পূর্ণিমাতিথী#পর্ব: ১

0 0
Avatar for Nipa1234
3 years ago

কলেজ হোস্টেলের আর.পি সাহা আবাসিক ভবনের দোতলার একদম উত্তর-পশ্চিম কোনার ২১৮ নাম্বার রুমের সামনে আধভাঙ্গা জীর্ণশীর্ণ বারান্দায় একা দাঁড়িয়ে মাদিহা। দৃষ্টি তার দশ থেকে বারো হাত দূরে রাস্তার ওপারে সাবালিয়া রোডের কোন এক একতলা বাসার ছাদে সীমাবদ্ধ। ধবধবে সাদা পোশাক পরে ছাদের উপর অস্থির ভঙ্গিমায় পায়চারি করে চলেছে একটি মেয়ে। যার মাটি ছুয়ে যাওয়া ঘন কালো রেশমি চুলের আড়ালে থাকা মুখমন্ডল গত এক ঘন্টায় একবারের জন্যও দৃশ্যমান হয়নি। মাথা নিচু করে শুধু পায়চারিই করে চলেছে মেয়েটি। আর এই পায়চারি করার দৃশ্য ই গভীর মনোযোগের সাথে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে মাদিহা। যেনো এ কোন মজার খেলা।

হঠাৎ ব্লু হোয়েল গেম মিউজিকের বিকট শব্দে ভয় পেয়ে চমকে উঠে মাদিহা। শব্দের উৎস খুজতে গিয়ে বুঝতে পারে এ তার নিজেরই ফোনের রিংটোন। ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে 'SHAN' লেখা নামটি। এত রাতে শানের কল দেখে অবাক হয় মাদিহা। একটু না, অনেক বেশি। রিসিভ করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতেই কল কাট হয়ে যায়। আবারো ঐ বাসার ছাদে দৃষ্টিপাত করে। কিন্তু মেয়েটি নেই। কোথাও নেই। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যাবধানে ভোজভাজির মত কোথায় চলে গেলো মেয়েটি? মাদিহা আর মাথা ঘামায় না। রুমে এসে চুপচাপ ঘুমিয়ে পরে।

ইন্টার প্রথম বর্ষের ছাত্রী মাদিহা। গ্রামের বাড়ি থেকে প্রতিদিন ক্লাস করতে অসুবিধা হবে বলে, কলেজের আবাসিকে থেকেই পড়াশোনা করে। রোজ, বিনা, রিতু, কনিকা, শিমু! এরা সবাই মাদিহার রুমমেট। ইন্টারের ছাত্রীদের আবাসস্থল আর.পি সাহা ভবনের দোতলার দুইশ আট নাম্বার কেবিন রুমে থাকে এই ছয়জন মেয়ে।

,

,

"যে মেয়ে রাত দুইটা তিনটা পর্যন্ত রুমের বাইরে একা বসে ফোনে কথা বলে, সে বলছে কাল রাতে রুমে শুয়ে থেকে বাইরে ভূত দেখেছে! আর এইটা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে! হোয়াট আ জোক ইয়ার!"

কথাগুলো বলে অট্টহাসিতে ফেটে পরে রিতু। রিতু সাথে তাল মিলিয়ে হাসতে শুরু করে কনিকা, শিমু। রোজ দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে বলে,

"তোরা বিশ্বাস কর, চাই না কর। আমার কিছু যায় আসে না। আমি দেখেছি বলেই বলেছি।"

রিতু বিদ্রুপের হাসি হাসে।

"তাই না! তা কোথায় দেখেছিস তুই এই ভূত?"

"বিনার পাশের জানালায়।"

এতক্ষন চুপচাপ বসে এদের সবার কথা বার্তা শুনছিলো বিনা। এখন রোজের কথায় বিচলিত হয় উঠলো,

"আমার জানালায় মানে?"

"হ্যাঁ তোর পাশের জানালায়। কাল রাতে তুই উপরের জানালা খুলে ঘুমিয়েছিলি। আর ওটা তোর পাশের উপরের জানালা দিয়েই তাকিয়েছিলো আমার দিকে।"

শিমু বাঁকা হেসে প্রশ্ন করে,

"তোর সাথে ডেট করতে এসেছিলো বুঝি? দেখতে কেমন রে? রবিন ভাইয়ের থেকেও সুন্দর?"

শিমুর কথায় রেগে যায় রোজ।

"এখানে আমি সিরিয়াস কিছু বলছি, আর তুই মজা নিচ্ছিস? কেন? এই হোস্টেলে যে এসব আছে তা কি কারো অজানা? যত্তসব আ*ল পুলাপান। যাহ সর এখান থেকে।"

রোজ এর ধমক খেয়ে রিতু, শিমু, কনিকা তিনজনেই মুখ ভেংচিয়ে চলে যায় নিজেদের বেডে। রোজের চিৎকারের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় মাদিহার। ফোন হাতে নিয়ে দেখে মাত্র সকাল সাতটা বাজে। রোজ এখনো চেচামেচি করে চলেছে। কিছু একটা ভূত নিয়ে কথা বলছে। শোয়া থেকে এবার উঠে বসে মাদিহা। এলমেলো চুলগুলো হাত খোপা করতে করতে রোজের বেডের পাশে এসে দাঁড়ায়।

"কিরে গোলাপী! আজ এত এত সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই চেচামেচি শুরু করেছিস। রবিনের সাথে ঝগড়া হয়েছে?"

"আরে ধুর রাখ তোর রবিন। তোকেই দরকার আমার।"

"কেন কি হয়েছে?"

"বাজে কিছু দেখে ভয় পেয়েছি। এদের বলছি কিন্তু এরা বিশ্বাসই করছে না।"

"এক্সাক্ট কি দেখেছিস? আর কিভাবে?"

"গতকাল রাতে দুইটার দিকে বিনার উপরের জানালায় ছিলো। হঠাৎ চোখ পরতেই দেখি সারা মুখ থেতলে আছে। এক চোখ উপরানো। নিচের ঠোঁট টা নেই। উপরের টা টুকরো টুকরো করে কাটা। গালের একপাশে মাংস পচে গলে পরছে। দাঁত দেখে মনে হলো শয়তান টা বেঁচে থাকতে কোনদিন ব্রাশ করেনি। ইশ! কি বিচ্ছিরি ফেস! এখনো মনে হলেই গা গুলিয়ে উঠছে আমার। আয় বোস তুই। বাকি কথা বসে বলি।"

মাদিহার হাত ধরে বেডে নিজের পাশে বসতে বলে রোজ। মাদিহার সারা শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠে। ধীরে সুস্থে রোজের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়।

"উহু বসবো না। ঘুম কম্পলিট হয়নি। মাথা ঘোরাচ্ছে। আবার গিয়ে ঘুমাবো। ঘুম থেকে জেগে ঠান্ডা মাথায় সব শুনবো।"

আর এক মুহুর্তও দাঁড়ায় না মাদিহা। নিজের বেডে এসে কাথা মুরি দিয়ে শুয়ে পরে। মাদিহা জানে রোজ মিথ্যে বলছে না। রোজ সত্যিই কিছু দেখেছে। বাজে কিছু। মাথা ব্যাথা করছে। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা। অসহনীয়! মনে হচ্ছে মাথার ভেতর সব ছিড়ে যাচ্ছে। বিড়বিড়িয়ে কিছু একটা পড়ে বাম কাধে ফু দেয়। ঘুমিয়ে নেওয়া দরকার। বালিশে মাথা রাখতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় মাদিহা।

____

দেড় বছর আগে।

বর্ষাকালে বন্যার পানিতে ভরপুর চৌহালি গ্রামের মাঠঘাট। গ্রামের হাইস্কুলের সামনের আর পিছনের দুই কাঁচা রাস্তা বাদে, মানুষজন যাতায়াতের রাস্তাঘাট সব ডুবে! ভরা বন্যায় সাপের উপদ্রব বেড়ে গেছে কয়েকগুন! দুই বছরের বাচ্চা থেকে ষাটোর্ধ প্রবীন, যেখানে যেভাবে যাকে পারছে তাকেই সাপে কাটছে। প্রতিদিন মসজিদের মাইকে কারো না কারো সাপে কাটার খবর শোনাটা একপ্রকার রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে এ গ্রামের মানুষের। সময়মত চিকিৎসা নেওয়াতে কেউ অবশ্য মারা যাচ্ছেনা সাপের কামড়ে। কিন্তু এবারের বন্যা যেনো গ্রামের মানুষের জন্য কোফা হয়ে এসেছে! দূর্বিষহ করে তুলেছে মানুষের জীবন!

-----

"তা জমিদারের বেটি কি আজকে উঠবেন, নাকি আপনার খাবার দাবার সব বিছানায় নিয়ে সাজিয়ে দিবো? সাতটা তো বাজে। এমনি তো উঠে না উঠেই না! আজকেও মরার মত পরে পরে ঘুমাচ্ছে।"

সকাল সকাল মায়ের বাজখাই গলার কর্কশ কথায় ঘুমিয়ে থাকা আর চলেনা মাদিহার। কিন্তু বিছানা ছেড়েও উঠে না। কপাল কুঁচকে, চোখমুখ খিচ্চে বন্ধ করে, বালিশ একটা জড়িয়ে ধরে বিছানায় ই কাত হয়ে পরে থাকে। আশা মেয়েকে ডাকতে ডাকতে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে।

"বোনের মৃত্যু সংবাদ শোনার পরেও মানুষ এত্ত আয়েশ করে কিভাবে ঘুমায় আল্লাহ্! এই তুই মানুষ না শয়তান রে! উঠ তাড়াতাড়ি!"

মশারির এক কোনা খুলে পায়ের মধ্যে ধাক্কা দিতেই, হকচকিয়ে উঠে মাদিহা। হাটু ভর করে উঠে বসে চোখ পিটপিট করে তাকায় মায়ের দিকে।

"মৌসুমি আপু মারা গেছে তো তুমি কান্নাকাটি বাদ দিয়ে আমার উপর অত্যাচার শুরু করেছো কেন?"

"আমি কি বলেছি মৌসুমি মারা গেছে?'

"তুমিই না বললে বোন মারা গেছে!"

"বোন বলেছি আর মৌসুমি ভেবে নিয়েছিস!"

"তো? আর কি ভাববো? আছেই তো খালি ঐ এক বড় চাচাতো বোন মৌসুমি! তাছাড়া আমার আর বোন কোথায় পাও তুমি? নাকি লুকিয়ে রেখেছিলে মেয়ে দুই একটা!"

মেয়ের কথা শুনে আশা রেগে কটমট করে উত্তর দেয়,

"তোর আফজাল চাচার মেয়ে দিশা মারা গেছে।"

"দিশা আপু মারা গেছে মানে?"

"আজানের পরেই তো জানিয়ে দিয়েছে মাইকে। তুই শুনিস নি?"

"না তো! আমি তো আজানের সময় জেগেই ছিলাম! কিভাবে মারা গেছে?"

"গতকাল সন্ধায় নাকি সাপে কেটেছিলো। ভোরের দিকে মারা গেছে।"

"মানে কি! এখনকার দিনেও সাপের কামড়ে মারা যায় মানুষ? হস্পিটালে নিয়ে যায়নি?"

"নিয়েছিলো। তবে মধুপুর না নিয়ে ঢাকা নিয়েছিলো। বাকিটা ওবাড়িতে গেলেই বিস্তারিত জানতে পারবো। রান্না শেষ আমার। এখন দিশার মায়ের কাছে যাচ্ছি। সাড়ে সাতটা বাজে প্রায়। তুই ফ্রেশ হয়ে, খেয়ে স্কুলে চলে যাস।"

"আমিও তোমার সাথে আপুকে দেখতে যাবো আম্মু।"

"তোর না আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত প্রাইভেট? তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে স্কুলে যা। স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখতে যাস।"

"এতক্ষন কি রাখবে লাশ?"

"শিক্ষাবোর্ড থেকে লোকজন আসবে শুনেছি মৃত্যুর ব্যাপারে এনকোয়্যারি করতে। সবকাজ শেষ করে জানাজা হবে সন্ধার দিকে। দেখতে পারবি।"

কথাগুলো শেষ করে আর মাদিহার উত্তরের অপেক্ষা করেনা আশা। আশা চলে যেতেই বিছানা গুছিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায় মাদিহা। ব্রেকফাস্ট করে, রেডি হয়ে আটটা বাজে চলে যায় স্কুলে। দিশা মাদিহার দূরসম্পর্কের চাচাতো বোন। মেয়েটা অবিবাহিত। এইবার বিসিএস দিয়েছিলো। বিকেলে স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফিরে, সোজা আশার কাছে রান্নাঘরে চলে যায় মাদিহা। একটা মোড়া টেনে বসে জিজ্ঞেস করে,

"আপুর লাশ নিয়ে মধুপুর থেকে ফিরে এসেছে?"

"নাহ্! এখনো বাড়িতে পৌছায়নি। সন্ধা হয়ে যাবে আসতে আসতে।"

"তাহলে কি তুমি আবার যাবে ও বাড়িতে?"

"হ্যাঁ যাবোই তো। মেয়েটাকে শেষবারের মত চোখের দেখা দেখবো না?"

"আমিও যাবো তোমার সাথে"

"আচ্ছা যাস। এখন গোসল করে নামাজ পড়ে নে।"

গোসল আর নামাজের কথা শুনেই চোরের মত মাথা নিচু করে মায়ের সামনে থেকে পালিয়ে যায় মাদিহা। ঘরে ঢুকে স্কুল উনিফর্ম চেঞ্জ না করেই ঘুমিয়ে পরে। সন্ধাবেলায় আশার বকাবকিতে ঘুম থেকে উঠে গোসল সেড়ে মাগরিবের নামাজ পড়ে নেয়। তারপর মাথার উড়না গলায় পেচিয়ে, কোমড় পর্যন্ত লম্বাচুলগুলো খুলে দিয়ে, আশা, বড় চাচী, আর চাচাতো বোন মৌসুমি কে সাথে নিয়ে, বেড়িয়ে পরে আফজালের বাড়ির উদ্দেশ্যে। ঘরের বাইরের এসেই আশা মেয়েকে বলে,

"ভরসন্ধায় এভাবে খোলাচুলে ঘরের বাইরে বেরোতে নেই। চুলগুলো খোপা করে মাথায় কাপড় দে।"

কিন্তু কে শোনে কার কথা?

আফজালের বাড়িতে পৌছে, মৌসুমির বামহাত নিজের দুইহাতে ঝাপটে ধরে দিশার লাশ রাখা খাটিয়ার পাশে এসে দাঁড়ায় মাদিহা। লাশের মুখে থেকে কাফনের কাপর সরাতেই চোখে পরে দিশার রক্তশুণ্য ফ্যাকাশে নীলবর্ণ ধারণ করা গায়ের চামরা। নাক-মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসা কুঁচকুঁচে কালো তরলের সাথে বিজল জাতীয় কিছু! বন্ধ চোখের কোনা বেয়ে গড়িয়ে পরা পানি। এসব দেখে গা গুলিয়ে উঠে মাদিহার। মাথা ভো চক্কর দিয়ে উঠে। মৌসুমি কোনরকমে বোনকে সামলে নেয় পরে যাওয়া থেকে। নিজ হাতে মাদিহার চুল বেঁধে দিয়ে মাথায় কাপড় তুলে দেয়। আশাকে ডেকে সাথে সাথেই মাদিহা কে নিয়ে ফিরে আসে বাড়িতে। ফেরার পথে সারা রাস্তা আর টু শব্দটিও করেনা মাদিহা।

এশার নামাজের পর দিশার জানাজা পড়ে, দাফন-কাফনের কাজ শেষ করে রাত দশটায় বাড়ি ফিরে আশার স্বামী, শাফি। আশা, ছেলে পার্থ, আশার ভাই জাহিদ, জাহিদের বউ জেরিন কে বাড়ির সামনের সিমেন্টের বেঞ্চিতে বসে থাকতে দেখে, কারেন্ট না থাকায় এই গরমে আর ঘরে না ঢুকে সবার সাথে বসে পরে শাফি।

"হাত-পা ভর্তি কাঁদামাটি নিয়ে এভাবে বাড়ির সামনে বসে পড়লে কেন? ফ্রেশ হয়ে ঘরে আসো।"

"কারেন্ট নেই কিছু নেই। গরমে ঘরের ভেতর টেকা যাবে? তার থেকে এখানেই ঠান্ডা বাতাসে কিছুক্ষন বসি! তোমরা খেয়েছো কি রাতে?"

"আমরা সবাই তো এক ঘন্টা আগেই মোম জ্বালিয়ে খেয়ে নিয়ছি। কিন্তু মাদিহা খায়নি। বললো কারেন্ট আসলে খাবে।"

"আচ্ছা! তুমি এক কাজ করো। ফ্রিজ থেকে এক বোতল ঠান্ডা পানি নিয়ে আসো তো। গরমে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে একদম।"

"আচ্ছা বসো, আনছি।"

আশা ঠান্ডা পানি নেওয়ার জন্য ঘরে ঢুকতেই কারেন্ট চলে আসে। এক ঘন্টা হতে চললো মাদিহার কোন সারা শব্দ পায়নি আশা। মাথা ব্যাথার জন্য রাতে না খেয়েই শুয়ে পড়েছিলো। ঘুমিয়ে পরেছে কিনা কে জানে! কারেন্ট আসাতে তাই আগে মেয়ের খোজ নিতে চলে যায়। মাদিহার রুমের লাইট অফ ছিলো। লাইট অন করে দেখতে পায়, মাদিহা বামপাশ ফিরে ঘুমিয়ে আছে। আশা মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে অস্ফুটস্বরে ডেকে উঠে,

"নূর! বাবা! তুই ঘুমিয়ে গেছিস?"

"___মাদিহা প্রতিক্রিয়াহীন!"

"না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়িস না! কারেন্ট এসেছে। উঠ বাবা! খাবার খেয়ে, ব্যাথার ঔষুধ খেয়ে তারপর ঘুমা!"

মাদিহার ঘুম খুবই পাতলা। হাল্কা আওয়াজেই ভেঙ্গে যায়। সেখানে এতগুলো কথা বলার পরেও মাদিহার কোন সারা শব্দ না পেয়ে কঁপাল কুঁচকে যায় আশার।

"কি হলো! এতবার ডাকছি তাও... "

এতটুকু বলে ডানহাতের বাহুতে ধরে কয়েকবার ঝাকিয়ে নিজের দিকে ফেরাতেই, হাতটা বিছানা থেকে ফ্লোরের দিকে ঝুলে পরে মাদিহার। মেয়ের হালকা হা হয়ে থাকা মুখ আর অসার দেহ দেখে দেখে বুকটা ধক করে উঠে আশার। পাগলের মত বারান্দায় ছুটে গিয়ে হাক ছাড়ে ছোট ভাই জাহিদের নামে। বোনের ডাক শুনে বাড়ির সামনে থেকে ঘরের ভিতর চলে আসে জাহিদ। যেহেতু বন্যার জন্য গ্রামে এখন সাপের উপদ্রব খুবই বেশি, তাই ভাগ্নীর হাত-পা, ঘাড় ভালো করে চেক করে জাহিদ। আশাকে বলে সাড়া শরীর চেক করে দেখতে। আশা জাহিদকে বলে তোর দুলাভাই কে ডাক। জাহিদ গিয়ে শাফি কে বলে মাদিহার কথা। শাফি তখন গোসলখানায় ঢুকে কোনরকমে ফ্রেশ হয়ে মেয়ের পাশে এসে বসে। আর এসেই আগে মেয়ের নাকে হাত দিয়ে চেক করে শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে কিনা ঠিকমত। কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে, ঠোট ফাঁক করে দেখে দাঁতগুলো শক্ত হয়ে লেগে আছে।

"নূর তো অজ্ঞান হয়ে গেছে।"

"কিহ! অজ্ঞান মানে!"

"হ্যাঁ অজ্ঞান। দাঁতে দাঁত লেগে শক্ত হয়ে আছে। শ্বাসটাও চলছে না। তাড়াতাড়ি একগ্লাস পানি আনো।"

পুরো এক গ্লাস পানি মেরেও মেয়ের জ্ঞান ফেরাতে অক্ষম হয় শাফি। কিছু একটা ভেবে মেয়ের কামিজ সরিয়ে পেটের উপরের অংশ উন্মুক্ত করে, সালোয়ার নাভি থেকে কিছুটা নিচে নামিয়ে চেক করে দেখে যা ভেবেছিলো তাই। রাগান্বিত চোখে রুনার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠে শাফি!

"সত্যি করে বলো আশা, মেয়েকে কি সন্ধার পর দিশার লাশ দেখতে নিয়ে গেছিলে তুমি?"

ভয়ার্ত চোখে শাফির দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই ধমকে উঠে শাফি!

"কোন আক্কেলে আজ সন্ধার পর মেয়েকে নিয়ে বাইরে বেড়িয়েছো তুমি? তাও এক সাপে কাটা রুগীর লাশ দেখতে? তুমি জানোন আজ পূর্ণিমাতিথীর রাত? "

শাফির প্রশ্নে টনক নড়ে আশার। ডুকরে কেঁদে উঠে। তার মাথাতেই ছিলো না আজ পূর্ণিম! মেয়ের প্রতি তার সতর্ক থাকা উচিৎ ছিলো তার। আজ রাতে কিছু হয়ে গেলে,,,

চলবে...

1
$ 0.00
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments