গল্পঃ #অভিমানী_ভালবাসা

0 0
Avatar for Nipa1234
3 years ago

১.

দেশের নামকরা ব্যবসায়ী আরমান চৌধুরী গতকাল রাতে ইন্তেকাল করেছেন।আরমান চৌধুরীর ইন্তেকালের যতটা না দেরি হয়েছে, সংবাদ টা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পৌছে যেতে তার থেকে অনেক বেশী কম সময় লেগেছে।আরমান চৌধুরীর চেনা, অচেনা, শত্রু, মিত্র সবাই যে যেখান থেকে পেরেছে সবাই এসে “চৌধুরী প্যালেসে” এসে শোক প্রকাশ করেছে।চৌধুরী প্যালেসে এখন মানুষ গিজগিজ করছে চৌধুরীর ইন্তেকালের জন্য শোক প্রকাশ করতে ,,,

চৌধুরী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি থেকে কিছু মেয়ে অফিসার কর্মী ও এসেছে।কিন্তু তাদের সাজগোজ আর পোশাকের বাহার দেখে আরমান চৌধুরী বোনের (লায়লা চৌধুরীর )রাগে সারা শরীর রি রি করে জ্বলতে শুরু করেছে।লায়লা চৌধুরীর পাশে কিছু মেয়ে অফিসার কর্মী এসে দাড়াতেই লায়লা চৌধুরী আস্তে করে গর্জে উঠে বললেন তোমারা শোক করতে এসেছো নাকি পার্টি করতে ?

লায়লা চৌধুরীর মুখের কথা শেষ না হতেই পিংকি (মেয়ে অফিসার)বলে শোক করতে এসেছি ম্যাডাম কিন্তু সৈকত স্যার যে হ্যান্ডসাম আর ড্যাসিং তাতে স্যারের পাশে এমন পোশাক ছাড়া কেমন দেখায় বলেন? ও তো কিছুক্ষনের মধ্যে এখানে এসে যাবে তাই এই গেট আপে চলে এসেছি বলে মিচকি হাসে পিংকি।

লায়লা চৌধুরী চাপা বর্জকন্ঠে বলে খবর দার আমার ভাইপোর দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছো তো ওই চোখ আমি তুলে নেবো।শোক করতে এসেছো ভালো কথা অন্যমতলব মন থেকে ছুড়ে ফেলে দাও,,নইলে আমি তোমাকে চৌধুরী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি থেকে ছুড়ে ফেলে দেবো।কথাটা বলেই এমন ভাবে পিংকির দিকে তাকালেন মনে হচ্ছে পারলে আস্তো চিবিয়ে খাবেন।

কিছুক্ষনের মধ্যে আরমান চৌধুরীর একমাত্র সুযোগ্য পুত্র সৈকত চৌধুরী তার ৪/৫ জন বডি গার্ড সহ চৌধুরী প্যালেসে প্রবেশ করে।সৈকত কে দেখেই অনেকে ছুটে এসে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে,,সৈকত তাদের কারো দিকে না তাকিয়ে,, কোন পাত্তা না দিয়ে সোজা গিয়ে তার বাবার মৃত দেহের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। আরমান চৌধুরীর পিএ(রফিক আহমেদ) এসে সৈকতের সাথে কিছু কথা বলে।সৈকত তার সাথে কথা শেষ করে বলে যে আর সময় নষ্ট না করে দ্রুত জানাজা শেষ করে দাফনের ব্যবস্থা করার জন্য।সৈকতের কথা মতো সব কাজ শেষ করে যে যার মতো করে চলে যেতে শুরু করে।কিছু সময়ের মধ্যে চৌধুরী প্যালেস আগের মতো লোকশুন্য হয়ে যায়। শুধু মাত্র রফিক আহমেদ আর তার ছেলে রিহান থেকে যেয় চৌধুরী প্যালেসে।

লায়লা চৌধুরী সৈকতের পাশে এসে বসে বলেন সৈকত যাও নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও, অনেক পথ জার্নি করে এসেছো।এখন তোমার বিশ্রাম দরকার।সৈকত বলে না ফুফি আমি থাকার জন্য আসিনি,আমার ফ্লাইট রাত দশ টায়।আমি আজই লন্ডন ফিরে যাবো।

লায়লা চৌধুরী সৈকতের কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লেন, কি বলছো তুমি সৈকত তুমি আজই ফিরে যাবে মানে!!?

সৈকত বলে কেন ফুফি কি হয়েছে??

পাশ থেকে রফিক আহমেদ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন তোমার বাবার দাফন শেষ হতে না হতেই তুমি আবার লন্ডন ফিরে যেতে চাইছো!!?এদিকের কি হবে?

সৈকত মিচকি হেসে বলে আহ আঙ্কেল আপনি আর রিহান তো আছেন।রিহান হচ্ছে রফিক আহমেদ এর ছেলে। রিহান আর সৈকত সমবয়সি। ছোট বেলা থেকেই দুজনের মধ্য একটা বন্ধুত্ব সুলভ সম্পর্ক। তবে রিহান খুব সহজ সরল আর নরম প্রকৃতির।আর সৈকত তার উল্টো। রিহান তার বাবার পেশাকে ছোট বেলা থেকেই নিজের লক্ষ্যে হিসাবে নিয়ে নেয়।তাইতো রিহান আজ রফিক আহমেদ এর মতোই একজন আদর্শবান আইনজীবী হয়েছে।আর তাই জুনিয়র আইনজীবী হিসাবে সৈকতের বাবা আরমান চৌধুরী রিহানকে সৈকতের জন্য প্রাইভেট আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত করে দেন।সৈকত রিহানের কাধে হাতে দিয়ে একটু ঝাকি দিয়ে বলে কি রেএ পারবি না??রিহান একটু মুচকি হাসে।তারপর সৈকত রফিক সাহেব কে বলে এইদিক টা আপনি আর রিহান দুজন মিলে সামলে নিয়েন,,আমি বরং লন্ডনের বিজনেস গুলি সামলাবো।

রফিক আহমেদ বলেন তা কি করে হয়??

সৈকত বলে কেন হবে না আঙ্কেল?? বাবা বেচে থাকতে যেমন সামলেছেন এখনো তেমনি সামলে নিবেন।আর আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না।আমি আপনাকে সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি বাবার সাথে সব করতে তাই আমিও আপনাকে বাবার মতো অনেক বিশ্বাস করি। আপনি আমার বাবার খুব কাছের একজন মানুষ,,এবং খুবই বিশ্বস্ত। তাই আপনাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়।

রফিক আহমেদ বলেন সৈকত তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে বিজনেস এর ব্যাপারে তুমি যদি আমাকে একটু সময় দাও তাহলে খুবই ভালো হয়।

সৈকত বললো বলুন আঙ্কেল কি বলবেন।রফিক আহমেদ বললেন এখানে না আমি তোমাকে প্রাইভেট ভাবে কিছু বলতে চাই।

রফিকের কথাটা লায়লা চৌধুরীর কাছে কেমন যেন লাগলো, তাই তিনি সৈকতকে বললেন ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি তাহলে আর মনে হয় কথা বলতে অসুবিধা হবে না রফিকের!

রিহান বলে ফুফি আপনি কিছু মনে করবেন না,, আসলে স্যারের(আরমান চৌধুরী) হঠাৎ মৃত্যুতে সব কিছু এলো মেলো হয়ে গেছে,,।যেহেতু স্যার নেই তাই এখন স্যারের বদলে সৈকতকে সব বিজনেস এর দায়িত্ব নিতে হবে। এখানে কিছু নতুন ক্লাইন্ট এর কন্টাক্ট পেপার রয়েছে যেগুলি সৈকতকে দেখতে হবে,সৈকত যদি কন্টাক্ট গুলি দেখে মনে করে যে আমাদের তাদের সাথে কাজ করা উচিৎ তাহলে এখানে কিছু সিগনেচার করতে হবে বলে রিহান কিছু ফাইল বের করে ব্যাগ থেকে।

লায়লা বলে ওহ আচ্ছা,ঠিক আছে তোমরা কথা বলো,, আমি ভিতরে গিয়ে একটু রেস্ট করবো।

লায়লা ঠিকই চলে যায়, কিন্তু তার মনে বিজনেস এর বিষয় জানার জন্য খুব কৌতুহল হয়,,…

সৈকত রফিকের দিকে তাকিয়ে বলে আঙ্কেল আপনি তো আমার থেকে বেশি ভালো বুঝবেন আপনি না হয় সব টা ম্যানেজ করে নিন।

রফিক বলে ঠিক আছে, তবে উইল নিয়ে তোমার সাথে আমার জরুরী কথা ছিলো,, আর তুমি তো জানই আমি তোমার বাবার পিএ ছাড়াও তার ব্যক্তিগত আইনজীবী হিসাবে নিযুক্ত ছিলাম এবং আছি,তাই তোমার বাবা মৃত্যুর আগে আমাকে যে ভাবে বলেছিলেন আমি সেই ভাবে উইল তৈরি করেছি।

সৈকত উইল কথা শুনেই বলে কই দেখিতো কি আছে উইলে!?

রফিক আহমেদ তার ছেলে রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে ,রিহান কাগজ গুলি ফাইল থেকে বের করো।

রিহান ফাইল থেকে কাগজ গুলি বের করতে গিয়ে হঠাৎ লায়লা চৌধুরী কে সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আস্তে করে বলে এখানে এগুলা নিয়ে কথা না বলে, আমাদের মনে হয় সৈকতের অফিস রুমে গিয়ে এই বিষয়ে কথা বলা উচিত।

রফিক আহমেদ ছেলের দৃষ্টি অনুসরণ করে লায়লা কে দেখে বলে তুমি ঠিকই বলেছো।

সৈকত তার ফুফিকে দেখে বলে ফুফি তুমি কি কিছু বলবে?

লায়লা চৌধুরী হঠাৎ থতমত খেয়ে বলে তুমিতো সারাদিন কিছুই খাওনি,, আমি কি তোমার জন্য কিছু খাবার দেওয়ার কথা বলে দিবো?

সৈকত বলে ঠিক আছে তুমি খাবার রেডি করতে বলো, আমি আংকেল এর সাথে মিটিং টা সেরে তারপর খাবো।

সৈকত রফিক আর রিহান কে বলে চলুন উপরে আমার অফিস রুমে গিয়ে কথা বলি,বলে সৈকত সিড়ি দিয়ে উপরে যায়,রফিক আর রিহান সৈকতকে অনুসরণ করে চলে যায়।

সৈকতের ফুফি এভাবে সবাইকে একসাথে চলে যেতে দেখে মনে মনে অনেক কিছুই সন্দেহ করে, কিন্তু তিনি চুপ করে থাকেন, কারণ হুট করে এখন কিছু জিজ্ঞাসা করলে সমস্যা হয়ে যাবে।

সৈকত বাসায় নিজের অফিস রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিয়ে বলে,আংকেল কি আছে এই উইলে যার জন্য ফুফির সামনে কিছু বলতে চাইলেন না!?

রফিক, আর রিহান কিছুক্ষন নিজেদের দিকে মুখ চাওয়া চায়ি করে ফাইল থেকে কাগজ টা বের করে সৈকতের সামনে দেন। সৈকত কাগজটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করে। তারপর একটা জায়গায় এসে পড়া থামিয়ে বলে আংকেল হোয়াট ইজ দিস!!??

আমার বাবার ১০০০ কোটি টাকা অথচ এখানে লেখা আমি আমি পাচ্ছি মাত্র ৫০০কোটি বাকী ৫০০ কোটি কই গেল??

সৈকতের কথা শুনে রিহান তার হাতে থাকা আরেকটা উইলের কাগজ সৈকতের দিকে বাড়িয়ে দেয়।

সৈকত কিছুটা বিরক্ত আর কৌতুহল হয়ে কাগজটা রিহানের হাত থেকে নিয়ে দ্রুত কাগজে চোখ বুলায়। হঠাৎ একটা জায়গায় এসে সৈকতের চোখ আটকে যায় পড়ার সময় “স্নিগ্ধা রহমান” সৈকত নামটা পড়েই কাগজটা রফিক সাহেবের সামনে বাড়িয়ে একটু রেগে বলে ওঠে কে এই স্নিগ্ধা রহমান যার জন্য বাবা বাকী ৫০০ কোটি টাকা তার নামে উইল করে দিয়ে গেছেন।

রফিক সাহেব সৈকতের রাগের কারণ টা বুঝতে পেরেও কিছুক্ষন চুপ করে থাকেন। কারণ সৈকতকে কি তিনি কি বলবেন হঠাৎ বুঝে উঠতে পারছিলেন না।

রফিক আর রিহানের নিরবতা সৈকতের যেন ধৈর্য্যর বাধ ভেঙ্গে ফেলে। সৈকত এক প্রকার চিৎকার করে বলে ওঠে তাহলে কি বাবার অন্য কোন সন্তান ছিলো যা আমি জানতাম না!??

রফিক সাহেব বিচলিত হয়ে বলে, তুমি ভুল ভাবছো তেমন কিছু না।আসলে স্নিগ্ধা হচ্ছে তোমার আব্বুর একজন বন্ধুর মেয়ে । তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না,, তোমার বাবা অসুস্থ হওয়ার কিছুদিন আগে তাদের সাথে হঠাৎ দেখা হয়, তোমার বাবা যখন জানতে পারে যে তার বন্ধু অনেক আগে মারা গেছে এবং তার স্ত্রী এবং মেয়ে খুবই সাধারণ জীবন যাপন করছে তাই তিনি স্নিগ্ধার নামে এই উইল করে দিয়েছিলেন।

সৈকত খুব বুদ্ধিমান বিজনেস ম্যাগনেট।মাত্র ২৬ বছর বয়সেই সে বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক পুরুষ্কার ও অর্জন করে ফেলেছে বিজনেস এর সূত্র ধরে।কারণ তার শরীরে যে আরেক বিখ্যাত বিজনেস ম্যানের রক্ত।তাই রফিক সাহেব কে কিছু না বলে প্রথমে সৈকত চোখ বন্ধ করে কিছুর হিসাব মেলাতে চেষ্টা করে । তারপর আস্তে করে বলে শুধু বন্ধুত্বের দাবীতে বাবা নিশ্চয় তার এতগুলি টাকা তার বন্ধুর মেয়ের নামে ইউল করেনি।নিশ্চয় এর পেছনে কোন কারণ আছে।কারণ আরমান চৌধুরীর মতো বিজনেস এর পাকা প্লেয়ার গুলি কখনো নিজের স্বার্থ ছাড়া এক পা ও আগে দেয় না। কিন্তু আরেকটা কথা মনে আসতেই সৈকত বলে আংকেল স্নিগ্ধার পরিবারে কে কে আছে?

রফিক সাহেব বলেন, স্নিগ্ধা আর তার মা।তাদের একটা পার্লার আছে সেখানে দুজনে কাজ করে।তাতে তাদের সংসার চলে।

সৈকত তাড়াতাড়ি চেয়ার থেকে উঠে একটু গম্ভীর হয়ে টেবিল থেকে পেপার ওয়েট টা হাতে নিয়ে আবার টেবিলের উপর ঘুরিয়ে রেখে দেয়।তারপর রফিক আর রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে স্নিগ্ধার পরিবার কি বাবার এই উইলের ব্যাপারে কিছু জানে??

রিহান বলে না স্নিগ্ধারা এ-সম্পর্কে কিছুই জানেনা।তুই বললে আমি আগামীকাল তাদেরকে সব জানাতে পারি।আর যদি তুই আমার সাথে ওদের বাসায় যাস তবে আরোও ভালো হবে।

সৈকত রিহানকে বলে চিল ব্রো এতো তাড়াহুড়ার কি আছে!!?

আপাতত উইল টা আমার কাছেই থাক যখন সময় হবে আমিই না হয় তোকে বলবো।

রফিক সাহেব বলে সৈকত হাতে বেশি সময় নেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের উচিৎ এ বিষয়ে তাদের জানানো।

কথাটা শুনতেই তেতে ওঠে সৈকত হাতে বেশি সময় নেই মানে!!?

রিহান বলে দেখ উইলে লেখায় আছে যে আরমান চৌধুরীর অবর্তমানে ১মাস পরেই যার যার ভাগের অংশ সে পেয়ে যাবে। এখন তুই বল স্নিগ্ধা যদি না জানে বিষয় টা তাহলে কিভাবে প্রাপ্য অংশটুকু নিবে।

সৈকত ডান হাতের আঙুল গুলি মুষ্টিবদ্ধ করে মনে মনে বলে তার মানে যা করার আমার এই এক মাসের ভিতরেই করতে হবে।এই ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি আমি অন্য কাউকে দিতে পারিনা,এটা আমার প্রাপ্য অন্যের নই।বি রেডি স্নিগ্ধা রহমান আমি আসছি………… .

গল্পঃ #অভিমানী_ভালবাসা

লেখাঃ সাবেরা সুলতানা রশিদ

#সূচনা_পর্ব

1
$ 0.00
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments