অনেকের কাছেই সিস্ট সম্পর্কে অনেককিছু শুনতাম। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুনতাম সিস্টেরধরন অনেকরকম। তবে কিছু কিছু সিস্টের ক্ষেত্রে বন্ধ্যত্ব হতে পারে। কিন্তু কখনো কল্পনা করি নি এই সিস্টের জন্য আমার জীবন ও কাল হয়ে দাঁড়াবে।
আমার জীবনে এইচএসসি পর্যন্ত অনেক সুখ ছিল। হাসিখুশি একটা মেয়ে ছিলাম। আমার চার বোনের মধ্যে আমি ছিলাম অনেক আদরের। মেঝো মেয়ে হলেও আব্বু-আম্মু কেন জানি আমাকেই বেশি আদর করতো।
অধিকাংশ গ্রামের মেয়েদের এইচএসসির পরেই বিয়ে হয়ে যায় বা মা-বাবা দিয়ে দেয়। ঠিক আমার বেলায় ও তাই হলো। বড় আপুর তো এসএসসির পরেই বিয়ে হয়ে গেসিলো। আমার স্বামী বিদেশে ছিল। লেখাপড়া আমার চেয়েও কম ছিল। কিন্তু টাকাপয়সা বেশি হওয়ায় বাবা-মা আমার স্বামীকেই আমার জন্য সঠিক মনে করেছিলো। প্রেম করতাম না বলেই মা-বাবার সিদ্ধান্তকেই মেনে নিয়ে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু কে জানতো আমার ভাগ্যে এগুলো হবে।
বলে রাখি, আমার পেটে প্রায়ই ব্যথা হতো। পিরিয়ড এর সময় আরও বেশি ব্যথা হতো। আম্মু গাইনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে উনি বলেছিলো এটা পিরিয়ডের ব্যথা। সেটাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলাম আমি।
কিন্তু বিয়ের পর আমি শ্বশুর বাড়িতেই ছিলাম বলে আমার প্রায়ই যে পেট ব্যথা হতো, সেটা শ্বাশুড়ি লক্ষ্য করলো এবং গাইনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। প্রথম প্রথম গাইনি ডাক্তার আগের মতোই বলতো এটা পিরিয়ডের ব্যথা। তাই শ্বাশুড়ি আর বেশি কিছু বলে নি।
কিন্তু দুই মাস পরে আমার এক খালাশ্বাশুড়ি আমার এই পেট ব্যথার কথা শুনে উনার বাসার কাছে এক গাইনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। তখন আমাকে বলা হলো এমআরআই করাতে। সেটা করানোর পর গাইনি ডাক্তার বলেছিল-
~ মিস ফাল্গুনী আপনার সিস্ট হয়েছে। আপনার সিস্ট টা পলিসিস্টিক (পিসিওএস) সিস্ট। যেটা সাধারণত ওভারিতে যে ছোট ফলিকল থাকে সেগুলো পূর্ণাঙ্গ না হলে হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে যদি আপনি অবিবাহিত হন তাহলে সমস্যা হতে পারে। কারণ এই সিস্টের জন্য ছোট বয়সের এবং বিবাহিতদের মেয়েদের ও অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে, এমন কি বন্ধ্যত্বও হতে পারে।
শুধু এতটুকু কথা আমার শ্বশুড় বাড়ি কেড়ে নিল। এই কথার মানে বুঝলেন নাতো? দাঁড়ান বুঝাচ্ছি।
আমার খালাশ্বাশুড়ি সবাইকে বলেছিল আমি বন্ধ্যা। আমার কখনো বাচ্চা হবে না। এই কথা ধরে নিয়ে আমার স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির সবাই ডিভোর্স করাতে উঠে পরে লেগেছিল। অবশেষে আমার বিয়ের চার মাস পরেই ডিভোর্সি ট্যাগে যুক্ত হলো আমার নাম।
গ্রামে মা-বাবাকে সবাই কেন জানি অনেক কথা শুনাতো। মা-বাবা অজান্তেই আমাকে আর আদর করতো না। আমার পরে উনাদের আরও দুই মেয়ে ছিল, তাদের বিয়ে কীভাবে দিবে এটা নিয়েই কথা শুনাতো।
এক বছর এভাবে যাওয়ার পর আমার খাওয়া পড়া নিয়েও কথা শুনাতে লাগলো। সবার কাছে শুনতাম মেয়েদের নিজস্ব কোনো বাড়ি থাকে না। সে সময়ে সত্যিই তা প্রমাণ হয়েছিলো। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম না নিজে কিছু করি। এভাবে আর কতদিন। কতো যে কান্না করতাম জায়নামাযে বসে তার হিসেব ছিলো না।
এরকিছু দিন পরেই একটা জব পেয়েছিলাম। সেটা করছি এখনো এবং সিস্ট এর জন্য ভালো ডাক্তার দেখিয়েছি। কিছু মেডিসিন দিসে তা নিয়মিত খেতে হবে তাহলে এটার কিছুটা সারতে পারে। আমার সিস্ট বেশি বড় হয়নাই নাকি। এখন আর মা-বাবার থেকে খাওয়া পড়া নিয়ে কথা শুনি না। কিন্তু ডিভোর্সি ট্যাগ টা যাকিছুই করি না কেন থেকেই যাবে।
আপনাদের জন্য কিছু কথা বলে রাখি, শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত লোকের মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। টাকাপয়সা থাকলেই আপনার মেয়েকে একজন সুখী রাখতে পারবে এবং টাকাপয়সা না থাকলে সুখী রাখতে পারবে না, এই দুটোর মধ্যে একটার গ্যারান্টিও কেউ দিতে পারবে না। কিন্তু শিক্ষিত লোকের কাছে আপনার মেয়েকে বিয়ে দিলে আর যাই হোক সে সমস্যাগুলো যুক্তি দিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করবে।
শেষ কথা সিস্ট এখন প্রায় কমন শব্দ এবং আল্লাহ প্রদত্ত। সিস্ট ধরা পড়লে অবহেলা না করে ট্রিটমেন্ট করুন এবং যত দ্রুত ট্রিটমেন্ট করতে পারবেন ততো দ্রুত এটি ভালো হবে। দ্বিতীয় কথা চেষ্টা করুন শিক্ষিত ছেলের সাথে আপনার মেয়েকে বিয়ে দিতে, হোক না সে একটু কম বিত্তশালী। তবুও আপনার মেয়েকে সুখী রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বলে আমি মনে করি।