#গল্পঃ সম্পর্ক, বিয়ে; অতঃপর... (৩য় ও শেষ পর্ব)
ঐটা কিসের কাগজ পড়ে আছে?
দেখি দাও তো।
চিঠি! ফারহানার লেখা চিঠি।
কবে লিখেছে? কি লেখা আছে পড়তো।
দাঁড়াও এটা শুধু আমার জন্য লিখা। মনে হচ্ছে যাওয়ার আগে লিখে গেছে। মা আমি রুমে যাচ্ছি।
রায়হান রুমে গিয়ে চিঠিটা পড়ার ঘন্টা দুয়েক পর।
আরিয়ান, আরিশা চলো আমরা বাহিরে বেড়াতে যাব।
ওয়াও কি মজা! কি মজা! আমরা বেড়াতে যাব।
মা তুমি যাবে আমাদের সাথে?
না তোরাই যা, আমার পায়ে ব্যাথা।
তাহলে চলো তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।
না আজকে তোরা ঘুরতে যেতে চাচ্ছিস সেটাই কর। বাচ্চা দুটোরও ভালো লাগবে।
তাহলে কাল তোমাকে নিয়ে যাব।
ঠিক আছে।
আব্বু আমরা কোথায় যাব?
আমরা আগে হাতিরঝিলে ঘুরবো তারপর রেস্টুরেন্টে খেতে যাবো।
তারপর?
তারপর কী করবো সেটা তো এখন বলা যাবেনা!
বলো না আব্বু, বলো না। দাদু আব্বুকে বলতে বলো না।
না বলব না।
বলো না আব্বু।
তোদের এমন হাসিখুশি দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল। অনেকদিন পর আবার তোদের সবার মুখে হাসি ফুটে উঠল।
মা এখন থেকে আমরা সবসময় হাসি আনন্দে থাকবো।
তাই যেনো হয়।
মা আমরা বের হলাম।
সাবধানে যাস বাবা। কি হলো হঠাৎ করে ছেলেটার মনে?
আব্বু আমি খেতে পারছি না।
দাও আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।
আরিশা তুমি কি খাবে মামনি?
চিপস খাবো।
না মামনি এখানে তো চিপস নেই। আসো আমার কোলে আমি তোমাকে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছি।
আমি স্যুপ খাবো না। আমি চিপস খাবো, আমি চিপস খাবো।
না মামনি এমন করে না। আচ্ছা আমরা এখান থেকে বের হয়ে তোমাকে এত্তো এত্তো চিপস কিনে দিবো।
আব্বু আমাকেও আইসক্রিম কিনে দিতে হবে কিন্তু।
ঠিক আছে বাবা তোমাকেও কিনে দিবো। এবার তাড়াতাড়ি খাও তো।
বলতো এবার আমরা কোথায় যাবো?
জানি না।
এবার আমরা তোমার নানুদের বাসায় বেড়াতে যাবো।
কি মজা! কি মজা! আব্বু কত ভালো। আব্বু আমি আম্মুর সাথে কথা বলবো ভিডিও কল দাও।
বাবা তোমার নানুর বাসায় গিয়ে তারপর দিবো, ঠিক আছে?
আচ্ছা।
ওয়েইটার আমাকে এই খাবারগুলো পার্সেল করে দিন তো।
ঠিক আছে স্যার।
আরে বাবা রায়হান তুমি! সাথে আমার নানু ভাইরাও আছে দেখছি।
জ্বী মা ভালো আছেন?
হ্যা বাবা, আমরা ভালো আছি। তোমরা সবাই ভালো আছো?
মা এগুলো নিন।
এগুলো কি?
আপনার আর বাবার জন্য কিছু খাবার নিয়ে এলাম।
এসব আবার আনতে গেলে কেন?
মা আজকে রাতে আমরা আপনাদের বাসায় থাকবো।
আমাদের বাসায়!
কোনো আপত্তি নেই তো মা?
কি বলছো বাবা? আপত্তি থাকবে কেন? এটা তো তোমার বাসাও । যখন ইচ্ছা আসবে, যখন ইচ্ছা থাকবে, যখন ইচ্ছা যাবে।
মা বাবাকে ডাক দিন ফারহানাকে ভিডিও কল দিবো।
ঠিক আছে বাবা আমি এখনি ডাকছি।
এ কই গেলে? জামাই বাবা আসছে, এদিকে আসো না।
আরে জামাই বাবা দেখছি। কেমন আছো?
ভালো বাবা, আপনি ভালো আছেন?
এই বয়সে আর ভালো থাকা! দেখো না কোমড়ের ব্যাথার জন্য সেজদা দিতে পারি না দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে হয়।
মায়েরও পা ব্যাথা কাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। আপনিও চলুন না আমাদের সাথে।
আমি যাবো?
হ্যা।
কি গো তুমি কি বলো?
এখানে আবার আমার বলার কি আছে? জামাই যখন বলছে তুমি যাও না। ভালোই তো হবে, তুমি না যাওয়ার জন্য মানুষ পাচ্ছিলে না।
ঠিক আছে বাবা।
বাবা আরিয়ান, নাও তোমার মায়ের সাথে কথা বলো।
আম্মু...
আব্বু তুমি কেমন আছো?
আমি ভালো আছি। আম্মু তুমি কোথায়?
আমি বাবা অনেক দূরে!
আমিও যাবো তোমার কাছে।
এখানে বাবা আমি একা তুমি ঐখানেই থাকো, ঐখানে কত মানুষ।
তুমি কবে আসবে?
খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো বাবা।
আমার তোমার জন্য খুব খারাপ লাগে।
আমারো খুব খারাপ লাগে তোমাদের জন্য।
আমি একা হাত দিয়ে খেতে পারি না।
বাবা তুমি তো বড় হয়ে গেছ, তোমাকে একা নিজ হাতে খাওয়া শিখতে হবে। তোমাকে যে আরিশাকে দেখে রাখতে হবে। তুমি তো ছেলে মানুষ তোমার তো অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে।
আচ্ছা আম্মু আমি সব করব। নাও আরিশার সাথে কথা বলো।
আ.. আম্মু... তুমি কোথায়? আমি তোমার কাছে যাবো। আমি তোমার সাথে ঘুমাবো।
এইতো মা আমি। আমি বাসায় ফিরে তোমাকে বুকে নিয়ে ঘুমাবো। এখন কয়েকটা দিন তোমার দাদুর সাথে ঘুমাও।
মা ফারহানা কেমন আছিস?
ভালো আছি মা।
তুমি বুঝি রায়হানদের বাসায় গিয়েছ?
না রে মা। রায়হান বাবাজি ওদের নিয়ে আমাদের বাসায় এসেছে। আজকে আমাদের বাসায় থাকবে।
ওহ্ তাই বুঝি।
হ্যা তুই কথা বল না রায়হানের সাথে।
না মা আমি ফারহানার সাথে কথা বলবো না। আপনারা কথা বলুন আমি একটু ছাদে যাচ্ছি।
রায়হান তোর সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না।
ঠিক আছে মা, আমিও ওর সাথে কথা বলবো না। রাখছি মা আমার ক্লাশ আছে।
আমি কলটা কেটে দিলাম। রায়হান হঠাৎ করে সবাইকে নিয়ে আমাদের বাসায়! তাহলে কি রায়হান চিঠিটা পড়েছে? আর এইজন্য পরিবর্তন। তারমানে রায়হান ওর ভুল বুঝতে পেরেছে। কিন্তু তাহলে আমার সাথে কথা বলল না কেন?
অভিমান নাকি ইগো? ঠিক আছে যতদিন ও নিজ থেকে কথা বলতে চাইবে না আমিও ততদিন কথা বলব না।
অনেকদিন পর।
মায়ের সাথে আমার প্রতিদিনই কথা হয়। আজকেও কথা হলো। রায়হান নাকি এখন চেম্বারে কম সময় দেয়। আগে তিনটা হাসপাতালে ডিউটি করতো এখন একটা ছেড়ে দিয়েছে। আরেকটায় অন কলে যায়। বিকেলবেলা চেম্বার করে না। বিকেলটা আরিয়ান আর আরিশাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে বের হয়। আরিয়ানের জন্য একটা টিচার রেখে দিয়েছে, নিজেও আরিয়ানের পড়াশোনার প্রতি নজর রাখছে। আরিয়ান ও আরিশা আমাদের এবং রায়হানদের বাসায় দুই জায়গাতেই থাকে। আর রাত বারোটার আগেই চেম্বার বন্ধ করে বাসায় চলে আসে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক রোগী দেখে। আরিয়ান ও আরিশা যেই বাসায় থাকুক না কেন রায়হান সেখানেই রাতে ফিরে ওদের বুকে নিয়ে ঘুমায়। কখনো কখনো সময় পেলে নিজ হাতে খাইয়ে দেয়। আমার মা বাবার দিকেও খোঁজ খবর রাখে। বাবাকে নিয়মিত ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যায়। বাবার কোমর ব্যাথা এখন নেই বললেই চলে। বাবা এখন নামাজে সিজদা দিতে পারে। নামাজ পড়ে দুহাত তুলে আমাদের জন্য বাবা দোয়া করেন। শশুর-শাশুড়ি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। বাড়ির লোকজনের আমার উপর আর কোনো রাগ নেই। রায়হান ওদের নাকি সবকিছু বুঝিয়ে বলেছে। সবার সাথে আমার নিয়মিত ভিডিও কলে কথা হয়। তবে রায়হান আমার সাথে কথা বলে না। আমি খুব ভালোভাবে পড়াশোনা করতে লাগলাম। রায়হান তার সবগুলো দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে। সবদিকে তার সমান নজর থাকে। সবাইকে ভালো রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। রায়হানের এমন পরিবর্তনে সবাই অবাক। আমি অনেক খুশি ওর পরিবর্তনে। সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলে যাচ্ছে। আমাদের জীবনে আর কোনো সমস্যাই নেই। আমিও পড়াশোনা ছাড়া অন্য কোনো কিছু নিয়ে ভাবি না।
তিন বছর পর।
আমার MD কোর্স সম্পন্ন হলো। আমি অনেক ভালো রেজাল্ট করলাম। আমেরিকায় অনেক হসপিটাল থেকে আমাকে অফার করা হলো। কিন্তু আমি আমেরিকায় থাকতে রাজি হলাম না। আমি আমার নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি আমার নিজ দেশের মানুষের সেবা করবো। তাছাড়া আমি ওদের ছেড়ে আর একমুহুর্ত আমেরিকায় থাকতে চাইনা।
আজকে আমার ফ্লাইট। বাসায় কল দিয়ে বলেছি আমি বাংলাদেশে ফিরছি। মা বলল শরীরটা ভালো না। আর রায়হান তো তিন বছর পেরিয়ে গেলেও আমার সাথে একবার কথা বলেনি। ও এত পাষাণ কিভাবে হয়ে গেল ভাবতেও আমার অবাক লাগছে। এয়ারপোর্টে হয়তোবা আমার জন্য কেউ দাঁড়িয়ে থাকবে না।
নির্দিষ্ট সময়ে বাংলাদেশের মাটিতে প্লেন ল্যান্ড করল। আমার মনটা কেমন শীতল হয়ে উঠলো যেন মায়ের বুকে জড়িয়ে আছি। এ এক অন্যরকম অনুভুতি আমি বলে বুঝাতে পারব না। আমি প্লেন থেকে নেমে সবকিছু সম্পন্ন করে এয়ারপোর্টের বাইরে বেরিয়ে আসলাম। আমার দু'চোখ আপন মানুষদের খুঁজে ফিরছে। কিন্তু কাউকেই খুঁজে পাচ্ছি না। এক বুক কষ্ট নিয়ে আমি লাগেজ নিয়ে বের হচ্ছি।
হঠাৎ আরিয়ান আর আরিশা আম্মু বলে চিৎকার করে উঠল। আমি লাগেজ ফেলে দিয়ে ছুটে গিয়ে ওদের জড়িয়ে ধরে সমানে চুমু খাচ্ছি। আমার চোখ জুড়ে অশ্রুর বন্যা। তাকিয়ে দেখি সবাই এসেছে আমাকে রিসিভ করতে। রায়হানের হাতে ফুলের তোড়া। আমার পাগুলো যেন অসার হয়ে গেছে। আমি এগুতে পারছি না। রায়হান নিজেই আমার দিকে এগিয়ে এলো আমার সামনে এসে দাড়ালো। দুজন দুজনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। অনেক কথা জমে আছে। রায়হানও কিছু বলছে না। পুরুষ মানুষ শব্দ করে কাঁদতে পারেনা। রায়হানের চোখে অশ্রু টলমল করছে। রায়হান আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি হাওমাও করে কেঁদে ফেলি। আমি গত তিন বছর একদিনও কাঁদিনি। আজকে আমার তিন বছরের জমানো চোখের পানি সব যেনো বেড়িয়ে যাচ্ছে। আমি কিছুতেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না। মনে মনে খুব সংকল্প করেছিলাম রায়হানের সামনে অনেক শক্ত আচরণ করব।
কিন্তু পারছি না।
তুমি কাঁদো ফারহানা। চোখের নোনা জলে তোমার সকল কষ্ট ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাক।
তুমি অনেক নিষ্ঠুর, অনেক পাষাণ! তুমি এই তিন বছর আমার সাথে কেন কথা বলনি, আমাকে শাস্তি দেয়ার জন্য?
না আমি নিজেকে শাস্তি দেয়ার জন্য তোমার সাথে এতদিন কথা বলি নি। তুমি স্ত্রী হয়ে আমার ক্যারিয়ার গুছানোর জন্য সর্বোচ্চ স্যাক্রিফাইস করেছ। আর আমি স্বামী হয়ে তোমার স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তাই আমি নিজেকে শাস্তি দিয়েছি।
তোমার কথা মনে করে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে, কিন্তু কথা বলিনি।আমি যে তোমার কাছে অপরাধী। কিন্তু এতদিন ধরে আমি তোমার জন্য আমার সকল ভালোবাসা হৃদয়ে জমিয়ে রেখেছি।
আমি তোমাকে আর কখনো কোনো কষ্ট পেতে দিবো না। তোমার চোখে আর এক ফোঁটা অশ্রুর কারন হব না।
তুমি আমার চিঠি পেয়েছিলে?
হ্যাঁ আমি তোমার চিঠি পেয়েছিলাম। তুমি আমাকে কথাগুলো সামনাসামনি আরো আগে কেন বললে না?
আমি সামনাসামনি বললে তুমি কথাগুলো কিছুতেই শুনতে চাইতে না।
খুব অভিমান হয়েছিল আমার উপর তাই না? চিঠিটা পড়ে খুব অভিমান হয়েছিল?
হ্যাঁ হবেই তো। আমি নাহয় ভুলে গিয়েছিলাম, ক্যারিয়ারের পিছনে ছুটতে গিয়ে ভুলে গিয়েছিলাম তোমার প্রতি, সন্তানের প্রতি, মা বাবার প্রতি দায়িত্বের কথা কিন্তু তুমি তো আমার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে বুঝিয়ে দিতে পারতে।
আমারও তোমার প্রতি ক্ষোভ, অভিমান হয়েছিল এইজন্য যে, কেন তুমি আমাকে বুঝতে পারো না।
আমি আর কোনোদিন আমার উপর তোমাকে অভিযোগ আনতে দিবো না। আমি একজন আদর্শ স্বামী হয়ে উঠব। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ, অণুযোগ নেই। আমি শুধু চেয়েছি একজন স্বামী হিসেবে তুমি আমাকে বুঝতে পারো। আমাকে আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য সাপোর্ট করো। সব সময় আমার পাশে ছায়া হয়ে থাকো।
আজ থেকে আমি সবসময় তোমার ছায়া সঙ্গী হিসেবে থাকবো। আমরা দুজন মিলে সবকিছু ম্যানেজ করে চলব।
তোমার মতো স্বামী পেয়ে আজকে আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে করছি।
তুমি একজন আদর্শ স্ত্রী বাংলার ঘরে ঘরে যেন তোমার মতো স্ত্রী থাকে।
আর তুমি একজন আদর্শ স্বামী তোমার মত স্বামী যেন প্রতিটা মেয়ের ভাগ্যে জুটে। তুমি একজন দায়িত্ববান ও আদর্শ পুরুষ হয়ে দেখিয়ে দিয়েছ পুরুষ মানুষ সব সময় নিষ্ঠুর, পাষাণ হয় না।
এই তোদের মান অভিমানের পালা শেষ হলো? আর কতক্ষণ চলবে এভাবে, আমরা কি দাঁড়িয়েই থাকব নাকি এখানে?
চলো রায়হান, সবাই কি ভাবছে।
মা-বাবা আপনারা সবাই বাসায় চলে যান।
আমরা সবাই বাসায় চলে যাব মানে কি?
আমরা এখন বাসায় যাব না।
বাসায় যাব না মানে, আমরা কোথায় যাব তাহলে?
আমরা এখন রেডিও স্টুডিওতে যাব।
রেডিও স্টুডিওতে! কিন্তু কেন?
আমি চাই আমাদের জীবনের গল্পটা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ শুনুক।
রায়হান, আমি চাইনা আমাদের পার্সোনাল বিষয়গুলো মানুষ জানুক।
দেখো ফারহানা, আমাদের কথাগুলো যখন মানুষ জানতে পারবে তখন তারা তাদের ভুলগুলো বুঝতে পারবে, নিজেদের সংশোধন করতে পারবে।
কিন্তু এতে তোমাকে হয়তো মানুষ খারাপ ভাববে।
সে ভাবলে ভাবুক আমাদের কথা জানার মাধ্যমে মানুষ যদি তাদের ভুলটা বুঝতে পারে তাতেই আমি খুশি।
আমি চাই তোমার চিঠিটা তুমি নিজেই পড়ে শোনাও।
আমি পড়ব?
হ্যা, তাহলে মানুষ বুঝতে পারবে একজন নারীর কষ্টটুকু কি পরিমাণ। তার লুকিয়ে থাকা আর্তনাদ জানতে পারবে। আর পুরুষ মানুষ বুঝতে পারবে নিজের অজান্তে সে কিভাবে একজন স্ত্রীর স্বপ্ন ভেঙ্গে দেয়। কিভাবে একজন নারীর নিজস্ব সত্তাকে বিলীন করে দেয়। আর তোমার বিজয়ের গল্প শুনে নারীরা নিজেদের হারিয়ে যাওয়া অস্তিত্ব ফিরে পেতে লড়াইয়ের জন্য অণুপ্রাণিত হবে। একটা সংসার, একটা পরিবার তখনই সুন্দর হয়ে উঠে যখন একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠে।
তুমি কত সুন্দর করে কথাগুলো বলছ রায়হান। তুমি সত্যিই অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছ। মনে হচ্ছে আজকে আমার জীবন পূর্ণতা পেল।
আর তুমি ছাড়া আমি তো অপূর্ণ, তুমি যে আমার অর্ধাঙ্গী। আচ্ছা এবার তাড়াতাড়ি চলো শো শুরু হতে আর মাত্র পঁয়ত্রিশ মিনিট বাকি।
চলো তাহলে যাওয়া যাক।
আমি রায়হানের কাঁদে মাথা রেখে গাড়িতে বসেছি। আমি কখনো রায়হানকে বলবো না যে ওকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য অ্যাডভোকেট আজমিরি সুলতানার কাছে গিয়েছিলাম। আজমিরি সুলতানা আমার বড় বোন হিসেবেই থেকে যাবেন। আমি যদি রাগের মাথায় এই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতাম তাহলে আজকে আমার জীবনে এই সুখের দিন আসতো না। আমাদের সকলের উচিত যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য্য ধারণ করা এবং রাগের মাথায় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা। পরিস্থিতি যতোই খারাপ হোক একটু ধৈর্য ধরে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। ভুলত্রুটিগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে হবে। যদি সমস্যার সমাধান হয়ে যায় তাহলে তো ভালোই নাহলে পড়ে না হয় ডিভোর্সের মতো সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। একটা সম্পর্ক গড়ে তোলা অনেক কঠিন আর ভেঙে ফেলা অনেক সহজ কিন্তু একবার ভেঙে গেলে সেই সম্পর্ক আবার নতুন করে গড়ে তোলা অসম্ভব। আর এই ভাঙ্গা গড়ার মাঝে নিষ্পেষিত হয় ছোট অবুঝ বাচ্চারা।
আমি আমার আরিয়ান ও আরিশাকে বুকে জড়িয়ে নিলাম।
গাড়ি চলছে রেডিও স্টেশনের দিকে।
সমাপ্ত।।
#একান্ত_কথাঃ গল্পটির সাথে থাকার জন্য সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। গল্পের চিঠিটা আর পড়ে শোনান হলো না এইজন্য দয়া করে কেউ রাগ করবেন না। তবে চিঠিটায় কি লেখা থাকতে পারে তা আপনারা রায়হানের শেষ কথাগুলো পড়লে একটা ধারণা পেয়ে যাবেন। গল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করার অনুরোধ করছি।
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
লেখক: সাইফুল ইসলাম
https://m.facebook.com/groups/526513374820830?view=permalink&id=851982468940584