মিয়ানমারের ওপর চাপ বৃদ্ধির তাগিদ: বড় শক্তিগুলোর টনক নড়বে কি?

0 0
Avatar for Nipa1234
3 years ago

মিয়ানমারের ওপর চাপ বৃদ্ধির তাগিদ: বড় শক্তিগুলোর টনক নড়বে কি?

বাংলাদেশে বসবাসকারী রাখাইন সম্প্রদায়ের সংগঠন ‘রাখাইন কমিউনিটি অব বাংলাদেশ’ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে রোববার রাজধানীতে এক মানববন্ধনের আয়োজন করেছিল।

বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ এ কারণে যে, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর মতো রাখাইন জাতিগোষ্ঠীও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়ন ও গণহত্যার শিকার হয়েছে। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি, লেখক ও প্রকাশক মফিদুল হক রাখাইন প্রদেশে গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

সেটি হল, রাখাইন প্রদেশে গণহত্যার ঘটনায় গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে অভিযোগ করার পর দেশটির সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও রাখাইনে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দাবি করছে। ইনডিপেন্ডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমার এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এ সময় আন্তর্জাতিক চাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বিষয়টি রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধ এবং তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার মুখে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা নিধন যে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর জাতিগত নির্মূল পরিকল্পনারই অংশ, ইতোপূর্বে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে তার সত্যতা মিলেছে।

তাছাড়া সম্প্রতি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চারজন সাবেক সদস্য রাখাইনে গণহত্যার কথা স্বীকারও করেছে। কাজেই মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির এটাই মোক্ষম সময়। এটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণও বটে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতি বাংলাদেশের পরিবেশ-প্রতিবেশ, অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি আশ্রয় ক্যাম্পে দু’দল রোহিঙ্গার মধ্যে সংঘর্ষে তাদের আটজন নিহত হয়েছে।

কিছু রোহিঙ্গা মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হলে তারা এ অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের এ উদ্বেগের কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুধাবন করতে হবে।

ইতোপূর্বে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার বারবার আশ্বাস দিলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ন্যূনতম পদক্ষেপও নেয়নি। বৃহৎ শক্তিগুলোও মিয়ানমারের ওপর মৌখিক চাপ প্রয়োগের বেশি কিছু করেনি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের নির্লিপ্ততার এটাই কারণ। তারপরও রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভের ওপরই আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য অব্যাহত রাখতে হবে কূটনৈতিক তৎপরতা।

বিশেষ করে এ ইস্যুতে চীন, রাশিয়া ও ভারতের সমর্থন আমাদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দেশগুলো যাতে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত স্বার্থের চেয়ে এক্ষেত্রে নৈতিক, মানবিক ও আন্তর্জাতিক আইনগত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়, সে লক্ষ্যে জোর প্রয়াস চালাতে হবে আমাদের। আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের মাধ্যমেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে এবং তাদের নিরাপত্তা দিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করাতে হবে।

রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এখনও শুরু না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমরা আশা করব, তার এ উদ্বেগের প্রতিফলন ঘটবে চীনা নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বৃহৎ শক্তিগুলোর ভূমিকা যেন শুধু মৌখিক চাপ প্রয়োগে সীমাবদ্ধ না থাকে। তারা এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।

1
$ 0.01
$ 0.01 from @TheRandomRewarder
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments