মিজান দৌড়ে লাশের কাছে গেল।প্রথম লাশের মুখ থেকে কাপড় সরানোর পর পিছনে ফিরে তাকিয়ে না সূচক বাক্য মাথা নাড়ালো। তার মানে এটা রানি না। মিজান দ্বিতীয় লাশের মুখ থেকে কাপড় সরাতেই বসে পরলো। মিজানের এই অবস্থা দেখে ভয়ের পরিমাণ আরও দ্বিগুণ হয়ে গেল তাহলে কি এটাই রানি! মনের মধ্যে হাজারও প্রশ্ন নিয়ে মিজানের কাছে যেতেই শকড হয়ে গেলাম।
আলিফঃ বাহাদুর এই দুটি লাশের মধ্যে একটিও রানি না তার মনে রানি বেঁচে আছে।
মিজানঃ বাহাদুর এতক্ষণ পর মনে হচ্ছে আমি আবার দ্বিতীয় জীবন ফিরে পেয়েছি।কিছুক্ষণ আগেও মনে হচ্ছিল আমি মনে হয় রানিকে আর পাবো না।
আলিফঃ বাহাদুর তুমি লাশগুলোর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?
আমিঃ এরা তো সুস্মিতা ও অনন্যা।
বাহাদুরঃ তুমি কি এদেরকে চেনো?
আমিঃ স্যার এখন আমাদের কাছে পুরো বিষয়টা ক্লিয়ার। আমাদের থেকে এখনই পাহাড়তলীর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যেতে হবে।আর ২-৩ টি পুলিশের টিম সিভিল ড্রেসে পাহাড়তলীতে পাঠিয়ে দিন।তাদেরকে এমনভাবে থাকতে বলবেন যেন তারা সেখানের বাসিন্দা।
আলিফঃ কিন্তু....
আমিঃ স্যার খুনিকে এই প্রশ্নের উত্তর আমি পেয়ে গেছি। আমি জানি এখন আপনার মনে অনেক প্রশ্ন আছে,আমি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিব কিন্তু তার আগে আমাদের থেকে তাড়াতাড়ি পাহাড়তলী যেতে হবে।
গাড়িতে বসে আমি নিহাল কে কল দিলাম,
আমিঃ হ্যালো নিহাল মিজানের মোবাইলে কি অন্য কারো ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া গিয়েছে?
নিহালঃ অবশ্যই পাওয়া গেছে কিন্তু সেটা কার সেটা জানার জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে।
আমিঃ আমাদের কাছে অতিরিক্ত সময় নেই তুই তাড়াতাড়ি এটা কনফার্ম কর, যে ফিঙ্গারপ্রিন্টটা পেয়েছিস সেটা খালিদ নাঈম নামক কোন ব্যক্তি কিনা?
নিহালঃ খালিক নাঈম নামের বাংলাদেশ অনেক ব্যক্তি আছে। তোর থেকে ওই ব্যক্তির সম্পর্কে আরও কিছু ডিটেলস দিতে হবে।
আমিঃ খালিদ নাঈম একজন প্রাক্তন ব্যাংক কর্মকর্তা। এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সে ব্যাংক থেকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।
নিহালঃ আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোকে জানাচ্ছি ২-৩ ঘন্টা সময় লাগবে।
আমিঃ নিহাল লিগ্যাল প্রসেসে ২-৩ ঘন্টা সময় লাগবে আর তুই তো একজন প্রফেশনাল হ্যাকার। প্লিজ আমার অবস্থানে থেকে কথাটা বুঝার চেষ্টা কর।
নিহালঃ ঠিক আছে আমি তাদের অফিসিয়াল সার্ভার হ্যাক করে এই জিনিসটার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জানাচ্ছি তোকে।
নিহালের সাথে কথা শেষ করে মোবাইলটি পকেটে রাখতেই আলিফ স্যার বলে উঠলো,
আলিফঃ বাহাদুর এখানে কি হচ্ছে আমাকে একটু বলবে?
আমিঃ সেই প্রশ্নের উত্তরটা একমাত্র মিজান দিতে পারবে।
মিজানঃ আজব আমি কি বলবো!
আমিঃ ১৪ ফেব্রুয়ারি রানীকে নিয়ে কোথায় গিয়েছিলি?
মিজানঃ না মানে আসলে....
আমিঃ মিজান চুপ করে থেকে লাভ নেই সত্যি করে বল ১৪ ফেব্রুয়ারি রানিকে নিয়ে কোথায় গিয়েছিলি।
মিজানঃ হালিশহর যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু.....
মিজানকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে,
আমিঃ হালিশহর যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু যেতে পারিস নি কারণ তোরা যে বাসে করে যাচ্ছিলি এই বাসটি হালিশহর ব্রিজের খাদে পড়ে যায়। আর সেদিন বাসে ড্রাইভার ও হেলপার সহ মোট তোরা 18 জন ছিলি আর এই ১৮ জনের মধ্যে শুধু নিরুপমা নামক একজন মেয়ে মারা যায় আর বাকি সবাই বেঁচে যায়।
মিজানঃ তুই কেমনে জানিস? কেসটাতো হালিশহর থানার ওসি বন্ধ করে দিয়েছিল সেদিনই।
আমিঃ আলিফ স্যার আপনার কি মনে আছে আমি আপনাকে ফাইল নাম্বার দুই সম্পর্কের কিছু বলতে চাচ্ছিলাম এমন সময় আম্মু কল দিয়েছিল?
আলিফঃ হ্যাঁ হ্যাঁ।
আমিঃ স্যার আমাদের ধারনাটাই ভুল ছিল ফাইল নাম্বার ১ না বরং ২ই ছিল খুনির মূল টার্গেট। টানা চার চারটি খুন হবার পর যখন আমি কেসটা স্টাডি করা শুরু করি তখন আমি একটা জিনিস জানতে পারি যে এই ৪জন খুন হওয়ার ২ দিন আগে অপহরণ হয়। তারপর আমি বিগত এক সপ্তাহে যতগুলো মেয়ে অপহরণ হয়েছে সবগুলো নিয়ে রিচার্স করলাম। যেহেতু লাশগুলো ব্রিজের নিচে পাওয়া যাচ্ছিল তাই আমি গত একবছরে ব্রিজ নিয়ে যতগুলো ঘটনা হয়েছে সেগুলো নিয়েও স্টাডি করলাম। তারপর আমার হাতে অবাক করার মতো একটা তথ্য আসে সেটি হলো যে চারজন মারা গিয়েছে তারা সবাই ১৪ ই ফেব্রুয়ারি হালিশহর ব্রিজে এক্সিডেন্টের সম্মুখীন হয়। যেহেতু অ্যাক্সিডেন্টটা হালিশহরে হয়েছিল তাই ওই অ্যাক্সিডেন্ট সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতাম না। ওই হালিশহর ব্রিজের কেসটা নিয়ে স্টাডি করতে করতে জানতে পারলাম সেই চারজন মেয়ে ছাড়াও সেদিন বাসে আরও ১৪ জন ছিল যাদের মধ্যে একজন ড্রাইভার ও একজন হেলপার এবং বাকিদের মধ্যে চারজন মেয়ে ও ৮ জন ছেলে।বাকি ৪ জন মেয়ে হলো রানি, নিরুপমা,সুষ্মিতা ও অনন্যা।
আলিফঃ সবইতো বুঝলাম কিন্তু আসল কথা হলো খুনি কে?
আমিঃ স্যার খুনি হলের নিরুপমার বয়ফ্রেন্ড খালিদ নাঈম। সেদিন অ্যাক্সিডেন্টের সবাই বেঁচে গেলেও নিরুপমা বাঁচেনি আর নিরুপমার মৃত্যুর পিছনে দায় ছিল ওই ব্রিজ কিন্তু যখন হালিশহর থানার ওসি নেতাদের চাপে এসে কেসটা রাতারাতি বন্ধ করে দেয় তখন খালিদ মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর সে সিদ্ধান্ত নেই যেহেতু সে তার ভালোবাসার মানুষকে পায়নি তাই অন্য কারো অধিকার নেই তার ভালবাসার মানুষকে পাওয়ার। এই ঘটনার জের ধরে সে খুন গুলো করা শুরু করে। বাসের মধ্যে সেদিন যে ৮জন মেয়ে ছিল সেখান থেকে ইতিমধ্যে সে ছয়জনকে খুন করে ফেলেছে আর নিরুপমাতো সেদিনই মারা গিয়েছে তাই এখন শুধু একজনই আছে আর সে হলো রানি। আমার যতটুকু ধারণা রানিকে সে কোনদিনও এত তাড়াতাড়ি মারবে না। সে প্রতিবারের মতোই দুই দিন অত্যাচার করে তারপরে খুন করবে। তাই আমাদের যা করার এখনই করতে হবে। খুনির বাসায় গিয়ে তাকে ধরতে পারলে তখনই হয়তো আমরা রানিকে বাঁচাতে পারবো।
আলিফঃ হালিশহর ব্রিজের কেসটা নিয়ে আমারও সন্দেহ ছিল। কারণ একেতো হালিশহর থানার ওসি কেসটা 24 ঘন্টার মধ্যেই বন্ধ করে দেয় আর দ্বিতীয়ত উনি বলেন যখন ব্রিজ ভেঙে যাচ্ছিল তখন সেখানে কোন গাড়ি ছিল না কিন্তু এটা প্রায় অসম্ভব।
আমিঃ হালিশহর ব্রিজটা বাংলাদেশের অনেক বড় বড় নেতারা মিলে বানিয়েছিল। হালিশহর ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ার সময় এক্সিডেন্ট হয়েছে এইরকম খবর যদি বাইটে আসতো তাহলে কিন্তু নেতাগুলোর অবস্থা খারাপ হতো।আর ঘটনাটি অনেক ভোরের দিকে ঘটেছিল তাই তেমন আই উইটনেস ও ছিল না আর যারা নিজ চোখে দেখেছিল তাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল ব্যাপারটা কাউকে না বলার জন্য। আর এমন ভাবেই এই কেসটা ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছে।
আলিফঃ তারমানে খালিদ নাইমের শেষ টার্গেট তোমার বোন।
আমিঃ কোনদিনও না খালিদ বর্তমানে একজন সাইকো কিলারের রূপান্তর হয়ে গিয়েছে। এখন সে এই সাতজনকে টার্গেট করেছে হয়তো পরবর্তীতে সে আরও কাপলকে টার্গেট করবে। সাইকো কিলারদের ইতিহাস যদি একবার দেখেন তাহলেই দেখবেন ৫০%-৬০% সাইকো কিলার অতীতের কোন ঘটনার কারণে সাইকো কিলিং শুরু করে আর খালিদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সে মনে করে তার ভালোবাসা যেমন পূর্ণতা পায়নি তেমন এই পৃথিবীতে কারো ভালবাসায় পূর্ণত পাওয়া উচিত না।এখন যদি নিহাল কল দিয়ে বলে ফিঙ্গারপ্রিন্টটি খালিদ নাঈমের তাহলে আমি নিশ্চিন্তে বলতে পারবো যে খুনি খালিদ।
আলিফ স্যারের সাথে কথা বলছিলাম এমন সময় নিহাল কল দিল,
নিহালঃ বাহাদুর তোর কথাই ঠিক খালিদ নাঈম নামের ব্যক্তির সাথে এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট গুলো 100% ম্যাচ হচ্ছে। আর তার বাসা পাহারতলীতে।
আমিঃ ওকে। স্যার ১০০% খুনি খালিদ নঈম। মিজানের মোবাইলেও খালিদ নাঈম এর ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া গেছে।
মিজানঃ কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না খুনি আমার মোবাইলটি কেন নিয়ে গেল না? খুনি চাইলে তো আমার মোবাইলটি নিয়ে যেতে পারত?
আমিঃ এটা একদম সিম্পল, খুনি রানিকেও তার মোবাইল বাসায় রেখে যেতে বলেছিল কারণ খুনি ভালো করেই জানে মোবাইল দিয়ে ট্রেকিং করা খুব সহজ আর একজন পুলিশ অফিসারের মোবাইলতো ট্রেকিং করা একদম সহজ হবে তাই খুনি তোর মোবাইল নিয়ে যাইনি।
আলিফঃ বাহাদুর সিভিল ড্রেসে চার-পাঁচটা টিম পাহাড়তলীর বিভিন্ন জায়গায় পজিশন নিয়ে নিয়েছে। খুনি পাহাড়তলীতে ঢুকবে ঠিকই কিন্তু বের হতে পারবে না।
আমিঃ মিজান এদিকে গাড়িটা থামা সামনের বাড়িটায় খালিদ নাঈমের।
আলিফ স্যার, আমি ও মিজান তিনজনই আমাদের গুলি আরেকবার চ্যাক করলাম।
আমিঃ বাসায় এমন ভাবে ঢুকতে হবে যেন খুনির অল্প পরিমাণে ও সন্দেহ না হয়। কারণ তার যদি অল্প সন্দেহ হয় তখন অনেক বড় গন্ডগোল হবে।
মিজানঃ বাহাদুর জানালা দিয়ে সম্ভবত ঢুকতে পারবো।
অতঃপর আমরা জানালা দিয়ে খুনির বাসায় ঢুকলাম।
আলিফঃ এই ঘর দেখে মানুষ কোনদিন বলবে না যে এটা একটা খুনির ঘর। এত সুন্দর ও পরিপাটিভাবে গুছানো এটা দেখে বোঝা অসম্ভব যে এখানে একজন মারাত্মক খুনি থাকে।
মিজানঃ স্যার সাইকো কিলার মুভি কিংবা গল্প দেখলে কিংবা পরলে জানা যায় যে তাদের ঘরের ভিতরে একটি সিক্রেট জায়গা থাকে যেখানে ঢুকলেই তাদের আসল রূপ দেখা যায়।
আমি পুরো ঘরে হেঁটে হেঁটে দেখছি কথা কোন সিক্রেট কিছু আছে কিনা। ঠিক এমন সময় আরিফ স্যার আমাকে থামিয়ে দিলেন।
আলিফঃ বাহাদুর ঠিক ঐ জায়গাটাতে তুমি থেমে যাও আর তোমার ডান পা দিয়ে জায়গাটাতে জোরে আঘাত করো।
আলিফ স্যারের কথামতো সে জায়গায় জোরে আঘাত করতেই আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এটার নিচে কিছু একটা রয়েছে। আমি মেঝের কার্পেট সরাতেই দেখলাম নিচে যাওয়া একটি গুপ্ত রাস্তা। অতঃপর আমরা তিনজন নিচে নামলাম নিচে নামতেই আমাদের তিনজনের নাজেহাল অবস্থা। চারদিকে রক্তের গন্ধ। আগুনে পোড়ানো কিছু জিনিস। মেয়েদের রক্তমাখা কাপড়। এমন একটা অবস্থা দেখলে যে কেউ কান্না করে দিবে। মিজান আমার কাছে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল,
মিজানঃ বাহাদুর আমার রানির কিছু হবে নাতো?
আলিফঃ বাহাদুর মনে হয় কোন একটি গাড়ি এসেছে আমি গাড়ি শব্দ শুনেছি।
আমিঃ স্যার আমাদের তিনজনের তিনটি পজিশন ঠিক করতে হবে যাতে খুনি আমাদের দেখতে না পারে।
আমরা তিনজন তিন জায়গায় নিজেদের পজিশন ঠিক করে নিলাম। কিছুক্ষণ পর খুনি রানিকে নিয়ে নিচে আসলো। আমি মিজান এর দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলাম মিজানের কান্না করছে। কারণ খুনি রানিক বেঁধে রেখেছে আর কিছুক্ষণ পরপর থাপ্পর মারছে। কিন্তু এখন ইমোশনালি চিন্তা করলে চলবে না আমাদের থেকে প্রফেশনালি চিন্তা করতে হবে। আমরা যদি এখন খুনিকে আঘাত করতে যাই তাহলে খুনি নিশ্চয়ই রানির ক্ষতি করবে। মনে মনে শুধু একটাই দোয়া করছিলাম মিজান যেন এখন কোন উল্টাপাল্টা কিছু না করে কিন্তু আমার দোয়া কাজ হলোনা। মিজান চিল্লিয়ে খুনির কাছে যেতে খুনি রানির গলা বরাবর ছুরি ধরল। মিজানের এই বোকামি দেখে আলিফ স্যার আর বসে থাকতে পারলেন না তিনিও দাড়িয়ে গেলের আর দুজনেই খুনির দিকে বন্দুক তাক করে আছে।
খালিদঃ এই আমি বলে দিচ্ছি তোরা যদি এখন আমার কাছে আসিস তাহলে আমি এই মেয়েটাকে মেরে ফেলবো।
মিজানঃ দেখ রানিকে ছেড়ে দে না হলে তোর খবর আছে।
আলিফ দেখো খালিদ তোমার সাথে কি হয়েছে আমরা জানি। তুমি এখন রানিকে ছেড়ে দাও তোমার সব কথা আমরা মানতে রাজি আছি। প্রিয়জনকে হারানোর কষ্ট টা আমি সবসময় উপলব্ধি করতে পারি।
এভাবে মিজান ও আলিফ স্যার অনেকক্ষণ রিকুয়েস্ট করার পরেও খালিদ কোন ভাবেই তাদের কথা মানছে না।আমি এখনো এক কোনায় বসে এসব দেখছি। খুনি এখনো জানে না যে এখানে মিজান ও আলিফ স্যার ছাড়াও আরও কেউ আছে। অতঃপর আমার মাথায় একটি বুদ্ধি চলে আসলো। মনে মনে একটা কথাই বলছি আলিফ স্যার যেন আমার দিকে একবার দেখে। হঠাৎ আরিফ স্যারের সাথে আমার চোখে চোখ পরতেই আমি পুরো প্ল্যান আলিফ স্যারকে ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম।
আলিফঃ দেখো তুমি যা বলবা আমরা তাই করব। এই দেখো আমি আমার গুলিটা নিচে রাখছি। মিজান তুমিও তোমার গুলি নিচে রাখো।
মিজানঃ স্যার গুলি নিচে রাখলে সমস্যা হবে।
আলিফঃ তোমাকে যা বলছি তাই করো।
আরিফ স্যার ও মিজান গুলিগুলো নিচে রাখছে কিনা এটা দেখার জন্য খালিদ যেই মাথা নিচু করলো আমি সাথে সাথে দাঁড়িয়ে খালিদের হাতে গুলি চালিয়ে দিলাম আর সাথে সাথেই খালিদ মাটিতে গেল।
আলিফঃ বাহাদুর ওয়েলডান খালিদ মারা গেছে।
আমি খালিদের কাছে যেতেই দেখলাম তার গলা থেকে রক্ত পড়ছে অর্থাৎ গুলিটি হাত থেকে সোজা গলায় লেগেছে। হঠাৎ আলিফ স্যার আমাকে ধাক্কা দিলেন।
আলিফঃ পিছনে দেখো।
আমি পিছনে ফিরতেই দেখলাম মিজান ও রানি এক অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে। একজন পুলিশ অফিসার না বরং একজন ভাই হয়ে এই দৃশ্য দেখাটা মোটেও ভাল মনে হলো না। তাই তাদের কাছে গিয়ে একটি কাশি দিলাম। আমার কাশির শব্দ শুনে রানি ও মিজান একে অপরকে ছেড়ে দেয়।কিছুক্ষণ পর আমরা খালিদের ঘর থেকে বের হতে দেখলাম অনেকগুলো পুলিশ ঘরের কাছাকাছি চলে এসেছে। আমি গাড়িতে উঠছিলাম ঠিক এমন সময় আলিফ স্যার ডাক দিলেন,
আলিফতোমাকে একটা প্রশ্ন করি, তুমি কি কাউকে পছন্দ করতে বা করো?
আমিঃ কি যে বলেন স্যার না স্যার আসলে...
আলিফঃ আরে সংকোচ করার কিছুই নেই আমাকে বলতে পারবে।
আমিঃ আয়েশা নামের একটা মেয়েকে পছন্দ করতাম।
আলিফঃ করতাম না করি।
আমিঃ আসলে এখনও করি। আমার ভালোবাসার কথা তাকে অনেক আগেই বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু কোনদিনও সাহস করে বলা হলো না। তিন বছর আগে যখন সিদ্ধান্ত নিলাম যে তাকে আমার ভালোবাসার কথা বলব ঠিক তার পরের দিন জানতে পারলাম সে উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডা চলে যাচ্ছে।
আলিফ স্যার তার পকেটে থাকা সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে সেটিতে আগুন জ্বালিয়ে একটান দিয়ে ধোঁয়া আকাশে ছাড়লেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
আলিফঃ অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্প।
আমিঃ স্যার যে গল্পে তাকে কোনদিন বলতে পারিনি যে তাকে ভালোবাসি সেই গল্পটা আবার ভালোবাসার গল্প কিভাবে হবে?
আলিফ স্যার আমার সামনে তার হাত বাড়িয়ে দিলেন,
আলিফঃ ওকে বাহাদুর তাহলে কোন একদিন যদি বেঁচে থাকি বা নতুন কোন কেস আসলে দেখা হবে।
আমিঃ স্যার কি বলছেন এগুলো? দেখা হবে মানে কি? আমাকে আপনার নাম্বারতো আমার কাছে আছে সময় হলে দেখা করবো।
আলিফঃ বাহাদুর আজকে রাতের পর থেকে হইতো এই নাম্বারে আর কোনদিনও কল ঢুকবে না আরে এই নাম্বার থেকেও কোন কল তোমার কাছে আসবে না। আমি মায়া-মমতা এসব নিয়ে বাঁচতে চাই না। আমি আমার মত করেই বাঁচতে চাই। কেস সলভ হওয়ার পর আমি সিম পরিবর্তন করে ফেলি।
এতোটুকু বলে সিগারেটে টানদিয়ে গাড়িতে উঠে গেলেন আর কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখের আড়ালে চলে গেলেন।
ছয় মাস পর,
আজকে মনে যতটুকু না আনন্দ তার চেয়েও বেশি কষ্ট। কারণ আজকে আমার একমাত্র বোন রানির বিয়ে। রানিও সেই সকাল থেকেই কান্না করছে জানি মেয়েটার হয়তো আমাকে ছাড়া কিছুদিন থাকতে কষ্ট হবে কিন্তু পরবর্তীতে ঠিক মানিয়ে নিবে। আর মিজানের প্রতি আমার অসম্ভব বিশ্বাস সে কোনদিনও রানিকে অসুখী রাখবে না। আজকে হঠাৎ কেন জানি আলিফ স্যারের কথা অনেক বেশি মনে পড়ছে। ৬ মাস আগে তার সাথে শেষ দেখা হয়েছিল।হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পেছন তাকাতেই দেখলাম একটি বোরখা পরা মেয়ে।
মেয়েটিঃ চিনেছেন আমাকে?
কন্ঠটা শুনে আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে এটাই আমার ভালোবাসা আমার আয়েশা।
আমিঃ আয়েশা আপনি!
আয়েশাঃ তাহলে চিনতে পেরেছেন আমাকে।যাক তাহলে এখনই বলুন আই লাভ ইউ।
আয়েশা মুখ থেকে এসব কথা শুনে মাথা ঘুরতে লাগলো। আয়েশা কি বলছে এসব? আর আয়েশাইবা কখন দেশে দেশে আসলো?
আমিঃ আরে ম্যাডাম কি বলছেন এগুলো?
আয়েশাঃ ওই আমাকে তুই ভালবাসিস নাকি বাসিস না?
আমিঃ ম্যাডাম বাসি কিন্তু....
আয়েশাঃ তাহলে এত কথা কেন বলছিস তারাতারি আই লাভ ইউ বল।
আয়েশা আমাকে যখন আই লাভ ইউ বলতে বলল তখন আমার মনে গিটার, হারমোনিয়াম, একতারা, দুইতারা, তিনতারা, চারতারা সব বেজে উঠল কিন্তু আমি নাটক করছিলাম আয়েশার রিয়াকশন দেখার জন্য।
আমিঃ আসলে ম্যাডাম...
আয়েশাঃ আই লাভ ইউ বলবি নাকি সবাইকে বলব বাহাদুর চৌধুরী যে অনেক বড় বড় করে কেস সলভ করে সে মেয়েদের সামনে কথা বলতেও ভয় পাই।
আমিঃ ছিঃ ছিঃ ম্যাডাম বাইরের মানুষ যদি এগুলো যানে তাহলে আমার মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে।
আয়েশাঃ তাহলে তাড়াতাড়ি আই লাভ ইউ বল।
আমিঃ আই লাভ ইউ ম্যাডাম।
আয়েশাঃ আই লাভ ইউ টু স্যার।এক্টু পিছনে দেখেন।
পিছনে ফিরতেই দেখলাম আয়েশা আব্বু আম্মু ও আমার আম্মু দাঁড়িয়ে আছে।
আম্মুঃ তাহলে চুপিচুপি এসব করছিলি তোরা।
আয়েশার মাঃ তাহলে আর দেরি কিসের আগামী মাসেই তোমাদের তোমাদের দুজনের বিয়ে দিয়ে দিব। জামাইবাবু আপনার কি কোন আপত্তি আছে?
আমিঃ না।
আমার কথা শুনে সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিল। আমি আয়েশাকে টেনের সাইডে নিয়ে আসলাম।
আমিঃ আয়েশা আপনি দেশে আসলেন কখন আর আমি আপনাকে ভালোবাসি এটা জানলেন কিভাবে?
আয়েশাঃ দেশে এসেছি কয়েকদিন আগেই আর আপনার একজন ওয়েলউইশার আমাকে জানালেন যে আপনি নাকি আমাকে অনেক বেশি ভালবাসেন কিন্তু বলতে ভয় পান। তাই আমি যেন আপনাকে ভালোবাসার কথা বলি আর পরিবারকেও বিষয়টা জানিয়ে দেয়।
আমিঃ কিন্তু কে বলেছে?
আয়েশাঃ আমি জানিনা, হঠাৎ একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে আর সেই এগুলো বলল। এখন আমার হাত ছাড়ুম মানুষ দেখছে তো।
এতোটুকু বলে আয়েশা আমার হাত থেকে তার হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল। হঠাৎ পকেটে থাকা মোবাইলটি বেজে উঠলো। মোবাইলটি হাতে নিতেই দেখলাম একটি অচেনা নাম্বার থেকে কল এসেছে। পুরাতন সব কথা মনে পড়ে গেল।অনেক ভয় নিয়ে ফোনটি রিসিভ করতেই মোবাইলের ওপারে থাকা লোকটি বলে উঠল,
লোকটিঃ কি হলো বাহাদুর ভয় পেয়ে গিয়েছো নাকি?
আমিঃ আরে আলিফ স্যার আপনি!
আলিফঃ আগে বল গিফট কেমন লেগেছে?
আমিঃ কিসের গিফট?
আলিফঃ প্রত্যেকটা কেস শেষ হওয়ার পর আমি আমার কেসের সঙ্গীকে কিছু গিফট দেয় তাই চিন্তা করলাম এবার তোমার জীবনসঙ্গী তোমাকে গিফট করে দেব।
আলিফ স্যারের কথা শুনে খুশিতে আমার চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পরল।
আমিঃ স্যার আপনাকে আমি কিভাবে ধন্যবাদ দিব আমি জানিনা।
আলিফঃ আরেক থাক থাক ধন্যবাদ দিতে হবে না।
আমিঃ আপনি কোথায় আর রানির বিয়েতে আসবেন না?
আলিফঃ বিয়েতে আসবো না সেটা তো তুমি জানোই আর আমি আমার মেয়ের কবরের জিয়ারত করতে এসেছিলাম।জিয়ারত শেষ এখন চলে যাব।
আমিঃ স্যার একটা প্রশ্ন করি?
আলিফঃ হ্যাঁ।
আমিঃ স্যার আজকে রাতের পর থেকেও কি এই নাম্বারে কল দিলে আর কখনো কল যাবে না অথবা এই নাম্বার থেকে কি আর কোনদিনও কল আসবে না।
আলিফঃ আগের থেকে অনেক বেশি চালাক হয়ে গেছো। ভালো থেকো আর প্রিয় মানুষদেরকে নিয়ে সুখে থেকো।
কল কেটে গেল। আসলে কল কেটে যায় নি। হয়তো আলিফ স্যার নিজেই কেটে দিয়েছেন। আলিফ স্যারের শেষ কথাগুলো ভালো থেকো আর প্রিয়জনদের সাথে সুখে থেকো। হয়তো এই জিনিসগুলো গত কয়েক বছর ধরে আলিফ স্যারের জীবনে নেই। আকাশের দিকে তাকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম আর মনে মনে বললাম, কিছু মানুষ আমাদের জীবনে খুব অল্প সময়ের জন্য আসলেও আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে যায়।
সমাপ্ত
বি.দ্র.গল্পটি অনেক আগেই শেষ করা যেত কিন্তু এইবার চেষ্টা করলাম একটু ভিন্নভাবে গল্পটি শেষ করার। গল্পটি ভালো বা খারাপ যেটাই লাগুগ না কেন অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। কারণ আপনাদের এক একটি মন্তব্যই আমার গল্প লেখার অনুপ্রেরণা। ধন্যবাদ সবাই