#সংসার (ধারাবাহিক গল্প)
লেখাঃ মোঃ তানিম-উল-ইসলাম
(পরিচ্ছেদ-১)
মিতুর সাথে রাকিবের আজই ডিভোর্স হয়ে গেল! বিয়ের আগে একটা মেয়ের সাথে রাকিবের সম্পর্ক ছিল। তা থাকতেই পারে কিন্তু বিয়ের পরেও স্বামী যখন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রেমিকার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে তখন আর যাই হোক- সংসার করা যায় না। ঘৃণা নিয়ে সংসার করার চেয়ে একা থাকা অনেক ভাল!
মিতুর সাথে রাকিবের বিয়ে হয় পারিবারিক ভাবেই। সবকিছু ভালভাবেই চলছিল কিন্তু হঠাৎই যখন মিতু রাকিবের শার্টের পকেটে একটা প্রেমপত্র পায় তখন তার দুনিয়া কেঁপে ওঠে।
রাকিবকে জিজ্ঞেস করায় প্রথমে সে ক্ষেপে যায়। কিন্তু মিতু ছাড়বার পাত্রী নয়। শেষমেশ সে জানতে পারে এটা মহিমার লেখা চিঠি। ইউনিভার্সিটিতে রাকিব আর মহিমা এক সাথেই পড়তো!
রাকিবের সাথে মিতুর ভালবাসার বিয়ে না হলেও, মিতু রাকিবকে পাগলের মতোই ভালবাসতো। এতোটাই ভালবাসতো যে, তার বান্ধবী লিমা যখন মিতুকে বলেছিল- রাকিবকে সে একটা মেয়ের সাথে রেস্টুরেন্টে খেতে দেখেছে; সে লিমার কথা বিশ্বাস করেনি। ভাল যখন কেউ মন থেকে বাসে তখন তার চোখ দুটো অন্ধ হয়ে যায়, কান দুটো অকেজো হয়ে যায়। ভালবাসা এমনই এক রোগঃ এ রোগে আক্রান্তরা চোখে দেখে না, কানে শোনে না!
২
খুব সহজেই তাদের ডিভোর্স হয়ে গেল!
মিতুর গায়ে যেদিন রাকিব হাত তোলে সেদিনই সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে রাকিবের সাথে সে আর সংসার করবে না। যেদিন রাকিব তার মা বাপ তুলে নোংরা গালি দেয় সেদিনও সে একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সে সংসারের এমন এক মায়ায় আটকা পড়ে যায়, চাইলেও সে এ সংসার নামক জেলখানা থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে পারছিল না।
যেদিন রাকিব মিতুর পেটে লাথি দেয় সেদিন সে বুঝে ফেলেঃ এ সংসার আর তার নয়।
একটা মানুষ কতোখানি পশু হলে তার ছয়মাসের অন্তঃসত্ত্বা বউয়ের পেটে এভাবে লাথি মারতে পারে!
৩
মাঘ মাস।
বেশ শীত পড়েছে।
গত রাত সারাটাক্ষণ মিতু তার দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি। বারেবার তার মনে হচ্ছিল রাকিব হয়তো বা শেষ মুহুর্তে ডিভোর্স পেপারে সাইন করবে না। কিন্তু তার সমস্ত আকাশ মাথায় ভেঙে পড়ে তখন, যখন আজ সকালে রাকিবের সাইন করা পেপারটা মিতুর বাসায় ফেরত আসে।
মিতু সোফায় পা তুলে বসে আছে। তার সামনে কাগজ হাতে ধরে বসে আছেন মিতুর বাবা মোতালেব হোসেন। চোখ মুখ কুচকে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেনঃ
মারে একটু কি সহ্য করা যেত না?
বাবা তুমি সবকিছু জানার পরেও এই কথাটা আমায় কিভাবে বলো?
কথাটা বলেই মিতু কাঁদছে।
মোতালেব হোসেন গায়ের চাদরটা আরো ভালমতো তার গায়ে জড়িয়ে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। তারপর হাতের কাগজটা টেবিলে রেখে সে ভেতরের ঘরে চলে যায়।
মিতু এক দৃষ্টিতে ডিভোর্স পেপারটার দিকে তাকিয়ে আছে।
কী আশ্চর্য! কতো সহজেই না এতদিনের সম্পর্কটা ভেঙে গেল। মিতুর সাথে যেদিন রাকিবের বিয়ে হয় সেদিনও ঠিক আজকের মতোই শীত পড়েছিল। বিকেলের দিকে এ শীতের মাঝে শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি। মোতালেব হোসেন উৎফুল্ল হয়ে বলতে থাকেন- বৃষ্টি মানেই শুভ লক্ষ্মণ।
সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বৃষ্টি কিছুটা ধরে আসে। রাকিবের পাশে বসে মিতু যখন শশুড় বাড়ি যাচ্ছিল তখন তার মনে অন্যরকম একটা ভাল লাগা কাজ করছিল।
রাকিবের সাথে মিতুর বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হলেও রাকিবকে সে আগে থেকেই চিনতো। তাদের বাসা একই এলাকাতেই। রাকিব ছোটকাল থেকেই তুখোড় ছাত্র ছিল। এলাকার সমস্ত মায়েরা যখন ভাল ছাত্রের উদাহরণ দিত প্রায় সবাই রাকিবের প্রসঙ্গ টেনে আনতো।
রাকিবের সাথে এলাকাতে দেখা হলেও তাদের মাঝে তেমন কোন কথা হত না। কিন্তু সে যে রাকিবকে মনেমনে খুব পছন্দ করে এটা জানতে পারে সেদিন, যেদিন রাকিবের মা তাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে!
(পরিচ্ছেদ- ২)
আজ দুদিন হলো মিতুর সাথে রাকিবের ডিভোর্স হয়েছে! সে এখন বুঝতে পারছে তার নিজের আপনজনেরাই তাকে কেমন জানি অন্য চোখে দেখা শুরু করেছে।
মিতুর ছোট বোন ইতু এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। আজ সকালে সেও মিতুকে বলে গেলঃ সে ইচ্ছা করলেই তার সংসারটা টিকিয়ে রাখতে পারতো। এখন তার নিজের জীবনটাও এলোমেলো হয়ে গেল সাথে সাথে ইতুরও হয়তো ভাল কোন জায়গায় বিয়ে হতে সমস্যা হবে।
২
প্রেগন্যান্ট ওয়াইফের পেটে লাথি মেরে যে স্বামী গর্ভের সন্তানকে হত্যা করতে পারে তার সাথে আর যাইহোক সংসার করা যায় না এই সহজ সত্যি কথাটা মিতু তার পরিবারের কাউকে বোঝাতে পারেনি।
মিতুর খুব চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হয়। ইচ্ছে হয় মায়ের সাথে নিজের দুঃখ কষ্টগুলো শেয়ার করতে। কিন্তু চাইলেইতো সবাই সবকিছু পারে না। মিতুর মায়ের ঠিকানা যে এখন ওই আকাশের অনন্ত নীলে!
৩
মিতুর বাবা মোতালেব হোসেন দিনের এ সময়টায় বাইরে থাকে। এলাকাতে একটা ক্লাব ঘরের মতো আছে। ওখানেই তার সমবয়সীরা মিলে সংবাদপত্র পড়ে, চা-টা খায়।
কিন্তু আজ মোতালেব সাহেব কোথাও যাননি। উনি বারান্দায় বসে নিচে উঁকি মেরে দেখছেন। গ্রাম থেকে আনসার মিয়ার আসার কথা। আনসার মিয়ার চাচাতো এক বিধবা বোন আছে। সে খুব করে চাচ্ছে মোতালেব হোসেন যেন তার বোনটাকে বিয়ে করে।
মিতুর বাবারও যে খুব একটা আপত্তি আছে তা কিন্তু নয়। কিন্তু হঠাৎ করেই মিতু যেই ঘটনাটা ঘটিয়ে ফেলেছে, এখন যদি সে বিয়ে করতে চায় তাহলে মেয়ে দুটো ব্যাপারটা কিভাবে নিবে ভাবতেই তার মাথার তালু গরম হয়ে যাচ্ছে।
৪
মিতু অনেকক্ষণ ধরেই লক্ষ্য করছে তার বাবা বারান্দার রেলিং ধরে নিচে কী যেন দেখার চেষ্টা করছে।
মিতু বাবার কাছে এসে দাঁড়ায়। তারপর একটু কেশে বলেঃ
বাবা তোমায় চা দেই?
মোতালেব হোসেন একটু থতমত খেয়ে মিতুর দিকে তাকায়। কিন্তু পরোক্ষণেই মেয়েটার চেহারা দেখে তার সারা মনটা বিষিয়ে ওঠে। তবে, মোতালেব সাহেব রাগ দেখালেন না। অত্যন্ত কোমলভাবে বললেনঃ
"মাগো আমি একজনের জন্য অপেক্ষা করছি। সে এলে একসাথে বসে চা খাবো"।
মিতু বাবার কথা শুনে রান্নাঘরের দিকে হাঁটা দেয়। চুলোয় সে রান্না চাপিয়েছে!
৫
ইতু রেডি হচ্ছে, ভার্সিটিতে যাবে। মিতু ইতুর চেয়ারে বসে বোনকে দেখছে। ঠিক দেখছে বললে ভুল বলা হবে, সে আনমনে কী যেন ভাবছে।
গত কয়েকদিন ধরেই তার কেবলি মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। আশেপাশের সবকিছুই তার কাছে অর্থহীন মনে হচ্ছে। কিন্তু এমনতো হবার কথা ছিল না!
মিতুর মনে আছেঃ সেবার তাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী ছিল। অন্যদিন রাকিব অফিস থেকে অনেকবার ফোনে মিতুর খবরাখবর নিলেও সেদিন সে একটাবারের জন্যেও মিতুকে ফোন দেয়নি। মিতুর অভিমানে প্রচন্ড কান্না পাচ্ছিল।
মিতু কান্না করেছিল ঠিকই! যখন সে দেখে রাকিব কিছুই ভুলে নি, বিকেলে সে মিতুর জন্য বিশাল একটা ফুলের তোড়া নিয়ে আসে, তখন মিতু রাকিবকে জাপটে ধরে খুব কেঁদেছিল। মিতুর কান্না দেখে রাকিব হোহো করে হাসে আর একটু পরপর বলে- আরেহ্ আমার পাগলী বউয়ের কী হইলো? বলে আবারো হাসে।
বদলে যাওয়া মানুষের রূপ যে এতো বিচ্ছিরি, এতো কদাকার হতে পারে রাকিবকে না দেখলে মিতুর তা কখনোই মনে হতো না। দেয়া ভালোবাসা যখন কেউ ফিরিয়ে নিতে চায়, তখন সে শুধু তার ভালবাসাটাই ফিরিয়ে দেয় না, ফিরিয়ে দেয় তার গোটা জীবনটা!
মিতুর এখন কেবলি মরে যেতে ইচ্ছে হয়। ইচ্ছে হয় ভালবাসাহীন এ পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নিতে!
৬
মোতালেব হোসেন খুবই উত্তেজিত! ঠিক বুঝতে পারছেন না তিনি কী করবেন।
আনসার মিয়া একা আসেনি, সাথে করে তার বোনকেও নিয়ে এসেছে। লম্বা ঘোমটায় সখিনা তার পুরো মাথা ঢেকে রেখেছে। মোতালেব হোসেন চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন আর আঁড় চোখে সখিনাকে দেখছেন। ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই বোধহয় আনসার মিয়া গলা খাঁকাড়ি দেয়। তারপর নাকের একটা লোম টান দিয়ে ছিড়ে মোতালেব হোসেনকে বলেনঃ
"ভাইজান পিশাব করবো। টাট্টিখানাটা এট্টু দেখায়া দেন"
হঠাৎ পেশাবের কথা শুনে মোতালেব হোসেনের মাথা গরম হয়ে যায়। সে চোখমুখ কুচকে আনসার মিয়াকে টয়লেটটা দেখিয়ে দেয়!
(পরিচ্ছেদ-৩)
মা হবার স্বপ্ন মিতুর আর পূরণ হলো না। মিতু এখনো তার পেটে হাত দিয়ে প্রায়ই তার বাচ্চাটাকে খোঁজে! পায় না! যা যায় তা একেবারেই যায়, সবটুকুন সুখ নিয়েই যায়।
মিতুর যখন সংসার ছিল, মিতুর যখন রাকিব ছিল; মিতুর তখন সব ছিল।
দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেল হতো; মিতু তার মানুষটার জন্যে অধীর আগ্রহে বসে থাকতো। সেই রাকিবই বদলে যায়, এতোটাই সে বদলে গেলো, মিতুর গায়ে হাত তুলতেও তার মনে একটুও
বাধেনি।
২
রান্নাবান্না শেষ।
মিতু চুপচাপ তার ঘরে বসে আছে।
মাথাটা এখন তার কাছে কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা মনে হয়। কোনকিছুই সে এখন সুস্থিরভাবে চিন্তাভাবনা করতে পারে না। তবে সে এটুকু বুঝেছেঃ স্বামীর সংসার ছেড়ে এভাবে চলে আসাটা তার পরিবারের কেউই সহজভাবে নেয়নি।
কী আশ্চর্য! মিতুতো আর অন্যকোথাও যায়নি, সে এসেছে তার নিজের বাসায়। তাহলে এটা কি তার ঘর না? একটা মেয়ের কি নিজের বলতে কিচ্ছু থাকতে নেই?
মাথায় ভাবনাটা আসতেই মিতুর চোখের পানি গাল বেয়ে নিচে নামতে থাকে!
৩
মোতালেব হোসেন এখনো উত্তেজিত হয়ে আছেন। সে বেসিনের সামনে রাখা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুব ভালমতো পরখ করে নিচ্ছেন। দুই সপ্তাহ আগেই চুলে কলপ দিয়েছেন কিন্তু এখন দেখে মনে হচ্ছে মাথা ভর্তি সাদা কাশফুল। সে নিজের পাকা চুলের দিকে তাকিয়ে যারপরনাই বিরক্ত।
বিরক্তি নিয়েই সে বাইরে বের হয়। সেলুনে গিয়ে সুন্দর করে চুল কাটিয়ে, কলপ পড়ে তারপর তিনি বাড়ি ফিরবেন।
৪
সখিনা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দূরের রাস্তায় ছুটে চলা বাস গাড়ি দেখছে। তার খুব ভাল লাগছে। ছোটবেলায় সে তার বাবার সাথে বড় মামার বাসায় একবার এসেছিল। সেই তার প্রথম ঢাকায় আসা। মামারা সবাই বিদেশ চলে গেলে তাদের আর কখনোই ঢাকা আসা হয় না।
তবে তার স্বামী তাকে অনেকবার বলেছিল- ঢাকায় তারে নিয়ে সে বেড়াতে আসবে। কিন্তু তার এমনই কপাল-জ্বরে পড়ে মানুষটা ভেদবমি করতে করতে মারা গেল। স্বামী জয়নালের কথা মনে হলে এখনো তার মনটা আকুলিবিকুলি করে ওঠে।
মিতু অনেকক্ষণ হলো সখিনার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। সে খুবই অবাক হয়ে খেয়াল করছে সখিনা একটু পরপর চোখ মুচছে।
৫
খুব অল্প সময়ের ভেতরেই সখিনার সাথে মিতুর ভাব হয়ে যায়। মিতু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সখিনার দিকে। আর মনেমনে ভাবে কতো সুন্দর করেই না সে কথা বলে।
সখিনা তাকে তার গ্রামের গল্প শোনায়। অন্ধকারে জ্বীনের বাদশা তাদের ঘরের ভেতরে ঢুকে সবাইকে কিভাবে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল সেই গল্পও সখিনা তাকে শোনায়।
সখিনার খুব সুন্দর একটা পিতলের পানের বাটা আছে। সে পানের বাটা থেকে পান বের করে; মুখে পুরে মিতুকে জিজ্ঞেস করেঃ
"জামাইরে ছাইড়া আসাটা তোমার কিন্তু ঠিক হয় নাই। মাইয়াগো......."
সে আরো কী যেন বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু মিতু তাকে হাত তুলে থামিয়ে দেয়।
সম্ভবত মিতুর চোখ তখন আগুনের মতো জ্বলছিল। সেই আগুন দেখে সখিনা বোধহয় আরো দ্বিগুণ উৎসাহে বলে ওঠেঃ
"বাব্বাহ মাইয়ারতো তেজ আছে! আরে মাইয়া দুইদিন পর আমি তোর বাপের বউ হমু আর তুই আমার লগে তেজ দেখাস"?
বলেই সখিনা মিটিমিটি হাসতে থাকে।
মিতু অবিশ্বাসী চোখে তাকিয়ে থাকে সখিনার দিকে। তার সমস্ত শরীর শক্ত হয়ে যায়। বুঝতে পারছে না সে এখন কী বলবে!
৬
মোতালেব হোসেন গোসল করে ফ্রেশ হয়ে তার রুমে বসে আছেন। তার ঠিক সামনের চেয়ারে বসে আছে আনসার আলী।
আনসার আলী মাথা চুলকে মোতালেব সাহেবের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলেঃ
"ভাইজান ঢাকা শহরে হাগামুতা কইরা মজা পাইতাছি না। গাও গেরামের মানুষ জঙ্গল ছাড়া হাইগা মজা পাই না। আপনার অনুমতি পাইলে আমি গ্রামে চইলা যাবো"।
মোতালেব মিয়া সাদা সিল্কের একটা পাঞ্জাবি পড়েছেন। মনটাও তার বেশ ফুরফুরে ছিল কিন্তু আনসার মিয়ার কথা শুনে তার সারা মুখ থুতুতে ভরে ওঠে। সে জানালা দিয়ে থু মেরে একদলা থুতু ফেলে আবারো আনসার আলীর সামনে এসে বসে। তারপরে বলেঃ "সখিনার কি করবা"?
আনসার আলী লকলকে জিবটা বের করে তার কালো ঠোঁটদুটো ভিজিয়ে নেয়। তারপরে ফিসফিসিয়ে বলে, "রাইখা গেলাম আপনার কাছে"। বলেই চোখ টিপে একটা হাসি দেয়।
"আমার কাছে রাইখা গেলা? ঝেড়ে কাশো আনসার আলী"।
মোতালেব হোসেন ফিসফিসিয়ে জানতে চায়।
"ভাইজান, ওয় আপনাগো কাছে কয়দিন থাকুক। আপনার মাইয়া দুইডার লগে মিল মহব্বত হউক। আর আমি এর মইদ্দে গ্রাম থেইকা তার ছোট পোলাডারেও নিয়া আই"।
"কার ছোট পোলা? কি বলতেছো আমিতো কিছুই বুঝতেছি না"।
এবার মোতালেব সাহেবের চোখমুখ শক্ত হয়ে যায়!
"ভাইজান সখিনার আগের ঘরে একটা পোলা আছে"।
বলেই আনসার আলী কোমর তুলে তার পশ্চাৎদেশ চুলকাতে থাকে।
"বাবা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে, একটু শুনে যাওতো"।
দরজায় মিতুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মোতালেব হোসেন আঁতকে ওঠেন। তার ঠিক বুঝে আসে না মিতু তাকে ঠিক কী বলতে চাচ্ছে! তাহলে কী সে সব জেনে গেছে!
(চলবে)
লেখায়ঃ মোঃ তানিম-উল-ইসলাম
.............................................