অপয়া
পর্ব- ৩
শ্বশুড়বাড়িতে পা দিয়ে কুসুমের জীবনে শুরু হলো অন্য একটি কষ্টের অধ্যায়।নতুন বউ ঘরে পা রাখতে না রাখতেই তাকে নিয়ে শুরু হলো কানাকানি।রাফসানের নানী হাসতে হাসতে বলে বসলো,"নতুন বউ এর বয়সের তো দেখি গাছ পাথর নেই।তা শুনলাম এক ঘর ঘুরে আইছো।তোমার তো আমার থেইকাও অভিজ্ঞতা বেশি।"
কথাটা বলার সাথে চারিদিকে হাসির রোল পড়ে গেলো।অথচ কুসুম মাত্র ৪ বছরের বড় চাপার।কুসুমের ইচ্ছে করছে মাটির নীচে ঢুকে যেতে।এতোটা অপমান ও বুঝি তার পাওয়া ছিলো!
এদিকে রাফসানের মা সোয়েদা বেগম কাঁদতে কাঁদতে অস্থির।নিজের ঘরে শুয়ে আছেন তিনি।স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ওই মেয়ের মুখ তিনি দেখবেন না।তার অমন সোনার টুকরো ছেলের পাশে কোনো দোজবর মেয়ে তিনি মানবেন না।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছেন তিনি আর পাশে বসে বাতাস করছে আর সান্তনা দিচ্ছে ওনার বোন আমেনা বেগম।
-আপা চুপ কর তো।আর কতো কাঁদবি। এভাবে কেঁদে কোনো লাভ আছে?বিয়ে তো আর আটকাতে পারিস নাই।
-ওই মিনসে(রাফসানের বাবা) আমার এতো বড় সব্বনাশ করবে আমি কি জানতাম?ওই মেয়েরে কিছুতেই ঘর করতে দেবো না আমি বেঁচে থাকতে।
-এইভাবে কান্নাকাটি করে আটকাবি কি করে শুনি?তার থেকে শান্ত হয়ে বুদ্ধি খাঁটিয়ে এমন কিছু করতে হবে যাতে ওই মেয়েই পালিয়ে যায়।বুঝলি কিছু?
-কি করা যায় বলতো তাইলে।
-ধীরে সুস্থে যা করার করবি।কিন্তু মানুষের কাছে খারাপ হবি কেন?মুখে মুখে ভালো ব্যবহার করে দোষমুক্ত থাকবি।বোঝা গেলো?
-আচ্ছা।তাহলে তুই থেকে যা।তোর জামাইরে বল একলা চলে যাইতে।এসব আমার একলার বুদ্ধিতে কুলাবে না।
-আচ্ছা এইবার তুই চোখটা মুছে খেয়ে নে তো।আমি দেখছি।
এদিকে কুসুম একা ঘরে বসে আছে।তার পাশে কেউ নেই।তার জায়গায় চাপা থাকলে হয়তো এখানে অনেকেই থাকতো। "চাপা কোথায় চলে গেলি রে বোইন।"দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে কুসুম।
খুব জোর টয়লেট পেয়েছে তার।কিন্তু এই বাড়ির কিছুই চেনে না সে।আর নতুন বউ হেঁটেচলে বেড়ানোটাও ঠিক না।কুসুম ঘরটা দেখতে থাকে।যে ঘরে সে বসে আছে এটা খুব সম্ভবত রাফসানের ঘর।কারণ ঘরভর্তি রাফসানের নানারকমের ছবি।ঘরটাও খুব বিলাসবহুল আর সুন্দর করে সাজানো।বড় খাট,দামী আসবাবপত্র সব জায়গায় যেন আভিজাত্য ছড়ানো। এর আগে এতো বড় বাড়ি বা এতো বিলাসবহুলতা দেখেনি কুসুম।সায়নের বাবা ও বেশ বড়লোক ছিলো।তবে গ্রাম্য বড়লোক।পাকা বাড়ি ছিলো তবে উপরে টিনের চালা।
আবার সায়ন!
উফফ সায়নের কথা ভাবতেই কুসুমের চোখ ছলছল করে উঠলো।এমনসময় দুজন মহিলা ঘরে ঢুকলো।একজন মধ্যবয়সী অন্যজন নিতান্তই কম বয়সী। উঁহু একেবারেই মহিলা বলা যায় না।কুসুম শাড়ি ঠিক করে নিয়ে বসলো।
মহিলা বলে উঠলো,
-কিগো নতুন বউ,বসে ঝিম মারছো যে।ঘুম পাচ্ছে বুঝি?তা তো পাবেই যা ধকল গেলো।
হা করে তাকিয়ে আছে কুসুম।এদের কাউকেই চেনে না সে।ভদ্রমহিলাও সম্ভবত সেটা বুঝলেন।
তাই নিজেই বললেন,
-ওহ আমাদের তো চেনো না।।আমি তোমার চাচী শ্বাশুড়ি।আর এই হলো তোমার ননদ রায়া।
-তুমি চেঞ্জ করবে না ভাবী?সেই কখন থেকে এভাবে বসে আছো।
রায়া বলে উঠলো।
-একটু বাথরুমে যাব।
-ওমা!আগে বলবা তো।তোমার ঘরের সাথেই তো বাথরুম আছে।আসো তোমাকে দেখিয়ে দেই।
বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে আসতেই কুসুমের চাচীশ্বাশুড়ী বললেন,
-একা একা শাড়ি পড়তে পারবা না সাহায্য লাগবে?
-না আমি পারি।
-তা তো পারবাই।তোমার তো আবার বিয়ের অভিজ্ঞতা আছে।তা বাপু তোমার শ্বাশুড়ি যা শুরু করছে এইখানে কয়দিন ভাত খাইতে পারবা কে জানে!
-আহ কাকী।কি যা তা বলো।
ঝাঝিয়ে ওঠে রায়া।
-হ রে বাপু।তোমার মায়ের নামে বললে তোমার খারাপ লাগবেই।থাক পরের সংসারের ব্যপারে আমি আর কিছু বলছি না।তা নতুন বউ পেটে দানাপানি পড়েছে?কথায় আছে পেটে খেলে পিঠে সয়।
-না খাওয়া হয় নি।
-শেষ কখন খেয়েছো?
-কাল রাতে।
-বলো কি?এতোক্ষন না খেয়ে!আমি হলে তো বেহুঁশ হয়ে যাইতাম।অবশ্য তুমি গ্রামের মেয়ে তারপর আবার চাষী বাড়ির।অভ্যাস আছে।কি বলো?
কুসুম কোনো কথা বলছে না।চুপ করে আছে।
রায়া বলে উঠলো,
-দাড়াও ভাবী আমি তোমার খাবার আনছি।
রায়া যেতেই দরজাটা হাল্কা বন্ধ করে মহিলা আবার শুরু করলেন,
-ভালো করে বুঝে শুনে থেকো বাপু।তোমার শ্বাশুড়ি মোটেও ভালোমানুষ না।কি দিয়ে কি প্যাচ যে লাগাবে শেষে দেখা গেলো তোমার এই সংসার ও আর হইলো না।
কুসুম চুপ করে আছে।উনি আবার বলতে শুরু করলেন,
-নিজের স্বামী কে আঁচলে বেধে রাখবা।স্বামী ঠিক তো জগৎ ঠিক।
হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে চুপ করে গেলেন তিনি।রায়া খাবার নিয়ে চলে এসেছে।কুসুমকে খাইয়ে দিচ্ছে ওর চাচীশ্বাশুড়ি।ভদ্রমহিলা একটু কথা বেশি বললেও বেশ দয়ালু।কুসুমকে খুব যত্ন করে খাওয়াচ্ছেন।খাওয়া দাওয়া শেষে কুসুমকে হালকা সাজিয়ে দিলো রায়া আর সাথে কিছু হলকা গয়না পড়িয়ে দিলো।তারপর দুজনই ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল হঠাৎ রায়া ফিরে আসলো তারপর কুসুমের কানে কানে বললো,
-ভাবী একটু ওয়েট করো।ভাইয়া কে পাঠিয়ে দিচ্ছি।তারপর কেউ ডিস্টার্ব করবে না।বেস্ট অফ লাক।
এরপর দৌড়ে পালিয়ে গেলো সে।
রাত ১২ টা।কুসুম একা ঘরে বসে আছে।সেই যে রায়া গিয়েছে আর আসেনি।এরপর আর কেউ উঁকি দেয় নি এ ঘরে।কুসুমের খুব ঘুম পাচ্ছে।কিন্তু নতুন বউ এভাবে ভোস ভোস করে ঘুমানোও ঠিক না।অসহ্য লাগছে কুসুমের।কে জানে কোথায় ফেসে গিয়েছে সে।
হঠাৎ কারো মেকি কাশির আওয়াজে ঘোর কাটলো কুসুমের।এই কাশির অর্থ দরজার বাইরের মানুষটা ভেতরে ঢুকতে চাচ্ছে।
কুসুম নিজের কাপড় ঠিক করে নিলো।দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো রাফসান।রাফসানকে দেখেই কুসুমের কলিজা শুকায় গেলো। না জানি কি বলে।টেনশনে কুসুম নিজেই দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,
-বিশ্বাস করেন আমি এই বিয়েটা করতে চাইনি।আমি জানি আপনার পক্ষে চাপার জায়গায় আমাকে মেনে নেওয়া অসম্ভব।আমি আশা ও করছি না তেমন কিছু।আমি কাজের মেয়ের মতো পড়ে থাকবো কিন্তু দয়া করে আপনি তাড়িয়ে দেবেন না আমাকে।
কথা বলতে বলতে কুসুমের ঘোমটা টা সরে গিয়েছে।এই প্রথম কুসুমকে দেখছে রাফসান।দেখছে বলতে হা করে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা অসম্ভব সুন্দরী। শুধু সুন্দরী বলতে ভুল হবে একেবারে মায়াবতী উঁহু মায়াময়ী। চাঁদের মতো মুখে ঠোঁটের কাছের তিলটা যেন আরও বহুগুন বাড়িয়ে তুলেছে তার রুপ।চাপার থেকে ঢের বেশি সুন্দরী কুসুম।এমনকি গায়ের রঙটাও বেশি সুন্দর।
রাফসানকে চুপ থাকতে দেখে কুসুম আরও ভয় পেয়ে গেলো।তারপর কাঁদো কাঁদো মুখে বললো,
-কথা বলছেন না কেনো?আপনি কি আমাকে বের করে দেবেন?
-আপনি এতো ভয় পাচ্ছেন কেনো বলুন তো?আমাকে দেখে কি খুব রাগী মনে হচ্ছে?আর না মেনে নেওয়ার কি আছে?আপনি আমার বিয়ে করা বউ।কলেমা পড়ে বিয়ে করেছি নিজের সম্মতিতে।আর এটা কি নাটক সিনেমা নাকি যে মেনে নেবো না?
-আপনি কি আমার অতীত জানেন?আপনি কি জানেন আমি বিধবা?
-আচ্ছা এই বিধবা শব্দটা কি আপনি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন?কি ভাবছেন?আমি ঝাঁপিয়ে পড়বো আপনার উপর?তাই জন্য বুঝি বিধবা পরিচয় দিয়ে এড়াতে চাচ্ছেন আমাকে।নাকি অন্যকিছু?
রাফসানের কথা শুনে রিতিমত অবাক কুসুম।আমতা আমতা করে সে বললো,
-না মানে........
-না মানে আসলে কিছুই না।আপনি হেজিটেট ফিল করবেন না।বিধবা বিয়ে করা আমার নবীর সুন্নাহ।আর তাছাড়া আমি বিশ্বাস করি আপনার দ্বারা আমার কল্যাণ আছে বলেই আল্লাহ আপনাকে আমার জন্য তৈরী করেছেন।আর আমার আল্লাহ আমাকে যা নিয়ামত দিয়েছে আমি খুশি মনে গ্রহণ করেছি।আল্লাহ না চাইলে এই বিয়েটা হতোনা।তাই আমি না মানার কেউ নই।বোঝা গেলো?
রাফসানের কথায় মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে কুসুম।আল্লাহ বুঝি সত্যিই তার কষ্টের দিন ঘুচালো।একটা মানুষ এতো ভালো হয়!
রাফসান আবার বললো,
-এই যে ম্যাডাম।হা করে দাঁড়িয়ে না থেকে ওযু করে আসেন।নামায পড়তে হবে।
কুসুম কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ দরজায় দুমদুম আওয়াজে দুজনেই সেদিকে মন দেয়।
বাইরে থেকে রাফসানের খালা চিল্লাচ্ছে।
-রাফসান দরজা খোল বাবা। তাড়াতাড়ি এসে দেখে যা কি সব্বনাশ হলো রে বাপ!
রাফসানের পিছু পিছু কুসুমও গেলো রাফসানের মায়ের ঘরে।ভদ্রমহিলা বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন।রাফসান গিয়ে মায়ের পাশে বসে তার গায়ে হাত রেখে বললো,
-কি হয়েছে মা তোমার?
-দেখ না বাবা হাটুর ব্যথা টা বেড়েছে।কিছুতেই উঠতে পারছি না বিছানা থেকে।কিন্তু তোরা আবার উঠে আসতে গেলি কেনো?
-খালাই তো ডেকে নিয়ে এসেছে।
বলেই রাফসান আমেনা বেগমের দিকে তাকালেন।আমেনা বেগম আমতা আমতা করতে লাগলেন,
-না মানে আসলে আমি ভাবলাম বাবুকে একবার ডাকি।
-কাজটা তুই মোটেও ঠিক করিস নি।
নিজের বোনের ওপর কপট রাগ দেখায় সোয়েদা বেগম।
-খালা তো ঠিকই করেছে মা।
পাশ থেকে বলে উঠলো কুসুম।
রাফসান অবশ্য সেদিকে কান দিলো না।তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে ভীষণ বিরক্ত।ছোটবেলা থেকেই নিজের খালার বাড়িয়ে বলা স্বভাবটা সে জানে।আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বেশ কর্কশ গলায় সে বললো,
-খালা তুমি বরং ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ো।মায়ের কাছে আমরা আছি।
আমেনা বেগম চলে যেতেই কুসুমকে পাশে বসতে ইশারা করে রাফসান মায়ের পা টিপতে লাগলো।কুসুম অবশ্য অনেকবার চেয়েছিলো নিজে শ্বাশুড়ির পা টিপতে কিন্তু রাফসান তা করতে দেয় নি।
রাত্রি ৩টার দিকে সোয়েদা বেগম ঘুমের অতলে চলে গেলেন।রাফসান আর কুসুম তখনও বসে আছে তার পাশে।কুসুম অবশ্য হাতের ওপর ভর দিয়ে বসে বসেই ঘুমাচ্ছে।সারাদিন যা ধকল গেলো তাতে ওর একটু বিশ্রামের দরকার ছিলো।মেয়েটার ঘুমন্ত মুখ দেখে খুব মায়া হচ্ছে রাফসানের।হঠাৎ রাফসান খেয়াল করলো কুসুম একেবারে খাটের ধারে বসে আছে।যখন তখন পড়ে যেতে পারে ঘুমের ঘোরে।
কুসুমের গায়ে আলতো করে হাত রেখে রাফসান ডাকলো,
-কুসুম।
রাফসানের ডাকে আকস্মিকভাবে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় নিজেকে সামলাতে পারে না কুসুম।পেছনের দিকে পড়ে যেতে নিলে রাফসান ধরে ফেলে তাকে।তারপর জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে।কুসুমের মাথাটা চেপে ধরে নিজের বুকে।
কুসুম ও হুট করে এমনকিছু হবে আশা করে নি।লজ্জা পেয়ে যায় সে।তারপর নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে লজ্জিত ভঙ্গিতে বলে,
-সরি।আমি আসলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
-কোনো ব্যপার না।আসলে আমারই ভুল হয়েছে।আপনার ঘুমের প্রয়োজন ছিলো।এখন তো মা ঘুমিয়ে পড়েছেন।চলুন ঘুমানো যাক।
-উঁহু এখন আর ঘুমিয়ে কাজ নেই।ঘণ্টাখানিক পর ফজরের আযান দেবে।এখন ঘুমালে ফজরের নাযায কাযা হয়ে যাবে।
-তা ঠিক বলেছেন।কেউ তো উঠেনি।তাইলে চলেন ছাদে যাই।এইফাঁকে আপনাকে ছাদটাও দেখানো হয়ে যাবে।জানেন তো ছাদে সবজি বাগান করেছি আমি।
-ঠিক আছে চলুন।
-দাঁড়ান আগে দুকাপ কফি বানিয়ে আনি।খাবেন তো কফি?
-আমি তো কফি খাইনা।কখনো খাইনি আসলে সেভাবে।
-তাহলে চা।চলবে?
-হুম চলবে।আমাকে রান্নাঘর টা দেখিয়ে দিন আমি বানিয়ে নিয়ে আসছি।
-আরে না।বউ হয়ে যখন এসেছেন হেঁশেলের দ্বায়িত্ব তো নিতেই হবে।আজকে বরং রাফসানস স্পেশাল টি খান।
-আপনি চা বানাতে পারেন নাকি?
-সব পারি ম্যাডাম।আমাকে তুচ্ছ ভাববেন না।
একসাথে হেসে উঠলো দুজন।
রাফসান খুব পাকা হাতে চা বানাচ্ছে।পাশে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে দেখছে কুসুম।এই ছেলেটা সত্যিই অন্যরকম। সবার থেকে আলাদা।
চা খেতে খেতে অন্ধকার রাত্রির শেষে ভোরের আলো ফোঁটা দেখছে রাফসান আর কুসুম।কুসুমের মনে হচ্ছে ঠিক এভাবেই পাশে দাঁড়ানো মানুষটার ছোঁয়ায় তার জীবনের আধার কালো রাত কেটে যাবে।
ফজরের আযান দিয়েছে অনেক্ষণ।চাপা এখনো ঘুম থেকে উঠেনি।অনিক অনেক্ষণ ধরে ডেকে চলেছে নামাযের জন্য।কিন্তু মেয়ের কোনো হুশ নেই।
-চাপা উঠো না।আযান দিয়ে দিয়েছে।নামায পড়ে না হয় ঘুমিও।
-উফ অনিক ঘুমাতে দাও প্লিজ।সারাটা রাত ঘুমাতে দাও নি।সারা রাত জ্বালিয়ে পুড়িয়ে এখন ডাকছো কেনো।যাও না প্লিজ।
-কই জ্বালিয়েছি।শান্তিতে একটু আদরও করতে দাও নি।এখন আবার জ্বালানোর বদনাম।রেগে যাচ্ছি কিন্তু।
-ওলে আমাল বাবুতা।রাগ করে না।প্লিজ ঘুমাতে দাও।
-নামায পড়ে ঘুমাও।কিন্তু এভাবে শুয়ে থাকা যাবে না।
-আমি যদি নামায পড়ি সকালের নাস্তা তোমাকে বানাতে হবে।
-ঠিক আছে রাজি।ভার্সিটিতে যাওয়ার আগে আমি নাস্তা বানিয়ে দেবো।
-ঠিক আছে উঠছি।
-এইতো আমার মিষ্টি বউ টা।
চাপার কপালে আলতো করে চুমু একে বাথরুমের দিকে পা বাড়ায় অনিক।কি মনে করে আবার ফিরে আসে। জগ থেকে পানি নিয়ে ছিটিয়ে দেয় চাপার চোখে মুখে।তারপর এক দৌড়ে গিয়ে বাথরুমে ঢোকে।চাপাও কম যায় না।বাইরে থেকে ছিটকিনি দিয়ে দেয় বাথরুমের।তারপর জোরে জোরে হাসতে হাসতে বলে,
-নে ব্যাটা এবার সামলা।
এদিকে নামায শেষে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে রাফসান।কুসুমের অবশ্য ঘুম পেলেও ঘুমোনোর সাহস হচ্ছে না।নতুন বউ ঘুমিয়ে পড়লে আবার কে কি বলবে কে জানে!বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো কুসুম।হঠাৎ পেছন থেকে কেউ শক্তভাবে জড়িয়ে ধরলো কুসুমকে।ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে উঠলো কুসুম।
(চলবে)