মন_যে_আমার_হারিয়ে_ফেলেছি

0 0
Avatar for Nipa1234
3 years ago

পর্ব-৩

-- মীরা কাল সকাল ৭টায় রমনাপার্কের ২নাম্বার গেটে আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো, আমি জানি তুমি আসবে, আর ডিভোর্স পেপারে সিগনেচার টা কিন্তু আজও করা হয়নি.....

মেসেজ টা দেখেই মীরার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো, আকাশ কেন এমন মেসেজ দিল তাকে? কি বলতে চায় সে? এর মানে কি?

না আর ভাবতে পারছে না মীরা, আকাশের নাম্বারে কল দিলো কিন্তু নাম্বার বন্ধ, আবার চেষ্টা করলো, না এবারও হলো না নাম্বার বন্ধ করে রেখেছে আকাশ।

অন্ধকার রুমে শুয়ে আছে মীরা, এই মুহূর্তে তার জীবনে কি চলছে সে নিজেই যেন কিছু বুঝতে পারছেনা। কি করবে সে?

৬ বছর পরে আকাশকে দেখে তারই বা কেন এমন লাগছে? হ্যাঁ একটা সময় আকাশকে সে খুঁজেছিল সত্যি কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা তো একদম ভুলেই গিয়েছিল সে, অবশ্য পুরোপুরি ভুলে গিয়েছিল বললে ভুল হবে আকাশ নামটা কোথাও শুনলেই মীরা যেন একটু চমকে যেতো সব সময়।

শুয়ে শুয়ে অতীতের ভাবনায় ডুব দিল মীরা,

#৬বছর_আগেঃ

ক্যালিফোর্নিয়ায় বিচ পারে একটা রেস্টুরেন্ট এর মধ্যে বসে মীরা তার কিছু বান্ধবীদের সাথে গল্প করছিল, বান্ধবীরা সবাই ছিল ফরেনার, তাদের মধ্যে মীরা একাই বাঙালি ছিল।

তাদের পিছনের টেবিলে বসা ছিল আকাশ ও তার বন্ধু, আকাশ ও তার বন্ধুর আলোচনা শুনে মীরা বুঝতে পেরেছিল, আকাশ অনেক চেষ্টা করে, কয়েকটা দেশ ঘুরে বন্ধুর সাহায্যে অবশেষে টুরিস্ট ভিসায় আমেরিকা এসেছে কিন্তু এখন কোনো ভাবে থাকতে পারছে না, একদিকে ভিসার মেয়াদও প্রায় শেষ অন্য দিকে এই ভিসা নিয়ে সে কোনো জবও পাচ্ছে না। কিন্তু আকাশ কোনো ভাবেই দেশে ফিরে যেতে চাচ্ছে না, এ নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে অনেক প্ল্যান চলছিল কি করা যায়। সাথে আকাশের ফিনান্সিয়াল সমস্যা নিয়েও আলোচনা করছিল।

মীরা তাদের সব কথা শুনছিল, তার কিছুক্ষণ পরেই আকাশ ও তার বন্ধু রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল, প্রায় ৩০মিনিট পরে মীরাও রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়ির দিকে যাচ্ছিল, এমন সময় খেয়াল করলো ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তপ্ত রোদে একটা গাছের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ, অবশ্য প্রচন্ড শীতের মধ্যে এমন রোদ খারাপ লাগে না। ক্যালিফোর্নিয়ায় রোদকে সবাই অনেক উপভোগই করে।

সে যাই হোক, আকাশ দাড়িয়ে আছে রোদে তার ফর্সা মুখটা একদম লাল হয়ে আছে, তার চেহেরায় চিন্তার রেখা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, মীরা হাটতে হাটতে আকাশের বেশ কাছে চলে এল, আকাশ গভীর চিন্তায় মগ্ন কোনো দিকে খেয়াল করছে না। মিরা আকাশকে ক্রস করে নিজের গাড়িতে গিয়ে বসলো, গাড়ি স্টার্ট দিতে গিয়েও কি মনে করে স্টার্ট দিল না গাড়ি থেকে নেমে আবার আকাশের সামনে এলো।

আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে বললো-

-- হ্যালো, আমি মীরা,

মীরার দিকে তাকিয়ে আকাশ একটু অবাক হলো,

-- আমি আকাশ, আপনি বাঙালি?

-- জন্মসূত্রে আমেরিকান হলেও আমার আর একটা পরিচয় আমি বাঙালি।

-- nice to meet you

-- আমি কি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে পারি?

-- জি অবশ্যই,

-- আপনার বন্ধুর সাথে আপনার আলোচনা গুলো সব শুনেছি, আপনি দেশে ফিরে যেতে চাচ্ছেন না,

-- হুম, আসলে অনেক কষ্ট করে আমেরিকা এসেছি, অনেকগুলো পথ পাড়ি দিতে হয়েছিল এখানে আসার জন্য, অনেকগুলো রাষ্ট্র ঘুরতে হয়েছিল, ভেবেছিলাম একবার এখানে আসতে পারলে কোনো না কোনো ব্যবস্থা করে নেব। এভাবে ফিরে যেতে হবে ভাবতে পারিনি, আর ফিরে যেতেও চাচ্ছি না।

আকাশের কথা গুলো শুনছিলো মীরা, আর কেন জানি অলৌকিক ভাবে এক অন্যরকম মায়া কাজ করছিল আকাশের উপরে। মীরা বলল-

-- চলুন সামনে বিচ পারে গিয়ে বসে কথা বলি?

-- ওকে চলুন।

সী-বীচে বসে আকাশ আর মীরা প্রায় এক ঘন্টা কথা বলল, মীরার সমস্ত পরিচয় জানার পরে একসময় আকাশ মীরা কে বলল-

-- আচ্ছা আপনি তো আমেরিকার নাগরিক আপনি কি কোন ভাবে পারেন আমাকে সাহায্য করতে? যাতে দেশে ফিরে যেতে না হয়, আমি এখানেই থাকতে পারি!

আকাশের কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে মীরা কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইল, প্রায় ৫ মিনিট চুপ করে বসে থাকার পরে, শান্তভাবে মীরা বলল-

-- হ্যাঁ পারব, আপনাকে দেশে ফিরে যেতে হবে না। আর একটা কথা, আমি কাউকে আপনি করে বলতে কমফোর্টেবল ফিল করি না তুমি বললে আপনার সমস্যা হবে?

-- না না কোনো সমস্যা নেই আপনি আমাকে তুমি বলতে পারেন,

-- ok Thank you, যেহেতু আমি তোমার থেকে ছোট হব, আর ছোট বা বড় সেটা বড় কথা নয়, তুমিও আমাকে তুমি বললে আমার ভালো লাগবে,

-- ওকে, কিন্তু তুমি আমাকে কিভাবে সাহায্য করবে? আমার কি করতে হবে? তাছাড়া আমার কাছে বেশি টাকা বা ডলার নেই।

-- হুম, সেটার প্রয়োজন হবে না,

-- তাহলে কি করতে হবে?

-- আমাকে বিয়ে করতে হবে,

একটু চমকে গিয়ে আকাশ বললো-

-- মানে? সরি আমি বুঝলাম না?

-- আমরা দুজন কন্টাক্ট ম্যারেজ করব আমার হাজব্যান্ড হওয়ার সূত্রে তুমি সিটিজেনশিপ পেয়ে যাবে, সিটিজেনশিপ কাগজ পাওয়ার পরে কনট্রাক শেষ হয়ে যাবে। আপাতত তোমাকে সাহায্য করার জন্য এই একটাই সহজ রাস্তা আমার জানা আছে। এখন তোমার ইচ্ছে?

-- আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, তুমি আমার সাথে ফান করছো না তো?

-- তুমি আমার পরিচিত কেউ নও তোমার সাথে ফান করবো কেন? আগামীকাল সকাল দশটায় তোমার সকল পাসপোর্ট ভিসার কাগজপত্র নিয়ে এই রেস্টুরেন্টে চলে আসবে আমি এখানেই থাকব।

কথা শেষ করেই মীরা চলে গেলো।

পরদিন সকাল ১০টায় মীরা ঐ রেস্টুরেন্টে এসে দেখে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। হুট করে একজন এঞ্জেলের মত করে এসেই আকাশের সকল সমস্যার সমাধান করে দিল মীরা। কিছু কাগজপত্র প্রসেসিং করতে চার দিন সময় লেগেছিল, ঐ চারদিন সময় মীরা আর আকাশ সারাদিন একসাথে কাটিয়েছে অনেক ছোট ছোট গল্প করেছে, আর মীরা শুধু পিজা খেয়েছে। চারদিন পরে আকাশ কে বিয়ে করে নিল মীরা। কন্ট্রাক্ট অনুযায়ী সিটিজেনশিপ পাওয়ার সাথে সাথে আকাশ আর মীরা ডিভোর্স নিয়ে নিবে, এটা ছিল শুধুমাত্র একটা কন্ট্রাক বিয়ে শুধু সিটিজেনশিপ পাওয়ার জন্য।

এর পরে আকাশ নিউইয়র্কে চলে যায় সেখানে জব করা শুরু করে, আকাশের সাথে মাঝে মাঝে খুব সামান্য কথা হতো মীরার, তবে তাদের আর দেখা হয় নি। দুজন দুজনের কাজে বিজি হয়ে যায়, আকাশ দিনরাত পরিশ্রম করে কাজ করছে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য। মীরাও নিজের পড়াশোনা বন্ধু বান্ধবী পার্টি ক্লাব ডিস্কো এসব নিয়ে ব্যস্ত। প্রায় ৩বছর পরে আকাশ সকল লিগেল কাগজ পত্র পেয়ে যায়, এর পরে মীরা আকাশকে কলকরে তাদের ডিভোর্সের জন্য একটা নির্দিষ্ট দিন নির্ধারণ করে। আকাশও রাজি হয়ে যায়।

কিন্তু নির্ধারিত তারিখে মীরা আকাশের সাথে দেখা করতে পারে না, কারন তার ১সপ্তাহ আগেই তার মায়ের সাথে হঠাৎ করে বাংলাদেশে চলে আসতে হয় তাকে, তার নানু ভাই হসপিটালে আইসিইউ তে ভর্তি ছিল এবং তারা আসার তিন দিন পরেই তার নানু ভাই মারা যায়। এর মধ্যে মীরা আর আকাশ কে ফোন দেয় না।

দেড় মাস পরে যখন মীরা আমেরিকার ফিরল, তখন তার মোবাইল টা অন করার সাথে সাথে আকাশের অনেক গুলো মেসেজ পায়, শেষ মেসেজ টা ছিলো এমন-

-- মীরা তোমার কথা অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখে আমি এসেছিলাম, কিন্তু তুমি আসোনি। তোমার মোবাইলে অনেকবার কল দিয়েছি তোমাকে পাইনি, এরপরে প্রায় একমাস তোমাকে প্রতিদিন কল দিয়েছি কিন্তু তাও তোমার কোন সন্ধান পাইনি, তোমার মোবাইল বন্ধ। তোমার কোন ঠিকানা আমার কাছে ছিল না তাই কোন ভাবে যোগাযোগ করতে পারলাম না,অফিস থেকে আমাকে তাদের প্যারিসের ব্রাঞ্চে ট্রানস্ফার করে দিচ্ছে তাই আগামীকাল প্যারিস চলে যাবো।

তোমার ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারব না যেখানেই থাকো অনেক ভালো থাকো অনেক সুখে থাকো, প্যারিস থেকে আমি তোমাকে কল দিতে থাকব, কখনো যদি তোমার মোবাইল অন করো অবশ্যই তোমাকে পেয়ে যাব। আর তুমি যেদিন বলবে সময় করে এসে একদিন ডিভোর্স পেপারে সিগনেচার করে দিয়ে যাব। আকাশ।।

আকাশের চিঠিটা পড়ে মানসিকভাবে অনেক কষ্ট পায় মীরা, সে নিজেও বুঝতে পারে না সে কেন এত কষ্ট পাচ্ছে। শুধু এইটুকু বুঝতে পেরেছিল আকাশ এত সহজে ডিভোর্স পেপারে সিগনেচার করতে চাচ্ছে বিষয়টা কেন জানি মীরার ভালো লাগছিলো না।

সে জন্য মীরা তার মোবাইলের সিমটা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে রাখে আর কোনদিন এই সিম চালাবে না। আকাশের সাথে আর কোনরকম যোগাযোগ করতে চায়না মীরা।

এরপরে আর কোন দিন আকাশের সাথে কোনরকম যোগাযোগ হয়নি মীরার। দীর্ঘ ৬ বছর পরে সেই আকাশ আবার তার সামনে এভাবে দাঁড়াবে সে কল্পনাতে ভাবতে পারেনি।

#বর্তমান

রাত ১২টা বাজে, মীরার পাশে কনা শুয়ে আছে, কনার মুখে শুধু বিয়ের আলাপ। আকাশকে নিয়ে নানান রকমের জল্পনা কল্পনা করেই যাচ্ছে কনা।

এদিকে মীরার চোখে কোনো ঘুম নেই, আকাশ তাকে কি বলবে? কাল সকালে আকাশের কাছে যাওয়া ঠিক হবে? কনা কতো স্বপ্ন দেখছে আকাশ কে নিয়ে আর আকাশ?

নানান ধরনের চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পারল মীরা। এদিকে আকাশের চোখে কিছুতেই ঘুম আসছে না, তার মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা মীরা আজ তার সামনে, তাও জীবনের এমন কঠিন মোড়ে এসে, এখন সে কি করবে? আর মীরা কি তার মনের কথা বুঝবে? তবে মীরার চোখ দেখে তার ভিতরেও যেন কিছু একটা অনুভূতি লক্ষ্য করেছে আকাশ।

সকাল ৭টা বাজে রমনার গেটে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ, মীরার জন্য অপেক্ষা করছে, কিন্তু মীরা আসছে না। প্রায় ১ঘন্টা হয়ে গেলো, তবে মীরা না আসা পর্যন্ত এখানে তার জন্য অপেক্ষা করবে ভেবে রেখেছে আকাশ।

এর মধ্যেই একটা সিএনজি এসে থামলো, সিএনজি থেকে নেমে একটু সামনে তাকাতেই আকাশ কে দেখতে পেল মীরা, কাচা হলুদ রঙের একটা টপস্ পরে এসেছে সে সাথে সাদা ওরনা। মীরাকে দেখেই যেন গভীর শান্তি অনুভব করতে লাগলো আকাশের হৃদয়, যেন কত জনম ধরে এই মীরার জন্য সে অপেক্ষা করছিল।

কোন কথা না বলেই দুজন হেঁটে রমনা পার্কের ভিতরে চলে গেলো, ঘাসের উপরে আস্তে আস্তে হাঁটতে দুজন, কথা যেন সব হারিয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণ হেঁটে বটগাছের নিচে একটা বেঞ্চের উপরে বসলো দুজন, এবার আকাশ বললো-

-- thank you, তবে আমি জানতাম তুমি আসবে,

-- কেনো আসতে বলেছ?

-- তোমাকে দেখবো বলে

-- মানে?

-- কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে মীরা?

প্যারিস থেকে কতবার তোমাকে কল দিয়েছি তোমার মোবাইল বন্ধ, কোন ঠিকানা ছিল না তার পরেও কতবার গিয়ে খুঁজেছি তোমাকে কিন্তু তুমি যেন চিরদিনের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলে।

-- খুঁজে পেলে কি হতো?

-- জানিনা, শুধু জানি তোমাকে পাবার প্রয়োজন ছিল আমার।

-- আমাকে পেয়ে আর কি করতে বল? সিটিজেনশিপ তো পেয়েই গিয়েছিলে,

-- মীরা এভাবে বলো না,

-- দেখ আকাশ ৬বছর আগের কোনো কথাই আর নতুন করে তুলতে চাচ্ছি না, কিছু দিন পরে তুমি আমার বোনের হাজব্যান্ড হবে, এখন আমার কাছে এটাই তোমার পরিচয়, অতীতের কোনো কিছু এখন আর ভাবতে চাইনা।

-- তাহলে আমার ডাকে আজ এখানে এলে কেনো?

-- কারন তুমি বাধ্য করেছ, কাল তুমি মেসেজ করে এসব কি লিখেছ?

-- কেন কোন ভুল লিখেছি?

-- তোমার সাথে আমার একটা কন্ট্রাক হয়েছিল, হয়ত সময়ের কারণে শেষ সিগনেচার টা করা হয়নি, তাই বলে তো এভাবে মেসেজ দিতে পারো না তুমি।

-- কনট্রাক বলো আর যাই বলো, কিন্তু আমাদের ডিভোর্সটা তো আজও হয়নি মীরা সেটা কি মিথ্যে?

-- এসব কথা এখন বলার মানে কি আকাশ? এসব বলে কি বোঝাতে চাচ্ছো?

-- মীরা বিয়ের কাগজ পত্র দিয়ে আমি হয়তো তোমাকে খুঁজে বের করতে পারতাম, সময় একটু বেশি লাগলেও হয়তো পেতাম, কিন্তু তাতে করে তোমার ফ্যামিলিও বিয়ের বিষয় টা যেনে যেত যা তুমি চাও নি। আবার ভেবেছি হয়তো তুমি কারো সাথে নতুন জীবন শুরু করেছ, আমার মতো তুচ্ছ একজন আকাশের কথা একদম ভুলেই গিয়েছো, আর সেটাই স্বভাবিক তাই আর তোমাকে বিপদে ফেলতে চাইনি।

কিন্তু তুমি সবসময়ই ছিল আমার মনের মাঝে সব থেকে সুরক্ষিত স্থানে।

-- আকাশ তোমার সেদিনের মেসেজে এসব কিছুই লেখোনি তুমি, তুমি শুধু লিখেছিলে ডিভোর্সের কথা। যেন ডিভোর্স পেপারে সিগনেচার করাটাই ছিল তোমার সব থেকে জরুরি,

-- আমার জন্য কখনোই সেটা জরুরি ছিল না মীরা, আমি ভেবেছিলাম তোমার জন্য জরুরী তুমি আমার এত বড় উপকার করেছ, তাই তোমার মতামতকে প্রাধান্য দিতে চেয়েছি, তখন কল্পনায়ও নিজেকে তোমার যোগ্য মনে করিনি। ভেবেছিলাম মনে মনেই সারা জীবন তোমাকে ভালোবেসে যাবো, কিন্তু যখন তোমাকে হারিয়ে ফেললাম তখন যেন তোমাকে পাওয়াটা সব থেকে জরুরি হয়ে গেল, কিন্তু আবারও সেই একই নিজেকে তোমার অযোগ্য ভেবে মনকে শান্তনা দিয়েছি।

-- আকাশ সেদিন মেসেজে যদি একবার শুধু মনের কথাটা কিখে রাখতে তাহলে হয়তো আজ আমাদের এখানে এভাবে দেখা করা লাগতো না।

-- সরি মীরা সেদিন আমি তোমার মনকে বুঝতে পারিনি, কিন্তু এংগেজমেন্টের দিন তোমার চোখ দেখেই যেন সব বুঝে গিয়েছিলাম,

-- অনেক দেরি হয়ে গেছে আকাশ, অনেক দেরি,

-- মীরা আমরা চাইলে এখনো সব ঠিক করতে পারি,

-- কি ঠিক করবে আকাশ? আমার বোন কণা কাল সারারাত তোমাকে নিয়ে মনে ননান রকমের স্বপ্ন একেছে, বাড়ির সবাই বিয়ে নিয়ে উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে, সবার মনে অনেক আনন্দ। আমাদের একান্নবর্তী পরিবার, সবাই যেন প্রতিটা মুহূর্তে বিয়েকে ঘিরে নতুন নতুন আয়োজন করছে। কনা বিয়ের ওরনা মাথায় দিয়ে বার বার আয়না দেখছে, তার মা মেয়েকে বিদায় দেবার সকল প্রস্তুতি করে ফেলেছে। তাদের সবাই কে কষ্ট দিয়ে কি ঠিক করবে তুমি?

আজকের পর আমার সাথে আর কোনো কথা বলার চেষ্টা করবে না আকাশ, ক্যালিফোর্নিয়ার মীরা তোমার জীবন থেকে সারা জীবনের জন্য হারিয়ে গিয়েছে, এটাই তোমার জীবনের চরম সত্য। এটাকে মেনে নিয়েই সামনে এগিয়ে যাও শুভকামনা তোমার জন্য।

-- কিন্তু মীরা...

-- আর কোনো কিন্তু শুনতে চাইনা আকাশ, তোমার আকাশে আমার আশার তারা আর কোনদিন জ্বলানো সম্ভব নয়। আমি এখন উঠছি, তবে একটা কথা বলে যাই সেদিন তুমি লিখেছিলে আমার ঋন পরিশোধ করতে পারবে না কোনোদিন, কিন্তু আজ ঋন পরিশোধ করার সময় এসেছে তোমার, আমার বোনকে বিয়ে করে সারাজীবন সুখে রাখবে, ও যেন কোনদিন কষ্ট না পায় তাহলেই তোমার ঋন পরিশোধ হয়ে যাবে।

কথাগুলো একটানা বলেই মীরা উঠতে গেলো অমনি মীরার হাত ধরে ফেললো আকাশ........

চলবে.....

1
$ 0.00
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments