#কোথায়_সেই_গয়নার_বাক্স
#২য়_পর্ব
আমাদের পর দাদি আর পর দাদার মধ্যে পান্নুবাঈকে তাড়িয়ে দেওয়া নিয়ে যে মনোমালিন্য হয়েছিলো, তা আর তাদের জীবত দশায় কখনো মিটমাট হয় নাই।
আমাদের জীবনে সব চাইতে আলোচনার এবং আলোচিত গল্পের বিষয় ছিলো, আমাদের পর দাদির গল্প। মানুষ বাঁচে আশায় ,আমাদের এত বিশাল জমিদার বাড়ি অথচ আমাদের জীবন যাপন ছিলো খুবই সাধারণ, এর একটা-ই কারণ তা হলো আমাদের বংশপরম্পরায় সব পরুষ মানুষ গুলো ছিলো অকর্মা।
তারা না, জমিজমা দেখতো! না, তারা কোন ব্যবসা
বানিজ্য করতো! তারা তাদের জীবন দশায় একটা কাজই করতো, তা হলো তাদের স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার, আর বসে বসে হিসাব করা কোথায় গেলো সেই গয়নার বাক্স। আর দাদিজানের ঘরের প্রতিটা কোন, মনে হয় শতবার নাড়াচাড়া করে নাই, এমন কোন পূর্ব পুরুষ আমাদের পরিবারে নাই।
আমাদের বাড়ির পুরুষ মানুষ গুলো যেমন নরম মনের ঠিক তার বিপরীত হলো এই পরিবারের মেয়েরা।আমাদের পরিবারের সব মেয়েদের মুটামুটি ভালো পরিবারে বিয়ে হয়, তার কারণ হলো তারা সবাই কমবেশি এই পরিবারের বিষয় সম্পত্তির উত্তধিকার। এবং তাদের কে সব সময়ই তাদের ওয়ারিশ বুঝিয়ে দেওয়া হতো।এমন অনেক হয়েছে যে আমাদের বাড়ি থেকে আমাদের বাড়ির ফুপু-দাদিরা, যে সম্পত্তি পেয়েছে তা কাজে লাগিয়ে তাদের শ্বশুর বাড়ির লোকেরা আমাদের চাইতে অনেক ভালো দিন যাপন করতো।
আমাদের সম্পত্তি বিক্রি করা হতো বিভিন্ন কারণে, এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো আমাদের পড়ালেখার খরচ, আর বাড়ির মেয়েদের জাঁকজমক পূর্ণ ভাবে বিয়ে দেওয়ার ব্যয় বহনের জন্য।
আমাদের বংশের সবার মস্তিস্কের ভেতরে চীর স্হায়ী ভাবে একটা কথা গেঁথে গিয়েছিল , তা হলো আমাদের বংশে অভিশাপ আছে, সেই অভিশাপ দিয়েছে আমাদেরই পরিবারের সব চাইতে আলোচিত শক্তিমান সেই নারী, যিনি ছিলেন আমাদের পর দাদা সাফায়ত চৌধুরীর স্ত্রী, আমাদের পর দাদি। শাপ-মোচন হবে একদিন, আর তখন আমরা আমাদের দাদিজানের গয়নার বাক্স ফিরে পাবো, তার পরেই আমরা আবার ধনী হয়ে যাবো।
আমার ছোট ফুপু প্রচনড রাগী একজন মানুষ, তার বিয়ে হয়েছিল পাশের গ্রামের এক ধনী পরিবারে। কিন্তু ফুপুর সাথে, তার শ্বশুর বাড়ির লোকদের সাথে বনিবনা হয় নাই, এর কারণ ছিলো ফুপার চরিত্রের দোষ, উনি তার বাড়ির আশ্রিত এক বোন কে, প্রায়ই ঘরে ডেকে নিয়ে হাত পা টেপানোর মতো কাজ করাতো।এই বিষয় টা আমাদের ফুপুজান একদম পছন্দ করতো না, তার পর একবার ফুপু জান ফুপাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসেন এবং আমাদের বাড়ির কাজের লোক গামা'কে ফুপার শরীর এমন করে বানায়ে দিতে বলেন যে, এর পরে যেন শরীরে আর ব্যথা- বেদনা না থাকে।সেই বার ফুপা ফুপুকে রেখে চলে যায়, তার পর বাড়িতে গিয়েই ফুপুকে তালাকনামা পাঠিয়ে দেন। তবে এই তালাকের পেছনে আরো বড় এবং কঠিন বিষয় লুকিয়ে আছে, যা আমরা ছোটরা জানতাম না।
আমাদের ছোট ফুপুই আমাদের সবার জীবন বদলে দিতে থাকেন। আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, আমাদের ফুপুর তালাকের বিষয় নিয়ে ফুপুর কোন মাথা ব্যথা ছিলো না।তিনি সব সময়ই বলতেন মেয়ে হয়েছি বলে কি পঁচে গিয়েছি নাকি? যে , একটা ইতর - চরিত্রহীন লোকের সংসার করবো? মেয়ে মানুষের বিয়ে আর সংসার করা ছাড়াও অনেক কাজ আছে। আমাদের ফুপুজান ছিলো আমাদর সবার খুবই প্রিয়, তিনি আমাদের ভেতরে একধরনের স্পিড তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি একজন মহিলা হয়ে দেখিয়ে দিয়ে ছিলেন, মানুষের অসাধ্য কিছু নাই, মানুষের কর্মই তার ভাগ্য বদলের হাতিয়ার। সে অত্যন্ত আনন্দের সাথে বাড়ির প্রতিটি বিষয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ মতামতের দেওয়া থেকে শুরু করে আমাদের সবাই কে মানুষ করার দায়িত্ব নিয়ে নিলেন।
আমার বাবারা ছিলো দুই ভাই, দুই বোন। আমাদের বড় ফুপু থাকতো ঢাকা শহরে, তার স্বামী ছিলো সরকারি আমলা, তিনি কখনো ছুটি কাটাতে আমাদের বাড়িতে আসতো, তবে খুব বেশি দিন থাকতো না। ফুপির এক ছেলে, এক মেয়ে, তারা কিন্তু সব সময়ই আমাদের বাড়িতে আসলে, আমাদের বিশাল বাড়ি নিয়ে খুবই গর্ব করতো আর বলতো, তোমাদের বাড়ির মতো যদি আমাদের একটা জমিদার বাড়ি থাকতো, তবে আমরা সেই বাড়ি অনেক সুন্দর সাজিয়ে রাখতাম।আমরা তখন বলতাম এটা তো তোমাদেরও নানার বাড়ি।
আমাদের ছোট ফুপুজান তার সকল গয়না বিক্রি করে দেন এবং সেই গয়নার টাকা দিয়ে আমাদের বাড়ির ভেতরের দুইটা পুকুর পরিস্কার করানো, পুকুরে মাছ ছাড়া থেকে শুরু করে, পুকুরের চার পাশ পরিস্কার করে সেখানে ফলের গাছ লাগানো সব কিছু করেন। ফুপুর সব কাজের শুরুতে প্রথমেই বাবারা অমত করতো এই বলে যে,
- এগুলো কে দেখবে?সব লস হবে, মাছ চুরি হবে, মাছ মরে যাবে, কে নিয়ম করে মাছের খাবার দিবে?তুমি এই ঝামেলা কেন ঘাড়ে নিচ্ছ? তোমার যদি বাসায় বসে থাকতে বিরক্ত লাগে, তবে তোমার ভাবিদের সাথে ঘরের কাজে হাত লাগাও।
এই কথা গুলো শোনার, সাথে,সাথে ছোট ফুপু বাবা'কে শুধু ঠান্ডা গলায় বলে,
-বড় ভাইজান যদি রান্না করা আর ঘর সংসার করাই আমার জীবনের এক মাত্র লক্ষ হতো, তা হলে ঐ বদমায়েশ টা সংসার করলাম না কেন?শুধু আপনাদের অতি ভালো মানুষি আর দুর্বলতার জন্য আমার জীবনে কি নরক নেমে এসেছিলো, তাকি আপনাকে আবার মনে করিয়ে দিতে হবে? ভুলে গেছেন?
-আমি কিন্তু ভুলি নাই, আমি আমার মতো করে ভালো থাকতে চাই এবং এই পরিবারের জং ধরা মানুষ গুলোর মরিচাধরা জীবন থেকে ফেরাতে না পারলেও অন্তত এই বাড়ির সপ্তম প্রজন্ম কে আমি ধারালো বানাবো।
আসলে আমাদের বাড়ির পুরুষদের কোন কাজ না করতে করতে , সব কিছুতেই তাদের ভয় ছিলো, তারা কিছু করার আগেই নানা অজুহাত দেখাতো। ফুপুজান গ্রামের একদম দিন মজুর টাইপ দুইটা পরিবার কে আমাদের বাহির বাড়িতে থাকার জন্য নিয়ে আসে, সাথে এ-ও বলে দেয় যে, কাজ ঠিক মতো না করলে বের করে দেওয়া হবে। তখন আমাদের মা-বাবারা খুবই বিরক্তি প্রকাশ করে, এদের খাওয়াতে কত খরচ পরবে তা ভেবে, বাড়িতে এমনিনেই কাজের লোক আছে গামা আর তার বউ।
কিন্তু ছোট ফুপুর কাজ নিয়ে তাকে সামনা-সামনি কেউ কিছু বলতে পারে না। এর পেছনে একটা বড় কারণ হলো ফুপুজানের সাথে আমাদের পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচিত ব্যাক্তির সাথে বিরাট মিল আর সেই মিল আবিষ্কার হয় যেভাবে-
- একদিন আমাদের দাদিজান তার বড় মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে কাজের লোক নিয়ে আমাদের স্টোর রুমে যান , সেখানে রাখা হতো আমাদের পরিবারের সব বাতিল হওয়া জিনিস থেকে শুরু করে, বিশাল বিশাল কাঠের বাক্সের মধ্যে তামা- কাসার ও চিনামাটির পুরাতন আমলের সব আসবাবপত্র, আর একপাশে ছিলো শতছিন্ন পারস্যের গালিচা বা কার্পেট, কিছু পেইন্টিং যার মধ্যে ছিলো আমাদের পরিবারের পূর্ব পুরুষদের কয়েকটি ছবি।এগুলোর বেশির ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে ফ্রেম নষ্ট হয়ে গেছে এই ছবি গুলো এক সময় আমাদের বৈঠক খানার দেয়ালে ঝুলানো ছিল। এখন সব স্টোর রুমের দেয়ালের কোনে রাখা আছে এবং কাপড় দিয়ে ঢাকা দেওয়া আছে।
সব সময়ই এই বাড়িতে কারো বিয়ে হলে , তখন আমাদের বংশের খানদানি কিন্তু বিষয় সচেতন ভাবে সামনে নিয়ে আসা হতো, এর মধ্যে ছিলো একটা রুপার কারুকাজ করা পানদান ও রুপার ট্রে যা শুধু মাত্র বিয়ের সময় তেতুল দিয়ে ঘষে-মেজে চকচকে করে তোলা হতো। এবং অন্যদের দেখানো হতো আমরা এখন অতিসাধারণ হলে কি হবে, একসময় আমরা ছিলাম জমিদার, আমরা সাধারণ কেউ না!
যে কথা বলছিলাম সেই দিন দাদি রুপার দুটা গ্লাস খুঁজে পাচ্ছিলেন না ,তখন উনি আরেকটা বড় সিন্ধুক খোলার চেষ্টা করেও খুলতে পারছিলেন না আর বলতেও পারছিলেন না ঐ সিন্ধুকে কি রাখা আছে, তখন আমি ছোট ফুপু এবং আব্বা মিলে সবাই চেষ্টা করতে লাগলাম সিন্ধুক টা খোলার জন্য , আসলে এত বছরের পুরাতন তালা নিয়ম করে না খুললে তাতে জং ধরে যায় তার পর অনেক বার তেল দিয়ে চেষ্টা করে সেই তালা খোলা হয়, আসলে আমরা সবাই কেন জানি স্টোর রুম খুললেই সেখানের পুরাতন জিনিস দেখতে পছন্দ করতাম, আর সব কিছুতেই গুপ্ত ধন খুঁজতাম। সেই সিন্ধুক থেকে বের হয় কিছু দলিল আর একটা মলমল কাপড়ে মোড়ানো ছবি, ছবিটা আকারে অনেক বড় না, তবে এখনো অনেক ঝকঝকে পরিষ্কার ছিলো ছবির নীচে নাম লেখা লুৎফুন নেচ্ছা। সেই ছবির লুৎফুন নেচ্ছাই হচ্ছে আমাদের পর দাদি। আর তার কপালের বা পাশে একটা তিল, আর আমাদের ছোট ফুপুর কপালের বা পাশ-ও ঠিক সে রকম একটা তিল, ছোট ফুপু দেখতে একদম পর দাদির মতো।
সেই ছবি নিয়ে কিছু দিন খুব আলোচনা হলো তার পর থেকে ছোট ফুপুর মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যায়, তিনি কেমন জানি হয়ে গেলেন, তাকে কোথাও খুঁজে না পেলে সবাই এক সময় বুঝতে পারতো, তিনি স্টোর রুমের চাবি লুকিয়ে নিয়ে এসে, স্টোর রুমে এসে বসে থাকতো, একা-একা এবং সারাদিন পুরাতন জিনিস নাড়াচাড়া করে পার করে দিতো। সেই থেকে সবাই ছোট ফুপু কে একটু বেশিই প্রাধান্য দিত।
ছোট ফুপুর বিয়ের দিন থেকেই আসলে ছোট খাটো সমস্যার শুরু হয়েছিলো, তার শ্বশুর বাড়ির সাথে,ছোট ফুপুর বিয়ের দিন আমাদের বাড়ি থেকে দুইটা রুপার চামচ হারায়, যা বর্তমান সময়ের রূপার জিনিসের সাথে মূল্যে-মান ধরলে হবে না, সেই চামচ আনা হয়েছিলো ইংল্যান্ড থেকে যে চামচে দু'টি পাথর বসানো ছিলো। চামচ গুলো ছিলো ১৬০ বছরের পুরাতন, এর একটা এন্টিক মূল্য আছে। আর সব চাইতে বড় কথা আমাদের পরিবারের ঐতিহ্য এগুলো।
আর আমরা কোন সমস্যায় পড়লেও পরিবারের কোন ব্যবহারের জিনিস-পত্র সেল করি না, এটা আমাদের পূর্ব পুরুষ দের নিষেধ আছে।
বিয়ের আসরে বসেই বিয়ের কনে আমাদের ছোট ফুপু এমন জেদ করে বসে যে, সবাই বিব্রত হয়ে যায়।ছোট ফুপুর এক কথা, যতক্ষন না চামচ পাওয়া যায়, ততক্ষণ উনি কবুল বলবেন না। তার একটা-ই কথা ছিলো এই চামচ বিয়ে বাড়ির কেউ নিয়েছে তা এক্ষনি বের করা যাবে, এই চামুচে করে আমার দাদিজান আর দাদাজান একসাথে বসে পায়েস খেতেন। চামুচ শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়। কিন্তু তারা অনেক আজেবাজে কথা শোনায়। আর বারবার বলতে থাকে বিয়ে বাড়িতে এমন সব সময়ই হয়, এটা কেমন ছোটলোকি দুটো রুপার চামচ কি এমন মূল্য তা নিয়ে এত নাটক করা। আমার আম্মা ছোট ফুপু কে বার বার বলছিলো এই চামচ তো বাক্সের মধ্যে পরেই থাকে সারাবছর। এটা নিয়ে এমন কেন করছো? পরে তোমার সংসারে অশান্তি হবে এই বিষয় নিয়ে।
তার পর ফুপুর ফিরানির সময় ফুপুর শ্বশুর বাড়ি থেকে বলে পাঠায় ফুপুর সাথে যেন রুপার পান দানিটা দিয়ে দেওয়া হয়, বউ তো তার বাবা-র বাড়ি থেকে দুই একটা জিনিস নিয়েই আসতে পারে। এই কথা শুনে তো সবার মাথায় হাত, কারণ এই পান দানি আসলে আমাদের পর দাদির খুবই প্রিয় ছিলো বলে আমরা বংশপরম্পরায় এই গল্প শোনে আসছি।
আমাদের ছোট ফুপুকে যথেষ্ট পরিমানে গয়না এবং পুরো বাড়ির আসবাবপত্র বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল এটা আমাদের বাড়ির চল ছিলো। তার পরেও এটা কেমন চাওয়া!আজ আমি বলবো আমাদের জীবনটাকে কি ভাবে বদলে দিলো আমাদের ছোট ফুপু। আমাদের ছোট ফুপু দেখিয়ে দিয়েছিলো একজন নারী তার যোগ্যতা দিয়ে কি ভাবে সবার শ্রদ্বা আদায় করে নিতে পারে তা।
আমাদের পরিবারটা সব সময়ই একটু জনবিচ্ছিন্ন পরিবার ছিলো, এর কারণ হলো, আমরা যেহেতু একসময় আমাদের গ্রামে শুধু, তা না, আমরা ছিলাম ঐ অঞ্চলের সব চাইতে ধনী এবং প্রভাব শালী মানুষ। আর কোন বড় পরিবার যখন তাদের প্রভাব ধরে রাখতে পারে না, তখন তারা আর সহজে কারো সাথে মিশতে পারে না, তাদের ধারণা এখন আর মানুষ তাদেরকে তাদের স্বভাবিক সন্মান টুকুও দিবে না। তাই তারা নিজেদেরকে আড়াল করে রাখে।
আর অপর পক্ষ আরেক কাঠি উপরে, তারা ইচ্ছে করেই আমাদের হেয় করতে চায়, তাদের ভাবখানা আপনি কে, যে,আপনাকে আমার সন্মান করতে হবে? কিছু নাই,, তার পরেও ভাব নেয়! আসলে আমরা কোন ভাব'ই নিতাম না, আমরা সারাজীবন যেমন ছিলাম তেমনই আছি, আমাদের পরিবারের শিক্ষা -দিক্ষা এবং আমাদের চাল - চলনের জন্য সব সময়ই আমাদের কে আলাদা করা যেতো।
আমাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা সব সময়ই প্রচন্ড রকমের ভদ্র ছিলো। তারা গ্রামের মানুষের সাথে খুব একটা মিশতেন না। আসলে আমাদের পারিবারিক জমিগুলো যাদের কাছে আধিয়া দেওয়া হতো, তাদের সাথে সব ধরনের যোগাযোগ গামাই করতো। আমার বাবা এবং আমাদের ছোট চাচা দুজনেই পড়ালেখা শেষ করে, কোন চাকরি বাকরি না করে বাসায় বসে আছে, তার একটাই কারণ, তারা চাকরি করলে সংসার আর তাদের জমিজমা কে দেখবে? অথচ তারা কিন্তু কখনোই কিছু দেখা শোনা করে না।আমাদের কোথায় কতটুকু জমি আছে তার বেশির ভাগ খবরই তারা জানে না। আর অনেক দিন কোন জমি কেউ ভোগ করলে এক সময় জমিটা তারা দখল করে নেয়, বা নাম মাত্র কিছু দিয়ে ভোগ করে।
আমাদের জমি আমরা সাধারণত আমাদের আদিয়াদের কাছে বিক্রি করি, সে ক্ষেত্রে তারা আমাদের কে খুবই কম দাম দেয় এবং কখনো একসাথে মূল্য পরিশোধ করে না এই বিষয়ে গ্রামের ভেতরের সবার ভালো জোট আছে। গ্রামের লোকই গ্রামের জমি কেনে। তারা আমাদের দুর্বলতা জানে, আর জমির দালাল থেকে শুরু করে সবাই গ্রামের লোক।
আমাদের ছোট ফুপু অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিলো, তার পরে-ও তাকে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয় নাই, কারণ তা হলে তাকে বাড়ির বাহিরে, দূরের শহরে থাকতে হবে, এটা মানা কঠিন ছিলো। আমাদের বাড়ির সবাই একটু গা ঘেঁষে থাকতে পছন্দ করে। আর একটা জিনিস তা হলো বাহিরের জগৎ এর সাথে এডজাস্ট করতে না পারা।
আমাদের বাড়ির আশপাশে কোন বাড়ি নাই এর কারণ হলো আমাদের বাড়ির আশেপাশের সমস্ত জায়গা জমি আমাদের ছিলো। আমাদের বসত বাড়ি, পুকুর আর বাড়ির ভেতরের বাগান মিলেই পঁচিশ বিঘার বেশি জমি ছিলো। আর মেন রোড থেকে আমাদের বাড়িতে এসার জন্য একটা রাস্তা আছে, সেই রাস্তা এবং রাস্তার দুইপাশের সব জমি আমাদের আর এই জমি গুলো আমাদের বাড়ির পুরাতন কাজের লোক গামা দেখাশোনা করতো। বাড়ির কাছের কোন জমি বিক্রি করা হয় নাই। আমাদের বাড়ির ভেতরে এত নিরিবিলি প্রাকৃতিক একটা পরিবেশ ছিলো যে, আমরা আসলে খুব কোলাহল পূর্ণ জায়গায় বেশি সময় থাকতে পারতাম না।
আমাদের ছোট ফুপুর ভেতরে হঠাৎ করেই অন্য রকম পরিবর্তন হয়, আমার ফুপু কে যখন ফুপা তালাকনামা পাঠায় তখন সবাই খুবই আপসেট ছিলো ফুপুর এখন কি হবে? ফুপুর জীবনটা শেষ হয়ে গেলো!আর একটা কথাও একদিন আমার আম্মা একটু খানি বলেছিলো তা হলো, বাড়ির মেয়ে তালাক হয়ে ফিরে আসলে বাড়ির বদনাম হয়, মানুষ ভাবে মেয়ের কোন সমস্যা আছে! বাড়িতে কোন কথা একবার মুখ থেকে বের হলে সেটা পরিবারের সবার কানেই আসে।
আমার ছোট ফুপুর কানেও এই কথা চলে আসে,তার পরের ঘটনায় আমরা ছোট ফুপুর তালাকের বিষয় নিয়ে অনেক কিছু জানতে পারি।
https://m.facebook.com/groups/526513374820830?view=permalink&id=857562111715953
#চলবে
#লেখাঃসুরাইয়া_শারমিন।