''মহারাজ পরীক্ষিৎ ছিলেন মধুকরের মতো সারগ্রাহী । তিনি খুব ভালভাবেই জানতেন যে , এইকলিযুগে শুভ কৰ্ম সম্পাদন করার ইচ্ছামাত্ৰই তার ফল পাওয়া যায় , কিন্তু অশুভ কৰ্মসমূহেরক্ষেত্ৰে সেরুপ হয় না , সেগুলি অনুষ্ঠিত হলেই ফল দান করে । তাই তিনি কলিযুগের প্রতিবিদ্বেষী ছিলেন না''।
কলিযুগকে বলা হয় অধঃপতিত যুগ ।
১। কলিযুগে সমস্ত মানুষের আয়ু খুব অল্প।
২। তারা কলহপ্রিয়, একে অন্যের সাথে সর্বদা ঝগড়া করে।
৩। তারা খুব অলস, তারা কর্মবিমুখ ও ঘুমিয়ে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় নষ্ট করে। বিশেষ করেপারমার্থিক বিষয়ে অত্যন্ত অলস।
৪। মন্দগতি, তারা মায়া দ্বারা চালিত, শ্রাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাহীন। তাই তাদের অন্তিমে বা মৃত্যুর পরসদগতি হয় না।
৫। ভাগ্যহীন, তারা চেষ্টা করেও সত্যের সন্ধান পায় না তাই তারা চিন্ময় আনন্দ থেকে বঞ্চিতহয়।
৬। তারা অনিয়ম ও অনাচার জীবন-যাপন করে সারাজীবন বিভিন্ন রোগাদি দ্বারা আক্রান্তথাকে।
কলিযুগের মানুষ আরও অন্যান্য দোষে জর্জরিত যেমন,
১) ভুমি দোষ, আমরা গৃহকে আনন্দ ফুর্তির জায়গা মনে করি। কখনও গৃহকে ছেড়ে যেতে চাইনা। পবিত্র জায়গা ভগবানের ধাম, তীর্থস্থানে বা মন্দিরে যেতে চাই না। বরং খেলার মাঠ, সিনেমা হল বা সুন্দর কোন পার্কে ঘুরতে যাই ছুটিতে। কিন্তু আমরা ইচ্ছা করলেই গৃহকে কৃষ্ণেরমন্দির করে গৃহেই ভগবানের সেবা করতে পারি।
২) সঙ্গ দোষ, আমরা সারাদিন অসৎসঙ্গে মেতে থাকি। কখনও সাধুসঙ্গ করতে ভালবাসি না।বরং সাধুদের দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেই।
বিবাহিত স্ত্রী ও স্বামীকে ধর্মাঙ্গীনি না ভেবে ভোগের সামগ্রী মনে করি।
৩) অন্ন দোষ, আমরা সারাদিন অখাদ্য , কুখাদ্য খেতে ভালবাসি। ভগবানের প্রসাদের প্রতিআসক্তি করতে পারি না বরং জন্মদিনে, বিয়ের অনুষ্ঠানে বা বিভিন্ন পার্টিতে কাচ্চিবিরানি খেতেজিভে জল আসে।
আবার মানুষ রাজনৈতিক দলের শিকার, বিভিন্ন ইন্দ্রিয়তৃপ্তির প্রলোভন যেমন, সিনেমা-টিভি, অনর্থক খেলাধুলা, জুয়া, ক্লাব, জড়-জাগতিক গ্রন্থাগার, ধুমপান, আসব পান, প্রতারণা, চুরি ওবাটপাড়ি ইত্যাদি।
জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজ বলেছেন, ''ভাগবতে উল্লেখ আছে গৃহস্থ সংসারে গৃহমেধীরাকিভাবে জগতের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। গৃহস্থ জীবনের প্রথম আকর্ষন হচ্ছে সুন্দরী এবং স্নেহশীলাপত্নী, যার আকর্ষনে গৃহের বন্ধন দৃঢ থেকে দৃঢতর হয়।
মানুষ তার পত্নীর সঙ্গ দুইটি ইন্দ্রিয়ের দ্বারা উপভোগ করে -- জিহ্বা ও উপস্থ।
স্ত্রী অত্যন্ত মধুরস্বরে আলাপ করে। তারপর সে জিহবার তৃপ্তির সাধনের জন্য সুস্বাধু আহারতৈরী করে এবং জিহবা যখন তৃপ্তিসাধন হয় তখন অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলি বলবান হয়ে উঠে, তখনপত্নী মৈথুনের মাধ্যমে তাকে আনন্দ দান করে''।
▪️অধঃপতিত কলিযুগের সমস্ত জীবেরা অত্যন্ত দুৰ্দশাগ্ৰস্ত বলে পরমেশ্বর ভগবান তাদের কিছুবিশেষ সুবিধা প্ৰদান করেছেন ।
তাই ভগবানের কৃপায় , পাপ কর্মের অনুষ্ঠান না করা পৰ্যন্ত জীবকে পাপের ফল ভোগ করতে হয়না । অন্যান্য যুগে পাপ কথা চিন্তা করা মাত্র কর্মের ফলেই কেবল জীবকে সেই কর্মের ফল ভোগকরতে হত।
পক্ষান্তরে , এই কলিযুগে পুণ্য কর্মের কথা চিন্তা করলেই কেবল তার ফল লাভ করা যায়।
ভগবানের কৃপায় মহারাজ পরীক্ষিৎ ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী এবং অভিজ্ঞ রাজা , তাই তিনিকলির প্রতি অনৰ্থক বিদ্বেষপরায়ণ ছিলেন না , কেননা তিনি তাকে কোন পাপ কৰ্ম করারসুযোগ দিতে চাননি। তিনি তার প্রজাদের কলিযুগের পাপময় প্রভাব থেকে রক্ষা করেছিলেন , আবার সেই সঙ্গে তিনি কলিকে সমস্ত সুযোগ দিয়েছিলেন কতকগুলি পাপময় স্থানে থাকবারঅনুমতি দিয়ে ।
▪️শ্ৰীমদ্ভাগবতের শেষে বলা হয়েছে যে , কলিযুগ যদিও একটি পাপের সমুদ্ৰ কিন্তু এই যুগে একটিমহান গুণ রয়েছে । তা হচ্ছে কেবলমাত্ৰ ভগবানের দিব্য নাম জপ ও কীৰ্তন করার ফলে মানুষঅনায়াসে এই জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারে।
''হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে''।।
▪️এইভাবে মহারাজ পরীক্ষিৎ ভগবানের দিব্য নাম প্রচারের এক সুসংবদ্ধ প্ৰচেষ্টা করেছিলেনএবং কলির কবল থেকে তার প্রজাদের রক্ষা করেছিলেন । এই বিশেষ সুবিধাটির জন্যইদেবতারা ও মহৰ্ষিরা কখনো কখনো কলিযুগের শুভ কামনা করেন । বেদেও বলা হয়েছে যে , শ্ৰীকৃষ্ণের কার্যকলাপের কথা আলোচনার ফলে কলিযুগের সমস্ত দোষ থেকে মুক্ত হওয়া যায় ।
▪️শ্ৰীমদ্ভাগবতের শুরুতেও বলা হয়েছে, ভাগবত পাঠ করার ফলে ভক্ত পরমেশ্বর ভগবানেরহৃদয়ে বন্দী হয়ে যান । এইগুলি কলিযুগের কয়েকটি বিশেষ গুণ এবং মহারাজ পরীক্ষিংসেগুলির পূৰ্ণ সদ্ব্যবহার করেছিলেন। একজন প্ৰকৃত বৈষ্ণব হওয়ার ফলে তিনি কলির কোনঅমঙ্গল কামনা করেননি ।
আসুন, এই কলিযুগের বিশেষ গুণ পেতে প্রতিদিন গীতা, ভাগবত শ্রবন ও কীর্তন এবংভগবানের দিব্যনাম হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ ও কীর্তন করে ভগবদ্বামে ফিরে যাই।
(সবাই like, share ও comment করুন)
।।সদগুরুর আশ্রয় নিন।।জয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।।