আমার সব গল্প সবার জন্য নয়। আজকের গল্পটি সেই ধরনের। লেখক হিসাবে সমাজের প্রতি আমার একটা দায়িত্ব রয়েছে। সে দায়িত্ব থেকে গল্পটি লিখেছিলাম।সুতরাং যারা আমার কঠিন গল্প পছন্দ করেন না কিংবা যাদের মন অত্যন্ত নরম, তারা আজকের গল্পটি এড়িয়ে যাবেন। রিপোস্ট হবার কারণে যারা অতীতে গল্পটি পড়েছেন তারাও আজকে এড়িয়ে যেতে পারেন। তবে আমার সাবধান বাণী উপেক্ষা করে যদি গল্পটি পড়ার ব্যাপারে মনস্থির করেন,তবে আপনাদের সুচিন্তিত মতামত জানালে খুশি হবো।
রিপোস্ট
বিভাগ :ছোটগল্প
শাহাদুল চৌধুরী
(১)
সাভার জায়গাটা আমার বেশ পছন্দের। শহরতলী হলেও কেমন একটা বেশ গ্রাম গ্রাম ভাব রয়েছে।আবার ঢাকা শহরের এত কাছাকাছি হওয়ায় নাগরিক বেশ কিছু সুবিধা ও এখানকার বাসিন্দারা ভোগ করতে পারেন। কি নেই এখানে? স্কুল আছে, কলেজ আছে ,মসজিদ আছে, বাজার আছে! এমন কি আছে একটা ছোট্ট থানাও!সেই থানার থেকে আপনি যদি ২০০ গজের মতো হেঁটে যান তবে ছোট্ট সুন্দর একটি বাড়ি দেখবেন। আমাদের এই গল্প আমরা শুরু করবো সেই বাড়িটির বেডরুমে। এক সোমবার সকালে। এই বাড়িটির গৃহকর্ত্রীর নাম শামীমা আখতার। আপনি কি শামীমা আক্তার নামের কাউকে চিনেন? আমি কিন্তু চিনি। আমাদের সাথে কলেজে পড়তো। রোল নাম্বার ফোর্টিন। খুবই মায়াবতী একটি মেয়ে। এই শামীমা অবশ্য সে নয়। কারণ মায়া মমতার কোন ব্যাপারই এই মহিলার শরীরে নাই। আর কিছুক্ষনের মধ্যে এমন ভয়ংকর একটা অন্যায় সে করবে, যা তার জীবনকে, তার এই মধ্যবিত্ত আটপৌরে গৃহবধূর জীবনটিকে চিরদিনের মত পাল্টে দেবে। আচ্ছা, আপনার জীবনে এমন কোন ঘটনা কি আছে যার ব্যাপ্তিকাল খুবই অল্প, এই ধরুন মিনিট দুয়েকের মত।কিন্তু কোন কোন শেষ বিকেলে চায়ের পেয়ালায় ছোট্ট চুমুক দিতে দিতে প্রায়ই আপনার মনে হয় ওই দুটো মিনিট যদি মুছে ফেলতে পারতাম তবে জীবনটা অন্যরকম হত! আছে এরকম কোন ঘটনা? আমার কিন্তু আছে। সেই গল্প অন্যদিন বলব। আসুন আজকে আপনাদের শামীমার গল্পটি বলি।
(২)
যে সকালটির কথা বলছি তা ছিলে রোদেলা এক সকাল। রোদেলা সকালের অনুভূতি খুব চমকপ্রদ এক ব্যাপার। এটাকে চটোপঘাতের সাথে তুলনা করা যেতে পারে।বঙ্কিমচন্দ্রের মতে একই ব্যাপার ভিন্ন পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে উপস্থাপিত হয়। শিশুর হাতের মৃদু আঘাত মনে যত আনন্দের অনুভূতি দেয়, বয়স্ক লোকের আঘাতের অনুভূতি ঠিক তার উল্টো। রোদেলা সকালের ব্যাপারটাও ঠিক তেমনি বৈচিত্র্যময়।শীতের সকালে জানালা গলে যখন মিষ্টি রোদ পায়ের কাছে এসে পড়ে আলস্যের কি এক অদ্ভুত আমেজে শরীরটা ভরে যায়।গ্রীষ্মের সকালে ঘুমন্ত মানুষের পায়ের উপর পড়া রোদের প্রভাব কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীত। আকন্ঠ তৃষ্ণাএবং প্রবল বিরক্তি নিয়ে মানুষটি জেগে উঠে। যেমন কি না জেগে উঠল শামীমা।এক গ্লাস পানির জন্য সে ডাকতে শুরু করল কাজের মেয়েটিকে,”আসমা, আসমা!”
সে কিন্তু ডেকেই চললো ,কিন্তু আসমার কোন সাড়া নেই। কাজের লোককে ডেকে সাড়া না পেলে বিরক্ত হন না এমন মানুষ আমাদের দেশে বিরল। শামীমাও এর ব্যতিক্রম নয়।সে ঝড়ের বেগে বেডরুম থেকে বেরিয়ে যে দৃশ্য দেখলো তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলনা। আসমা সোফার উপর পা তুলে বসে কার্টুন দেখছে। এই দৃশ্য সহ্য করা কঠিন।শামীমা দিনের প্রথম যে কাজটি করলো তা হচ্ছে এক চড় দিয়ে আসমাকে সোফা থেকে মেঝেতে উল্টে ফেলে দিল। আসমা এই ব্যবহারটির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নি। কাজে যোগ দেবার সময় তাকে বলা হয়েছিল ঘরের মেয়ের মতো থাকতে।আমাদের ঘরের একটি আট বছর বয়সী মেয়ে যদি ভোর বেলা কার্টুন দেখে তাকে কি আমরা চড় দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিই? দেই না। কিন্তু ছোট্ট আসমা তখনো জানে না তার জন্য আরও অনেক বড় বিস্ময় অপেক্ষা করে রয়েছে দিনের মধ্য ভাগে। সেই গল্প যথাসময়ে বলা হবে। ব্যবসায়ীরা বউনি বলে একটি শব্দ প্রায়ই ব্যবহার করেন। আজকের দিনটি খুবই কুৎসিত ভাবে শুরু হয়েছে আসমার জীবনে। বউনি খারাপ হলে দিন তো খারাপ যাবেই। এটাই জগতের নিয়ম।
(৩)
রোদ যতটা চড়া হতে শুরু করল শামীমার মেজাজ তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ততটাই খারাপ হতে লাগল। তবে সব খারাপ ব্যাপারেরই কিছু ভালো দিক থাকে। শামীমা ঠিক করল এই চড়া রোদটাকে কাজে লাগানো দরকার। সে আচারের বয়াম গুলি বের করতে লাগল রান্নাঘরের মিটসেফ থেকে। আচার গুলো নামাতে নামাতে সে আস্তে করে আসমা বলে একবার ডাক দিল।আস্তে করে ডাক দেবার কারণ ছোট্ট একটি অসহায় শিশুর উপর তার ভারী থাপ্পরের প্রভাব পরখ করা। প্রভাব খারাপ না।সকালে যে শিশুটি পাশের রুমে থেকেও তার নাম শুনতে পায়নি সে এবার তার নাম ডাকা শেষ হবার আগেই রান্নাঘরের দরজায় এসে হাজির।এই পৃথিবীর নিয়মটাই এরকম অদ্ভুত ,জোর যার মুল্লুকটি সব সময় তার কথা মতই চলে। ইতিহাস আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়।
(৪)
বহুদিন আগে ইউরোপে মুসোলিনি বলে এমনই এক লোকের আবির্ভাব হয়েছিল। যাকে নিষ্ঠুরতায় প্রায়ই হিটলারের সাথে তুলনা করা হয়। অসভ্যতায় হিটলারের সঙ্গে একই কাতারে দাড়ানো সহজ ব্যাপার নয় কিন্তু। সে কথা থাক। একবার তিনি ট্রেনে করে কোথাও যাচ্ছেন। তখন ইতালি বেশ উন্নত একটি দেশ হলেও একটা ব্যাপারে বেশ পিছিয়ে ছিল। আর তা ছিল রেল ব্যবস্থা। প্রায়ই ইতালিতে ট্রেন দেরি করতো গন্তব্যে পৌঁছতে। এইসব ডিক্টেটর দের সঙ্গী সাথীরাও সব সময় হয় আরো ভয়ংকর। সূর্য থেকে নাকি বালির উত্তাপ সবসময় বেশি হয়। এরা মুসোলিনির কান ভারী করে চলেছে পুরোটা যাত্রাপথ। মুসোলিনি নিজে অবশ্য একটা কথাও বলেননি সারাটা পথ।কেবল বার বার হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়ের অপচয় দেখে কপাল কুঁচকে যাচ্ছিল তার। গন্তব্যে যখন পৌঁছলেন তখন নাকি সে অভাগা রেল টির সবকটি কর্মীকে ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করালেন। শেষ দেহটি গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর তিনি মুখ খুললেন। একটি মাত্র বাক্য। ইতালিতে আর কোনদিন ট্রেন লেট করবে না। আমাদের আসমার অবস্থা হয়েছে আজ বেঁচে যাওয়া ইতালির রেল কর্মীদের মতন। আসমা ডাকের আ শুনলেই এখন সে দৌড়াতে শুরু করছে।
(৫)
“এই বয়ামগুলো বারান্দায় রোদ দিয়ে আচারের মসলা গুলো পিষে ফেলবি। শুধু মাথা নামিয়ে মসলা পিষলেই চলবে না, কাক টাক আসে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখবি।”
যারা কখনো মসলা বাঁটেন নি তারা ভাবতেই পারবেন না কাজটা কত বিরক্তিকর। তারপর আপনার বয়স যদি হয় ৮ বছর। আপনার মন অন্য দিকে যেতে বাধ্য। যদিও মসলা বাঁটার কাজটা আসমার ঠিক পছন্দ হচ্ছে না, তবে কাকতাড়ুয়ার কাজটি আগেও সে বহুবার করেছে এবং বেশ আগ্রহ নিয়েই করেছে। এতে সচরাচর নগদ বিদায়ের একটা ব্যবস্থা থাকে।
কোন কোন বছর তাদের বাড়ির পিছনের আম গাছটি তে প্রচুর আম ধরতো। সব আম তারা খেয়ে শেষ করতে পারত না। বাড়তি আম দিয়ে মা আমসত্ত্ব বানাতেন। যেদিন খুব রোদ উঠতো, সেই সব রোদেলা দিনে মা কুলোয় আমসত্ত্ব শুকাতে দিতেন। তার কাজ ছিল একটি কঞ্চি দিয়ে কাক তাড়ানো,আর মাঝে মাঝে মার চোখ এড়িয়ে কুটুস কুটুস করে আমসত্ত্ব খাওয়া। চৌর্যবৃত্তিতে সে বেশ পটু। যদিও এটাকে কেন যেন তার কাছে ঠিক চুরি বলে মনে হতো না। খুব সম্ভবত রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করেছে এটা জানার পরেও মা কখনো রাগ করতেন না বলে। হয়তো বাল্যস্মৃতি এসে ভর করত মায়ের মনে। মনে পড়ে যেত কিভাবে তিনিও এমনি করে মাকে লুকিয়ে আচার চুরি করে খেতেন।একবার তো মায়ের পায়ের শব্দ পেয়ে তাড়াতাড়ি হাত বের করতে গিয়ে আঙ্গুল ই কেটে ফেললেন বয়ামের কাঁচে।
(৬)
আসমার ভাগ্য অবশ্য আজ অতটা সুপ্রসন্ন ছিল না। সে একরকম মন দিয়েই আচারের মসলা বাঁটছিল।কিন্তু মধ্য দুপুরের তীব্র রোদ বয়ামের ভিতরে ঢুকে কলসের সেই নীল দৈত্যের ই মত অদ্ভুত এক গন্ধ মুক্ত করে দিল বাতাসে।সঙ্গে সঙ্গে বানের জলের মতো একগাদা পানি বেরিয়ে এলো আসমার কান আর চোয়ালের সঙ্গমস্থল থেকে। এ বড় দুষ্টু পানি।আট বছর বয়সী একটি মিষ্টি লক্ষ্মী সংযমী মেয়েকে লোভী করে তুলে। সে নিজেরই অজান্তে হাত ঢুকিয়ে দিলো বয়ামের ভিতরে।আচারে প্রথম টুকরোটি শেষ করে যখন সে ২য়টি মুখে পুড়ছে ঠিক তখনই কানে এলো শামিমার পায়ের আওয়াজ। কিছু বুঝে উঠবার আগেই শামীমা শক্ত করে আসমার চুলের মুঠি ধরে তার ছোট্ট মাথাটা ঘরের দেয়ালের সাথে থেঁতলে দিতে থাকে।প্রচন্ড আঘাতে এক সময় আসমার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বেরোতে শুরু করে।
(৬)
রক্ত দেখে বিচলিত হয় না এমন মানুষ এই পৃথিবীতে বিরল। শামীমাও এর ব্যতিক্রম নয়। আসমার নাক দিয়ে গড়িয়ে পড়া রক্তের ধারা দেখে তার সম্বিত ফিরে আসে। সে তখনই আসমাকে কাছের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায়। আসমা মারা যায় দুপুর দুটোয়।
(৭)
অনেক অনেক বছর আগে আইয়ামে জাহেলিয়াত বলে একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ এসেছিল আরবে। তখনো আরবের মানুষেরা শামীমার মতোই বর্বর আচরণ করতো। সেই চরম দুঃসময়ে আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে একজন মহামানব এ পৃথিবীতে পাঠালেন মহা শক্তিমান। তাকে তিনি প্রায় ৪০ বছর সময় দিলেন তৈরি হবার জন্য।তারপর এক মাহেন্দ্র ক্ষণে নির্জন পর্বতের চূড়ায় তার কাছে অদ্ভুত সুন্দর একটি বই পাঠালেন , যার প্রথম লাইনটিতেই তিনি বলে দিলেন, এটা এমনই একটি গ্রন্থ যার মাঝে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। সেই পবিত্র গ্রন্থ টিতে তিনি এ পৃথিবীর মানুষকে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে চলবার নির্দেশ দিয়ে বললেন, সহজ সরল এই পথই হলো শ্রেষ্ঠতম পথ। অতঃপর তিনি মানুষকে এই মর্মে সতর্ক করে দিলেন যেন তারা সীমালংঘন না করে।
শামীমা যদি তাঁর কথা শুনতো, যদি সে সীমালংঘন না করত, তবে এখন যে সমস্যা তার জীবনকে পর্যুদস্ত করবে তা সে এড়াতে পারত।
(৮)
প্রথম যে কাজটি এখন শামীমাকে করতে হবে তা হল,৮ বছরের ছোট্ট নিষ্পাপ একটি শিশুর লাশ এখন তাকে লুকিয়ে রাখতে হবে একগাদা কৌতূহলী প্রতিবেশীর চোখ এড়িয়ে। কৌতূহল ব্যাপারটা এরকম যে ওর একটা মাত্রা আছে।যতক্ষণ পর্যন্ত এই মাত্রাটা মানুষের মনে অতিক্রম না করে ততক্ষণ সে ব্যাপারটি নিয়ে ভাবে, মনের ভিতরে নারাচাড়া করে ,কিন্তু মুখে কিছু বলে না। যেমন কিনা ভাবল শামিমার প্রতিবেশীরা পুরো দুটো দিন ,মঙ্গল এবং বুধ।এ দুটো দিন সারাটা দিন তাদের মনে যে ব্যাপারটি ঘুরপাক খেলো তা হলো একটি শিশুর আর্তচিৎকার এবং কিছুক্ষণ পর রক্তাক্ত শিশুটির অন্তর্ধান , গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে।দুদিন পরে বৃহস্পতিবার সকালে তাদের এই গোপন কৌতুহল মাত্রা ছাড়িয়ে গেল। সবাই একসঙ্গে এসে চেপে ধরল শামীমাকে। তাদের প্রবল চাপের মুখে আসমার মৃত্যুর কথা স্বীকার করতে বাধ্য হল শামীমা। ক্ষুব্দ প্রতিবেশীরা তখন তাকে আটক করে নিয়ে গেল পুলিশের কাছে।
(৯)
এতক্ষণ আপনাদের যে গল্পটা বললাম তা পুরোটাই সত্যি ঘটনা। ঘটনাটি ঘটেছিল আজ থেকে বহু বছর আগে। আপনারা কেউ যদি সাভারের নামা মাদ্রাসা এলাকায় যান তবে ঘটনাটির সত্যতা যাচাই করতে পারবেন। আমি হতভাগা মেয়েটির কথা জানতে পারি প্রবাসে প্রকাশিত একটি বাংলা পত্রিকা পড়ে। ঘটনাটি জানার পরে আমি দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছিলাম, বিচারের কোন খবর আসে কি না সে আশায়।অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের জানাতে হচ্ছে আমি কখোনই পরবর্তী কোন সংবাদ পাইনি এই মেয়েটির।
(১০)
এই ঘটনাটি ঘটে যাবার পর আমি প্রায়ই একটি স্বপ্ন দেখতাম।আমার স্বপ্নে আমি দেখতাম দেশের সবচাইতে কঠিন বিচারপতির এজলাসে এই মামলাটি উঠেছে। মুসোলিনি কে পছন্দ হবার কোন কারণ নেই। রেল কর্মীদের শিক্ষা দিতে তিনি যে কঠিন শাস্তি দিয়েছিলেন তা আমার পছন্দ হয়নি। তবে আমি কল্পনা করতাম আমার স্বপ্নের সেই বিচারপতি মুসোলিনির মতই কঠিন হৃদয়ের এক মানুষ। খুনি গৃহবধূটির জন্য তিনি এমন এক কঠিন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করেন, যা দেখে বাংলাদেশে কখনো কেউ আর কোন শিশুর সাথে অন্যায় আচরণ করবার সাহস পাবে না। কিন্তু বাস্তবে সত্যি কি তাই ঘটেছে? কদিন আগেই জানতে পারলাম একটি শিশুর শরীরে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় বাতাস ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়েছে।এই ঘটনাটি জানবার পর প্রচন্ড তাগিদ অনুভব করি আপনাদের আসমার কথা বলবার। আজ বহু বছর পর নিজেকে খুব নির্ভার লাগছে। মনে হচ্ছে শীতের অতিথি পাখিদের মত উড়ে যাই ১৪০০০ মাইল।তারপর মাটির থেকে প্রায় ৬ ফুট নিচে ফুলের মত নিষ্পাপ যে ছোট্ট শিশুটি প্রতিনিয়ত কেঁদে চলেছে, তাকে গিয়ে বলি,”তুমি কেঁদো না সোনা মনি, আমরা অতীতে ফিরে যেতে পারি না, তাই তোমার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের কোন বিহিত আমি হয়তো করতে পারব না, তবে আমি তোমার কথা বলেছি অসংখ্য মানুষকে। তারা অতন্দ্র প্রহরীর মতো চোখ কান খোলা রাখবে। যখনই অন্য একটি শিশুর চুলের মুঠি কেউ ধরবে, তখন তারা সেই হাত ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেবে। এটা তোমার কাছে আমার প্রতিজ্ঞা।”