-মিথ্যে সান্ত্বনা কেন দিচ্ছেন, ভাইয়া?
সত্যি করে বলেন তো ভাইয়া?
আমি কিছু মনে করবো না।
-তোমাকে দেখে মনে হয়েছিল চায়ের মধ্যে চিনি না দিয়ে কেউ ভুল করে লবন দিয়ে দিয়েছে।
-তার মানে আমাকে আপনি একদম সহ্য করতে পারেন না।
মিষ্টি উঠে গিয়ে স্নেহার কাছ থেকে চিনির বাটিতে করে অনেকটা চিনি এনে ফাহিমের চায়ের কাপে দিয়ে বলল,
-এখন মজা পাবেন খেতে।আমি চলে যাচ্ছি,আপনাদের বাসায় আর আসবো না।আপনাকে আর বিরক্ত করবো না,ভালো থাকবেন।
রাতে খাবার দাবার শেষ করে ফাহিম তার রুমে শুয়ে রয়েছে।এমন সময় তার ভাবি রুমে ঢুকে বলল,
-তোমার ভাইয়া কী তোমাকে ফোন দিয়েছিল ফাহিম?
-না,ফোন দেই নি তো।
কেন?
কী হয়েছে?
-কিছু না।এমনিতেই জিজ্ঞেস করলাম।
-ও,স্নেহা কী ঘুমিয়ে পরেছে ভাবি?
-হুম।অনেক আগেই ঘুমিয়ে পরেছে।
-তাহলে তুমিও ঘুমিয়ে পরো।
-হুম,যাচ্ছি।শুভ রাত্রি।
ভাবি যাওয়ার কিছুক্ষণ পর কনা রুমে ঢুকে বলল,
-ফাহিম ভাইয়া।
-হুম,বল।
-ফাহিদ ভাইয়া তোমার সাথে কথা বলবে।এই নাও কথা বলো।
ফোন কানে নিতেই তার বড় ভাই বলল,
-কেমন আছিস,ফাহিম?
-এইতো ভালো,ভাইয়া।
তুমি?
-আমি কীভাবে ভালো থাকি?
কতদিন ধরে তোদের সাথে দেখা হয়না,তারপরে আবার তোর ভাবিকে তো কোনো কথাই বলা যায় না।
-কেন,কী হয়েছে?
-বিকালে ভিডিও কলে স্নেহার সাথে কথা বলছিলাম।স্নেহাকে দেখে মনে হলো আগের থেকে অনেকটা শুকিয়ে গেছে।স্নেহাকে জিজ্ঞেস করলাম,এভাবে শুকিয়ে যাচ্ছো কেন,আম্মু?
স্নেহা উত্তরে বলল,আম্মু খাবার খেতে দেয় না।
তারপর তোর ভাবির সাথে কিছুক্ষণ কথা বললাম রাগারাগি করে।এখন আর ফোনই ধরছে না।মনে হয় রাগ করেছে।
-তোমার মেয়ে এখন দুষ্টু হয়ে গেছে কোনো কিছুই খেতে চায় না।ভাবির তো কোনো দোষ নেই।
-আমি কি তাকে দোষ দিয়েছি নাকি।বলেছিলাম ভালো করে মেয়ের প্রতি যত্ন নিতে।এখন আমার প্রতিই যত্ন নেওয়া ছেড়ে দিয়েছে।
-তুমি চিন্তা করো না।আমি ভাবিকে বুঝিয়ে বলছি।
ফোন কেটে দিয়ে ফাহিম মোবাইল কনার কাছে দিয়ে বলল,
-ফোন নিয়ে যা এখান থেকে।
-কি বলল ভাইয়া?
-তেমন কিছু না।
-আমার তো মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।
-এমন কেন মনে হচ্ছে তোর?
-ভাবি আজকে না খেয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।এদিকে ভাইয়া ফোন দিয়ে বলল,ভাবি নাকি ফোন ধরছে না।কিছু তো একটা হয়েছে।
-হুম,ঠিকই ধরেছিস।তারা দুজনে ছোটখাটো ঝগড়া করেছে।
-এক সপ্তাহ পরে পরেই তারা শুধু শুধু ঝগড়া করে কেন,ভাইয়া?
-এটাই তো ভালোবাসার মজা।নিয়মিত ঝগড়া না হলে তো সম্পর্কে একঘেয়ামি চলে আসবে।তখন তো আরও খারাপ অবস্থা হতে পারে।তাই এসব নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই।এগুলো ভালোবাসার অংশ।এগুলো নিয়মিত না হলে সংসার ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে।
তাই, তুই গিয়ে এখন ভাবিকে খাওয়ানোর চেষ্টা কর।
-ঠিক আছে।
এদিকে দুইদিন হয়ে গেছে মিষ্টি ফাহিমদের বাসায় আর আসেনা।কিন্তু নিয়মিত ফাহিমকে ফোন দেয়।কিন্তু ফাহিম ফোন ধরে না।একবার ধরেছিল তখন মিষ্টি বলেছিল ছাদে আসতে কিন্তু সে যায়নি।
এখন ফাহিম চিন্তা করেছে আন্টিকে সব কিছু বললে হয়তো বুঝবে।তাই সে মিষ্টিদের বাসায় চলে গেল।
বাসায় গিয়ে দেখলো মিষ্টি টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে।তাকে দেখেও না দেখার ভাব ধরে খাবার গিলেই চলেছে।অন্যদিকে তার মা সোফায় বসে সিরিয়াল দেখছে।
ফাহিমকে দেখে তার মা বলল,
-সোফায় বসে পর, ফাহিম।
কেমন আছিস?
-ভালো।
আপনি?
-আমিও ভালো।
কী মনে করে হঠাৎ আসলি?
তোকে তো দরকারের সময়ও পাওয়া যায় না।আর আজকে তুই কোনো দরকার ছাড়াই চলে এসেছিস।
-আজকে আমার কিছু দরকারি কথা বলার জন্য এসেছি,আন্টি।
-তাহলে বল, শুনি।
-মিষ্টিকে যেতে বলুন।তার সামনে বলা যাবে না।
আন্টি মিষ্টিকে ধমক দিয়ে বলল,
-মিষ্টি,রুমের ভিতরে খাবার নিয়ে যা।
মিষ্টি প্রতিবাদ করে বলল,
-আমি এখানেই খাবো।আমার এখন সবকিছু শোনার বয়স হয়েছে।
-ঠিকই তো।আমার মেয়েতো এখন আর ছোট না।ফাহিম তুই বলতে থাক তোর জরুরী কথাবার্তা।
-আন্টি,একটা মেয়ে আমাকে খুব বিরক্ত করছে কয়েকদিন যাবত।
-কীভাবে বিরক্ত করছে?
-আগে একবার বলেছিল আমাকে সে ভালোবাসে।আমি না করে দিয়েছিলাম।এখন দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা আমাকে ফোন দেয়,ফোন দিয়ে ছাদে যেতে বলে।
-তুই এটাতে বিরক্ত হচ্ছিস কেন?
আমার তো মনে হচ্ছে মেয়েটা তোকে খুব ভালোবাসে।
মিষ্টি মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে বলল,
-আমারও তাই মনে হচ্ছে,মা।
-মেয়েটা তোকে কাদের বাসার ছাদে ডাকে?
-তাদের বাসার।
-নিজস্ব বাসা নাকি?
-জি,আন্টি।
-তাহলে তো ভালোই।তোর মতো বেকার ছেলেকে কীভাবে পছন্দ করলো আমি তো সেটাই বুঝতে পারছি না।মেয়েটার নিশ্চয়ই রুচি খারাপ।
-ঠিকই বলেছেন,আন্টি।তাহলে এখন আমি কী করতে পারি?
-তুই কোনো চিন্তাভাবনা ছাড়াই মেয়েটাকে বিয়ে করে নে।
-এটা কেমন কথা,আন্টি?
একটু আগে না বললেন,মেয়েটার রুচি খারাপ।তাহলে এখন বিয়ের কথা বলছেন কেন?
-রুচি খারাপ মেয়ের, তোর তো কোনো সমস্যা থাকার কথা না।
-তাই বলে কোনো কারন ছাড়াই মেয়েটাকে বিয়ে করে ফেলবো?
-অবশ্যই না।শুন,যে মেয়ে তোর মতো বেকার ছেলেকে পছন্দ করেছে সে নিশ্চয়ই বোকা।বোকা না হলে তোকে পছন্দ করার কথা না।একটা মেয়ে কতটুকু বোকা হলে নিজের পছন্দের কথা নিজেই ছেলেকে বলে দেয় আমি সেটা কল্পনাও করতে পারি না।
মায়ের কথা শেষ না হতেই মিষ্টি টেবিলে বসা অবস্থা থেকে বলল,
-একটা ছেলেকে নিজে থেকে পছন্দের কথা বললেই মেয়েটা বোকা হয়ে গেল,আমি তোমার একথা কিছুতেই মেনে নিতে পারলাম না,মা।
-চুপ থাক,যে আমার কথার প্রতিবাদ করবে সে আরও বড় বোকা।চালাক মেয়েদের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে।এরমধ্যে একটা হচ্ছে কোনো ছেলেকে পাহাড় সমান ভালোবাসলেও নিজে থেকে কিছু কিছুই বলবে না।বরং সে ছেলেটার সামনে নিজেকে এমন ভাবে প্রদর্শন করবে যাতে ছেলেটা নিজে থেকেই তাকে পছন্দের কথাটা বলতে বাধ্য হয়।
মিষ্টি তুই একটু ভিতরে যা তো।ফাহিমের সাথে আমার কিছু ব্যক্তিগত কথা আছে।
-আমি শুনলে কী সমস্যা?
-সমস্যা আছে দেখেই তো বললাম তোকে বলা যাবে না।তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে যা।
মিষ্টি কোনো কথা না বলে খাবার ছড়ে চলে গেল।
এবার আন্টি শুরু করলেন,
বিয়ের এক সপ্তাহ আগে তোর আংকেলের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল।প্রথম দেখেই তোর আংকেলকে আমার ভালো লেগে যায়।তখন নিজের মধ্যে শপথ করে ছিলাম যেভাবেই হোক এই ছেলেকে পটিয়ে বিয়ে করে ফেলবো।বাসস্ট্যান্ডে তোর আংকেলের সাথে দেখা হতো প্রতিদিন।এমন টুপ ফেলেছিলাম যে পাঁচ দিন পরে তোর আংকেল নিজে থেকেই আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে বাধ্য হয়েছিল।আর দুইদিন পরে বিয়ে হয়ে গেল।
-বলেন কি আন্টি?
আপনাকে দেখে তো এতো চালাক মনে হয় না।একদম সহজ-সরল মনে হয় দেখে।
-বুদ্ধিমতী মেয়েরা সবসময় চুপচাপ থাকে। তারা সব কিছু গোপনে আদায় করে নেয়।আর বেশি কথা বলে তো বোকা মেয়েরা।তাদের কাজই হচ্ছে সারাদিন কথা বলে নিজেদের জ্ঞানী প্রমান করা।
-অনেক কিছু শিখতে পারলাম আন্টি আপনার কাছ থেকে।
আন্টি হেসে বললেন,
-ধন্যবাদ।আমি তো তোকে এই কথা গুলোও বলতাম না।কারন বেশি কথা বলে বোকারা।তোকে দেখে মনে হলো সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছিস। তাই কিছু উপদেশ দিয়ে দিলাম।
-তাহলে এখন আমি কি করবো আন্টি?
-বললাম তো বিয়ে করে ফেল।বিয়ের আগে প্রেম-ভালোবাসা ঠিক না।আর যেকোনো সমস্যায় পরলে আমাকে বলবি,আমি সবসময় তোর পাশে থাকবো।
-আচ্ছা আন্টি,আপনার মেয়ে মিষ্টিকে আপনার কেমন মনে হয়?
বোকা নাকি চালাক?
-সে তো বোকার উচ্চ শ্রেনীর একটা প্রানী।একদম তার বাপের মতো হয়েছে।তবে অধিকাংশ বোকা মেয়েরা সংসারে সুখী হয়।নিজেও সুখে থাকে স্বামী-সন্তানদেরও সুখের কথা চিন্তা করে।
-তাহলে তো ভালোই আন্টি।এতক্ষণে একটা মনের মতো কথা বলেছেন।
আজকে তাহলে যাই আন্টি,পরে কোনো প্রয়োজন হলে আবার আসবো আপনার কাছে।
-অবশ্যই,যেকোনো ধরনের দ্বিধা-দ্বন্ধে ভুগলে চলে আসবি আমার কাছে।
এরপর ফাহিম মিষ্টিদের বাসা থেকে চলে আসলো।
আন্টির কথার পর থেকে ফাহিমের মনের মধ্যে মিষ্টির প্রতি ভালো লাগা তৈরি হয়ে গেছে।কিন্তু আন্টি তো এটাও বলেছেন বিয়ের আগে প্রেম-ভালোবাসা করা যাবে না।কিন্তু এই ব্যাচেলর অবস্থায় বাসায় বিয়ের কথা বলবে কী করে?
মিষ্টিকে সে কিছুতেই বোঝাতে দেবে না যে সে মিষ্টিকে ভালোবেসে ফেলেছে।
দুইদিন পর,,,
মিষ্টি শাড়ি পরে সেঁজেগুজে ফাহিমদের বাসায় চলে এসেছে।ফাহিমের মা দিলারা বেগম মিষ্টিকে দেখে বললেন,
-তোমরা কি কোথাও যাচ্ছো নাকি?
-না,আন্টি।
-তাহলে কী তোমাকে কেউ দেখতে এসেছিল নাকি?
বিয়ের বয়স তো হয়েই গেছে।
-আমাকে কেউ দেখতে আসেনি আন্টি।আমি ছেলেকে দেখতে যাচ্ছি।দোয়া করবেন আন্টি যাতে ছেলে সম্মতি জানায়।
দিলারা বেগম মিষ্টির কথা বুঝতে না পেরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
মিষ্টি ফাহিমের রুমে গিয়ে বলল,
-আসবো,ভাইয়া?
-এসো।
ফাহিম মিষ্টির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।এর আগে সে মিষ্টিকে ভালো করে লক্ষ্য করেনি।এখন মনে হচ্ছে মিষ্টি তার নামের মতোই খুব মিষ্টি।
-আমাকে কেমন লাগছে,ভাইয়া?
এই কথা বলে মিষ্টি মুচকি হাসতে শুরু করে দিয়েছে।
ফাহিম কোনো কথা না বলে মিষ্টির হাসি উপভোগ করছে।এত সুন্দর আর এত বড় মুচকি হাসি সে কোনো দিনই দেখে নি।
-কিছু বলছেন না কেন ভাইয়া?
-তোমাকে দেখে বিশেষভাবে বলার কিছু নেই।প্রতিদিন যেমন লাগে আজকেও ঠিক তেমনই লাগছে।
মিষ্টির মুখ ভরা হাসি যেন নিমিষেই হারিয়ে গেল কথাটা শোনার পর।
মিষ্টির চেহারার পরিবর্তন দেখে ফাহিম বলল,
-তুমি কি তোমার মায়ের পথে হাঁটতে চাচ্ছো নাকি?
-এইতো ভাইয়া ধরে ফেলেছেন।আপনিও একটু আমার সাথে বাবার পথে হাঁটেন না।নিচ তলা থেকে আলাপটা খুব দ্রুত উপর তলায় নিয়ে যান প্লিজ।আমার আর ভালো লাগছে না।
(চলবে..