Story: Jochna's night

0 0
Avatar for Nipa1234
3 years ago

হেলাল সাহেব ইদানিং খুব অদ্ভুত রকমের স্বপ্ন দেখেন। তিনি দেখেন শেফালী বানুকে কোলে করে নিয়ে তিনি নাচাচ্ছেন। অথচ শেফালী বানু কম করে হলেও ওজনে তার দ্বিগুণ হবে। নাচতে নাচতে একপর্যায়ে শেফালী বানু উসাইন বোল্ট স্টাইলে দৌড় দেন। দৌড়াতে দৌড়াতে হেলাল সাহেবের মনে হয় তিনি উঁচু কোন স্থান থেকে পড়ে যাচ্ছেন।

কলিজায় বুঝি আর পানি নেই, এই বুঝি তিনি মারা যাচ্ছেন। ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠতেই লক্ষ্য করেন তার শরীর ঘামে একেবারে নেয়ে গেছে। বিছানা থেকে উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি খাবেন সেই শক্তিটুকু পর্যন্ত নেই।

ভদ্রলোকের সাথে একদিন হোটেলে দেখা। আমাকে পেয়ে যারপরনাই খুশি হয়ে বললেন,

-নিজাম ভাই, অনেকদিন পর দেখা হল। আছেন তো ভালো?

-এইতো তো আছি।আপনার কি অবস্থা?

-আর অবস্থার কথা বলবেন না। কি যে বিপদের মধ্যে আছি ভাই।

-কেন বিছানায় হিসু করার অসুখটা আবার শুরু হয়েছে?

-আপনার ঠাট্টা করার অভ্যাসটা আর গেল না।

তো কথায় কথায় উনার সমস্ত সমস্যা সম্পর্কে জানলাম। বেচারাকে খুবই আপসেট মনে হল। আমি বললাম,

-স্বপ্ন তো স্বপ্নের মধ্যেই থাকে। বাস্তবের চিন্তা না করলেই হল।

-না ভাই, স্বপ্ন স্বপ্নের মতো থাকলে কোন সমস্যা হতো না। কিন্তু এই স্বপ্নের মিউটেশন পাওয়ার আছে।

-মানে?

-কিছু দিন একই রকম স্বপ্ন দেখে যখন অভ্যস্ত হয়ে যাই, ঠিক তখনই আবার স্বপ্নের মোড় ঘুরে যায়। আরো বিদঘুটে কিছু দেখি। এই ধরেন শেফালী বানু আমার দিকে এগিয়ে আসছে। হাতে রাখছে হাত, চোখে চোখ, ঠোঁটে ঠোঁট।

-ইন্টারেস্টিং।

-ব্যাপারটা এখানে শেষ হলে ইন্টারেস্টিং হতো। কিন্তু না, পরক্ষণেই দেখি তার চোখ গলে আমার মুখের উপর পড়ছে, কান থেকে পুঁজ রক্ত বের হয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে....

-থামুন, আর শুনতে পারছি না।

-একবার ভাবুন, আমাকে এসব সহ্য করতে হয়।

-তো আপনার স্ত্রীকে কিছু বলেছেন এ ব্যাপারে?

-এখনো বলিনি, কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না।

-আপনি কিন্তু একটা বিষয় গোপন করেছেন।

-হেলাল সাহেব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কোনটা বলুন তো?

-শেফালী বানু আপনার সাবেক প্রেমিকা।

-হেলাল সাহেব হতভম্ব হয়ে গেলেন, আপনি কিভাবে বুঝলেন?

-অনুমান করেছি।

আমি সত্যি অনুমান করেছি। কিন্তু এভাবে লেগে যাবে জানা ছিল না। আমি বললাম হেলাল সাহেব, ঘটনা আপনার স্ত্রীকে জানাতে হবে।

-সেটা জানাবো, আগে আমায় একটা উপায় বের করে দেন।

-আচ্ছা আপনি একটু অপেক্ষা করেন। আমি দেখি কি করা যায়।

বেশ কিছুদিন কেটে গেল। হেলাল সাহেবের সাথে দেখা হয় না। ভাবলাম হেলাল সাহেবের বাড়িতে যাওয়া যাক। তবে ফোন করে জানিয়ে যাবো না। আচমকা গিয়ে সারপ্রাইজ দিব।

হেলাল সাহেবের বাসার ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছি। তার স্ত্রী রুবানা হক সামনে বসে আছে। উনাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না। আমি জিজ্ঞেস করলাম,

-ভাবি, সব ঠিক আছে তো?

-না, নিজাম ভাই। খুব দুশ্চিন্তায় আছি। আপনার ভাইজানের মতিগতি ভাল লাগছে না।

-কেন? কি হয়েছে ভাইজানের?

-কি বলবো ভাই, দুঃখের কথা, বলতে আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছে।

-সমস্যা নাই ভাবি। কলিজা জোড়া লাগিয়ে দিব, আপনি বলেন।

-কাল রাতে পানির পিপাসায় হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। চোখ মেলে দেখি আপনার ভাই বিড়বিড় করে শুধু একটা নাম উচ্চারণ করছে।

-কি নাম?

-শেফালী।

-ভেরি ইন্টারেস্টিং, ভাবি আমাকে এক কাপ চা করে দিবেন?

হেলাল সাহেবের স্ত্রী অন্যমনস্ক, কি যেন ভাবছে।

-ভাবি, এত চিন্তার কিছু নাই। আমি দেখছি ব্যাপারটা। আপনি বরং এক কাপ চা করে নিয়ে আসেন।

হঠাৎ পাশের ঘর থেকে কাচ ভাঙ্গা শব্দ পেলাম, মনে হচ্ছে হাত থেকে কাচের গ্লাস পড়ে ভেঙে গেছে। হেলাল সাহেবের স্ত্রী এখান থেকে ধমকের সুরে বললেন, "কে ভাঙলো গ্লাস? আমি আসতেছি দুগালে দুটো থাপ্পর দিব।"

ওদিক থেকে হেলাল সাহেবের ছয় বছরের মেয়ে বলছে, "মা, বাবা হাত থেকে গ্লাস ফেলে দিয়েছে।"

খুব সম্ভবত এখনই তাদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হবে। এরকম ঝগড়া তাদের মধ্যে প্রায়শই হয়। এখানে থাকাটা ঠিক হবে না। আজকে আর ভাবীর হাতের চা খাওয়া হলো না।

পরদিন আবার হেলাল সাহেব এর স্ত্রীর ফোন। ভদ্রমহিলার মন খুব খারাপ। আমাকে বলল,

-নিজাম ভাই আপনি তো চা না খেয়ে চলে গেলেন। বাসায় একবার চা খেতে আসুন।

-জি আসবো।

উনি আরো অনেক কথা বললেন, যার সারমর্ম করলে দাড়ায়- হেলাল সাহেবের অদ্ভুত কর্মকাণ্ড আরো বেড়ে গেছে। তিনি এখন ঘুমের মধ্যে শেফালিকে বিয়ের কথা বলেন। মাঝরাতে ছাদে একাকী হাঁটাহাঁটি করেন ইত্যাদি।

আমি ওনাকে সান্ত্বনা দিয়ে ফোন রেখে দিলাম। ভাল ঝামেলায় পড়া গেল। চলে গেলাম হেলাল সাহেবের অফিসে। হেলাল সাহেব বললেন,

-আর বলবেন না নিজাম ভাই। ঘুমের ভিতরে কি বলি আমার মনে থাকেনা। অথচ আপনার ভাবি ভুল বুঝে আমার সাথে প্রতিদিন ঝগড়া করে। আমার মনে হয় শেফালীই ভালো ছিল। এখন রাতে আমার ঘুম হয় না, দুঃস্বপ্ন দেখি। শেফালিকে বিয়ে না করে আপনার ভাবিকে বিয়ে করেছিলাম। সে জন্য শেফালী বোধহয় আমাকে অভিশাপ দিচ্ছে।

-আমার কাছে একটা সমাধান আছে।

-কি সমাধান।

-পাগলা বাবার সমাধান। আপনার স্ত্রী পুরোপুরি আপনার বশে চলে আসবে। পুরোপুরি মোমের মতো গলে যাবে।

-আর ঝগড়া করবে না?

-না। আপনি বাসায় যান। আমি সময় করে চলে আসবো।

বিকেলবেলা আমি তাবিজ নিয়ে চলে গেলাম হেলাল সাহেবের বাড়িতে। কলিং বেল টিপতেই ওনার ছয় বছরের মেয়ে দরজা খুলে দিলো। উনার মেয়ের হাতে একটি চিরকুট দিয়ে বললাম,

-তোমার আম্মুকে দিয়ে আসবে, আর কাউকে বলবেনা, চুপি চুপি দিয়ে আসবে। এই নাও চকলেট।

চুপিচুপি চলে গেলাম হেলাল সাহেবের রুমে। মিটিমিটি লাইট জ্বলছে। উনি ড্রিংকস করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আমাকে দেখে ড্রিংকসের পেয়ালা এগিয়ে দিলেন। আমি বললাম, ধন্যবাদ, আমি খাই না। আপনার জন্য তাবিজ এনেছি।

-তাবিজ দিয়ে কি হবে?

-আপনার বউ বশে আসবে।

-সেটা আপনার সাধ্যাতীত। কুকুরের লেজ কখনো সোজা হতে দেখেছেন?

-এটা কাজ করবে। তবে শর্ত আছে।

-কি শর্ত?

-তাবিজটা কোমরে বাঁধবেন। আর এই হচ্ছে তেল পড়া, সুদূর কোহকাফ নগর থেকে আনা। পূর্ণিমার রাতে ভরা জোছনায় খোলা আকাশের নিচে বসে খালি গায়ে তেল মাখতে হবে। তেল মেখে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকবেন সারা রাত। সূর্যোদয়ের পরে গোসল করে তাবিজটা ফেলে দেবেন। তারপর থেকে দেখবেন সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। বহু আপনার যেন বউ নয়, সোহাগিনী।

দু-তিন দিন পর সন্ধ্যাবেলা আমার বাসার বারান্দায় হুইলচেয়ারে আরাম করে বসে দোল খাচ্ছি। সেদিন যে চিরকুটটা হেলাল সাহেব এর স্ত্রীর কাছে দিয়েছিলাম এতক্ষণে হয়তো পড়ে ফেলেছে। সেখানে লেখা ছিল,

"ভাবি সাহেবা, আপনার জন্য সুদূর জৈনপুরের হাশেম পাগলা থেকে একটা বিশেষ ফরমায়েশ এনেছি। তিনি তার গায়েবী অশরীরী শক্তির মাধ্যমে দেখেছেন, আসন্ন পূর্ণিমা রাতে আপনার স্বামী ছাদে অবস্থান করিবে। সেদিন যদি আপনি টয়লেট পরিষ্কার করিবার ঝাঁটা দ্বারা তার পিঠে গুনে গুনে তিনটা ঘা দিতে পারেন, তাহলে সে অতীন্দ্রিয় জ্বীনের সাহায্যে আপনার বশ্যতা স্বীকার করিবে। কোন দিন আপনার কথার অবাধ্য হইবে না।"

আজ আকাশে ভরা পূর্ণিমা। আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ। বসে বসে আকাশের চাঁদ উপভোগ করাই ভালো। হেটার্সরা বলবে আমার বউ ঝগড়া করে বাপের বাড়ি চলে গেছে।

1
$ 0.05
$ 0.05 from @TheRandomRewarder
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments