#রম্য
#রম্যগল্প
শেষমেশ বউয়ের যন্ত্রণায় তিনতলা থেকে লাফ দিলাম।এ জীবন আর রাখব না।পাশের বাসার ভাবীর একটু সুনাম করাই আমার জীবনের কাল হয়ে দাড়িয়েছে।দুপুরে যখন শুটকি দিয়ে ভাত মাখছিলাম ঠিক তখনই হুড়মুড় করে ঘরে বিরিয়ানির ঘ্রাণ ঢুকে পড়ল।বিরিয়ানির গ্রাণে পাগল হয়ে ভুলে বলে ফেললাম,
"আহা!কি ঘ্রাণ!ভাবীর রান্না অসাধারণ।"
শুধু এটুকু বলতে দেড়ি হয়েছে কিন্তু আমার বউয়ের তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতে দেড়ি হয়নি।
" আমার রান্না ভালো হয় না?
- হয় তো!
-তাহলে তুমি আমার রান্নার তারিফ কোনদিন তো করলে না।আর শুধু ঘ্রাণেই বলে দিলে ভাবীর রান্না অসাধারণ।আমি আজ থেকে রাধব না।তুমি ভাবীর বাসায় গিয়ে খেয়ে আসো।
এই বলে সামনে থেকে খাবার কেড়ে নিলো।সাথে ঘর থেকেও বের করে দিয়েছে।সারারাত ক্ষিধেয় পেট চো চো করেছে।শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলাম বউকে উচিত শিক্ষা দিব।সাতপাঁচ না ভেবে দিলাম ছাদ থেকে লাফ।লাফ দেবার পরেই মনে হল ভুল করে ফেলেছি।বউকে উচিত শিক্ষা দিতে গিয়ে নিজেকেই শিক্ষা দিয়ে ফেলেছি।এখন নিচে পড়ার পর ব্যাথাটা আমিই পাব।বউয়ের উপর রাগ করে বাপের দেয়া জীবনটা হারালাম।নাহ!এ জীবন রেখে আসলেই লাভ নেই।আল্লাহর নাম নিতে নিতে ধপাস করে মাটিতে পড়লাম।ধূপ করে আওয়াজ হলো।হাত,পা কোমর সব ভেংগে আলুর বোস্তার মত গড়াগড়ি করতে লাগলাম।লোকজন আমায় হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিলো।
হাসপাতালের কেবিনে শুয়ে শুয়ে নিজেকে বেশ ফুরফুরে লাগছে।কোথাও ব্যাথা হচ্ছে না।এত অল্পসময়ে হাড় জোড়া লেগে গিয়েছে ভেবে পুলকিত বোধ করলাম।শরীরটাকে আচমকা ধাক্কা দিয়ে তুলতে চেষ্টা করলাম।তখনি হুড়মুড় করে মেঝেতে পড়ে গেলাম।নিজের উপর নিজের বেশ রাগ লাগল। উঠে দাড়িয়ে নিজের পাছায় কিক করলাম।তখনই মনে হলো আহা!ভুল করে ফেলেছি।অতি উত্তেজনায় বডি থেকে বেড়িয়ে গেছি।সাথে সাথে ভিতরে ঢুকতে চেষ্টা করলাম।পারলাম না।তখন বাপ্পারাজের মত আবারও বলতে ইচ্ছে হল "এ জীবন রেখে কি লাভ?"
শব্দ শুনে নার্স আর ডাক্তারদের হুড়োহুড়ি পড়ে গেল।আমি অনেকক্ষণ ধরে নার্সের বুকের উপর লেখা নাম পড়লাম।নামটা পড়ে বেশ শান্তি পেলাম।
বারান্দায় হাটছি।কেউ আমায় দেখতে পাচ্ছে না।ইচ্ছে করে একটি মেয়ের সাথে ধাক্কা খেলাম।মেয়েটি চিৎকার দিয়ে দৌড় দিল।হাহা।দেখে আমি মজা পেলাম।এক বুইড়াকে ল্যাং মেরে ফেলে দিলাম।বুইড়া নার্সদের নামের দিকে তাকিয়ে লুচ্চা হাসি দিচ্ছিল।হাটতে হাটতে বারান্দার শেষপ্রান্তে চলে এলাম।নিচে তাকিয়ে দেখলাম মাটি দেখা যাচ্ছে।মাটি দেখে আবার লাফ দিতে ইচ্ছে হলো।হাসপাতালের বিল্ডিং থেকে আবার লাফ দিলাম।মাটিতে পড়ে দেখলাম আমি ঠিকই আছি তবে যেই কুত্তাটার উপর ল্যান্ড করলাম তার পা ভেংগে গেল।কুত্তাটা আমার দিকে তাকিয়ে কুত্তার মত চিল্লাতে লাগল।আমি তাকে ফ্রি কিক দিয়ে ড্রেনে ফেলে দিলাম।বেচে থাকতে অনেক জ্বালিয়েছো এখন লাত্থি খাও।
হাটতে হাটতে আবিষ্কার করলাম আমি আমার বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি।ভাবলাম বাসায় গিয়ে বউয়ের সাথে একটু মজা করা যাক এমন ভয় দেখাব।হাগু মুতু করতে ভুলে যাবা চান্দু।
সিড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে নিচের ফ্লাটের সুন্দরী মেয়েটার রুমে উকি দিলাম।মরে গিয়ে একদিকে ভালোই হয়েছে।কারো বাসায় হুটহাট ঢুকে পড়া যায়।মিনা নামের মেয়েটা বিছানায় চ্যাগায়া শুয়ে আছে।কানে হেডফোন গুজে বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে।আর অনবরত পা এপাশ ওপাশ করছে।যে হারে পা নাড়াচ্ছে তাতে যেকোন দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।আমি সেখানে বেশিক্ষণ থাকব না ভাবলাম।তখনি তাদের মাঝে কিছু কথোপকথন শুনলাম।তার বয়ফ্রেন্ড দুষ্ট প্রকৃতির।মেয়েটার কাছে নগ্নচিত্র চাচ্ছে।মেয়েটিও দুষ্টু প্রকৃতির।সে এদিক ওদিক তাকিয়ে বিভিন্ন অঙ্গভংগী করে নগ্ন চিত্র তুলতে উদ্যত হলো।এসব দেখে আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল।রাগে মোবাইল ভেংগে ফেললাম।মেয়েটা ঘটনার আকস্মিকতায় বলদ হয়ে গেল।আমি তার বলদমার্কা মুখে থাপ্পড় মারলাম।থাপ্পড়ের চোটে মেয়েটার মুখ বাকা হয়ে গেল।আমি এত জোড়ে মারতে চাইনি,লেগে গেছে।তবুও আমার রাগ কমল না।তাকে আর একটা চটকানা মারব কিনা ভাবতে লাগলাম।এর মাঝেই মেয়েটি পালিয়ে গেল।আর আন্টির পিছনে লুকিয়ে রইল।আন্টির কাছে যেতে ভয় পাচ্ছি।যদি মারে!তাই নিচে দাড়োয়ান কুদ্দুসকে মেরে এলাম।শ্লায় লুঙ্গির মধ্যে হাত ঢুকিয়ে যন্ত্রপাতি হাতাচ্ছিল।লাত্থি খাইয়া লুংগি রাইখা পলাইছে।হারামজাদা!ফেরত এলে এবার তোমার বিচিতে মারব।
.......
© Parves Mossarrov
#রম্য_গল্প_সমগ্র