গল্পঃ নীল ডায়েরি

0 0
Avatar for Nipa1234
3 years ago

রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ একটা কিছু পড়ে থাকতে দেখলাম।

মনে হচ্ছে একটা ডায়েরি, কাছে গিয়ে একটা নীল রং এর ডায়েরি

অন্য মানুষের ডায়েরি পড়তে আমার খুব ভালো লাগে।

যার জন্য অনেকের ডায়েরি চুরি করে পড়েছি তাই ডায়েরিটা তুলে নিয়ে ব্যাগে রেখে দিলাম বাসায় গিয়ে পড়বো বলে।

বাসায় এসে হাতমুখ ধুলাম রাতে খাবার খেয়ে উপরে গিয়ে কাজ করতে লাগলাম।

কিন্তু হঠাৎ ডায়েরিটার কথা মনে পড়াতে আর কাজে মন বসলো না।

তাই ডায়েরিটা খুলে নিয়ে বসলাম দেখি ডায়েরিটা অনেক পুরাতন।

প্রথম থেকে পড়তে শুরু করলাম,,,

আজ এই স্কুলের প্রথম দিন শহর থেকে গ্রামে এসেছি না জানি কেমন পাপ করেছিলাম যে এখানে আসতে হলো। যাইহোক কি আর করার এখন এখানেই তো আমাকে ২ বছর থাকতে হবে।

বাবার বদলি হওয়ার কারনে সব হলো।

ক্লাসে গেলাম সবার সাথে বন্ধুত্ব করলাম কিন্তু আমার চোখ গেল একটা মেয়েরউপর

কেমন যেন তার চোখ দুটোতে খুব মায়া ভরা অনেক ভালো লাগতে শুরু করলো।

যদিও আমি ক্লাস করা ওতোটা পছন্দ করতাম না কিন্তু মেয়েটার জন্য আমি প্রতিদিন ক্লাসে

যাওয়া শুরু করলাম।

মেয়েটাও নতুন ছিল সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল মেয়েটা খুব কম নকথা বলতো।

এভাবে চলতে থাকলো কখন যে ভালোলাগা থেকে ভালোবাসাতে পরিনত হলো নিজেও জানি না।

যেদিন ও আসতো না সেদিন আমার একটু ও ভালো লাগত না এভাবে চলতে থাকে।

মনে মনে আমি অনেক ভালোবেসে ফেলেছি তাই আমি ওকে প্রপোজ করতে চাই কিন্তু কোন ভাবেই বলা হয় না।

ভাবলাম চিঠি লিখে নিজের ভালোবাসার নকথা জানাবো ওই দিন অনেক রাত পর্যন্ত জেগে চিঠি লিখলাম কিন্তু আমার আর দেওয়ার সাহস হলো না।কিন্তু তারপরও ওর কথা ভাবতেই খুব ভালো লাগতো।

ধীরে ধীরে এসএসসি পরীক্ষা এগিয়ে আসতে লাগলো।

পড়াশোনায় মোটামুটি ভালোই ছিলাম কিন্তু ওর কথা ভাবতে বসলে আর পড়াশোনা হতো না।

এভাবেই চলতে লাগলো কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই আমার আম্মু আমাকে ছেড়ে পৃথিবী থেকে চলে গেলো

আমার কথা গুলো শেয়ার করার মতো আর কেউ থাকলো না আর ভালো লাগতো না।

খুব একা একা মনে হতো না তারপর কিছুদিন পর স্বাভাবিক হলাম আবার আগের মতো হয়ে গেলাম।

এস এস সি পরীক্ষার মধ্যে আমার মনের কথা বলতে চাইলাম।

প্রাকটিকাল পরীক্ষা মধ্যে ডাক দিলাম ওকে কিন্তু আমার কথা ও শুনলো না।

চলে গেল আমার সামনে দিয়ে।

কিছুদিন পর শুনি ওর নাকি বিয়ে হয়ে গেছে মখারাপ লাগতে লাগলো কিন্তু আমার কিছু করার নাই।

হাই স্কুল থেকে কলেজে উঠলাম বসে রয়েছি।

সন্ধ্যার দিকে খবর আসলো যে আমার বাবা নাকি এক্সিডেন্ট করছে।

আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল আমি হাসপাতালে গিয়ে আব্বুর কাছে গেলাম।

আমি যাওয়ার পর আমার বাবা শুধু একটা কথাই বললো তোকে দেখে রাখার মতো আর কেউ রইলো না রে এখন থেকে তোকে একাই চলতে হবে রে তারপর আব্বুর চোখ বন্ধ হয়ে গেল।

অনেক কান্না পেতে লাগলো কারন আমার জীবনে কিছুই আর থাকলো না।

আমার বটগাছ টাও আর থাকলো নাআমার কোন আত্বীয় স্বজন নেই। আর থাকলেও আমি জানতাম না কারো সাথেই আমার পরিচয় ছিলো না তাই বাবার মৃত্যতে বাবার শুধু কিছু কলিগ ই এলো।

অনেক দিন রুম থেকে বের হলাম না।

এইচএসসি তে রেজাল্ট একটু খারাপই হলো ইউনিভার্সিটি তে উঠলাম।

একাই চলাফেরা করতাম আমার কোন বন্ধু ছিল না

পড়াশোনা করতাম আর একটা পার্ট টাইম জব করতাম যদিও আব্বুর পেনশন এর টাকায় আমার চলে যেতো।

কিছুদিন পর ভার্সিটির কাছে ওখানে একটা বটগাছ ছিলো ওইখানে বসে একটু পড়তেছিলাম

তখনই একটা মেয়ে এসে বললো...

-হাই কেমন আছেন...??

আমি দেখলাম তবুও মনে হলো আমাকে ডাকছে না কারন আমার আশে পাশে আরো অনেকই ছিলো

আর আমাকে কেই বা ডাকবে।

কিন্তু মেয়েটা আমার কাছে এসে বসলো আর বলতে লাগলো...

-আচ্ছা আমি যে কথা বলতেছি আপনার কানে যায় না

-আসলে আমি এই ইউনিভার্সিটির কাউকেই চিনি না আর কারো সাথে তেমন কথাও বলি

না তাই আমাকে আবার কে ডাকবে।

-কিন্তু আজ থেকে আমি ডাকবো।

-কেনো

-কারন আজ থেকে আমি তোমার বন্ধু।

-ওহ

-হুম আচ্ছা এখন চলোক্লাসে যাব মাসে ২ দিন ক্লাস করো কিনা সন্দেহ আর তোমার নাম্বার দাও।

-নাম্বার দিয়ে কি হবে৷

-প্রয়োজন হলে কল দিবো

-কিভেবে নাম্বার টা দিয়ে দিলাম আমার মনে পড়ছে না।

এভাবেই আকাশি আর আমার ফ্রেন্ডশীপ টা অনেক গাঢ় হয় ও সবসময় আমার কেয়ার করতো।

একদিন ও আমাকে ওর ভালোবাসার কথা বলে বসলো।

আমি ওকে অনেক নিষেধ করলাম কিন্তু ও ওর জেদে অটুট থাকলো।

এভাবে আমাদের ভালোবাসা চলতে থাকলো আমার ওর সাথে থাকতে ভালোই লাগতো।

কেনই বা লাগবে না ও অনেক ভালো মেয়ে।

কিন্তু ওর বাসার লোক ওতোটা পছন্দ করতো না।

একদিন আকাশি আমাকে ফোন দিয়ে বললো

- এই বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলছে প্লিজ তুমি কিছু করো

-আমি কি করবো এখন

-তুমি আমার বাবার সাথে কথা বললো।

আমি আকাশিদের বাসায় গেলাম আকাশী তখন ছিল না আকাশীর আব্বু আমার সামনে বসলো।

আমি আংকেল কে আমাদের ভালোবাসার কথা বললাম।

তখন আংকেল আমাকে বললো আমি তোমাকে আমার মেয়ে কেন দিবো তোমার অনাথের কাছে আমার মেয়ে কেনো দিবোকথাটা আমার বুকে এসে বিধলো।

আমি আকাশীর বাসার থেকে চলে এলাম রাস্তায় এসে দাড়িয়ে আছি এমন সময় ও ফোন দিল

-কি হলো আব্বুকে বলছো আমাদের কথা

-নাহ্ বলার সুয়োগ পাই নি।

-কেনো কি হয়েছে ?

-কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি না। (বলতে খুব কষ্ট হচ্ছিল কিন্তু তবুও বলে দিলাম)

-কি বলছো তুমি এসব।

-হুম আমি ঠিকি বলছি।

-তুমি পাগল হয়ে গেছো নাকি।

-নাহ আমি পাগল হয় নি।

ও কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু আমি ফোন কেটে দিলাম তারপর সিমটা ভেঙে ফেললাম।

কিছুদিন পর ওর বিয়ে হয়ে গেলো আমি ও সময়ের সাথে নিজের গা টা ভাসিয়ে দিলাম।

দেখতে দেখতে কয়েক বছর চলে গেল এখন একটা কোম্পানিতে চাকরি করি।

একদিন আমার কলিগ বললো কি ব্যাপার বয়স তো হলো বিয়ে করবেন না

-হুম করবো কিন্তু আমাকে মেয়ে দিবে কে

-আমি দেখে দিবো।

-হুম দিলে মন্দ হবে না।

তারপর ওই ভাই একটা মেয়ে ঠিক করলো শুনেছি মেয়েটারো কেউ নেই তাই কোর্ট ম্যারেজ করে নিলাম।

মেয়েটার নাম তিথি বাসায় ই বিয়ে উপলক্ষে কলিগদের পার্টি দিলাম।

বাসর ঘরে ঢোকার সাথে ও আমাকে সালাম করলো।

আমি ওকে খাটের উপর বসালাম ঘোমটা তুললাম অনেক মায়াবী চেহারা যে কেউ তাকিয়ে থাকতে চাইবে।

আমি তারপর ওর পাশে গিয়ে বললাম....

-আমার কাছে কি তোমার কোন চাওয়া আছে ?

-হুম আছে।

-কি চাও বলো।

-সারাটি জীবন আমাকে ভালোবাসবেন।

-শুধু এতোটুকুই।

-হুম এতোটুকুই এবার চলেন নফল নামাজ পড়ে নি।

-হুম চলো

তারপর থেকে ও আমার পৃথিবী আর আমি ওর পৃথিবী। কখনো কোন অভিমান হতো না।

প্রতি সপ্তাহে আমরা বেড়াতে যেতাম এভাবেই চলতে লাগলাম আমরা দুজন দুজনা।

একদিন বাসায় আসার পর ও খুব লজ্জা পাচ্ছিলো তারপর আমাকে জানালো যে

আমি বাবা হতে চলেছি।

ভাষায় বোঝাতে পারবো না যে আমি কতোটা খুশি।

আমি ওর প্রচুর খেয়াল করতাম তারপর একদিন ডেলিভারির সময় হলো

কিন্তু ওটিতে যাওয়ার আগে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছিল ওকে।

আমি ওকে অভয় দিলাম

-কিচ্ছু হবে না দেখো তোমার।

ও আমাকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছিল না তবুও যেতে তো হবে।

তিন ঘন্টা পর ডাক্তার বের হয়ে এলো আর আমি ডাক্তারের কাছে গেলাম ।

-আপনার একটা কন্যা হয়েছে কিন্তু আমি দুঃখিত আমরা আপনার স্ত্রী কে বাচাতে পারি নি।

কথায় আছে অতি সুখ কখনো কপালে সয় না

আমি বসে পড়লাম কথাটা শুনে আবার একা হয়ে পড়লাম।

কিন্তু আমার মেয়েটার জন্য আমাকে শক্ত হতে হবে আমি ওকে মানুষ করতে লাগলাম

তারপর আর কিছু লেখা দেখলাম না।

(বর্তমান)

তিনবছর পর আমি বাসে করে আমার এক আত্বীয় বাড়িতে যাচ্ছি সাথে ডায়েরিটা আছে.।

হঠাৎ বাসে একটা মধ্যে বয়স্ক লোক উঠলো এবং আমার কাছে বসলো।

আমি ডায়েরিটা বের করলাম পড়ার জন্য।

লোকটা হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞেস করলো....

-এই ডাইরি তুমি কোথায় পেলে

-ওহ এটা আমি তিন বছর আগে রাস্তায় পেয়েছিলাম কিন্তু আপনি কি চিনেন এই ডায়রিটা।

-আসলে এটা আমার ডায়েরি।

-আচ্ছা এসব কি সত্যি।

-হুম

-আচ্ছা আপনার মেয়ে কোথায়

কথাটা বলতেই লোকটার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো তারপর বলতে শুরু করলো

-আসলে আমার বোধহয় কপালে সুখ ছিল না।আরিয়া নাম রেখিছিলাম মেয়েটার।

যখন আমার মেয়ের বয়স দশ আমার মেয়ের ব্রেন টিউমার ধরা পড়লো।

ডাক্তার বললো আর ৬ মাস আছে ওর বেঁচে থাকর।

আমি ওকে কিছু বললাম না কিন্তু মেয়েটা বার বার আমাকে বলতো বাপি আমার না মাথা ব্যাথা করে।

আমি কাদতে চেয়েও কাদতে পারতাম না শুধু ওকে বুকে জরিয়ে ধরে রাখতাম।

তারপর এক বৃষ্টির রাতে ও আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেল।

তারপর আমার হাত থেকে ডায়েরিটা নিলো আর যশোরে নেমে পড়লো।

আমার চোখ যতদুর পর্যন্ত যায় আমি লোকটাকে দেখতে লাগলাম

তারপর উনি ভীরের মধ্যে মিলিয়ে গেলেন আজানায়।

কিছু কিছু গল্পের সমাপ্তি হয় না তবুও সেখানেই ইতি টেনে সমাপ্ত করে দিতে হয়।

…………………সমাপ্ত…………………

গল্পঃ নীল ডায়েরি

1
$ 0.00
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments