'তোর কপালে ভালো বউ নাই।' কথাটা বলেই সাধুবাবা চলে গেলেন। আমি তো পুরাই বেকুব বনে গেলাম। এ কি কান্ড! আমার কপালে ভালো বউ আছে কিনা এইটা সাধুবাবা জানলো কেম্নে? মাথায় কিছুই ঢুকলো না।
হাঁটতে হাঁটতে অবন্তীকে কল দিয়ে বললাম, 'ঘটনা তো একটা ঘটে গেছে।'
আমার কথা শুনে অবন্তী কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলো। আসলে সকালবেলা আসার সময় অবন্তী বলেছিলো তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে। তাকে নিয়ে নাকি ঘুরতে যেতে হবে। আর, আমি যে দেরি করে ফেলাতে অবন্তীর রাগ বাড়ছে তা বুঝতে পারছি।
অবন্তী বললো, 'এতো ন্যাকামি না করে কী হয়েছে বলেন। আপনার কথা শোনার অতো টাইম নাই।'
অবন্তীকে বললাম, 'রাস্তায় এক সাধুবাবার সাথে দেখা হলো। আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাধুবাবা কিছুক্ষণ ফুঁ দিয়ে দিলেন। জানো! উনার মুখ দিয়ে প্রচুর দুর্গন্ধ বের হচ্ছিলো। তাও চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলাম। হ্যালো, অবন্তী!'
অবন্তী রাগ করে কল কেটে দিয়েছে। আবার করতে হবে। নাহয় মজা পাবো না। তৃতীয় বারে কল রিসিভ করেই অবন্তী বললো, 'এতো বকবক শোনার টাইম নাই। ঘটনা কী বললে বলেন নাহলে রাখেন। কাজ আছে।'
এইবার খুব তাড়াতাড়ি বলতে শুরু করলাম। 'তো যেটা বলছিলাম। উনার শরীর থেকে যে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে মনে হয় মাস দুয়েক গোসল করেনি। অথচ মাত্রা পাঁচদিন গোসল না করাই তুমি কম্বলের ভিতরে পানি মেরে দিসিলা। আচ্ছা যাইহোক, ওসব দুঃখের কথা বলে লাভ নাই।
তারপর হলো কী কিছুক্ষণ মুখের ভিতর কী যেন পড়ে জিজ্ঞেস করছে, "তুই কী বিয়ে করছিস?" আমি এক নিঃশ্বাসেই বলে দিলাম যে বিয়ে করিনি। কারণ তো তুমি জানোই, এক বড় ভাইয়ের উপদেশের কথা তো তোমায় বলেছিলাম যে, ভাইয়া বলছিলেন, "বিয়ের পরে কখনো নিজেকে বিবাহিত মনে করবি না। নাহয় আনন্দ মাটি হয়ে যাবে।"'
আর কিছু বলতে যাবো অম্নিই অবন্তী বললো, 'আজকে আসেন। আপনার বাটপারি কথাবার্তা আমি বের করবো।' বলেই অবন্তী পুনরায় কল কেটে দিয়েছে।
এতে আমার কী দোষ বুঝলাম না। বড় ভাইয়ের কথা তো রাখতেই হবে। আবারো কল দিতে হবে। এখনো তো অনেক কিছুই বলার আছে।
ফের কল দিলাম। ষষ্ঠবারে কল রিসিভ হলো। এবার অবন্তী চুপচাপ। আমি আবার শুরু করলাম।
"তো সাধুবাবা দোয়া করে দিলেন আমি যেন মাশাআল্লাহ টাইপের বউ পাই। এখানেই শেষ না। আমি যখন হাঁটা দিবো তখন হয়েছে ঝামেলা। সাধুবাবা হাত এগিয়ে দিয়ে বললেন, 'তোরে অনেক দোয়া করে ফুঁ দিলাম। আর কেউ তোর ক্ষতি করতে পারবে না।' অবন্তী শুনছো! এই পর্যন্ত ঠিক ছিলো। আরেকটু যখন এগোবো তখন বললেন, "হাদিয়া দে বাবা।"
তুমি সকালবেলা পানি মেরে দেয়ায় যতোটা খারাপ লাগেনি তার চেয়ে বেশি খারাপ লাগছে সাধুবাবার টাকার কথা শুনে। প্রথমে ভাবছি মানবসেবা করছেন। পরে দেখি না, তিনি নিজের পেট সেবা করতেই এতোকিছু করছে।
বিশ্বাস করো, যাওয়ার সময় মানিব্যাগ রেখে গেছিলাম। পকেটে টাকা ছিলো না। এইবার তুমিই বলো আমি কী করবো!'
অবন্তী প্রতুত্তরে কিছু না বলে বেশ কিছুক্ষণ হেঁসে তারপর বলল, 'তারপর কী হলো। আপনারে কী পিটিয়েছে?'
বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই! অবন্তীর এই কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। তাও নিজেকে স্বান্তনা দিয়ে আবার বলতে শুরু করলাম।
'কোনো টাকা দিতে না পারাই সাধুবাবা আমায় অভিশাপ দিয়ে দিছে। আমি নাকি কখনো ভালো বউ পাবো না। বিশ্বাস করো, এই কথা শোনার পরে থেকে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে। নিজেকে একা একা মনে হচ্ছে। আমায় একটু স্বান্তনা দাও প্লিজ।'
অবন্তী কটমট করে বলল, 'বউ রাইখা আরেকটা বিয়ে করার ধান্দা তাই না! আসেন, আজকে সিঙ্গেল বানাই ছাড়বো।'
অবন্তী রেগে গিয়ে কল কেটে দিয়েছে। আমি কিন্তু এখনো বুঝতে পারছি না, কীভাবে আমায় সিঙ্গেল করবে।
সমাপ্ত।
#অবন্তী_সমাচার
~ সাধুবাবা।
লেখা - মোহাম্মদ নুরুল আজিম চয়ন।
|| ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ||