মন_যে_আমার_হারিয়ে_ফেলেছি

0 0
Avatar for Nipa1234
3 years ago

পর্ব-1,2

লাল শাড়ি, লাল চুড়ি, দুই হাত ভরা মেহেদি, মীরার এই নতুন রূপ দেখে বাড়ির সবাই তো অবাক, যেন রাতের বেলা সূর্য দেখছে সবাই।

একদম পূর্ণিমার চাঁদের মত সুন্দর লাগছে মীরাকে।

ড্রইং রুমের সবাই নিজেদের আলোচনা বাদ দিয়ে মীরার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক ভাবে, এবার মীরার কিছুটা লজ্জা ও বিব্রত লাগছে তাকে এভাবে দেখার কি আছে?

সবার ঘোর কাটিয়ে মীরার চাচাতো বোন কনিকা বলেই ফেলল-

-- মীরা আজ তোকে একদম বাঙালি মেয়েদের মত লাগছে,

মীরার দাদিমা বললো-

--শুধু বাঙালি মেয়েদের মতো না বল একদম বাঙালি নতুন বউ এর মতো লাগছে, আমার মীরাকে,

বাড়ির সবাই মীরার দাদির কথায় সায় দিয়ে, একই কথা বললো, মীরাকে একদম বাঙালি নতুন বউয়ের মত লাগছে।

মীরা দাদির পাশে বসতে বসতে বললো-

-- আচ্ছা তোমরা সবাই এভাবে বলছো যেন আমি বিদেশী! আমি বাঙালি মেয়ে আমাকে তো বাঙালির মতো লাগবে তাই না? এর আগে কোনদিন শাড়ি পড়ি নি ঠিক আছে, তার মানে তো এই নয় যে আমি বিদেশী মেয়ে?

মীরার মা বললো-

-- হুম তাইতো, তোমরা শুধু শুধু আমার মেয়ের দিকে এভাবে তাকাচ্ছো, আমার মেয়ে একদম খাঁটি বাঙালি,

কথাটা শেষ করেই হেসে দিলো মীড়ার মা।

-- মা তুমিও কিন্তু আমার বিপক্ষে বলছো,

-- আমি আবার বিপক্ষে বললাম কই আমিতো তোর পক্ষেই বললাম।

এভাবেই বাড়ির সবাই মীরাকে নিয়ে নানান ধরনের দুষ্টুমি করছে, আর মীরাও সবার সাথে অনেক মজা করছে।

মীরার বাবা আশরাফ চৌধুরী ইঞ্জিনিয়ারি পাশ করে আমেরিকায় পাড়ি জমায় মীড়ার জন্মের অনেক আগেই। এর পরে নিজের আপন চাচাতো বোন নিলুফা (মীরার মা) কে বিয়ে করে আমেরিকায় নিয়ে যায় আশরাফ চৌধুরী। সেখানেই জন্ম হয় মীরার বড় ভাই শিহাব, এবং তার তিন বছর পরে মীরার।

শিহাব আর মীরা এক ভাই এক বোন, জন্ম থেকে আমেরিকায় বড় হওয়ার কারণে তাদের আচরণ চলাফেরা অনেকটাই বিদেশীদের মত। তবে মীরার মা নিলুফা ও বাবা আশরাফ চৌধুরী প্রায় ৩,৪ বছর পর পরই তাদেরকে নিয়ে বাংলাদেশে ঘুরতে আসতো। আর যেহেতু মীরার মা আর বাবা আপন চাচাতো ভাইবোন ছিল তাই মীরার নানাবাড়ি আর দাদা বাড়ি একটাই।

মীরার ভাই শিহাব আমেরিকান মেয়ে বিয়ে করেছে প্রায় ২বছর হয়েছে।

শিহাবের স্ত্রী প্রেগন্যান্ট থাকার কারণে এবার মীরাদের সাথে দেশে আসতে পারেনি শিহাব।

মীরার মামাতো বোন কনার বিয়ে, এই বিয়ে উপলক্ষেই এবার দেশে এসেছে মীরা আর তার মা, অবশ্য তার বাবা আশরাফ সাহেবও আসবে কিছু দিন পরে, বিয়ের এখনো ১মাস বাকি। বিয়ের দু'দিন আগেই আশরাফ সাহেব চলে আসবে।

আজ কণার আনুষ্ঠানিক এঙ্গেজমেন্ট হবে, এর আগে ঘরোয়াভাবে ছেলের মা, বাবা তাদের কয়েকজন আত্মীয় স্বজন নিয়ে কণাকে দেখে গেছে, তাদের সবাই কণাকে অনেক পছন্দ করেছে। আর পছন্দ তো করতেই হবে কনা দেখতেও মা শা আল্লাহ অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে।

তবে পাত্রকে এখনো সরাসরি দেখেনি কনা শুধু ছবি দেখেছে, ছবি দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেছে, এত সুন্দর একজন জীবনসঙ্গী স্বামী হিসেবে পাবে কখনো ভাবতেই পারেনি কনা।

মীরা আর কনা এক মাসের ছোট বড় তাই দুজন দুজনকে নাম ধরেই ডাকে, সন্ধ্যা হয়ে গেছে একটু পরেই হয়তো ছেলেপক্ষ চলে আসবে। কনা পার্লার থেকে এসে নিজের রুমে বসে আছে সাথে তার অনেক বান্ধবী, এর মধ্যে মীরা কনার রুমে এলো। মীরার এই শাড়ি পরা রূপ দেখে কনাও একদম অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো-

-- ও মাই গড এ আমি কাকে দেখছি?

মীরা বললো-

-- কনা এবার তুই শুরু হয়ে যাস না প্লিজ, এতক্ষণ সবার মুখে বাঙালি রূপ শুনতে শুনতে নিজেকে ফরেনার মনে হওয়া শুরু হয়েছে,

-- তুইতো বিদেশী-ই তুই আবার বাঙালি কবে হলি? আজ প্রথম তোকে বাঙালি লাগছে মীরা, মা শা আল্লাহ একদম ডানা কাটা পরি।

-- তাই না! আর তোকে?তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে আজ শুধু এঙ্গেজমেন্ট করে তোকে রেখে যেতে পারবেনা তোর জামাই, এক বারে সাথে করে নিয়ে যেতে চাইবে।

মীরার কথা শুনে কনা একটু লজ্জা পেলো, মীরা আবার বললো-

-- এই তোর হাসব্যান্ড দেখতে কেমন রে?

-- আরে আমি কি দেখেছি নাকি!

-- দেখিস নি মানে! সামনাসামনি না দেখলে কি হয়েছে ছবিতো দেখেছিস,

-- একদম ভূতের মতো,

-- তাই না, তাহলে আমরাও দেখি এ কেমন ভূত যা দেখে আমার বোন কনা বিয়ে করার জন্য একদম পাগল হয়ে গেল,

-- আমি পাগল হলাম কবে, বাবা জোর করলো তাই না করিনি।

-- ও আচ্ছা তাই তো, তোর এত সুন্দর করে সাজুগুজু দেখলেই বোঝা যাচ্ছে তোকে জোর করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে।

এমনই অনেক মজার কথা বলে কনা আর মীরা দুষ্টুমি করছে, এর মধ্যে একজন এসে বলে গেলো ছেলেপক্ষ চলে এসেছে।

কনার ছোট খালা কনাকে নিয়ে যেতে এলো,

-- কনা মীরা চলো সবাই বসে আছে

মীরা বললো-

-- আন্টি আপনি কনাকে নিয়ে যান আমি আসতেছি,

-- মীরা তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস? বললো কনা,

-- তুই যা আমি আমার ক্যামেরা টা নিয়ে আসতেছি।

কনার খালা কনাকে নিয়ে এলো, ছেলে পক্ষের সামনের সোফায় বসানো হলো কনাকে। পাত্রকে সামনে থেকে দেখে ছবির থেকেও অনেক বেশি সুন্দর লাগছে কনার কাছে।

গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে সাজানো টেবিলের ওপরে ছেলে পক্ষের একটা আংটি আর মেয়ে পক্ষের একটা আংটি রাখা হলো।

এর মধ্যে মীরা এসে বললো-

-- দেখি দেখি আমি রিং দুইটার ছবি তুলে নেই,

আংটির ছবি তুলেই ছেলে পক্ষের দিকে ক্যামেরা ধরলো মীরা,

ক্যামেরায় যার মুখ দেখা গেল তা যেন কল্পনায়ও কোনদিন ভাবেনি মীরা। কনার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে আকাশের, আর ক্যামেরা ধরে আকাশ কে সামনে দেখেই মীরার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।

ক্যামেরা টা নামিয়ে একদম আকাশের সামনে দাড়িয়ে আছে মীরা, মীরাকে দেখে আকাশও যেন একদম তলিয়ে যাচ্ছে গভীর সমুদ্রের মাঝে।

এত বছর পরে সেই অপরিচিত চেনা মুখ তার সামনে! তাও এমন মূহুর্তে যখন সে কাউকে আপন করতে যাচ্ছে, নিজের জীবনসঙ্গী বানাতে যাচ্ছে।

আকাশের ভাবনা শেষ না হতেই তার হাতে আংটি টা দিয়ে তার মা বললো-

-- আকাশ বাবা এবার কনাকে আংটি টা পরিয়ে দে,

কনার পরিবারের সবাই কনার পাশে বসে আছে, কনার মা মীরাকে কনার পাশে বসালো, কনার অন্য পাশে আকাশ কে বসানো হলো। মীরার ইচ্ছে করছে এখান থেকে উঠে যেতে কিন্তু তা পারছে না, এদিকে সবাই বলাবলি করছে আংটি পড়িয়ে দেবার জন্য।

কনার হাতটা ধরে মীরার দিকে একবার তাকিয়ে, কনার হাতে এঙ্গেজমেন্ট এর আংটি টা পরিয়ে দিলো আকাশ।

এবার কনাও আকাশকে আংটি পরিয়ে দিল।

সম্পন্ন হয়ে গেল আকাশ আর কনার এংগেজমেন্ট।

দু'পক্ষের সবাই অনেক খুশি, বন্ধু বান্ধবের অনেক নাচ-গান আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে গেল তাদের এংগেজমেন্ট অনুষ্ঠান। তবে নাচ গান অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে আকাশের চোখ সবার আড়ালে অনেকবার দেখেছে মীরাকে।

রাত ১টা বাজে মীরার চোখে কোনো ঘুম নেই, এত বছর পরে এভাবে আকাশের সাথে কোনদিন দেখা হবে তা কখনো ভাবতেই পারেনি মীরা। আকাশের সাথে জীবনের চারটা দিন সামান্য কিছু কথা হয়েছিল মীরার, কথা বললে ভুল হবে একটা ডিল বা চুক্তি হয়েছিল। আচ্ছা আকাশ কি কখনো তাকে ভেবেছে?

এদিকে আকাশের চোখেও ঘুম নেই, তার এখন কনার কথা ভাবা উচিৎ কিন্তু না তার ভাবনায় বার বার একটা চেহারাই ভেসে উঠছে তা হলো মীরা.....শুধুই মীরা। আচ্ছা মীরা কি তাকে নিয়ে কখনো ভেবেছে?

একটা চুক্তি, একটা সিগনেচার, একসাথে কাটানো চারটা দিন কিছু কথা কিছু সময়।

যদিও এমন কোন বেশি কথা হয়নি তার সাথে মীরার, তাও মীরা কি তাকে কখনো ভাবেনি?

কনট্রাকের শেষ সিগনেচার টা আজও করা হয়নি, সে হিসেবে মীরা আজও......

আকাশের ভাবনা শেষ হবার আগেই তার ফোনে রিং বেজে উঠল, মোবাইলে তাকিয়ে দেখে কনা ফোন করেছে, মোবাইল টা হাতে নিয়ে কপালের সাথে লাগিয়ে চুপ করে বসে আছে আকাশ।...........

চলবে..........

#মন_যে_আমার_হারিয়ে_ফেলেছি

লেখা- তানজীলা হাসান

পর্ব-২

যদিও এমন কোন বেশি কথা হয়নি তার সাথে মীরার, তাও মীরা কি তাকে কখনো ভাবেনি?

কনট্রাকের শেষ সিগনেচার টা আজও করা হয়নি, সে হিসেবে মীরা আজও......

আকাশের ভাবনা শেষ হবার আগেই তার ফোনে রিং বেজে উঠল, মোবাইলে তাকিয়ে দেখে কনা ফোন করেছে, মোবাইল টা হাতে নিয়ে কপালের সাথে লাগিয়ে চুপ করে বসে আছে আকাশ।...........

সম্পূর্ণ রিং হয়ে কেটে যাওয়ার পরে, আর কল দিলো না কনা, আকাশ চুপ করে বসে আছে কিছুই যেন ভালো লাগছে না, কনা এত সুন্দর একটা মেয়ে, তার মা বাবা কনাকে পছন্দ করেছে, আজ সে কণাকে আন্টি পড়িয়েছে আর মাত্র একমাস পরে তাদের বিয়ে। এখন তার শুধু কনাকে নিয়ে ভাবার কথা অথচ তার ভাবনা জুড়ে বসে আছে মীরা। নাহ্ এখন এসব ভাবলে চলবে না, কনা নিজে থেকে কল দিয়েছে, এখন তাকে কল না করলে সে হয়তো মাইন্ড করবে, ভেবে কনার নাম্বারে কল দিলো আকাশ।

প্রায় ৩০মিনিট কথা হলো দুজনের, ফার্মাসি কমপ্লিট করেছে কনা, বেশ স্মার্ট তাই তার কথা বলার বাচন ভঙ্গিও যথেষ্ট সুন্দর। তার সাথে কথা বলতে বেশ ভালোই লেগেছে আকাশের, কিন্তু তার পরেও মনের মধ্যে কোথাও যেন মীরা শব্দ টা আটকে আছে।

সকাল ১০ঃ৩০ মীরা এখনো ঘুমিয়ে আছে, কনা আর কনিকা দুই বোন এসে মীরাকে টেনে তুললো, চোখ কচলাতে কচলাতে মীরা বললো-

-- কি হইছে এত সকাল-সকাল টানাটানি করছ কেন? আমি আর একটু ঘুমাবো,

-- মীরা এখন এতো সকাল না ১০ঃ৩০ বাজে, জলদি ওঠো ফ্রেশ হও রেডি হয়ে নাও।

-- রেডি হব মানে কিসের রেডি?

-- একটু পরে আমরা তিনজন ছেলে পক্ষের সাথে বিয়ের শাড়ি, লেহেঙ্গা, আরো অন্যান্য কেনাকাটা করতে যাবো।

-- না না কানা, কনিকা তোমরা যাও প্লিজ, আমার একটু অন্য কাজ আছে,

-- অন্য কাজ সব পরে হবে মীরা, আমার বিয়ের শাড়ি লেহেঙ্গা কেনার সময় তোমাকে সাথে থাকতেই হবে, বললো কনা।

-- কনা, আমি শাড়ি লেহেঙ্গা এসব কোনটা কেমন ডিজাইন হলে ভালো হয় ওসব কিচ্ছু বুঝিনা। আমি কি এসব পোশাক পরি বলো? প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, স্কার্ট, টপস, এসব হলে একটা কথা ছিল

কিন্তু শাড়ি লেহেঙ্গা এসবের তো আমি কিছুই বুঝিনা, আমি গিয়ে কি করবো বলো?

-- এত কিছু জানিনা মীরা তুমি আমাদের সাথে যাচ্ছো ব্যাস।

মীরা অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কনা আর কনিকা কিছুতেই রাজি হলো না তাই মীরাকে সঙ্গে নিয়েই মার্কেট এলো।

যমুনা ফিউচার পার্কে কনা দের জন্য অপেক্ষা করছিলো, আকাশ সাথে তার বোন ও দুইজন বন্ধু। আকাশ দের সামনে এসে দাঁড়াল মীরা কনা ও কনিকা, আকাশের চোখে একবার চোখ পড়তেই নিচ দিকে তাকিয়ে আছে মীরা।

আজ মীরা সাদা রঙের একটা হাতাকাটা টপস পরা, ব্রাউন কালারের খোলা চুল, কানে একটা সিলভার রঙের দুল পরা, আজ তাকে একদম সেই পুরনো মীরার মতো লাগছে, ছয় বছর আগে ক্যালিফোর্নিয়ায় যেই মীরাকে দেখেছিল আকাশ, আজ ঠিক তেমনই লাগছে তাকে। সবার সাথে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে আকাশ বারবার মীরাকেই দেখছে, মীরাও বিষয়টা ভালো করেই বুঝতে পারছে।

শাড়ির শোরুমে বসে সবাই শাড়ি দেখছে, কিন্তু না চাইতেও আকাশের চোখ বার বার মীরাকে দেখছে, এভাবে আকাশের সামনে বসে থাকতে মীরার যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। কিন্তু কিছু করার তো নেই, তাই চুপ করে বসে আছে।

সব কিছু কেনাকাটা শেষ। সবাই উপরে খাবারের টেবিলে বসে আছে, অনেক রকমের খাবার অর্ডার দেয়া হয়েছে, সবাই পিজা খাচ্ছে কিন্তু মীরা শুধু ফ্রেন্স ফ্রাই খাচ্ছে। এর মধ্যে হঠাৎ করে আকাশ বলে উঠলো-

-- মীরা তোমার তো পিজা অনেক পছন্দ, পিজাটা খেতে পারো বেশ ভালো হয়েছে,

আকাশের মুখে এমন কথা শুনে মীরা চমকে গেল, আর সবাই একটু অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকালো, কনিকা বললো-

-- আকাশ ভাইয়া মীরা পিজা পছন্দ করে আপনি কিভাবে জানলেন?

আকাশ নিজেই যেন চমকে গেল হঠাৎ করে এরকম একটা কথা বের হয়ে যাবে সে নিজেও বুঝতে পারেনি, তাও কাউকে কিছু বুঝতে দিলো না বেশ বুদ্ধিমত্তার সাথে উত্তর দিল-

-- আসলে শুধু মীরা না, যেসব ছেলে মেয়েরা আমেরিকায় বড় হয় তাদের বেশিরভাগ সবাই পিজা খুব পছন্দ করে। তাই বললাম যেহেতু মীরাও আমেরিকায় বড় হয়েছে।

এবার সবাই আবার স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে, নানান কথার মাঝে আকাশের বোন মীরাকে বললো-

-- মিরা তোমার কথা শুনলে বোঝা যায় না তুমি আমেরিকায় জন্মেছ ওখানে বড় হয়েছ, এত সুন্দর করে বাংলা তো এখন বাঙালিরাও বলে না,

-- আসলে আপু আম্মু একজন খাটি বাঙালি, তাছাড়া বাংলা সাহিত্যে অনার্স মাস্টার্স করেছে, তাই আমরা আমেরিকার বড় হলেও আম্মু সব সময় বাসায় আমাদের সাথে বাংলায় কথা বলতো, শুদ্ধভাবে বাংলা শেখাতো, আর আম্মুর সাথে সব সময় বাসায় আমাদের বাংলায়-ই কথা বলতে হতো, না হলে আম্মু বকা বকি করত। ভাইয়া আমি দুইজনই বাসায় তার সাথে সব সময় বাংলায় কথা বলি, তাই বাংলা বলতে কোনো সমস্যা হয় না। তাছাড়া আমি নিজেও বাংলা ভাষাকে অনেক ভালোবাসি।

-- তোমার আম্মুর কথা শুনে খুব খুশি হলাম, আজকালকের বাবা-মা তো ছেলে মেয়েকে শুধু ইংরেজি শেখাতে চায়, আর তোমার আম্মু আমেরিকায় থেকেও তোমাদেরকে বাংলা শিখিয়েছে, খুব ভালো লাগলো। কথাগুলো বললো আকাশের বোন।

অনেক গল্পগুজব করে দু'পক্ষ যে যার মত বাসায় চলে এলো, বাড়ির সবাই বিয়ের শপিং দেখা নিয়ে ব্যস্ত, মীরার মা কাকি তারাও আলোচনা করছে আগামীকাল তারাও শপিং করতে যাবে। এ বিয়ে নিয়ে সবাই অনেক আনন্দিত কারো মনে কোন কষ্ট নেই, শুধু মীরাই বুঝতে পারছেনা তার কি আসলেই ভালো লাগছে? না কি লাগছে না?

আকাশকে দেখার আগ পর্যন্ত এ বিয়ে নিয়ে মীরারও অনেক জল্পনা-কল্পনা ছিল, অনেক গানের নাচের প্র্যাকটিস করেছে, কত আয়োজন কিন্তু এখন যেন কিছুই ভেতর থেকে আসছে না। মন যেন ছয় বছর আগের ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে গেছে। আকাশের আজও মনে আছে মীরা পিজা খেতে পছন্দ করে, অবশ্য মনে থাকারই কথা আকাশের সাথে কাটানো চারদিন সময় মীরা শুধু পিজাই খেয়েছিল।

কিছুই যে ভালো লাগছেনা মীরার, মোবাইল টা হাতে নিয়ে গেমস খেলছে, এর মধ্যে কনা রুমে এলো লেহেঙ্গার ওড়নাটা মাথায় দিয়ে বারবার নিজেকে আয়নায় দেখছে কনা, আসলে বিয়ের কনে মনে হয় এমনই হয়, হোক সে বাঙালি অথবা আমেরিকান, আমেরিকায় মীরার অনেক বান্ধবীর বিয়ে দেখেছে মীরা। তারাও বিয়ের আগে বিয়ের জন্য অনেক এক্সাইটেড ছিল।

-- আর দেখতে হবে না কনা অনেক সুন্দর লাগছে, বললো মীরা,

-- মীরা এখন মনে হচ্ছে পিংক লেহেঙ্গা টা নিলে আরো বেশি ভালো লাগতো।

-- আরে না তোমার গায়ে এটাই অনেক বেশি ভালো লাগছে।

-- হুম আকাশও মনে হয় এটাই পছন্দ করেছে তাই আমি আর না করিনি,

-- হুম, এখনই আকাশের জন্য এত ভাবনা আগে আগে যেন কি হবে...

মীরার কথা শেষ না হতেই তার মোবাইলে রিং বেজে উঠল, একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন, কল রিসিভ করার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে বললো-

-- মীরা! কেমন আছো,

মীরা বুঝতে পারলো কে কথা বলছে, তাও একটু শিওর হওয়ার জন্য বললো-

-- কে বলছেন প্লিজ?

-- ক্যালিফোর্নিয়ায় সাহায্যের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা এক অসহায় বাঙালি ছেলে আকাশ।

আকাশের কথা শুনে মীরা কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না, তার সামনে কনা দাঁড়িয়ে আছে, মনের অজান্তেই যেন হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে মীরার, এর মধ্যে কনা বললো-

-- মীরা আমি নিচে যাচ্ছি, কথা শেষ করে তুমিও নিচে চলে এসো প্লিজ সবাই এখন খেতে বসবে,

-- ওকে,

কনা চলে গেলো, মীরা মোবাইল কানে নিয়ে চুপ করে আছে, আকাশ বললো-

-- কেমন আছো?

-- হুম ভালো, আমার নাম্বার পেলে কোথায়?

-- মীরা মন থেকে চাইলে সবকিছু পাওয়া যায় আর তোমার নাম্বার এটা তো খুব সাধারণ একটা বিষয়,

-- আমাকে কল দিয়েছ কেন?

-- মীরা তোমার সাথে অনেক জরুরি কথা আছে,

--আমাকে ফোন দেওয়া তোমার একদম ঠিক হয়নি।

-- অবশ্যই হয়েছে, তোমার সাথে আমার অনেক জরুরি কথা আছে,

-- আচ্ছা বলো কি বলতে চাও!

-- মীরা আমি যা বলতে চাই ফোনে বলা যাবে না, আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।

-- কি বলছো আকাশ! তোমার সাথে দেখা করা কিভাবে সম্ভব, সরি আমি পারবো না। আর প্লিজ তুমি আমাকে আর কল দিও না,

-- মীরা শুধু আমার নয়, আমার মনে হয় তোমারও আমাকে কিছু বলার আছে,

মীরা কি উত্তর দিবে নিজেও বুঝতে পারছে না, তাও বললো-

-- কয়েক দিন পরে কনার সাথে তোমার বিয়ে, এছাড়া তোমার সাথে কিছুই বলার নেই আমার, আমি রাখছি আকাশ।

বলেই ফোন কেটে দিল মীরা। মীরার সমস্ত শরীর যেন ঝিমঝিম করছে কেন হচ্ছে এমন? কিছুই ভালো লাগছে না, আকাশ কি বলতে চায় তাকে, তাছাড়া দুদিন পরে আকাশের সাথে তার বোনের বিয়ে, না আর ভাবতে পারছে না, কেন এত অস্থির লাগছে? রুমের দরজা, লাইট বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো মীরা।

এর মধ্যেই আকাশ আবার ফোন দিল, এবার মীরা রিসিভ করল না, তবে অসহ্য রকমের একটা অনুভুতি হচ্ছে, ইচ্ছে করছে ফোনটা রিসিভ করে আকাশের সাথে কথা বলতে। কিন্তু না ফোন রিসিভ করলো না মীরা।

এর মধ্যেই মোবাইলে একটা মেসেজ এলো-

-- মীরা কাল সকাল ৭টায় রমনাপার্কের ২নাম্বার গেটে আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো, আমি জানি তুমি আসবে, আর ডিভোর্স পেপারে সিগনেচার টা কিন্তু আজও করা হয়নি.....

চলবে.......

1
$ 0.00
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments