ক্রাশ কনফেশন

0 8
Avatar for Nipa1234
4 years ago

ক্রাশ কনফেশন

লেখকঃ আফিয়া আপ্পিতা

পর্ব-২

"ক্রাশ কনফেশন এসেছে তোর নামে। অভিহায়ায়ায়ায়ায়ায়া। "

বিকট শব্দে ঘুম ভাঙলো আমার। ছ্যাকা খেয়ে বাসায় এসে বালিশে মুখ গুজে ঘন্টা খানেক কেঁদেছি। কান্না শেষে বালিশ থেকে মুখ তুলে পুরো ঘটনাটা একবার ভেবে হাসি পেয়েছে। তার উপর এই ঘটনায় কলেজ মিস দিয়ে বাসায় ফিরে মরা কান্না জুড়ে দেয়ার ঘটনা মনে পড়তেই হাসিতে ফেটে পড়েছি। ঘন্টা খানেক হেসেছি। হাসি কান্নায় ক্লান্তিতে শরীর বিশ্রাম চাইলো। সাড়া দিতেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমালাম। ঘুম ভাঙলো কারো চিৎকারে। চোখ খুলে দেখলাম খাটের পাশে দিতিয়া দাঁড়িয়ে আছে। দিতিয়া আমার বান্ধবী। আমাদের পাশের বিল্ডিংয়ে থাকে। কাঁচা ঘুম ভাঙায় বেশ বিরক্ততে কপাল কুঁচকে এলো আমার। ঘুমজড়ানো কন্ঠে একরাশ বিরক্তি মাখিয়ে বললাম,

"কি হয়েছে? নেতাদের মতো এমন চিৎকার করছিস কেনো! ভাষণ দেয়ার হলে মাইক নিয়ে মাঠে যা। আসনে বসে ভাষণ দে। আমাকে ঘুমোতে দে। "

আমার কথা দিতিয়া না শুনার ভান করে আমার পাশে এসে বসলো। তারপর খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,

"জানিস অভিহা? তোর নামে ক্রাশ কনফেশন এসেছে। কনফেশন পড়ে বুঝলাম এক্কেবারে টুরু লাভ।"

দিতিয়ার কথার মাঝে "ক্রাশ" শব্দটা শুনে সকালের কথা মনে পড়ে গেলো। সাথে সাথে ধরপড়িয়ে উঠে বসলাম। এই ক্রাশ নামক আহারের জন্য কত কি সইতে হলো আমাকে! বউ হতে গিয়ে সৎ মায়ের প্রস্তাব পেলাম। নাহ,সকালে যা হলো এর পর ক্রাশ নামক আহার গ্রহন কিংবা আগ্রহ যেখানো উচিত হবে না। না জানি এবার ও কারো সৎ মা হয়ে যাই। কথাটা ভাবতেই দুই গালে দুই চড় দিয়ে ধীর কন্ঠে বললাম,

"তাওবা তাওবা। "

আমাকে গালে চড় দিতে দেখে দিতিয়া তার কপালের বাদামী চামড়া কুঁচকালো। তারপর বলল,

" ক্রাশ কনফেশন আসছে খুশি না হয়ে বাপ্পারাজের মতো নিজেকে আঘাত করছিস কেনো!"

আমি হতাশ গলায় বললাম,

"ওটা ক্রাশ না বইন ওটা বাঁশ। ওই যে ছোট বেলায় পড়ছিলাম বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ঐ। সেই বাগানের বাঁশ হচ্ছে ক্রাশ।"

দিতিয়া হয়তো আমার কথা বুঝতে পারে নি তাই তো তার হরিনী চোখ দুটো হাঁসের ডিমের মতো করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

"কাল অব্দি তুই ক্রাশ শব্দটা শুনলেই ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো লাফাতি। আজ হঠাৎ কি হলো তোর! ক্রাশকে বাঁশ বাগানে নিয়ে গেলি কেনো?"

দিতিয়ার কথায় সকালে গায়ে পরা সাদা রঙের কলেজ ইউনিফর্মটা ঝেড়ে ঠিক করে বিছানা থেকে নামলাম। তারপর ডান হাত উঁচু বাড়িয়ে এসেম্বলির শপথের ভঙ্গিতে বললাম,

"আমি নাবিল ফারুকী এবং আশফিকা খানমের কন্যা অভিহা বিনতে ফারুকী, ইট,সিমেন্ট এবং বালুর তৈরি এই দালাতে উপর দাঁড়িয়ে জাবেদ মল্লিক এবং তানজিনা আক্তারের কনিষ্ঠ কন্যা দিতিয়া মল্লিককে সাক্ষী রেখে শপথ করছি যে আজ এই মুহুর্ত থেকে ক্রাশ নামক বাঁশ বাগানের বাঁশ গ্রহন এবং সেই বাঁশ সম্পর্কিত যে কোন আলোচনা থেকে নিজেকে থেকে বিরত রাখি ব।"

শপথ শেষে হাত নামিয়ে এক লম্বা শ্বাস নিলাম। দিতিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে হা স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি সেদিকে না ঘেটে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। এই মেয়ে থেকে কথা লুকানো দায়। কোন ভাবে যদি সকালের ব্যাপারটা জানতে পারে তবে মজা নিবে। প্রেস্টিজের উপর ট্রাক্টর যাবে একবারে। তারচেয়ে বরং একদিনের জন্য ইগ্নোর কুইন হয়ে যাই। এমন ভাবনা নিয়ে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে। ছ্যাকা খেয়ে আর লাঞ্চ করা হয় নি। ফ্রেশ হয়ে বের হলাম ঘন্টাখানেক পর। ছ্যাকা খাওয়ার পর লম্বা শাওয়ার নেয়ায় ছ্যাকা হজম হয়ে ভালো লাগছে। আরেকবার খাবো কি? পরক্ষনেই নিজের দুই গালে চড় দিয়ে বললাম,

"তাওবা তাওবা।"

দিতিয়া খাটে বসা ছিলো আমাকে দেখেই ভ্রু কুঁচকে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। চোখে মুখে উপচে পড়া কৌতুহল। দিতিয়া স্বভাবে কৌতুহলী। সে সচেতন চোখে আমাকে একবার পরখ করলো তারপর বলল,

"তোর কি হয়েছে বল তো? এমন এলিয়েন এলিয়েন বিহেভ করছিস কেনো!"

আমি দিতিয়াকে এড়িয়ে যেতে টাওয়াল দিতে চুল মুছতে মুছতে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। যেতে যেতে বললাম,

"কিছু হয় নি। তুই বেশি বুঝিস।"

দিতিয়া আবারো আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর বলল,

"আজ শরীর খারাপ থাকায় আমি কলেজ যাইনি। আন্টি বলল তুই গিয়েছিস আবার নাকি ঘন্টাখানেক পরে ফিরে এসেছিস। এসেই নাকি রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়েছিস! শোভা বলল কলেজ যাস নি। সে কথা শুনে আমি খবর জানতে বারান্দা টপকে এসে দেখলাম তুই ইউনিফর্ম পরা অবস্থাতেই ঘুমাচ্ছিস। বল আজ কি হয়েছে? কলেজ না গেলে গিয়েছিস কোথায়?"

গোয়েন্দা গিন্নীর মতো ভাব দিতিয়ার। আমি এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,

"মাথার উপর চাঁদ উঠা সেই বাঁশ বাগানে গিয়েছিলাম আমি। বাগানে গিয়ে দেখলাম সেখানে ভূত পেত্নীর বাস। তারা তাদের ভয়ংকর আচরণের মাধ্যমে মানুষকে লন্ড ভন্ড করে দেয়। আমাকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে।"

বলে ডাইনিংরুমের দিকে পা বাড়ালাম। ছ্যাকা খাওয়ার পর এই মুহুর্তে লাঞ্চ করা অত্যাবশ্যক হয়ে গেছে। এদিকে দিতিয়া হা করে তাকিয়ে আছে। সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

***

বিকেলে দুপুরের খাবার খেয়ে ডোকর দিতে দিতে বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামলাম। বাসার কাছে থাকা দোকান থেকে কাচের বোতলের সেভেন আপ কিনলাম। ক্যাপ খুলে মুখে দিয়ে এলোমেলো হয়ে হাটছি। ভাবটা এমন যেন মদ খাচ্ছি। আজ নিজেকে বাপ্পারাজ মনে হচ্ছে। বাপ্পারাজ যেমন চ্যাকা খেয়ে মদ নিয়ে রাস্তায় হাটে আমিও তেমন করবো। ততক্ষণে দিতিয়া আমার কাছে চলে এসেছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি হাটতে হাটতে হঠাৎ থেমে গেলাম। পিছু ফিরে আমার বাসার দিকে তাকালাম। চোখ ফেরাতেই চোখ গেলো পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদে। সাথেই সাথেই বিল্ডিংয়ের দিকে ফিরে সটান দাঁড়িয়ে গেলাম। বাঁ হাতে সেভেন আপ রেখে ডান হাত স্যালুট জানালাম।

আমার স্যালুট দেয়ার কারণ আমার পাশের বাসার ছাদে কোন পুলিশ আর্মি কিংবা দেশের পতাকা নয়। আমার স্যালুট দেয়ার কারণ শ্যামবতার ভীত। শ্যামবতা হচ্ছে শ্যামবতীর পুংলিঙ্গ। শ্যামবতা আমার জীবনের ক্রাশ নামক বাঁশের প্রথম অধ্যায়। তার শ্যামবর্ণের চেহারায় মুগ্ধ হয়ে নাম দিয়েছিলাম শ্যামবতা। ক্লাস ফাইভ,সিক্স দুই বছর সে আমার ক্রাশ ছিলো। যদিও পরে তা ভয়ে পরিণত হয়েছে।

শ্যামবতাকে আমি জমের মতো ভয় পাই। আমার সামনে যদি একটা রাসেল ভাইপার কিংবা সিংহ আর শ্যামবতাকে দাঁড় করায় তবে আমি শ্যামবতার দিকে তাকিয়ে ভীত চেহারায় ঢোক গিলে পালাবো।

তাকে এত ভয় পাওয়ার কারণটা বলি, ছোট বেলা থেকে আমার মাঝে দস্যিপনা ছিলো চোখে পড়ার মতো। কাউকে ভয় পেতাম না। তখন বাবা ভয়ংকর রাগী আর গম্ভীর শ্যামবতাকে আমার হোম টিউটর হিসেবে নিয়োগ করেন। প্রথম দিন আসার পর আমি তাকে বলেছিলাম, আমার পড়তে ইচ্ছে করে না। প্রেম করতে ইচ্ছে করে। আমি পড়বো না প্রেম করবো। আর শুনেন আমি একদম আপনাকে ভয় পাই না।

সেই কথা বলার সেকেন্ড দশেক পর আটারো বছরের ছেলেটা বারো বছরের আমিটার গালে সর্বশক্তি দিয়ে চড় মেরেছিলেন। এক চড়েই জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম আমি। সেই সাথে প্রেম আর ক্রাশের ভুত নেমেছে সেদিন। ক্রাশ নামক প্রথম বাঁশ সেদিনই গ্রহন করেছিলাম। রাতে কাপুনি দিয়ে জ্বর এসেছিলো। সাতদিন বিছানা থেকে উঠতে পারি নি। বিছানা থেকে উঠতেই সবার আগে আমি তার বাসায় গিয়ে সবার সামনে তাকে স্যালুট জানিয়ে বলেছিলাম,"আমি আপনাকে ভয় পাই।" সেই ভয় এখনো আছে। এখনো দেখা হলেই আমি তাকে স্যালুট জানাই। আর তার গার্লফ্রেন্ডকে একশো এক বার মনে মনে পানিতে চুবাই।

শ্যামবতাকে দেখে পুরনো দুঃখ যেন জেগে উঠলো। মনের বাপ্পারাজ বলে উঠলো, তোর জীবন প্রেম আসবে না। আজীবন তুই সিঙ্গেল থাকবি। তোর প্রেম হবে না। তোর জীবনে ক্রাশ নামক বাঁশ আসবে শুধু। প্রেম না করেও ছ্যাকা খাবি। ক্রাশ মা বানাবে,থাপ্পড় দিবে আরো অনেক কিছু করবে। মনের বাপ্পারাজের অভিশাপ শুনে কান্না ফেলো বাসায় চলে এলাম। আবারো ঘন্টাখানেক কাঁদলাম।

*

পরদিন যথারীতি কলেজ যাচ্ছি। প্রদীপের ভয়ে দিতিয়াকে সাথে না নিয়ে একাই যাচ্ছি। মান সম্মানের ব্যাপার। লোক জানাজানি হলে সমস্যা হবে।

বাস স্টপে এসে দাঁড়াতেই কোথা থেকে প্রদীপ ছুটে এলো। বাস স্টপ ভর্তি লোকের সামনে আমার পা ছুঁয়ে সালাম করলো। তারপর বিনত কন্ঠে বলল,

"কেমন আছেন মা? আশা করি ভালো আছেন। আপনার জন্য সুখবর আছে, কাল মা বাবার সাথে ঝগড়া করে বাসা নানুর বাড়ি চলে গেছে। এই ফাঁকে আপনি বাবাকে বিয়ে করে আমাদের বাসায় চলুন। বাবাও আজ বাসায়। আপনি বাসায় গেলেই আমি কাজি ডাকবো। তারপর সূচনা মানে আপনার পুত্রবধু আপনাকে লাল বেনারসি পরিয়ে আঁচলে মায়ের ফেলে যাওয়া সংসারের চাবি বেধে দিবে। তবে চলুন আর দেরি কেনো! আপনার ছেলেমেয়ে নাতনি অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। চলুন মা।"

বলে আমার হাত ধরে টেনে একটা সিএনজিতে উঠিয়ে দিয়ে নিজেও আমার পাশে এসে বসলো। আমি তখনো ঘটনা বুঝে উঠতে পারি নি। ঘটনা বুঝে উঠে আমি অস্ফুট স্বরে বললাম,

"এটা জীবন নয় এটা বাশ বাগান। হয়াত থাকতে আর কখনো ক্রাশ খাবো না। ভুলে না। তার আগে কচু গাছের সাথে দড়ি বেধে ফাঁসি দিবো।"

ভাবনা কাটিয়ে আমি প্রতিবাদ করতে চাইলাম। কিন্তু পারলাম না। তার আগেই গাড়ি থেমে গেলো। প্রদীপ আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বলল,

"আসুন মা আমরা চলে এসেছি। এটাই আপনার স্বামীর বাড়ি।"

বলে একটা বাড়ির দিকে ইশারা করলো। আমি তাকিয়ে চমকালাম। মনে মনে বললাম,

"তবে কি আমি আজ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিবো ম্যারেজ উইথ মাই লয়েল এন্ড ড্যাশিং ক্রাশ'স ফাদার!"

চলবে...

(রম্য গল্প এটা। সবাইকে হাসানোই মূল্য লক্ষ্য আমার। বাস্তবতা নিয়ে প্রচুর গল্প লিখেছি। বাস্তবতাপ্রেমীরা সেগুলো পড়তে পারেন। এই গল্পে বাস্তবতার ছোঁয়া মিলবেনা তেমন একটা। তাই বাস্তবতা খুঁজবেন না। আর হ্যাঁ আমি সিরিয়াল দেখি না যে সেখান থেকে স্ক্রিপ্ট উঠাবো। স্টার জলসার মতো বাজে চ্যানেল তো নয়ই। তাই আজেবাজে মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন। পারলে গঠনমূলক মন্তব্য করুন। খুশি হবো। ধন্যবাদ)

আগের পর্ব

https://www.facebook.com/groups/bdofficials/permalink/853248575480640/

1
$ 0.00
Avatar for Nipa1234
4 years ago

Comments