কাঠগোলাপে_ভালবাসা

0 0
Avatar for Nipa1234
3 years ago

দুই

সন্ধ্যায় একটা মেডিকেল সেমিনার শেষে বাসায় ফিরে আসে অক্ষর। সারাদিনে ওটি আর রোগীর ভীড়ে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ে সে। সেমিনারে বসেই সে ক্লান্তিতে নেতিয়ে পড়েছিল। তাই আর হাসপাতালে না গিয়ে সোজা বাসায় ফিরে আসে। সকালে ইনায়ার কেবিনে থেকে আসার পর আর যাওয়ার ফুসরৎ মেলে নি অক্ষরের। মেয়েটাও তো বড্ড বেশী ত্যাড়া সব কথায় মুখের উপর তার উত্তর রেডী কিন্তু অক্ষর যেটা শুনতে চায় সেটা কোন দিন বলে না।

ফ্রেস হয়ে এসেই আবার ইনায়ার রিপোর্ট গুলো নিয়ে বসে পড়ে অক্ষর। রিপোর্ট গুলোতে আবারও চোখ বুলিয়ে ফোন লাগায় একটা নাম্বারে। ওপাশ থেকে কলটা বেজে বেজে কেটে যায়। প্রায় সাথে সাথেই একটা ম্যাসেজ আসে সেই নাম্বার থেকে, ইন এ্যা মিটিং, কল মি লেটার।

এবার অক্ষর তার সহকারী টিকে ফোন করে। তার থেকে জানা যায় অক্ষর যাকে খুজছে সে বর্তমানে বিদেশের মাটিতে কোন একটা সেমিনার এ্যাটেন্ড করতে গিয়েছে। ফিরতে দিন কতক লাগবে। অক্ষর এটা মোটেও আশা করে নি। সে চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইনায়ার চিকিৎসাটা শুরু করতে। এমনিতেই অনেকটা দেরী হয়ে গেছে আর দেরী অক্ষরের সহ্য হচ্ছে না কিন্তু কিছু করার নেই ভাল কিছু পেতে হলে একটু অপেক্ষা তো করতেই হত।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অক্ষর। আরও একবার চোখ বুলায় রিপোর্ট গুলোতে। কি সুন্দর একটা হাসি খুশি মেয়ে যে এতো বড় একটা অসুখ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা নিজ চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাসই করবে না। সেও হয়তো জানে না কি মারাত্মক একটা অসুখ বাসা বেধে আছে তার মধ্যে। আচ্ছা ইনায়াকে সে কথাটা কিভাবে বলবে? না বললে তো যে ত্যাদড় মেয়ে চিকিৎসাও করাতে চাইবে না। কিন্তু সে কথাটা ও বলবে কি করে, ও কি পারবে?

চোখ ফেটে কান্নারা বেড়িয়ে আসতে চাইছে কিন্তু ওই যে কথায় আছে ছেলেদের নাকি কাদতে নেই তাই প্রকৃতির নিয়ম পরিবর্তন করে কেঁদে উঠতে পারে না অক্ষর।

- খুব গুরুত্বপূর্ণ রোগী মনে হচ্ছে? এতবার ডাকি শুনতেই পাশ না।

অক্ষর চোখ মেলে দেখল দড়জায় ওর বড় ভাইয়ের বউ অনিমা দাড়িয়ে আছে। একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, তা তো বটেই। ওখানে কেন ভিতরে এস,,,

ভিতরে আসতে আসতে অনিমা বলল, তা কে সেই গুরুত্বপূর্ণ রোগী? কোন মন্ত্রী টন্ত্রী নাকি?

অক্ষর হেসে বলল, মন্ত্রী নয় তবে রানী বলতে পার। মহারানী,, হা হা হা!

অনিমা হেসে বলল, হুম তোর মনের রানী বুঝি?

অক্ষর চোখ বন্ধ করে একটু হাসল। মাথা ঝাকিয়ে ইশারায় বুঝাল ঠিক ধরেছে সে। অক্ষরের চোখে মুখে এক তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল। অনিমা সেটা দেখে একটু সস্থি পেল যেন। যাক অবশেষে ছেলেটা সত্যিকারের কোন ভালবাসার মানুষ পেতে চলেছে হয়তো। এক মানুষের সাথে তো ভাগ্য বারবার বিট্রে করতে পারে না।

অনিমা একটু হেসে বলল, তা কে সেই সৌভাগ্যবতী নারী?

অনিমার কথায় অক্ষর একটু না বেশ অবাক হল। এমন নয় যে অনিমা ইনায়াকে চেনে না তাহলে এমন কথা কেন বলল! অক্ষর বিস্ময় চেপে রেখে একটা রহস্যময় হাসি দিল যার মানে অনিমা বুঝল না তবে আর বেশী ঘাটল না অক্ষরকে। ছেলেটা বড্ড বেশী রহস্যময়, চাল চলনে রহস্যের আভাস রাখতে বড্ড পছন্দ করে। রাতে খাবারের জন্য ডেকে অনিমা বেড়িয়ে এল ঘর থেকে।

অক্ষর রাতের খাবারের জন্য ঘর থেকে বের হতে যাবে সেই সময়ে একটা ফোন আসে। সে ফোন হাতে নিয়ে দেখে ইনায়ার কেবিনের কর্তব্যরত নার্স মালিহা ফোন করেছে। অক্ষর একটু মুচকি হাসে। তার বউ নিশ্চয় আবার কোন ঝামেলা বাধিয়েছে তাই মেয়েটা তাকে এত রাতে ফোন দিচ্ছে।

মালিহা মেয়েটা বড্ড বেশী সরল একটুতেই বেশী ভয় পেয়ে যায়। আর অক্ষর তাকে যে ডিনামাইটের কাছে রেখে এসেছে তাতে একরাতেই না হার্টএ্যাটক করে বসে মেয়েটা। তবে সরল হলেও বেশ বিশ্বস্ত তাই তো নিজোর বউয়ের দ্বায়িত্ব তার হাতে দিয়ে নিশ্চিতে থাকতে পারছে কিছুটা সময়।

অক্ষর চোখ টিপে একবার ভাবে, এই মেয়ে কি জীবনে শুধরাবে না? কি করে তার সাথে সারা জীবন সংসার করবে কে জানে!

ফোন রিসিভ করে কানে ধরে অক্ষর। মালিহা বেশ ঘাবড়ে আছে। তার কথাও বেশ অসংযত শোনাচ্ছে। তবে হযবরল করে যা বলে তা শুনেই যেন অক্ষরের অন্তরআত্মা কেপে উঠে। একটা ঠান্ডা শীতল বাতাস শীড়দাড়া দিয়ে বেড়ে উপরে উঠে যায় । ফোন রেখেই সে দৌড়ে যায়। তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে পৌছে যায় হাসপাতালে। পিছনে ফেলে যায় কয়েক জোড়া কৌতূহলী চোখ।

রিসেপশনে গিয়ে রিসেপশনিস্টকে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলে ইনায়া প্রায় ঘন্টা দুয়েক হল বেড়িয়ে গেছে। এই খবরটাই নার্স অক্ষরকে দিয়েছিল তবে হযবরল করে। অক্ষর বেশ অবাক হয়। তার অনুমতি ব্যতীত তার রোগীকে কে ডিসচার্জ করল! কড়া চোখে তাকায় সে রিসেপশনিস্টের দিকে।

প্রায় চিৎকার করে সে রিসেপশনিস্টকে বলে কেন তাকে যেতে দেওয়া হল তারই অনুমতি ব্যতীত।

রিসেপশনিস্ট মেয়েটি এবার বেশ ঘাবড়ে যায়। অক্ষরকে বেশ শান্ত আর ভদ্র হিসেবেই সবাই চিনে এই হাসপাতালে। এখানে এসেছে অবধি কারও সাথেই যে উচু গলায় কথা বলে নি। আজ সেই লোকটার গলায় এমন হুংকার শুনে সবাই বেশ ভয় পায়।

মেয়েটি অতি ভদ্রতা গলায় ঢেলে নরম স্বরে বলল, স্যার আপনি তো বলেছিলেন যে উনার নামে যেন কোন বিল না তৈরী করি। সব টাকা আপনি দিবেন। তো উনি এসে যখন শুনলেন উনাকে হাসপাতালের বিল দিতে হবে না তখন চলে যেতে চাইলেন। আমরা আটকাতে চেয়েছি কিন্তু উনি একজন প্রান্ত বয়স্ক মেয়ে তার নিজের ইচ্ছায় চলার তার পূর্ণ অধিকার আছে বলে তিনি আমারদের কারও কথা না শুনে বেড়িয়ে যান।

অক্ষর আর কারও সাথে কোন কথা বলে না। ক্লান্ত পায়ে এসে ওর কেবিনে বসে পড়ে ধপ করে। নিজের দুই হাত দিয়ে নিজের মাথা চেপে ধরে টেবিলে হেলান দেয়। ওর মাথাটা বড্ড ঘোরাচ্ছে। এবার ইনায়াকে কোথায় খুজবে ও? সত্যি কি আর খুজে পাবে? যে নিজের থেকে হাড়িয়ে যেতে চাই তাকে কি সত্যি আর খুঁজে পাওয়া যায়?

ক্লান্ত হাতে ফোন বের করে ওর এক বন্ধুকে ইনায়ার ভাড়া বাড়ির ঠিকানা দেয় অক্ষর। খোঁজ নিতে বলে ওখানে ইনায়া আছে কি না। তবে অক্ষরের তীব্র বিশ্বাস ইনায়া আর সেখানে ফিরবে না। হলোও তাই বন্ধুটি ফোন করে জানিয়েছে ইনায়া সেখানেও নেই আর না আজ কোন সময়ে সে ওখানে গিয়েছিল।

এবার আরও ভেঙ্গে পড়ে অক্ষর। একটা শেষ আশার আলো হিসেবে সে ফোন দেয় ইনায়ার নম্বরে। তবে ও ভেবেছিল ফোনেও পাবে না সে ইনায়াকে। কিন্তু হলো তার উল্টো ফোন দিতেই কলটা ইনায়ারা নম্বরে ঢুকে গেল আর প্রায় একবার রিং বাজতেই ইনায়া ফোনটা ধরল। যেন ও জানত অক্ষর ওকে ফোন করবে আর সেই ফোনের জন্যই ও এতো সময় ধরে অপেক্ষা করে ছিল।

ইনায়ার গলা শুনে অক্ষর যেন একটা সস্থির নিশ্বাস ফেলল। ইনায়ার কণ্ঠস্বর যেন অক্ষরের জন্য এক পশলা বৃষ্টির মতো কাজ করল। মাথাটা কিছুটা ঠান্ডা হল। আর সাথে রাগ চেপে বসল। বেশ রাগী গলায় বলল, তুই চলে গেলি কেন রে?

ইনায়া যেন রসিকতা করে বলল, বলব না।

এবার অক্ষর হুংকার ছেড়ে বলল, কেন, বলবি না কেন ?

অক্ষরের হুংকারে সবাই ভয় পেলেও এই মেয়েটার যেন কিছুই হল না। সে সমান তেজ নিয়ে বলল, আপনি কি সকালে বলেছিলেন আমাকে কেন নিয়ে এসেছিলেন? বলেন নি তো তাই আমিও বলব না।

এবার অক্ষর যেন একটু নরম হয়। শান্ত কন্ঠে বলল, সে জন্য তুই কাউকে না জানিয়ে এভাবে চলে যাবি?

ইনায়া হেসে বলল, কাউকে না জানিয়ে তো আসি নি। সবার কাছে বিদায় নিয়েই এসেছি। ওহ্ আপনাকে বলা হয় নি তাই না। তো কি হয়েছে এখন বলে দিচ্ছি একই তো হল তাই না?

অক্ষর যত ভাবে সে নিজেকে শান্ত রাখবে এই মেয়ে মনে হয় তা করতে দেবে না বলে পণ করেছে। ইনায়ার কথা শুনে অতি কষ্টে অক্ষর নিজেকে শান্ত করে। টেবিলে রাখা বোতল থেকে ঢক ঢক করে খানিকটা পানি খেয়ে নেয়। তবুও যেন ওর গলা ভিজল না। ওপাশে ইনায়া হেসেই চলেছে কোন কারণে। অক্ষর ঠোঁট দিয়ে জিভটা একটু ভিজিয়ে আবারও বলল, শোন ইনায়া পাগলামী করিস না কোথায় আসিছ বল আমি তোকে নিতো আসছি।

ইনায়া তখনও হেসে চলেছে। হেসে হেসেই বলল, কেন নিতে আসবেন আপনি? আমি না একটা পেইন!তো এই পেইনকে কেন আবার ঘাড়ে ঝোলাতো চাইছেন বলুন তো।

অক্ষরের বেশ রাগ হচ্ছে কিন্তু রেগে কথা বললে এই মেয়ে আরও কিছু বলবে না। পরে কোথায় হারিয়ে যাবে তার কোন হোদিস কেও পাবে না। তাই কন্ঠে খানিকটা মধু ঢেলে বলল, তুই পেইন কেন হবি? তুই তো আমার বউ তাই না। তোর ভাষায় কাগজী বউ। আর তোকে ঘাড়ে ঝুলাবো কি তুই তো ঝুলেই আছিস।

বলেই জিভ কাটল অক্ষর। ইনায়া হেসে বলল, হুম ঘাড় থেকে নামানোর ব্যবস্থাও হয়ে গেছে ভাইয়া। শুধু কয়েকটা দিন অপেক্ষা করুন।

অক্ষর বুঝল ওর সাথে এভাবে কথা বলে কিছুতেই হবে না। এই মেয়ে কথা পেঁচাতেই থাকবে। তাই সোজাসুজি ওর অসুখের কথাটা বলবে বলে সিদ্ধান্ত নিল। অক্ষর আরও একবার গলা ঝেড়ে পরিষ্কার করে বলল, তুই সকালে জিজ্ঞাসা করছিলি না তোকে কেন এখানে এনেছিলাম। সেই বিষয়েই কথা আছে, তোর কিছু রিপোর্ট এসেছে। তুই কি সেগুলো নিতে আসবি?

ইনায়া শান্ত কন্ঠে বলল, কিন্তু আমার তো কোন টেস্ট করানো হয় নি। আমার তো মনে পড়ছে না।

অক্ষর বলল, হয়েছিল। তুই তখন অজ্ঞান ছিলি তাই জানিস না।

ইনায়া হেসে বলল, তো সে রিপোর্ট নিয়ে আমি কি করব। রিপোর্ট দেখে তো আমার টিউমার ভয়ে ভ্যানিস হয়ে যাবে না। বলে গা দুলিয়ে হাসতে লাগল।

অক্ষর সন্দিহান কন্ঠে বলল, তুই জানিস তোর ব্রেইন টিউমার আছে?

ইনায়া আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যা জানি তো।

অক্ষর জিহ্বা দিয়ে আরও একবার ঠোঁট ভিজিয়ে বলল, কখন থেকে?

ইনায়া আঙ্গুল গুনে বলল, সে তো প্রায় এক বছর থেকে?

অক্ষর ভারী অবাক হল। সেও তো বিষয়টা আগে থেকে জানে না। সে জেনেছে মাস কয়েক হল। আর তারপর থেকেই সে ইনায়াকে খুঁজে চলেছে কিন্তু এই মেয়েকে হাতের নাগালে পাওয়া কি এত সহজ নাকি। অক্ষর আবার বলল, তাহলে তুই চিকিৎসা শুরু করিস নি কেন?

- এহ্ বলেই হল চিকিৎসা করাব! জানেন এই অপারেশনের খরচ কত? তারপর আবার দেশে না বিদেশ যেতে হবে । আমাকে বিক্রি করে দিলেও প্লেনের টিকিটের টাকাটাও জোগার হবে না। চিকিৎসা করাব কি দিয়ে? মামা বাড়ির আবদার নাকি চাইলাম আর হয়ে গেল সব?

একটু নিশ্বাস ছেড়ে আবার বলল, আমার মতো অনাথ মেয়েদের না বুঝলেন অনেক গুনে মেপে পা ফেলতে হয়। এতো বিলাসিতার অবকাশ কোথায় আমাদের? যার কাল খাওয়ার টাকা জোটে না তার জন্য ব্রেইন টিউমার অপারেশন একটা বিলাসিতা বই আর কিছুই না ।

কথা গুলো বলে ইনায়া একটু থামল। মনে হয় কান্নারা দলা পাকিয়ে আসছে গলাতে। তাই আর কথা না বলে তাদেরকে গিলে ফেলার চেষ্টা করছে। অক্ষর বাকরুদ্ধের মত শুনল সব। যেখানে ওর এতো এতো টাকা! সে বছরে শত শত গরীব দুস্থ রোগীদের চিকিৎসার ভার নেয় বিনা পয়সাতেই আজ সেখানে তারই বউ কি না টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারে নি।

ও কি এতোটাই স্বার্থপর আর খারাপ মানুষ হয়ে উঠেছিল যে নিজের বউয়ের চিকিৎসার ভার নিতে পারত না। দোষটাও অবশ্য ওরই। ও জানত ইনায়ার এই আর্থিক অবস্থার কথা কিন্তু কোন দিন গিয়ে পাশে দাড়ায় নি। দাড়াতে চায় নি তা নয় কিন্তু বারবার ওর ইগো ওকে এটা করতে বাধা দিয়েছে। ইগোকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে যে আজ ওর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটাকেই হাড়াতে বসেছে তা আজ বুঝতে পারছে।

অক্ষরের কোন রকমে টেনে টেনে বলল, আমার এত এত ব্যাংক ব্যালান্স থাকতে তুই বিনা চিকিৎসায় কষ্ট পাবি? আমার এতো টাকার তাহলে মুল্য কি? আর তুই বলিস তোর চিকিৎসার জন্য কোন টাকা নেই। তোর কি আমাকে গরীব মনে হয় বলে এই কথাগুলো বললি?

ইনায়া হেসে বলল, আপনার টাকা আপনার কাজে লাগবে সেটা দিয়ে আমার চিকিৎসা হবে কেন? সেটা তো একান্ত আপনার, আপনার টাকায় তো আমার কোন অধিকার নেই। আর আমি আপনাকে গরীব বলি নি তো। আমি নিজেকে বলেছি। আপনি আলাদা মানুষ আমি আলাদা। আপনার গাড়ি, বাড়ি, ব্যাংক ব্যালান্স সব আছে কিন্তু আমার তো কিছু নেই। তাই গরীব হলে আমি আপনি না। আপনার যা কিছু আছে তা আপনার তা তো কোন দিনও আমার নয় ছিলও না।

- আমার টাকা তোর টাকা নয়?

- না তো! যেখানে মানুষ দুটোই কোন দিন এক হতে পারলাম না সেখানে টাকা পায়সা তো আপেক্ষিক বস্তু।

অক্ষর কিছু সময় চুপ থাকল। গলাটা আরও একবার পরিষ্কার করে বলল, সে সব কথা বাদ দে। এখন আমি তোর সাথে তর্কে জড়াতে চাই না। তুই কোথায় আছিস বল, আমি আসছি তোকে নিতে আর আজ থেকেই তোর চিকিৎসা শুরু হবে। তাড়াতাড়ি বল।

ইনায়া হেসে বলল, আমার জীবনের আর মাত্র কয়েকটা দিনই বাকি আছে আমি সেগুলো হাসপাতালের কেবিনে বসে কাটাতে চাই না। মুক্ত বাতাসে থাকতে চাই, পাখির মতো উড়তে চাই। আর আমার যেগুলো অপূর্ণ ইচ্ছেরা বাকি আছে তাদের সাথেই থাকতে চাই। আমি কখনও আপনাকে বলব না আমি কোথায় আছি। আর আপনি আমাকে খোজারও চেষ্টা করবেন না ।

এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে ইনায়া ফোন কেটে দিল আর সাথে সাথেই সিমটা ফোন থেকে খুলে ছুড়ে ফেলে দিল রাস্তায় তারপর পা বাড়াল আজানা পথের উদ্দেশ্য। অক্ষর একের পর এক ফোন করে চলেছে কিন্তু সেগুলো আর কখনও ইনায়ার নাম্বারে ঢুকবে না।

চলবে,,,,,

1
$ 0.05
$ 0.05 from @TheRandomRewarder
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments