিজের খেয়াল রেখ তুমি ভালো থেকো ডিয়ার স্বামী।

তুমি ভালো থাকলে আমি ভালো থাকবো আর আব্বু আম্মুর খেয়াল রেখো।

আর আমি যাওয়ার পর কিন্ত আবার বিয়ে করে নিবে।

সকালে ওকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়।

যখন ওকে নিয়ে যাচ্ছিল আমার হাতটা শক্ত করে ধরে ছিল।

আমি ওকে শুধু একথাটা বললাম

-তোমাকে ফিরে আসতে হবে খেয়া তুমি ছাড়া আর কেউ আমার খেয়াল রাখতে পারবে না।

খেয়াকে ভিতর এ নিয়ে যাওয়া হয় আর থিয়েটারের লাইট অন হয় আর আমি অপেক্ষা করতে থাকি। টানা চার ঘন্টা অপারেশনের পর অবশেষে অপারেশন থিয়েটারের লাইট অফ হলো আর ডাক্তার বেরিয়ে এলো।

-আর তারপর কি হলো ভাইয়া? ?

-আমার পাগলিটা আর এলো না সবাইকে ফাঁকি দিয়ে অনেক দূরে চলে গেল।

-কি খেয়া কি তাহলে মারা গেছে? ?

ভাইয়া যেদিন প্রথম আপনি আমার দোকান থেকে ওড়না কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন।

ওই দিন আমি আপনাকে দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম আমি খেয়ালকে অনেক ভালোবাসেন।

কখনো ভাবিনি যে আজ ২৫ বছর পর এইভাবে আবার আপনার সাথে এই অবস্থায় দেখা হবে।

আপনার ভালোবাসার মানুষ আপনাকে এইভাবে ফেলে চলে যাবে।

-কে বলেছে ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে " ও কোথাও যাই নি ও আছে আমার সাথে।

আমার অস্তিত্বের সাথে ও মিশে আছে সারাজীবন থাকবে আমার পাগলিটা আমার সাথে।

আর আমি চিরদিন ওকে ভালোবাসব।

তবে আপসোস শুধু এ যে খেয়া ওর শেষ ইচ্ছা পূরন করতে পারল।

আমাকে ভালোবাসে এই কথা বলে যেতে পারল কিন্তু আমার ইচ্ছাটা পূরন হয় নি।

শুধু একমবার আমি ওকে বলতে পারি নি "আমি তোকে বড্ড ভালোবাসি রে পাগলি"।

1
$ 0.00
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments