যারা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল তারা এখন চুপ কেন? #রোহিঙ্গা ক্রাইসিস এবং উখিয়া-টেকনাফের বাস্তবতা।
নুরুল হুদা। আমার বাল্যকালের খেলার বন্ধু। আমরা তাকে নুরুদা বলে ডাকতাম। নানু বাড়িতে কাটানো অদ্ভুত শৈশবের পরিচিত চরিত্র এই নুরুদা। অন্য পাড়ার হলেও মূলত খেলাধুলার সখ্যতায় তার বন্ধুবর হওয়া। মোটামুটি মানের অ্যাথলেট ছিলো। যেহেতু তার সাথে সবচেয়ে বেশি ক্রিকেট আর ফুটবল খেলা হয়েছে তাই ক্রিকেটে অলরাউন্ডার আর ফুটবলে গোল কিপার থাকতো এই টুকু মনে আছে। শান্ত, নম্র, বিনয়ী, ভদ্র হাসিমুখ নিয়ে ইন্ট্রোভার্ট এক ক্যারেক্টার ছিলো নুরুদা।
শৈশব পেরিয়ে স্কুল শেষ করে আমি মুভ করলাম যাত্রিক শহুরে জীবনে আর নুরুদারা থেকে গেলে থেকে প্রাকৃতিক মফস্বলে। ফলাফল ডিটাচডমেন্ট।
স্কুল ত্যাগ করার পর থেকে অন্যদের মতো তার সাথেও ডিটাচডমেন্ট হয়ে যায়। যদিও আমরা কখনো ইন্টিমেট ফ্রেন্ড ছিলাম না তবুও আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় শৈশবে যে চরিত্র গুলোর সাথে আমার সখ্যতা ছিলো তারা প্রত্যেকে আমার গুড মেমোরির অংশ হয়ে থাকবে। তাই শৈশবের অলমোস্ট সবার থেকে ডিটাচড্ হলেও অ্যাই ফিল দ্যাম অ্যাজ অলওয়েজ। অলওয়েজ।
প্রায় দশ বছর পর আজকে আবারো পরিষ্কারভাবে নুরুদার সাথে শৈশবে কাটানো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহুর্তগুলো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমার নিজের চোখের সামনে।
কিন্তু হায়!
এই দেখার শক্তি দিয়েছে তার বিভৎস লাশের ছবি!
ঘটনা সুত্রে জানতে পারলাম নুরুল হুদা ভাড়া গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করছিল। প্রতিদিনের মতো অন্য দশটা লোকাল ভাড়ার মতো সে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক ভাড়া নিয়ে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গাড়ী নিয়ে যায়। সেখানে ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির মতো কমন এবং তুচ্ছ এক বিষয় নিয়ে রোহিঙ্গাদের তর্কাতর্কি হয়। এবং সেটাই কাল হয়ে দাড়িয়েছি নুরুল হুদার জন্য।
জি ঠিকই শুনছেন, জাস্ট ভাড়া নিয়ে কথা তর্কা-তর্কির বিষয় নিয়ে শরণার্থী শিবিরের আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা দলবেঁধে নৃশংসভাবে হত্যা করে স্বাধীন বাংলার নিরহ এক ছেলে নুরুল হুদাকে।
তাকে হাত-মুখ বেঁধে জবাই করে কি ভয়ংকরভাবে হত্যা করা হয়েছে সেটার চিহ্ন তার বিভৎস লাশের ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
অথচ হত্যাকান্ডের বিষয়টি এতোই সিম্পল যে পৃথিবীর কোন দেশের শরণার্থী কর্তৃক এরকম তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আশ্রিত এলাকার একটা নিরহ ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যার নজির পাওয়া যাবে না এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। যাক! প্রিয় বাংলাদেশ অন্তত নতুন একটা গ্রেট রেকর্ডের ভাগীদার হলো নুরুদার লাশের উপর দাঁড়িয়ে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্রাইসিস সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। তারা মায়ানমার সামরিক বাহিনী কর্তৃক অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে সেটাও জানি সবাই। তারা মানবাধিকার বঞ্চিত হয়ে গনহত্যার স্বীকার হয়েছে সেটাও জানি। তাদের স্বভাবিকভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে সেটাও জানি। এবং মানবাধিকার, মানবতা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি কারণে তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে সেটাও সবাই জানি। ইটস ভেরি নাইস গেইম।
কিন্তু আমরা এটা জানি না যে কিংবা জানলেও বুঝিনা কিংবা বুঝলেও না বুঝার ভান করে থাকি যে শরণার্থী হিসেবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে উখিয়া-টেকনাফের মানুষের জনজীবনকে অভিশপ্ত বানিয়ে তাদের সবার স্বভাবিক জীবনের চূড়ান্ত বারোটা বাজিয়ে যে আমরা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করেছি।
এবং বাস্তবতা হচ্ছে উখিয়া-টেকনাফে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের বর্তমান জীবন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চেয়ে জঘন্য হয়ে গেছে। অথার্ৎ একটা মানবাধিকার বঞ্চিত গোষ্টিতে আশ্রয় দিতে আরেকটা স্বাধীন গোষ্টির উপর অমানবিকতার চূড়ান্ত চর্চা করা হচ্ছে।
পুরো পৃথিবী রোহিঙ্গা ক্রাইসিস নিয়ে অবগত। তাদের মানবাধিকার রক্ষা করার জন্য মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত প্রতিনিয়ত কোটি কোটি টাকার সাহায্য উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এসব করতে গিয়ে যে উখিয়া-টেকনাফের কয়েক লাখ মানুষের জীবন নরকে রুপান্তর করা হয়েছে সেটা নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নাই নট ইভেন বাংলাদেশ এন্ড বাংলাদেশি পিপলস।
উখিয়া-টেকনাফের সাধারণ মানুষের জন্য সৃষ্টি করা অভিশপ্ত জীবন যে পৃথিবী, বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশী গর্বিত জনসাধারণের যে কোন ধরণের মাথা ব্যাথা নাই সেটা রোহিঙ্গা শরণার্থী কর্তৃক নৃশংসভাবে খুন হওয়া আমার নিরহ বাল্য বন্ধু নুরুল হুদার হত্যাকান্ড নিয়ে গণমাধ্যমের শুনশান নীরবতা পুরোপুরিভাবে প্রমাণ করে দিয়েছে। ফুলস্টপ।
উখিয়া-টেকনাফের জনজীবন, পরিবেশ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সব সবকিছুই ধ্বংস করে দিয়ে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মানবতার ঘাঁটি স্থাপন করে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে মানবতার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং আমার নিরপরাধ বাল্যবন্ধু নুরুল হুদার লাশ উপহার দেওয়ার জন্য প্রিয় বাংলাদেশী জনগণ এবং বাংলাদেশ সরকারে প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি উখিয়া-টেকনাফের একজন হয়ে।