আমার পাঠানো শেষ গল্প'ইডিপাস কমপ্লেক্স' পড়ে যারা মতামত পাঠিয়েছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। সবার মতামতের উত্তর দিতে পারিনি বলে আমি লজ্জিত। তবে গল্পটি ছিল আনন্দের। কিন্তু আজকের গল্পটি সবার জন্য নয়। গল্পটি বেশ কঠিন।একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য আমি গল্পটি লিখেছি, তাদেরকে একটি মেসেজ দিতে।এটা করতে গিয়ে আমাকে হার্ডলাইনের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। সুতরাং যাদের মন খুব নরম কিংবা যাদের ছোট্ট সন্তান রয়েছে, অথবা যারা অতীতে গল্পটি পড়েছেন তারা আজকে গল্পটি এড়িয়ে যেতে পারেন । তবে আমার সাবধান বাণী উপেক্ষা করে যদি গল্পটি পড়েন তবে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন na
মিনি
১
————
এ মুহূর্তেে দেশে যাবার কোন রকম ইচ্ছাই ছিল না আমার। কিন্তু মেয়ে হয়ে জন্মাবার অনেক যন্ত্রণা! অধিকাংশ সময়ই যা করতে ইচ্ছা হয় না তাই করতে হয়। আর তাই বরফাচ্ছন্ন এক ধূসর সন্ধ্যায় পাড়ি জমালাম দেশের পানে। দেশে আমার ছোট ননদের বিয়ে। ননদ ভাবীদের মিষ্টি সখ্যতার কথা মধ্যবিত্তের আটপৌরে সামাজিক গল্পে পাওয়া যায় কিন্তু এখানে ঘটনা অন্যরকম!আমার ননদটি খুবই দুষ্ট প্রকৃতির। বিয়ে হবার পর পরই আটকে যাই ভিসার জটিলতায়। দেড় বছর দীর্ঘ সময়। এই সময়টুকু কি ভয়ানক মানসিক কষ্টের ভিতর দিয়ে যে আমার যেতে হয়েছে! আমার সেই চরম দুঃসময়ে এই মেয়েটি আমার পাশে এসে দাড়াতে পারত বন্ধুর মতো। কিন্তু সে তা করে নি। তার একটি দীর্ঘ সময় কেটেছে আমার অতীতের ফেলে আসা জীবন নিয়ে গোয়েন্দাগিরি করে। সেই সব কোন কালের কথা! অন্য যে কেউ হলে এতদিন এইসব কথা মনে রাখত না।কিন্তু আমি কর্কট রাশির জাতিকা। আমি সহজে কিছুই ভুলি না।
২
আমি যখন প্লেনে উঠলাম তখন চারদিক অন্ধকার করে সবে সন্ধ্যা নামছে ডালাসে। নীচের রানওয়ের সারি সারি আলো গুলো ছোট্ট হতে হতে এক সময় ঝিলমিল করতে শুরু করে দিল। কবিরা পাহাড়ে সূর্যাস্তের কথা লিখেছেন,সমুদ্রে সূর্যাস্তের কথা লিখেছেন,কিন্তু বরফে ঢাকা ছোট্ট সুন্দর একটি শহরে সন্ধ্যা নামার বর্ণনা কি কেউ লিখেছেন? লেখার দরকার ছিল!
বেডরুমের আলো নিভানো থাকলে বাথরুমের দরজার নীচ দিয়ে আসা অল্প একটু আলো যেমন চেষ্টা করে পুরো বেডরুমটিকে আলোকিত করে দেবার, এই আলোটুকুরও তেমনই উচ্চাভিলাষ! সেও ভাবে নীচের এই বিস্তীর্ণ ধবল শুভ্র প্রান্তরটুকু সে আলোকিত করে দিবে। কিন্তু একটা সময় পরাজয় মেনে নিতে হয় তাকে! পরাজয়ের গ্লানিতেই বুঝি বা সে রক্তিম হয়ে যায়। তার এই রক্তিম আভা এসে নীচের শ্বেতশুভ্র শহরটিকে সিঁদুর রাংগা করে দেয়। কি ভয়ঙ্কর সুন্দর এক দৃশ্য! কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমি এই দৃশ্য উপভোগ করতে পারছি না। তার কারণ পাশে বসা আমার ছোট্ট মেয়েটি বড়ই বিরক্ত করছে।
৩
—-
মিনির বয়স ছয় বছর। বিড়ালের নামে মেয়ের নাম দেবার কোন ইচ্ছাই আমার ছিল না। কিন্তু মেয়ের বাবার প্রচন্ড ইচ্ছার কারণে এই নাম রাখতে হয়েছে। কাবুলিওয়ালা গল্পে মিনি নামের একটি চরিত্র রয়েছে। সে নাকি জন্মাবার পর মাত্র দু ‘বছর সময় নষ্ট করেছে কথা শিখবার জন্য। তারপর থেকে ননস্টপ কথা বলে। নামের একটা ফজিলত বোধহয় থাকে। আমার মেয়ে মিনিও কথা বলা শিখেছে দু ‘বছরের মাথায়।তারপর এক মুহূর্তের জন্যও বিরতি দেয় না। যতটা না কথা বলে তার চেয়ে বেশী করে প্রশ্ন। আমার লেখাপড়া সীমিত।প্রায়ই তার পরীক্ষা হয়ে যায়।
প্লেনে উঠে প্রথম যে প্রশ্ন করল তা হলো “আমাদের হঠাৎ বাংলদেশ কেন যেতে হচ্ছে? “ দ্বিতীয় প্রশ্নটি আরো মজার।যেতেই যখন হবে, ট্রেনে কেন যেতে পারবে না? অন্য কোন দিন হলে এতক্ষণে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিতাম। কিন্তু আজ কিছু বলতে মায়া লাগছে।বেচারা প্লেনে উঠেছে জ্বর গায়ে। যেতেও হবে অনেকটাই দূর!
৪
————
আমরা ঝিকাতলায় থাকলেও আমাদের আদি বাড়ি ছিলো গেন্ডারিয়ায়। ছুটির দিন সকালবেলা যখন সবার সাথে স্কুটারে উঠে বসতাম, মনে হতো কেন যাই বারবার? বিশেষ করে ধাংগর পট্টির রাস্তাটি তখনো হয় নি। নবাবপুরের ভীড়ে কাটাতে হতো একটি পুরো বেলা। তখন স্কুটারের ইন্জিন থাকতো ড্রাইভারের সিটের নীচে। পুরোটা পথ ইন্জিনের ধুঁয়া খেতে খেতে যেতে হতো। সে বড় বিরক্তিকর একটি যাত্রা।
এই যাত্রাও তার চাইতে উত্তম কিছু না। ইন্জিনের ধুঁয়ার বদলে এখানে রয়েছে জেট ইন্জিনের কানে তালা ধরানো একটানা ভোঁ ভোঁ শব্দ। তাও শুধু একবেলার জন্য নয়। অন্ততকাল!দুই দিন দুই রাত!
পথে সমস্যা হবে জানতাম, কিন্তু সেটা যে প্রথম যাত্রাবিরতিতেই হবে তা অবশ্য ভাবি নাই। ফ্রান্কফুর্ট এয়ারপোর্টটি আমার খুবই অপছন্দের একটি জায়গা! আমি সব সময় দেখেছি, যাত্রাবিরতির সব ঝামেলাগুলি আমার এই শহরে হয়! একটি সময় ছিলো যখন সাইনবোর্ডগুলি সব জার্মানিতে লেখা থাকতো। ইদানিং সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে অবশ্য! কিন্তু আজকে সমস্যা হলো সম্পূর্ণ অন্য কারণে!
পরবর্তী প্লেনের অপেক্ষায় কালো সোফাগুলোর একটিতে বসেছিলাম। হঠাৎ দেখি মেয়েটি কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে। খুব যারা কথা বলে তারা হঠাৎ করে চুপ করে গেলে কেমন একটু অস্বস্তি লাগে! মিনির শরীরটা নিশ্চয়ই খুব খারাপ করছে। নাহলে এতক্ষণ চুপ করে থাকবার মেয়ে সে না।
কাঁচের ওপাশে মেকডলান্ড দেখা যাচ্ছে। মিনিকে মেকডোনাল্ডের কথা বলতে এত শরীর খারাপের মাঝেও ফোঁকলা দাঁতগুলো বের করে ফিক করে হেসে দিলো! মিনির শরী়র আসলেই খারাপ করতে শুরু করেছে, কারণ ওর এত প্রিয় রেষ্টুরেন্টে গিয়ে ও কিছুই মুখে দিতে পারল না। মাঝখান থেকে ফিরবার পথে লাউন্জে ঢুকবার সময় ওরা সাথে করে নিয়ে আসা সব ঔষধ ফেলে দিলো। আমি ওদের যতই বুঝানোর চেষ্টা করলাম এগুলো আমার মেয়ের ঔষধ, ওরা কিছুতেই তা মানতে রাজি না। ওদের একই কথা, এগুলো ফ্লুইড। প্লেনে ফ্লুইড নিয়ে উঠবার নিয়ম নেই।
এখানে ওর বাবা থাকলে কাজে দিতো। সে এস্কিমোদের কাছে বরফ বেচে দিতে পারবে! তাঁর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর এস্কিমোদের মনে হবে, এটা সত্যি যে তারা বরফের তৈরী ঘরে থাকে, তবুও তাদের কিছু বাড়তি বরফের মওজুদ থাকার প্রয়োজন! আমাদের বিয়ের কথাই ধরা যাক। ও বিদেশে থাকা অবস্থায় আমাদের বিয়ের কথা হয়। মুরুব্বীরা বলে লাখ কথা না হলে নাকি বিয়ে হয় না! আমার বিয়েতে লাখ কথার প্রয়োজন পড়লো না। আমার ছোট মামা একাই একশ! তিনি দুটি কথা বলার পরই আমার বিয়ে তাসের ঘরের মত ভেঙে গেল!
এদিকে কদিন পর ছেলে দেশে ফিরে আমার সাথে দেখা করতে চাইল। কিন্তু আমার পরিবারের সবাই তাঁর সাথে দেখা করতে
দিতে নারাজ! শেষে আমরা গোপনে দেখা করি ইয়ামি ইয়ামি নামের এক রেষ্টুরেন্টে! ওর সাথে কথা বলার দশ মিনিটের মাথায় আমার মনে হলো, এই ছেলেকে বিয়ে না করলে আমি জীবনে সুখী হবো না! যখনই ও আমার থেকে দূরে থাকে আমার পৃথিবীটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। আজ এই বিদেশী এয়ারপোর্টে আমি আরোও একবার ওর অভাব অনুুভব করলাম! আমি ওকে অনেক বলেছিলাম সাথে আসতে, কিন্তু ও কিছুতেই ছুটি পেল না।
৫
——-
আমাদের প্লেনটা যখন ঢাকার মাটি স্পর্শ করলো তখন সবে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। ভোরের আলো সব সময়ে এক নতুন দিনের সম্ভাবনা বয়ে নিয়ে আসে! কেন যেন মনে হচ্ছে ভোরের এই নতুন আলো মংগলালকের মত আবির্ভূত হয়ে আমার এই মুহুর্তের সব উৎকন্ঠাগুলোকে দূর করে দেবে।
প্রথম যে জিনিস নিয়ে আমি উৎকন্ঠিত, তা হলো মিনির পাসপোর্টে বাংলদেশের কোন ভিসা নেই।পাসপোর্ট বানাতেই নষ্ট হলো পুরো একটি দিন। তারপর ভিসার জন্য অপেক্ষা করবার মত সময় আমাদের হাতে ছিল না। আমার ধারণা ছিলো ভিসা বিহীন এই পাসপোর্টটি হাতে পাওয়া মাত্র অফিসারটির চাঁদ রাতের অনুভূতি হবে। বাস্তবে দেখা গেলো ঘটনা ভিন্ন। ভদ্রলোক আমাকে পিছনের একটি কাউন্টার দেখিয়ে বল্লেন “পিছনের ঐ কাউন্টার থেকে ভিসা লাগিয়ে নিয়ে আসুন, ৫০ ডলার ফি নিবে “।
ইমিগ্রেশনের ঝামেলা শেষ করে বাইরে বের হয়ে আসতেই দেখি কাউসার হাত নাড়ছে। আমার এই ভাইটি খুবই কাজের। যে কোন ঝামেলা সে সামলে নিতে পারে! অথচ ছোট বেলায় আমরা বুঝতেই পারি নি ও এত কাজের হবে। মেট্রিকে সিম্পল ফার্ষ্ট ডিভিশন পেল। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম ওকে দিয়ে কিছু হবে না এই জীবনে। কিন্তু আমাদের সবাইকে ভুল প্রমাণ করে ইন্টারমিডিয়েটে স্টার মার্ক পেয়ে পাশ করলো! তার চাইতেও আশ্চর্যজনক ঘটনা হলো ঢাকা মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় ও তৃতীয় স্থান পেল! আমাদের পরিবারে একজন ডাক্তারের খুব প্রয়োজন ছিলো। ও সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের সেই প্রয়োজন মেটাল।
৬
——-
এয়ারপোর্টের বাইরে এসে কাউসারকে দেখে আমি হালে পানি পেলাম।
“তোমার মুখটা এতো শুকনো দেখাচ্ছে কেন আপু? “
“আর বলিস না, বেরোবার দিন মিনির হঠাৎ করে জ্বর চলে এল! এদিকে জার্মানিতে ওরা সব ঔষধ ফেলে দিলো। পুরো একটা দিন ওকে কোন ঔষধ দিতে পারি নি! গায়ে হাত দিয়ে দেখ। জ্বরে ওর গা পুড়ে যাচ্ছে! “
কাউসার ওকে কোলে তুলে নিতে নিতে বলল, “ঠিকই বলেছ আপা। মনে তো হচ্ছে, ভাইরাল ফিভার। চিন্তার কিছু নেই। এনালজেসিক সিরাপ দিয়ে দেব। এক দিনের মামলা। জ্বর পালানোর পথ পাবে না। “
৭
———
যদিও কাউসার বলেছিল,একদিনের মামলা,কিন্তু দুই দিন পার হয়ে গেল। মিনির জ্বরের কোন হেরফের হলো না। তৃতীয় দিন নতুন উপসর্গ দেখা দিলো! শ্বাসকষ্ট! পৃথিবী ভর্তি বাতাস। কিন্তু আমার মিনি সেই বাতাস টেনে নিতে পারছে না। কাউসার বললো ওর খুব সম্ভব নিউমোনিয়া হয়েছে। আমার বাবার বাড়ির খুব কাছেই বেশ বড় একটা হাসপাতাল। একগাদা সিঁড়ি ভেঙে তার ইমার্জেন্সিতে পৌঁছতেই ওরা মিনিকে আইসিইউতে পাঠিয়ে দিলো।
আইসিইউতে যে ডাক্তারটি মিনির চিকিৎসা শুরু করলো তার নাম মিমি হোসেন! আপনাদের আগেই বলেছি নামের একটি ফজিলত থাকে। মেয়েটির ব্যবহার আমার ছোটবেলায় খাওয়া মিমি চকলেটের মতই মিষ্টি! সবচাইতে আমার যে জিনিসটা ভাল লাগলো তা হলো, ধৈর্য্য নিয়ে গত কদিনের সব ঘটনা শুনলো। ডাক্তারদের সচরাচর এতো ধৈর্য্য থাকে না। আমার কথা শেষ হলে ও আমার পাড়ার ফার্মেসি থেকে কেনা সেই সিরাপের বোতলটি দেখতে চাইলো। ওর কাছে এটা নকল মনে হওয়ায় ও তা পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দিলো।
৮
———
পাঠক, আমি আমার গল্পের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। এখন আপনাদের অতৃপ্তি দিয়ে আমার গল্পটি শেষ করে ফেলা উচিৎ। কিন্তু সবকিছুর নিয়ম বদলায়। একশ বছর আগে যেভাবে কবিতা লেখা হতো এখন কি সেভাবে কবিতা লেখা হয়? তাহলে গল্প কেন নতুনভাবে লেখা যাবে না?
৯
———-
মিনি যখন মারা যায়, আমি তখন বারান্দায় বসেছিলাম। আমার মেয়ে অসম্ভব কষ্ট পেয়ে মারা যায়। এই কষ্ট কোন মায়ের পক্ষে সামনে বসে দেখা সম্ভব না। কিছু অসৎ মানুষ সামান্য কটি টাকার লোভে নকল ঔষধ সরবরাহ করেছিল আমাদের পাড়ার দোকানটিতে। আমি চাই আপনাদের যখন অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ আসবে, তখন আপনারা তা থেকে বিরত থাকবেন আমার বিদেশে জন্ম নেয়া এই ছোট্ট সোনামনিটির কথা ভেবে!
১০
———
মিনির ছোট্ট কফিনটি নিয়ে আমি যখন ফিরতি প্লেনে উঠলাম তখন ভোর হয় হয়! ভোরের প্রথম আলোতে সবকিছুই কেমন যেন অন্যরকম দেখায়। কফিনের ডালার কাঁচের ভিতর দিয়ে ভোরের রহস্যময় আলোতে আমার চিরচেনা মেয়েটিকে আমি চিনতে পারলাম না। দিন চারেক আগে যে মেয়েকে নিয়ে আমি প্লেনে উঠেছিলাম আর এই মেয়ে এক না।
প্লেন ছাড়ার আগে আগে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল! যেন পুরোটা দেশ আমার ছোট্ট মেয়েটির কষ্টে কেঁদে উঠল। আমার মেয়েটি অন্ধকার খুব ভয় পায়। আর ও খুবই শীতকাতুরে। নীচের কার্গোর অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরে বরফ দেয়া ঠাণ্ডা কফিনে শুয়ে থাকতে ওর নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হচ্ছে!
প্লেনে আমার পাশের সিটে যে মেয়েটি এসে বসল, সে মিনির সমবয়সী হবে। এই প্রথমবার সে আমেরিকা যাচ্ছে। ডিজনিল্যান্ড দেখার উত্তেজনায় সে কিছুতেই চুপচাপ বসে থাকতে পারছে না। প্রশ্ন করে করে তার মায়ের মাথার পোঁকা নাড়িয়ে দিচ্ছে। একসময় মহিলা বিরক্ত হয়ে মেয়েটিকে ধমকাতে শুরু করলেন। আমার খুবই ইচ্ছে করল তাকে বলি, “আপনি জানেন না আপনি কতটা ভাগ্যবান! আমারও আপনার মত একটি মেয়ে ছিলো! বেশী প্রশ্ন করলে আমিও তাকে এমনি ধমক দিতাম। কিন্তু আজ সে সব ধমকের উর্ধ্বে চলে গেছে! “
কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার কিছুই বলা হয় না। আমি জানালার কাঁচ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে মেঘের খেলা দেখতে থাকি!