আজকে আমার ফ্লাইট। নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাইট হলো আর আমি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আমেরিকায় এসে পৌঁছলাম। আমি রায়হানকে কল দিলাম।
হ্যালো রায়হান।
হ্যা কে বলছেন আপনি?
আমার গলা চিনতে পারছো না?
খুব চেনা লাগছে! কিন্তু...
কিন্তু নাম্বারটা আমেরিকার তাই তো।
হ্যা।
আমি আমেরিকায় আছি।
মানে?
মানে আমি আজকেই আমেরিকাতে পৌঁছেছি। আমি MD করতে আমেরিকায় আসবো তোমাকে বলেছিলাম তো।
আমার ছেলেমেয়ে কোথায়?
সবকিছু বলছি একে একে।
তোমার সাথে আমার আর কোনো কথা নেই। তুমি বলো আমার ছেলে মেয়ে কোথায়।
আরিয়ান ও আরিশা আমাদের বাসায় আছে। আর তোমার ড্রয়ারে একটা চিঠি আছে।
রায়হান সাথে সাথে কলটা কেটে দিলো। রায়হান চিঠিটার কথা শুনলো কিনা কে জানে?
আমি আর রায়হানকে কল দিলাম না। খুব কান্না পাচ্ছে আমার। আমার সবচেয়ে আপনজন আমার ভালোবাসার মানুষটির সাথে আমার মনোমালিন্য হয়েছে। আমার দুটি নয়নের মণিকে ছেড়ে আসার কষ্ট। এই সুদূর আমেরিকায় আমি একা, বড্ড বেশি একা। আমি কাঁদছি হাউমাউ করে কাঁদছি! বালিশে মুখ গুজে কত সময় ধরে কেঁদেছি বলতে পারবো না। আমার চোখের নোনা জল মুছে দেওয়ার মতো কেউ নেই এই দূর প্রবাসে। একটা সময় কান্না থামিয়ে আমি উঠে দাঁড়ালাম, চোখের অশ্রু মুছে নিজেই নিজেকে বললাম, "ফারহানা তোকে কাঁদলে তো হবে না, তুই তো সবকিছু জেনেবুঝেই এই সংগ্রামী জীবন বেছে নিয়েছিস। তুই তো হাজার হাজার নারীর প্রতিবাদী উদাহরণ। তোকে যেন আর কখনো কাঁদতে না দেখি। তোকে অনেক শক্ত হতে হবে। তোর একটাই উদ্দেশ্য স্বপ্ন পূরণ এবং স্বপ্ন পূরণ। আজকের পর থেকে তুই অন্য কোনো কিছুর দিকে মনোযোগ দিবি না।"
হ্যা আজ থেকে আমার একটাই লক্ষ্য, আমার ঝিমিয়ে পড়া অস্তিত্বকে আবার জাগ্রত করা। আমি নিভে যেতে পারি না। আমি নিজেকে অনুপ্রাণিত ও সান্তনা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
মা, আরিয়ান আরিশা কেমন আছে? আরিশা খুব কান্নাকাটি করেছে তাই না?
ওরা খুব ভালো আছে, না একদমই কান্নাকাটি করেনি।
সত্যি বলছো মা?
হ্যা রে সত্যি বলছি।
ওরা এখন কি করছে?
ওরা ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে।
কি বলছ মা তুমি, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
রায়হান গতকাল রাতেই গাড়ি নিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে আসে। তারপর নিজ হাতে আরিয়ান আর আরিশাকে খাইয়েছে। ওদের নিয়ে তারপর তোর রুমে ঘুমিয়ে পড়েছে।
রায়হান কিছুই বলেনি? কোনো রাগ দেখায় নি?
নারে মা। জামাইবাবাজি তো আগের মতোই আমাদের সাথে কথা বলল। আমি আর তোর বাবাও তো অবাক।
ও মাই গড ২০ টা মিসডকল! নিশ্চয়ই মা।
হ্যালো মা।
কতগুলো কল দিলাম কোথায় ছিলি?
মা কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, মোবাইল সাইলেন্ট ছিলো। আচ্ছা এতগুলো কল কেন?
কি বলব বলতো, তুই কি বিপদে ফেলে গেলি আমাদের? গতকাল রাতে জামাই আমাদেরকে কল দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। আমার তো বিশ্বাস হচ্ছিল না এটা কি সেই রায়হান।
তার মানে আমি এতক্ষন ধরে স্বপ্ন দেখছিলাম! রায়হান কি তবে চিঠিটা পড়ে নি? না কি চিঠিটার কথা ও শুনতে পায়নি, এর আগেই লাইন কেটে দিয়েছিল? নাকি চিঠিটা পড়ে ওর কোনো পরিবর্তন হয়নি! তাহলে তো...
কি বলছিস ফিসফিস করে?
কিছুনা, মা তুমি ধৈর্য্য ধরো, দেখো কি হয়।
আজকে ওরা আসবে আরিয়ান আর আরিশাকে নিতে। আমার তো খুব ভয় করছে। ওরা বাসায় এসে যদি আরো ঝামেলা করে।
তুমি চিন্তা করো না আমি ব্যারিস্টার আজমিরি সুলতানাকে সবকিছু জানাচ্ছি।
তাই কর।
আমি রাখলাম মা।
হ্যালো সুলতানা আপা।
হ্যা কেমন আছেন ফারহানা?
আপা ভালো না। রায়হান মা কে কল দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে।
এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে। রায়হান সাহেবের রাগ করাটাই তো স্বাভাবিক তাই না।
কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন চিঠিটা পড়লে রায়হান সবকিছু ভালোভাবে নিবে।
আপনাদের মাঝে যদি সত্যিকার ভালবাসা থাকে আর ডাঃ রায়হান যদি সত্যিই একজন সুপুরুষ হয়ে থাকে তাহলে পজেটিভ কিছু হওয়ারই কথা। হয়তো ডাঃ রায়হান চিঠিটা পড়েই নি।
তাহলে?
আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
আর রায়হান আজকে আরিয়ান ও আরিশাকে নিয়ে যেতে আমাদের বাসায় যাবে।
সেটা আমি দেখছি কি করা যায়। আমি আপনাদের বাসায় যাবো, আমি সরাসরি কথা বলবো ডাঃ রায়হানের সাথে। তবে আমি অ্যাডভোকেট সেই পরিচয় দিবো না।
ঠিক আছে আপা, আপনিই আমার এখন ভরসা। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
বাবা রায়হান।
হ্যা মা বলো।
গতকাল রাতে কারসাথে এমন অভদ্র ভাষায় কথা বলেছিস?
ফারহানার মায়ের সাথে। ফারহানা আমেরিকা চলে গিয়েছে।
কি! কি বলছিস তুই?
হ্যা মা আমি সত্যিই বলছি। ও গতকাল আমেরিকায় পৌঁছে আমায় কল দিয়েছিলো। তাই ওর মাকে কল দিয়ে খারাপ ব্যবহার করেছি।
তুই বেয়াইনের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে গেলি কেন?
করবো না কেন? উনারা তো সব জেনেই ফারহানাকে সাপোর্ট করেছে। নয়তো ফারহানা এভাবে চলে যাওয়ার সাহস পায়?
কিন্তু ফারহানা তোকে আগে বলেনি? হঠাৎ করে কেন চলে যাবে? ফারহানা তো এমন মেয়ে ছিলো না। নিশ্চয়ই তোর সাথে কোনো ঝামেলা হয়েছে।
আমাকে বলেছিল ও আমেরিকায় স্কলারশীপ পেয়েছে। আমি ওকে নিষেধ করি যাওয়ার জন্য। কিন্তু ও জিদ করে যে আমেরিকা যাবেই। তখন আমি ওকে বলি যদি যেতে হয় তবে যেন আমাকে ডিভোর্স দিয়ে তারপর যায়।
আমার নাতি নাতনিরা এখন কোথায়?
ওরা আছে ঐ বাসাতেই। আমি যাবো একটু পর ওদের নিয়ে আসতে।আমিও যাবো তোর সাথে। কেমন মেয়েরে বাবা কাউকে কিছু না বলে আমেরিকা চলে গেল!
মা আমি ওকে ডিভোর্স দিবো।
কি বলছিস তুই?
হ্যা আমি ঠিকই বলছি। আমি এমন অবাধ্য, বেয়াদব মেয়েমানুষের সাথে আর সংসার করবো না।
এসব নিয়ে পরে ঠান্ডা মাথায় আলোচনা করা যাবে। আগে চল আরিয়ান ও আরিশাকে নিয়ে আসি।
ঠিক আছে তুমি রেডি হও। আমি একটু হাসপাতাল থেকে ঘুরে আসছি। কিছু মুমূর্ষু রোগী আছে।
ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসিস।
দুপুরের পর।
বেয়াই কি বলবো বলুন? কেমন মেয়ে আপনাদের আর আপনারাই বা কেমন মা-বাবা? মেয়ে একা সিদ্ধান্ত নিয়ে কাউকে না জানিয়ে বিদেশ চলে গেল। আমরা ওর শশুর-শাশুড়ি এখনো বেঁচে আছি, আমাদেরকে অন্তত বলতে পারতো। কোন্ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়না বলতে পারেন? তাই বলে এভাবে বিদেশ চলে যাবে!
মা এসব নিয়ে উনাদের সাথে আর কোনো কথা বলার দরকার নেই। আমরা যে জন্য এসেছি সেটা বলো।
বেয়াই সাহেব আমার নাতি নাতনিকে নিয়ে আসুন আমরা ওদের এখান থেকে নিয়ে যাবো।
অবশ্যই আপনারা আপনাদের নাতি নাতনিকে নিয়ে যাবেন। কিন্তু এইমাত্র ওরা ঘুমিয়েছে। ওরা আগে ঘুম থেকে উঠুক। আপনারা বসুন আমি চা নিয়ে আসি।
না, আমরা বসবো না। আপনি ওদের ঘুম থেকে ডেকে তুলুন।
রায়হান সাহেব শান্ত হোন, আপনি এমন করলে বাচ্চাদের মনের উপর খারাপ প্রভাব পড়বে।
আপনি কে? আপনাকে তো চিনলাম না।
আমি আজমিরি সুলতানা, ফারহানার দু্ঃসম্পর্কের বড় বোন।
আমি তো আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না।
আপনাকে আমার কথা শুনতে হবে। আপনার সন্তানদের ভালোর জন্যই আপনাকে বলছি। আমি জানি আপনারা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসেন। একটা ঘটনা ঘটে গেছে আপনার রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। তব এই বিষয়গুলো নিয়ে এমন ব্যবহার করবেন না যাতে এই ছোট্ট বাচ্চাদের মনের উপর কোনো নেগেটিভ প্রভাব পড়ে। বাবা হিসেবে এই মুহূর্তে আপনাকে ধৈর্য্য ধরতে হবে।
আপনি কি বলতে চাচ্ছেন?
আমি বলতে চাচ্ছি ওদের এখন ডেকে কাঁচা ঘুম ভাঙানোর দরকার নেই। আর ওদের জোর করে নেওয়ারও দরকার নেই।
আমি তো আমার ছেলেমেয়েদের কিছুতেই এখানে রাখবো না।
আমি তো বলিনি আপনি ওদের এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবেন না। আমি শুধু বলছি ওরা ঘুম থেকে উঠলে স্বেচ্ছায় যেতে চাইলে নিয়ে যাবেন। জোরজবরদস্তি করলে ওরা ভয় পেয়ে যাবে। আজ যেতে না চাইলে দুইদিন পর নিয়ে যাবেন। কেউ আপনাকে কোনো বাঁধা দিবে না।
রায়হান উনি বোধহয় ঠিকই বলছেন। যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে কিন্তু তার প্রভাব যেন আমার নাতি নাতনির মনের উপর না পড়ে।
ঠিক আছে মা তুমি যা বলবে তাই হবে।
হ্যালো মা বলো।
রায়হান আর ওর মা এসেছিলো। আরিয়ান ওদের সাথে চলে গেছে।
আর আরিশা?
ও যেতে চায়নি তাই ওরা আরিশাকে রেখে গেছে। পরে এসে নিয়ে যাবে।
ওরা কোনো খারাপ ব্যবহার করেছে তোমাদের সাথে?
না কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি। তবে তোর শাশুড়ি অনেক কথা বলেছে।
কি বলেছেন?
এই যে তুই কাউকে না জানিয়ে চলে গেলি এটা ঠিক হয়নি। এইজন্য আমাদের দায়ী করলো। আমার তো এখন মনে হচ্ছে তোর কথা শুনে হয়তো ভুলি করেছি।
তুমি একথা বলছ মা?
হ্যা বলছি। কারণ তুই একটা মেয়ে, তাছাড়া তুই এখন একা না, তোর দুটি সন্তান রয়েছে।
মা আমি তোমাকে তো বলেছি আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য আমার আর কোনো উপায় ছিল না।
তোর শশুরবাড়ির লোকজন যখন জানতে পারবে বিষয়টা উনারা কিভাবে নিবে ভেবেছিলি? বেয়াই, বেয়াইন আমাদের কাছে জানতে চাইলে আমরা তখন কি উত্তর দেব? আমাদের তো মাথা নিচু করে চুপচাপ সব অপমান সহ্য করতে হবে। এই বিষয়গুলো তোর আগে ভাবা উচিত ছিল। বেয়াইন বারবার বলছেন তোদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ যাই হয়ে থাকুক শশুর-শাশুড়িকে অন্তত একবার জানানো উচিত ছিল।
মা এটা আমার ছোট একটা ভুল হয়ে গেছে। আর জানালেও রায়হান উনাদের কথা শুনত না। রায়হান কলেজে থাকতেই আমার পড়াশোনার বিষয়ে জেলাস ফিল করতো।
যাইহোক তোর শশুরবাড়ির লোকজনদের না জানিয়ে তুই এটা মস্ত বড় ভুল করেছিস। আর আমারও কেন জানি তোর স্বপ্ন পূরণের কথা শোনার পর এইসব বিষয় মাথা থেকে চলে গিয়েছিল।
মা একজন মেয়ের বিয়ের পর তার স্বামী হলো প্রধান অভিভাবক, বিপদ-আপদের ঢাল, স্বামী যদি স্ত্রীর পাশে না থাকে তাহলে একজন স্ত্রী খুব অসহায় হয়ে পড়ে। তখন নিজের অস্তিত্ব রক্ষার্থে কঠিন হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। আমার দেয়ালে পিঠ আঁটকে গিয়েছিল। আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলছিলাম। আর তুমি নিজেই তো বলেছিলে যে "ফারহানা, আমাকে বিয়ের পর শশুরবাড়ি থেকে অনুমতি না দেওয়ায় পড়াশোনা করতে পারিনি, কিন্তু তুই কখনো তোর পড়াশোনা ছেড়ে দিবি না।"
হ্যা বলেছিলাম, কিন্তু...
মা তুমি আমার উপর বিশ্বাস রাখো। সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখবে আমি যেদিন বড় ডাক্তার হবো অনেক নাম করবো সেদিন তোমার গর্বে বুকটা ভরে যাবে।
মা রে সবকিছুর পরেও মেয়েদের স্বামী ছাড়া জীবন পূর্ণতা পায় না। মানুষজন অনেক কথা বলবে।
মা আমি রায়হানকে অনেক ভালোবাসি, রায়হানও আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমি জানি ও আমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবে না।
আমার বিশ্বাস ও চিঠিটা পড়লে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। যদি ঠিক না হয়ে যায় তবে আমি বুঝবো আমি ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিলাম। আর একজন ভুল মানুষের জন্য তখন আমার আর কোনো খারাপ লাগা কাজ করবে না। ও এখনো চিঠিটা পড়ে নি হয়তো।
কিসের চিঠির কথা বলছিস?
আমি ওর জন্য একটা চিঠি লিখে রেখে এসেছি। মানুষ হয়তো রাগ করে কথা শুনতে চায় না কিন্তু লুকিয়ে হলেও চিঠি পড়ে।
আমার উপর একটু বিশ্বাস রাখো মা। আর আমাকে মানসিকভাবে একটু সাপোর্ট দাও আমি নিজেকে ঠিক প্রমাণ করবো। আর রায়হানও ঠিক বুঝতে পারবে ওর ভুলটা কোথায়। আর আমি আমার শশুর-শাশুড়িকে কল দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিবো। আমি বড় ডাক্তার হলে আমার শশুরবাড়ির লোকজন দেখবে আমাকে নিয়ে কত গর্ব করবে।
উনি তো আমার বিয়ের পর সবার কাছে বলতো "কপালগুণে এমন বৌমা পেয়েছি। কলেজের সেরা স্টুডেন্ট, চাকরির পাশাপাশি আমার কত সেবাযত্ন করে। সংসারের সব কাজ একা হাতে সামলায়।"
আরো কত কি।
কি জানি আল্লাহ জানে তোর কপালে কি আছে।
মা আমি তো কোনো অন্যায় করিনি। আমি সবসময় নিজেকে সঠিক রেখেছি, সব দায়িত্ব পালন করেছি। কখনো বাইরে খারাপভাবে চলাফেরাও করিনি যাতে তোমাদের বা শশুরবাড়িবাড়ীর লোকজনের বদনাম হয়। আল্লাহ আমাকে অবশ্যই এর প্রতিদান দিবেন। আমি কখনো আল্লাহর উপর থেকে ভরসা হারাই নি। মা আরিশাকে দেখে রেখো। আমি এখন রাখছি।
কয়েকদিন পর।
বাবা রায়হান তুই তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।
কেন কি হয়েছে?
আরিয়ানের হাত কেটে গেছে।
কিভাবে?
আমি দেখিনি ও কোথায় থেকে যেন একটা ব্লেড আর কাগজ দিয়ে খেলছিল।
ও মাই গড। আমিই তো শেভ করে ব্লেডটা ফেলতে ভুলে গিয়েছিলাম।
আমি এখনি আসছি।
আরো কিছুদিন পর।
মা কিসের শব্দ হলো?
আরিয়ান বল মেরে অ্যাকুরিয়াম ভেঙে ফেলেছে।
বেয়াদব ছেলে একটা থাপ্পর মেরে দাঁত ফেলে দিবো। অনেক দুষ্টুমি করো তুমি।
আরিয়ান কাঁদছে, আম্মু কখনো আমাকে মারে নি। আমি আম্মুর কাছে যাবো। দাদু আমাকে আম্মুর কাছে নিয়ে যাও।
রাতের বেলা খাবার টেবিলে।
রায়হান আরিয়ানের স্কুল থেকে অভিযোগ এসেছে।
কিসের অভিযোগ?
আরিয়ান ঠিকমতো পড়াশোনা করছে না। ওর কোনো হোমওয়ার্ক হচ্ছে না।
আমি কালই ওর জন্য টিচারের ব্যবস্থা করবো।
আরেকটা কথা বলার ছিল।
বলো।
আরিশাকে নিয়ে আসবি না?
কিভাবে আনবো মা? সবাই মিলে তো আরিয়ানকেই সামলাতে পারছিনা। থাক ওর নানুর কাছেই।
অনেক দিন হয়ে গেল আরিয়ানকে নিয়ে গেল ওর বাবা। এর মধ্যে অনেকবার আমি রায়হানকে কল দিলাম কিন্তু ও কল তুলে নি। আরিয়ান কেমন আছে আমি জানিনা। আমি প্রতিদিন মাকে কল দেই। রায়হান আরিশাকে নিতে আর আসেনি আমাদের বাসায়। আরিশা মায়ের কাছে ভালোই আছে।
বাবা রায়হান।
এতো রাতে কল দিয়েছেন কেন?
আরিশার খুব জ্বর কয়েকবার বমি করেছে। শরীর কেমন নীল হয়ে গেছে। তুমি একটু তাড়াতাড়ি আসবে? আমার মনে হয় ওকে এখনই হসপিটালে নিয়ে যাওয়া দরকার।
আপনার মেয়েকে জানান। আমাকে বলছেন কেন?
বাবা এখন রাগ করার সময় নয়। তুমি দয়া করে তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে আসো।
আমি এখনি আসছি আপনারা রেডি হোন।
ডাঃ রায়হান আপনার মেয়ের অবস্থা বেশী ভালো না। এখনি আইসিইউ তে লিফট করতে হবে। ওর খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে লাইফ সাপোর্টে দিতে হবে।
যা করতে হবে তাড়াতাড়ি করুন। যেভাবেই হোক আমার মেয়েকে বাঁচান।
আমাদের হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক আইসিইউ নেই।
তাহলে?
আপনি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা পেডিয়াট্রিক আইসিইউতে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
চার দিন পর।
আরিশা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। ওকে এখন বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মাসুম ভাই।
সঠিক সময়ে নিয়ে আসায় আল্লাহ রহমত করেছেন। মেয়েটাকে একটু সাবধানে রাখবেন।
ঠিক আছে মাসুম ভাই।
মা, আরিশা এখন থেকে আমাদের বাসায় থাকবে।
ঠিক আছে বাবা তোমার মেয়ে তোমার যা ভালো মনে হয়। কিন্তু একবার ফারহানাকে জানাই।
সে আপনার মেয়ে আপনি তা ইচ্ছে করুন। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে চলে যাচ্ছি। ওর জন্যই আজকে আমার মেয়েটা মরতে বসেছিলো। ওকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।
হ্যালো ফারহানা।
হ্যা মা। আরিশা এখন কেমন আছে?
ও এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছে। ডাক্তার রিলিজ করে দিয়েছে।
যাক আলহামদুলিল্লাহ।
জামাইবাবাজি আরিশাকে নিয়ে যেতে চায়।
নিয়ে যাক তুমি কিছু বলো না ওকে।
ঠিক আছে বলবো না।
বাসায় ফেরার পর।
মা আমি ফারজানাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো। আমি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলেছি।
এটা কি ঠিক হবে?
ঠিক বেঠিক বুঝি না। আমি চাইনা ওর সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে আর।
তোর হাতে এটা কিসের কাগজ?
উনি বিয়ের কাবিন নামা নিয়ে যেতে বলেছেন।
আরেকটু ভেবে চিন্তে দেখ।
আর ভাবার কিছু নেই।
ঐটা কিসের কাগজ পড়ে আছে?
দেখি দাও তো।
চিঠি! ফারহানার লেখা চিঠি।
কবে লিখেছে? কি লেখা আছে পড়তো।
দাঁড়াও এটা শুধু আমার জন্য লিখা। মনে হচ্ছে যাওয়ার আগে লিখে গেছে।
চলবে...
( ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
লেখক: সাইফুল ইসলাম
https://m.facebook.com/groups/526513374820830?view=permalink&id=850540789084752