মন_যে_আমার_হারিয়ে_ফেলেছি

0 14
Avatar for Nipa1234
3 years ago

#মন_যে_আমার_হারিয়ে_ফেলেছি

লেখা- তানজীলা হাসান

পর্ব-৭

কি করবে মীরা যাবে নাকি যাবে না? ভাবতে ভাবতে আরো ১ঘন্টা পার হয়ে গেলো, এখন রাত ২টা বাজে বাড়ির সবাই গভীর ঘুমে। মীরা আস্তে করে ছাদের দিকে যাচ্ছে তবে মনে অনেক ভয় করছে এক দিকে কেউ দেখে ফেলার ভয় অন্য দিকে এত রাতে একা একা ছাদে যাবার ভয়। ছাদের দরজার একটু সামনে দাড়াতেই হুট করে মীরাকে জরিয়ে ধরলো আকাশ.....

হঠাৎ এভাবে ধরাতে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো মীরা, কিছু বলতে গিয়েও যেন বলতে পারলো না। চুপ করে দাড়িয়ে রইলো প্রায় দুই -তিন মিনিট পার হয়ে গেলো তাও আকাশ মীরা কে ছাড়ছে না, বেশ শক্ত করে ধরে রেখেছে যেন আর কোনদিন ছাড়বে না মীরাকে।

একটু শান্তকণ্ঠে মীরা বলল-

-- আকাশ আমাকে ছাড়ো আমার কথা শোনো,

-- ছাড়বো না মীরা, এভাবেই ধরে রাখব অনন্তকাল, এর পরে যেন আর হারিয়ে যেতে না পারো,

-- আচ্ছা হারিয়ে যাব না, আগে আমার কথা শোনো?

-- হুম বলো আমি শুনছি তো

-- এভাবে বলা যায় না আকাশ, প্লিজ আমাকে ছাড়ো, ঠান্ডা মাথায় বসে কিছু কথা শোনো প্লিজ।

-- মীরা I love you and I know that you also love me ( মীরা আমি তোমাকে ভালোবাসি এবং আমি জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো)

-- হ্যা ভালোবাসি আকাশ, অনেক ভালোবাসি সেই প্রথম থেকেই তোমাকে ভালোবাসি, তাই রিকুয়েষ্ট করছি প্লিজ আমাকে ছেড়েদাও আর আমার কথাগুলো শোনো প্লিজ।

এবার আকাশ মীরাকে ছেড়ে দিলো, দুজন ছাদের এক পাশে বসলো, এবার মীরা বলতে শুরু করলো-

-- আকাশ তুমি আমি আমরা তো কোন টিনেজ বাচ্চা না, তাহলে এমন বাচ্চামো আচরণ করার তো কোনো মানে হয় না,

-- মীরা তুমি মাত্রই বলেছ তুমি আমাকে ভালোবাসো, এবং সেই শুরু থেকেই ভালোবাসো,

-- হ্যাঁ ভালোবাসি, আমি তো অস্বীকার করছি না আকাশ, কিন্তু ভালোবাসলেই কি সব ভালবাসার মিলন হয় বলো? আমাদের ভালোবাসার মিলন লেখা ছিল না এজন্যই হয়তো ছয় বছর আগেও আমরা একত্রিত হতে পারিনি, আর এখন একসাথে হয়েও এক হতে পারব না, এটাকেই আমাদের নিয়তি হিসেবে মেনে নিতে হবে।

-- কেন নিয়তি হিসেবে মেনে নিতে হবে মীরা? আমরা দুজন সবার কাছে সব সত্যি বলে দিব, তোমাদের ফ্যামিলির কেউই এতটা অবুঝ না যে বিষয়টা বুঝবে না নিশ্চয়ই বুঝবে। তাছাড়া আমাদের সম্পর্ক টা শুধু ভালোবাসার না আমরা এখনো স্বামী স্ত্রী। আর এটাই ১০০% সত্য কথা।

-- আকাশ শুধু আমাদের দুজনের কথা ভাবলে হবে না, ফ্যামিলির প্রতিটা মানুষ তোমাকে কনার হাসবেন্ড হিসেবে দেখছে এমনকি কনা তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে, সবার স্বপ্ন নষ্ট করে দিয়ে আমরা সুখী হতে পারব না আকাশ। আর কনার স্বপ্ন নষ্ট করা কোনভাবে আমার পক্ষে সম্ভব না, ও আমার বোন আমি ওকে ভালোবাসি।

-- মীরা ধরলাম আমি কনাকে বিয়ে করবো, কনাকে নিয়েই সংসার করবো, কিন্তু তাহলে কি সব সমাধান হয়ে যাবে? কণা কে কি আমি কোনদিন ১০০% ভালোবাসা দিতে পারব? ১০০% সুখী করতে পারবো? সময়ের সাথে সাথে সে কি কোনদিনই কিছু বুঝতে পারবে না? আর কোনদিন যদি কনা আমাদের সত্যিটা জেনে যায় সেদিন কি তা মেনে নিতে পারবে বা সুখে থাকবে?

এখন সব সত্যি বললে হয়তো সাময়িক ভাবে একটু কষ্ট পাবে কিন্তু ভবিষ্যতে হয়তো অনেক ভালো জীবনসঙ্গী পাবে তখন অনেক সুখি হবে।

কিন্তু সত্যি না বলে ধোকার মধ্যে রেখে কতদিন আমি ওকে সুখে রাখতে পারবো বল?

এভাবে কি ওর জীবনটাকে আরো নষ্ট করা হবে না?

আমাদের এনগেজমেন্ট হয়েছে আজ কতদিন, এই কয়দিনে একবার এক সেকেন্ডের জন্যও কনা আমার মনে আসেনি, জোর করে ওকে নিয়ে ভাবার চেষ্টা করেও কোনভাবে আমার ভাবনায় তাকে আনতে পারিনি, আমার মন সারাক্ষণ শুধু তোমাকে নিয়েই ভেবেছে।

তোমার সাথে আর কোনদিন দেখা না হতো সে এক কথা ছিলো বা তোমার জীবনে এখন অন্য কেউ থাকতো তাহলে হয়তো তোমাকে ভুলে যাবার চেষ্টা করতাম,কিন্তু সব জেনেশুনেও নতুন করে কিভাবে ভুলে যাবো তোমাকে?

মীরা আমি পারবোনা, প্লিজ আমার কথা গুলো বোঝার চেষ্টা করো প্লিজ। আর কনা আমার কাছে কোনোদিন সুখে থাকবে না, একটা মেয়ে তার স্বামীর মনকে ভালো করেই বুঝতে পারে, কনাও হয়তো একদিন আমার মনের অবস্থা বুঝে ফেলবে তখন কি হবে?

-- কিছুই বুঝে ফেলবে না আকাশ, সময়ের সাথে সাথে তুমিও একদিন কনাকে ভালোবেসে ফেলবে তখন আমি আবার শুধুই তোমার একটা অতীত হয়ে থাকবো। তাছাড়া আমরা দুজন দু দেশে থাকি আমাদের মধ্যে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম, কণাকে নিয়ে তুমি খুব সুখে থাকবে।

-- মীরা এটা সম্ভব না,

-- সম্ভব করতে হবে আকাশ, তুমি যদি সত্যি আমাকে ভালোবেসে থাকো তাহলে কনাকে অনেক সুখে রাখবে। কখনো কষ্ট দিবে না। আর যদি এই বিয়ে নিয়ে কোনো রকম সমস্যা তৈরি করো তাহলে আমাকে তো পাবেনাই বরং আমার মনের ভালোবাসা টাও ঘৃনায় পরিনত হয়ে যাবে। তোমার প্রতি ভালোবাসা থেকেই বলছি, আমাদের সুখের পরিবারের মধ্যে কোনো রকম সমস্যা তৈরি করবে না, ভেবে নাও আমি শুধুই তোমার একটা অতীত মাত্র।

ভবিষ্যতে কোনোদিন তুমি আমার ভাবনায় এলে সদিনও যেন তোমার প্রতি আমার শ্রদ্ধা, ভালোবাসা কোনো অংশে কম না হয়।

মীরার কথা গুলো শুনে আকাশের চোখ গুলো লাল হয়ে গেলো, ছলছল চোখে মীরার হাত ধরে আকাশ বললো-

-- মীরা একবার তোমাকে হারিয়ে অনেক কষ্টে নতুন করে সামনে এগোতে চেয়েছিলাম, সেই নতুন পথে আবার তোমাকে খুঁজে পেলাম। এখন দ্বিতীয় বার ইচ্ছে করে কিভাবে হারিয়ে যেতে দিব? আমাকে এত বড় শাস্তি দিওনা মীরা প্লিজ,

-- আকাশ এ নিয়ে আর কিছু বলো না, আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে না,

মীরার কথা শেষ হবার সাথে সাথে ছাদের দরজায় একটা শব্দ হলো, মীরা চমকে উঠলো, আকাশ একলাফ দিয়ে সানসেট এর উপরে নেমে গেল। আকাশ এভাবে লাফ দেয়াতে মীরা আরো ভয় পেলো। মীরা আস্তে আস্তে ছাদের দরজার দিকে গেলো কিন্তু কেউ নেই, মীরা আবার ছাদের দিকে আসতে গিয়েও কি মনে করে আবার আসলো না। নিচে নেমে এলো।

ঘরে ঢুকেই দেখে তার আম্মা দাঁড়িয়ে আছে, মীরা আবার চমকে উঠলো

-- আম্মু তুমি ঘুমাও নি?

-- হ্যা ঘুমে ছিলাম, তোর বাবা কল করে তোকে চাচ্ছিলো জরুরি কি কথা বলবে কিন্তু তুই কোথায় ছিলি?

-- আম্মু ঘুম আসছিল না তাই একটু ছাদে গিয়েছিলাম,

-- এতো রাতে একা একা ছাদে যাওয়া কি ঠিক হয়েছে? যদি কোনো সমস্যা হতো? ভয় করলো না? আমাকে ডাকতি?

-- তোমার ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছে করেনি, এখন বাবাকে কল দাওতো কথা বলি,

আমেরিকায় এখন দুপুর, মীরা তার বাবাকে কল দিয়ে অনেকক্ষণ কথা বললো, তবে মনে মনে আকাশকে নিয়ে অনেক চিন্তা হচ্ছে আকাশ ঠিক মতো যেতে পারবে তো? কোনো সমস্যা হবে নাতো?

মীরার মা চলে যাবার পরে আকাশের নাম্বারে কল দিলো, কল রিসিভ করে আকাশ বললো-

-- আমি ঠিক আছি মীরা, তবে কতদিন ঠিক থাকতে পারবো তা জানি না।

-- আমি চাই তুমি ভালো থাকো শুধু এ জন্যই তোমাকে ভালো থাকতে হবে আকাশ। সেদিন ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তপ্ত রোদে দাঁড়ানো অপরিচিত আকাশকে শুধু এ জন্যই সাহায্য করে ছিলাম যেন সে ভালো থাকে, কেনই যেন করেছিলাম, আর আজও তাই চাই শুধু সাথে কনা যোগ হবে। কানাকে নিয়ে সুখে থেকো আকাশ।

কথাটা শেষ করেই ফোন কেটে দিল মীরা।

সকাল ১১টা বাজে মীরা ঘুমিয়ে আছে, কনা এসে মীরাকে ডেকে তুললো,

-- গুড মর্নিং মীরা

-- গুড মর্নিং

-- মীরা জলদি উঠ জরুরি কথা আছে

-- হুম বল

-- মীরা কাউকে বলতে তো পারছি না তাই তোকে বলছি, আমি আকাশের সাথে দেখা করতে চাচ্ছি। কয়দিন পারে আমাদের বিয়ে অথচ এখনো আকাশের সাথে একা কথা বলার সুযোগ হয় নি, তাই ভাবছি আজ আকাশের সাথে দেখা করবো, আর গিফট গুলো দিব।

একটু সময় নিয়ে মীরা বললো-

-- হুম ভালো হবে,

-- কোথায় যে আসতে বলি তাই ভেবে পাচ্ছি না,

-- ফিউচার পার্কে যেতে পারিস অথবা রমনা পার্ক।

-- না রমনায় যাবো না তাহলে ফিউচার পার্কে বলি

-- হুম তাই যা।

মীরার সাথে অনেকক্ষণ কথা বলে কনা চলে গেলো। মীরা চুপ করে বসে আছে, আর গতকাল রাতের কথাগুলো ভাবছে। আকাশের পারফিউমের ঘ্রান এখনো যেন মীরার ড্রেসে লেগে আছে। আলমারি থেকে অন্য একটা ড্রেস বের করে চেঞ্জ করতে গেল, অনেকক্ষণ ধরে ড্রেসটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, কিন্তু কি মনে করে আবার চেঞ্জ করল না।

বাড়ির পিছনে গিয়ে সেদিনের ফেলে দেওয়া ফুলের তোড়াটা খুঁজলো কিন্তু পেল না।

বিকাল ৪টা বাজে কনা আকাশের সাথে দেখা করতে ফিউচার পার্কে এলো, অনেকক্ষণ ধরে দুজন অনেক ধরনের কথা বললো, কনা আকাশকে তার গিফট গুলো দিল, আকাশও চেষ্টা করলো কনার সাথে খুব স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে কিন্তু আকাশের মন যেন মীরাকে নিয়েই পরে আছে। আকাশ একবার ভাবলো কনাকে সব বলে দিবে কিন্তু মীরার কথা ভেবে তাও বলতে পারলো না, তাহলে যে মীরার সাথে দুর থেকে কথা বলার সম্ভাবনাও হারিয়ে ফেলবে। মীরা বলেছে এ বিয়েতে কোনো সমস্যা হলে তাকে শুধু ঘৃণা করবে, না মীরার মনে কোনোদিনও ঘৃণার পাত্র হতে চায়না আকাশ। তাই কনাকেই বিয়ে করবে মীরা যদি তাতে খুশি হয় তবে তাই হবে।

সন্ধ্যা সাতটা বাজে কনা এখনো বাসায় ফেরেনি, মীরা বার বার টাইম দেখছে আজ যেন কিছুতেই সময় কাটছে না।

অনেক চিন্তা ভাবনা করে মীরা সিদ্ধান্ত নিল, কনা আকাশের বিয়ে পর্যন্ত এখানে থাকা যাবে না তার আগেই যেভাবে হোক তাকে আমেরিকা ফিরে যেতে হবে। এভাবে প্রতিটা মুহূর্ত আর টেনশন করতে পারছে না মীরা, দম ঘুটে আসছে কোনো কিছুই ভালো লাগছে না।

তাই ভাবলো আগে থেকে কাউকে কিছু বলবে না, যেদিন যাবে তার কিছুক্ষণ আগে সবাই কে জানাবে বা প্লেনে ওঠার সময়।

মীরার ভাবনা শেষ হবার আগেই তার ফোন বেজে উঠলো, মোবাইলে তাকিয়ে দেখে আকাশ ফোন করেছে, দেরি না করে সাথে সাথে রিসিভ করলো হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে আকাশ বললো-

-- মীরা শুধু তোমার জন্য আজ নিজের মনকে কুরবানী দিলাম মনে হল, কনার হাত ধরে তাকে সুখে রাখার প্রতিজ্ঞা করেছি, তোমার ঋন পরিশোধ করে দিব মীরা পরিশোধ করে দিব, হয়তো আমার আমি মন থেকে মরে যাব তবুও তোমার ঋন পরিশোধ করবো।

কথা গুলো বলেই ফোন কেটে দিল আকাশ, মীরার দুচোখ দিয়ে শুধু কিছু নোনাজল গড়িয়ে পরলো.......

চলবে....

পূর্ববর্তী পর্বের লিংক দেওয়া হল-

https://www.facebook.com/groups/bdofficials/permalink/862161734589324/

1
$ 0.00
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments