Punishment

0 12
Avatar for Nipa1234
4 years ago

#ছোট_গল্প

পাড়া প্রতিবেশিরা শেফালী বানুকে দেখেলেই আফসোস করে, আর কেমন এক আহারে, উহুরে, করে ইশারা ইঙ্গিতে বলে- এই বয়সে বিধবা না হইয়াও বিধবার জীবন যাপন করে, জামাই থাকতেও জামাই এর সুখ কপালে নাই! মাইয়াডার কপালে।

কেউ কেউ সত্যি সত্যি তার জন্য মনে কষ্ট পায় সেটা সে বুঝতে পারে। কেউ কেউ বলেই বসে- বউ তোমার আর এমন কি বয়স! এই জামাইরে ছাইড়া দেও, নতুন করে জীবন শুরু করো। এই খোজা জামাইয়ের লগে থাইক্কা কি হইবো? তোমার তো একটা মাত্র মাইয়া। পোলা না থাকলে ভবিষ্যতে কে দেখবো তোমারে?

শেফালী বানু কারো কোন কথার উত্তর করে না,

সে চুপচাপ থাকে। আর মনে মনে বলে, আমার শরীরের এত জ্বালা নাই, জ্বালা ছিলো মনে, সারাক্ষণ মনের জ্বালায় মরতাম। কিছু করনের ছিলো না আমার

।মানুষ হইয়াও কুত্তা, বিলাই এ-র জীবন ছিলো আমার। এখন আমি যে কত শান্তি তে আছি, তা শুধু আমিই জানি। আর শরীরের জ্বালা, কয়টা মাইয়া মানুষ নিজের ইচ্ছায় মিটাইতে পারে? সেখানেও তো পুরুষ মানুষের ইচ্ছার দাসী তারা,হেগো ইচ্ছ মতো হেরা হেগো বউরে ভোগ করবো,বউয়ের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কি দাম?শেফালী ভাবে-আমারে তো পাড়া - প্রতিবেশি সবাই সুন্দরই কয়, তার পরেও কেন গেছিলো পূর্ব পাড়ার রমিজের বউয়ের ঘরে রাইতে?

রমিজ কামলা মানুষ, ধানের মৌসুমে যখন কামলা দিতে গেছিলো, হাওড় অঞ্চলে সেই সময় রমিজের বউ আলেমা ছিলো একলা বাড়িতে।তখন আলেমা একদিন আম্মারে বাসায় আইসা কইয়া গেছিলো

-কাকি আফনের পোলায় কিন্তু রাইতে আমার ঘরের চালে ঢিল দেয়।জানালায় ধাক্কা দেয় । আপনে এর বিচার করবেন। এই কথা শোার পর আমার শাশুড়ী উল্টা আলেমারে এমন গালি দেয় আর কয়

-বান্দি মাগী, কামলার বউ হইয়া আমার পোলার নামে বদনাম দিতে আইছস কোন সাহসে?নিজে জামাই কামলা দিতে গেলে বেটা মানুষ দেখলে রং ঢং করো, তা না হইলে বেটারা তোমার বাইত্তে ঢিল দেয় কেন? আরো অনেক নোংরা কথা বলে আলেমারে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।

তার তিন দিন পরের কথা, আলেমার ঘরে এক রাতে ঘটে সেই ঘটনা, শেফালী বানুর জামাই আলেমার ঘরে ঢুকে, আলেমারে যখন জোর করে ধর্ষণ করতে যায়, তখন আলেমা নতুন বলাকা ব্লেডটা কাজে লাগায়। আলেমা কামলার বউ শুধু তা না, সে নিজেও পরিশ্রমী মানুষ, তার খেটে খাওয়া শরীরের জোর কোন বেটা ছেলের চাইতে কম ছিলো না।

তার পর শেফালী তার আধ মরা জামাই রে নিয়া সদর হাসপাতালে ছিলো পনেরো দিন। হাসপাতালের সবাই তার জামাই রে দেখতে আসতো, আর টিটকারি দিয়ে কথা বলে চলে যেতো, তাতে তার মনে কোন রকম কষ্ট হতো না, মানুষের এই সব আচরণে। কারণ সে তখন তার জামাইএর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতো, আর দেখতো সারাজীবন,পুরুষ মানুষ হওয়ার কারনে যে মানুষটা তাকে কুত্তা- বিলাই এ-র চাইতে ছোট করে দেখতো, সেই মানুষ শক্ত করে চোখ বন্ধ করে আছে, ইচ্ছে করে ঘুমের ভান করে। ঠিক যেমন জোঁকের মাথায় নুন পড়লে জোঁক কুঁচকে যায়, তেমনি কুঁচকে যাচ্ছে তার ঘরের পুরুষ মানুষটা, এটা দেখে সে দারুণ তৃপ্তি পেতো।

সেই ঘটনায় কোন পক্ষ আর মামলা করে নাই। কি নিয়া মামলা করবো? অন্যের বউরে জোর করে ধর্ষণ করার জন্য তার দন্ড কেটে দিয়েছে, এক সামান্য কামলার বউ! এর বিচার চেয়ে?তার পরেও মাতব্বর বাড়িতে ছোট একটা সালিশ বসেছিলো, তখন আমার শাশুড়ী বলছিলো আলেমারে গ্রাম ছাড়া করার কথা।

তখন আলেমা ভরা মজলিসে জোর গলায় বলে বসে,পারলে আমার নামে... কাটনের মামলা করতে বলেন। আমি গ্রাম থেকে যাবো কোন দুঃখে? আমিও মামলা করমু আমার ইজ্জত নিতে চাওয়ার। ভরা মজলিসের সবাই বুঝতে পারে আলেমার চন্ডী রুপ। আলেমা নরম কোন মাটির পুতলা না ওরে ভাঙ্গা এত সহজ হবে না! এদিকে আলেমার জামাই সিনা টান করে বউ-এর পাশে এসে দাঁড়িয়ে যায়, আর বলতে থাকে গরীব মানুষ বইলা কি আমার বউয়ের ইজ্জত নাই?

তার পর শেফালীর শাশুড়ী শেফালীর জামাইরে নিয়া বাড়িতে চলে আসে, কেউ আর চাইছিলো না থানা পুলিশ করতে।

শেফালীর জামাই আগে শেফালীর গায়ে প্রায়, প্রায় হাত তুলতো, শেফালী কিছু বললেই বলতো জামাই এর ভাত খাইতে মজা লাগে, আর কিল খাইতে মজা লাগে না? তাইলে বাপের বাড়ি যাগা, আমি আবার বিয়া করমু। আর শেফালীর শাশুড়ী ছিলো আরেক কাঠি সরেস, সে সব সময় শেফালী কে বলতো একটু চড় থাপ্পর মারলেই কানতে থাকো কেন? জানো না মাইয়া মানুষের জীবন বান্দির জীবন! তার শাশুড়ী মেয়ে মানুষ হয়েও শেফালীর কষ্ট তো বুঝতই না তার উপরে ছেলেকে আরো উসকায় দিতো। সারাক্ষণ পোলা হইলো খাঁটি সোনা, সোনা বাকা হইলেও আশি টাকা তোলা। এখন শেফালী কে কেউ আর বলে না, আমার পোলারে ভালো না লাগলে বাপের বাড়ি চইলা যাও, বরং মা - পোলা সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকে, শেফালী যদি চলে যায়। তবে সবাই আবাও আঙুল দিয়া তাগো দেখাইবো আর কইবো, খোজা জামাই এর ঘর কোন মাইয়া মানুষ করে নাকি?

শেফালী এই সংসার ছেড়ে চলে যাবার কথা কখনো ভাবে না, সে ভাবে মাইয়া মানুষের জামাই মরলে কয়জন বিধবা আবার বিয়ে করে? কাটায়া দেয় না সারাজীবন ছেলে মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে।

যেই দিন আলেমার ঘর থেকে গ্রামের মানুষ তার জামাই রে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়, সে দিনই সে মনে মনে বলছে আজ থেকে আমি মনে করবো আমি বিধবা মানুষ, আমার জীবনে কোন স্বাদ আহ্লাদ নাই।

2
$ 0.02
$ 0.02 from @TheRandomRewarder
Avatar for Nipa1234
4 years ago

Comments