গল্পঃনির্দোষ

0 4
Avatar for Nipa1234
3 years ago

গল্পঃনির্দোষ

লেখকঃরনি হাসান

পর্বঃ৬

আজ দুইটা দিন ধরে রাস্তায় ফুতফাতে নির্ঘুমে রাত কাটিয়ে দিতে হচ্ছে। ঢাকা শহরে এত লোকজন্। তারপরও এখানে একজন কে ও পরিচিত হিসেবে পেলাম না। তাহলে কি আমাকে আবার গ্রামে ফিরে যেতে হবে না না সেটা আর সম্ভব না। গ্রাম থেকে যখন চলে আসছি তখন ঢাকায় একটা না একটা উপায় ঠিক বের হয়ে যাবে। ভাবিনি কখনো এমন একটা পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে!চায়ের দোকানে বেঞ্চে বসে এসব আনমনে চিন্তা করছিলাম এমন সময় পিছন দিক থেকে কেউ একজন রনি বলে ডেকে উঠলো

প্রথমে ভাবলাম এই ঢাকা শহরে কে আমাকে ডাকবে হইত আমার নামে অন্য কাউকে ডাকছে..! বেস সেদিকে সাড়া না দিয়ে চা খেতে মনোযোগ দিলাম। কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমানিত হয়ে গেলো চা খাচ্ছি এরমধ্যে পিছন দিক থেকে কাধে হাত রেখে কেউ একজন বলে উঠলো

কিরে কখন থেকে তোকে ডাকছি শুনছিস না কেন (তানরীর স্কুল কালের ফেন্ড)

পিছনে দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করতেই আমার চোখ তো কপালে উঠে গেলো আরে এতো তানবীর স্কুল কালের ফেন্ড। আল্লাহর অসীম দয়া। এই তানবীরই আমাকে একটা থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। চিন্তা মুক্ত হয়ে বলে উঠলাম

দোস্ত আমাকে একটা হেল্প কর প্লিজ আজ দুইদিন ধরে ফুতফাতে থাকতে হচ্ছে। এইদিন অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু বাসা ভাড়া করতে পায়নি একা একজনকে কেউ বাসা ভাড়া দিতে চাইনা। আল্লাহ রহমতে তোকে যখন পেয়েই গেছি তো আমাকে একটা থাকার ব্যবস্থা করে দে প্লিজ দোস্ত (আমি)

কি ব্যাপার বলতো তুই হুট করে ঢাকায় আসলি এসে তার ও আবার ফুতফাতে থাকছিস সত্যিই করে বলতো অসময়ে ঢাকা আসার কারন কি (তানবীর)

আসলে ঢাকায় আমি আসতে চাইনি কিন্তু পরিস্থিতি আমাকে এখানে এনেছে (এই বলে গ্রামের পুরো ঘটনাটা বলে ফেললাম)

দোস্ত দুর্জয় তোকে নিয়ে এতবড় একটা গেম খেললো আর তুই ওকে কিছু না বলে চলে আসলি (তানবীর)

চাইলে তার জালিয়াতি বের করতে পারতাম কিন্তু মান সম্মান যা যাওয়ার সেটা তো আগেই শেষ। দুর্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করলে তো আমার যে সম্মান ধুলোয় মিশে গেছে সেটা আর ফিরে আসতো না। তাছাড়া কাকা কাকিমা তারা আমার আপন কেউ না। রাস্তায় নাকি আমাকে কুড়িয়ে পেয়েছে। এইটা জানার পর তো গ্রামে থাকা কোনো মুডই ছিলো না। কিন্তু যাকে আমার বোন ভাবতাম সে আমাকে এমন বাজে কথা বলছে যেটা মুখে আনাই পাপ। বেস এর পর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম ঢাকায় চলে আসবো। টিসি নিয়ে চলে ও আসছি কিন্তু থাকার কোনো ব্যবস্থাই করতে পারছি না। যার দারুণ আজ নিয়ে প্রায় দুইদিন ফুতফাতে নির্ঘুমে রাত কাটিয়ে দিতে হচ্ছে এখন তুই যদি আমাকে থাকার ব্যবস্থা

না করিস..! তাহলে মহা একটা বিপদে পড়ে যাবো প্লিজ দোস্ত না করিস না ( আমি)

আরে মামা এত চাপ নিবার কিছুই নেই। তাছাড়া তুই যে বিপদে পড়েছিস এসময়ে তোকে হেল্প করতে পারলে নিজেকে অনেক প্রাউট ফিল মনে করবো। যদি ও তোকে আমার সাথে নিলে এতে আমার কিছু সমস্যা হতে পারে কিন্তু তোকে তো আর বিপদের মুখে ফেলে যেতে পারি না। আচ্ছা চল আজ থেকে তুই আমার সাথেই থাকবি। আর হ্যা বাড়িওয়ালার মেয়ের দিকে কিন্তু ভুলে ও তাকাবি না (তানবীর)

কেন..? (আমি)

বাড়িওয়ালার মেয়েটাকে প্রথম দেখলেই ক্রাশ খেয়ে যাবি।কিন্তু মেয়েটা আচরণ একদম ভালো না। যদি তার সামনে কোনো কারনবশত পড়তাম অকারনেই মিস বিহেব করতো। তবে বাড়িওয়ালার মেয়েটা নাকি আগে এমন ছিলো না। সবার সঙ্গেই হেসে খেলে কথা বলতো। যখন এই প্রেম ভালোবাসার নামে শব্দে মেয়েটি প্রতারিত হলো বেস তখন থেকে ছেলেদের একদমই সহ্য করে না। তাই তোকে ও বলছি বাড়িওয়ালার মেয়ের সঙ্গে কথা বলবি তো দুরের বিষয়। তার সামনেই যাবি না (তানবীর)

আচ্ছা ঠিক আছে যাবো না (আমি)

আল্লাহ উপর বিশ্বাস রেখেছিলাম বলেই তানবীরকে তার কারন স্বরুপ পেয়ে গেলাম।নিশ্চয়ই আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখলে সে কখনো নিরাশ হই না। তার প্রমান আজ পেয়ে গেলাম। তারপর তানবীরের সঙ্গে তার ভাড়া নেওয়া বাসায় চলে গেলাম। বাড়িওয়ালার স্ত্রী আমাকে দেখেই তানবীরকে বলল

তোমার সঙ্গে ও কে (বাড়িওয়ালার স্ত্রী)

আন্টি ও আমার বেস্ট ফেন্ড রনি। গ্রাম থেকে এসেছে এখন আমার সঙ্গেই থাকবে। আর আন্টি ও যেহেতু আমার সঙ্গেই থাকবে তার ভাড়াটা ও আপনি মাস শেষে পেয়ে যাবেন সমস্যা নেই (তানবীর)

আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যখন বলছো তাহলে থাকতে পারে কিন্তু প্রতি মাসের ভাড়া আমাকে ঠিকমতো দিতে হইবে নইত এই বাসা তাকে ছাড়তে হবে (বাড়িওয়ালার স্ত্রী)

জি আচ্ছা আন্টি (তানবীর)

প্রথমে ভেবেছিলাম আমার কাছে বাসা ভাড়া ই দিবে না। কিন্তু তানবীর এর সুপারিশ করাই বাড়িওয়ালা রাজি হয়েছে। যাই হক এখন একটু ঘুমানোর দরকার (ঘুমাতে যাবো এরমধ্যে তানবীর বলে উঠলো

দোস্ত তোর ফোনটা দে তো (তানবীর)

আমার ফোন মনে হই চার্জ নেই বন্ধ হয়ে আছে (ফোন দেখিয়ে বললাম)

আচ্ছা ঠিক আছে চার্জে লাগা দরকার আছে (তানবীরের কথা মতো ফোনটাকে চার্জে লাগিয়ে অন করতেই ডেবিল বইনে এই নাম্বার থেকে হাজার টা কল প্লাস মেসেজ ফোন যেন ভরে গেছে প্রথম মেসেজ ছিলো এমন

ভাই প্লিজ তুই বাড়িতে ফিরে আই তোকে ছাড়া পুরা বাড়িটা কেমন শূন্যতায় ভরে গেছে ফিরে আই না ভাই প্লিজ...!(মেসেজের শেষে কান্নার ইমোজি দুইটা)

তারপরেটা

তোর জন্য মা বাবা তারা অনেক কান্না করতেছে। তাদের দিকে তাকিয়ে এড লিস্ট এবার ফিরে আই জিদ করিস না প্লিজ।তুই তো জানিস তোর সঙ্গে আমার ঝগড়া না করলে পেটের ভাত হজম হই না। এখন তুই বাসায় নেই দুদিনের কেমন জানি অন্ধকার নেমে আসছে বাবা মা তাদের মুখে হাসি কোনো আভা নেই। সবসময়ই বিষন্নতার ছাপ তাদের মুখে লেগেই থাকে। তুই তো এটাও জানিস ওরা আমাকে নাহ যতটুকু ভালোবাসে তার থেকে দ্বিগুণ ওরা তোকে ভালোবাসে তুই কি চাইলে পারবি না তোর সব রাগ অভিমান ফেলে আবার আমাদের কাছে ফিরে আসতে

(মেসেজটা পড়তে চোখ থেকে কয়েক ফোটা নোনা জল গড়তে লাগলো। তারপর কোনো কিছু না ভেবে সেই মেসেজটি রিপ্লাই দিলাম

সেটা আর সম্ভব না। আর হ্যা দয়া করে এই নাম্বারে ফোন কিংবা মেসেজ দিবেন না প্লিজ (এই টুকু লিখে ডেবিল বইনে নাম্বারে সেন্ট করলাম বেস সঙ্গে সঙ্গে ওপাশ থেকে কল আসতে লাগলো কল কেটে দিবার পরও কল আসতে লাগলো দেখে উপায় না পেয়ে কল্টা রিসিভ করলাম

হেলো (আমি)

ভাই তুই কই আসছিস (তানিশা কান্না করে বলল আর হ্যা তানিশার ফোন নাম্বারটাই ডেবিল বইনে লিখে save করে রেখেছিলাম)

সরি কে আপনার ভাই। ফোনে এভাবে কান্নাকাটি করছেন কেন যদি কান্নাকাটি করতেই হই। তাহলে ফোন কেটে দিয়ে একাই সারাদিন কান্না করেন রাখছি (ফোনের লাইন্টা কাটতে চেয়েও কেন জানি কাটতে পারলাম না নিরব শ্রোতাদের মতো চুপ হয়ে গেলাম আর তানিশা ওপাশ থেকে বলতে লাগলো

তুই দুইদিন হই বাড়ি ছেড়েছিস আর দুইদিনেই তোর শূন্যতা পুরা বাড়ি ভরে গেছে। আগে তো তোর জ্বালায় কোনো সিয়াল দেখতে পারতাম না। সারাক্ষণই IPL খেলা নইত মুভি দেখেছিস তবুও আমাকে কিছু দেখতে দেসনি। এই নিয়ে তোর সঙ্গে আমার অনেকবারই ঝগড়া লেগে গিয়েছিলো। কিন্তু এখন সারাক্ষণই সিয়াল দেখলেও আমাকে কেউ কিছু বলার মানুষটা নেই এখন তাকেই শুধু খুব মিস করছি। প্লিজ চলে আই না ভাইয়া.. (তানিশা কান্না করে বলল)

(নিরবে শুধু ওপাশ থেকে তানিশার কথা শুনছি)

তুই না রিদিতাকে অনেক ভালোবাসতি সে তোকে এখন অনেক ভালোবাসে। এমন কি আমি মা বাবাকে বলছি তারা রিদিতাকে তোর বউ করে ঘরে এনে দিবে। এবার তো ফিরে আই ভাই কি হলো কথা বলছিস না কেন.. হেলো.. হেলো (তানিশা হেলো হেলো বলতেই কোনো কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলাম। এবং সঙ্গে সঙ্গে সিমটা খুলে ফেললাম এবং যেই সিমটা ভাংতে যাবো অমনি তানবীর এসে বলতে লাগলো

আরে সিমটা ভাংতেছিস কেন দরকার পড়লে খুলে রেখে দে। এমন ও তো পারে সিমটা আবার তোর প্রয়োজনে লেগে গেলো তখন তো আবার সমস্যার সম্মোখিন হতে হবে (তানবীর)

হ্যা তাই তো সিম ভেঙে ফেলার চেয়ে। খুলে রাখাই ভালো। কখন কি প্রয়োজনে পড়ে যায় তা বলা খুব মুশকিল (এসব ভেবে সিমটা আর ভাংলাম না। সযত্নে রেখে দিলাম। তারপর কিছুক্ষন ফোনে ফেসবুকে নিউজ ফিড গেটে ঘুমিয়ে পড়লাম। বিকালে ঘুম থেকে উঠে ছাদে চলে গেলাম। নতুন জায়গা দেখার কৌতূহলটাও এক্টু বেশি। তাই কোনো বনিতা না করে ছাদে পড়ন্ত বিকালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখছিলাম হঠাৎ একটা মেয়েলি কন্ঠে আওয়াজে বলে উঠলো

এই ছেলে তোকে ছাদে আসার পারমিশন কে দিয়েছে (মেয়েটি কিছুটা রাগ করে)

পিছনে তাকাতেই আমার চোখ যেনো কপালে উঠে গেলো এতো দেখছি নির্ঘাত বলিউডের নাইকা। মনে হচ্ছে শুটিং বাদ দিয়ে এখানে অবসরে ঘুরতে আসছে....!!!

!

!

(চলবে)

1
$ 0.00
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments