গতি আসুক অর্থনীতিতে

0 0
Avatar for Nipa1234
3 years ago

বাঙালি জাতিকে তুলনা করা যায় রূপকথার ফিনিক্স পাখির সঙ্গে- ভস্মের মধ্য থেকে যে পাখি উড়াল দেয়ার সক্ষমতা দেখায়। ১৯৭১ সালের ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ। এক কোটি মানুষ দেশছাড়া হয়েছিল হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর ভয়ে। লাখ লাখ বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছিল দখলদাররা।দেশের রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কলকারখানা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। চাষাবাদের জন্য লাঙল ও হালের বলদের অভাবে হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি থেকে যায়। বাংলাদেশকে ব্যঙ্গ করে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে অভিহিত করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের গডফাদারের ভূমিকা পালনকারী একটি দেশের ক্ষমতাধর মন্ত্রী। কিন্তু বাংলাদেশ গত চার যুগে নিজেদের পুনরুত্থানের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে এ জাতি হারতে জানে না।

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেক দেশ এখনও ঘুরে দাঁড়াতে না পারলেও বাংলাদেশ এ সংকট ভালোভাবেই সামাল দিতে পেরেছে বলে মনে করে এডিবি। দেশের অভ্যন্তরীণ খাতগুলোর উৎপাদন ও বণ্টনব্যবস্থায় করোনাজনিত ক্ষয়ক্ষতি তেমন বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে। রফতানি আয়েও সুবাতাস বইতে শুরু করেছে।

আমদানি ব্যয় কম হওয়ায় ও রেমিটেন্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধিও সন্তোষজনক। মূল্যস্ফীতির চাপও মোটামুটি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লেও বন্যার প্রভাব কেটে গেলে শাকসবজি ও অন্যান্য পণ্যের দাম কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ সাফল্য সম্ভব হয়েছে দেশবাসীর দৃঢ় মনোবল ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে।

বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাদশা বাংলাদেশের ওপরও প্রভাব ফেলবে, এমন আশঙ্কা অনেক আগেই প্রকাশ করেছিল বিশ্বব্যাংক। তবে করোনা মহামারীর ধাক্কা সামাল দিতে সরকার এরই মধ্যে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা সঠিক পথেই আছে বলে মনে করছে তারা। আবার নতুন আশঙ্কার কথাও বলছে সংস্থাটি।

তাদের পূর্বাভাস হচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যেতে পারে, সেই সঙ্গে উৎপাদন ও নির্মাণ খাতের কর্মীদের আয় কমে যাওয়ায় ভোগব্যয় বাড়ার সুযোগ থাকবে না। স্বল্প মেয়াদের জন্য হলেও দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

সংস্থাটি বলছে, কৃষির বাইরে বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের যে কর্মীরা দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল, তাদেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হতে হবে। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ হচ্ছে, অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো যেন টেকসই হয়, সে জন্য সরকারকে আর্থিক খাত ও ঋণ ব্যবস্থাপনার স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হবে।

আর্থিক খাতকে মজবুত করার দিকে নজর দিতে হবে। সেই সঙ্গে বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

বাস্তবতা হচ্ছে, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতসংশ্লিষ্ট কয়েক কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছে কিংবা পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে। আর বিশ্বের ১৬০টি দেশে থাকা এক কোটি প্রবাসীর মধ্যে করোনাকালে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন তিন লাখ কর্মী।

বেকার হয়ে পড়া বিপুল এই জনসম্পদের কর্মসংস্থানে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় একটি বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রবাসীদের আয়ে ফিরিয়ে আনার এই প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় প্রবাসীরা চাইলে দেশের চাকরিতে প্রবেশ করতে পারবেন।

উদ্যোক্তা হতে চাইলে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ ঋণসুবিধা দেয়া হবে। আবার বিদেশে যেতে চাইলে আরও দক্ষ হয়ে উঠতে খাতভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। নতুন করে বিদেশে যেতে ইচ্ছুকদেরও এ প্রকল্পের অধীনে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। দ্রুত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা গেলে অর্থনীতির চাকা আবার গতিশীল হবে।

1
$ 0.01
$ 0.01 from @TheRandomRewarder
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments