গল্পঃ_চোখের_আলো (২য় ও শেষ পর্ব)

0 14
Avatar for Nipa1234
3 years ago

#গল্পঃ_চোখের_আলো (২য় ও শেষ পর্ব)

আমি বাসায় চলে আসি। আমি সারারাত আর ঘুমাতে পারলাম না।

আমার বিবেক আমার অপরাধের জন্য আমাকে একমুহুর্তের জন্য স্বস্তিতে থাকতে দিলোনা। এভাবে কয়েকটা দিন কেটে যায়। অবশেষে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আমার ভুলের জন্য তৌফিক সাহেবের কাছে ক্ষমা চাইবো। আমি বলব যে, "যেই মেয়েটির সাথে আপনার ধাক্কা লেগেছিল সেই মেয়েটি আমি ছিলাম। আপনি আমাকে যা শাস্তি দিবেন আমি মাথা পেতে নেব।"

আজকে সাতদিন পর আমি তৌফিক সাহেবের বাসায় যাচ্ছি কি কি বলবো সবকিছু আগেই ভেবে ঠিক করে রেখেছি। কলিং বেল চাপ দিতেই তৌফিক সাহেব দরজা খুলে দিলেন।

-- কেমন আছেন তৌফিক সাহেব?

-- ও মিলি এসেছেন? কেমন আছেন আপনি?

-- জ্বী আমি ভালো আছি। আপনারা কেমন আছেন?

-- আমি ভালো আছি। আম্মু একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

-- কি হয়েছে আন্টির?

-- রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে পা ভেঙ্গে গেছে।

-- কি বলছেন! কোথায় আন্টি? আপনি চলুন তো।

আমি আন্টির রুমে যাই।

-- আন্টি কিভাবে হলো,কবে ঘটলো এই ঘটনা?

-- গতকালকে অফিস থেকে ফেরার পথে হঠাৎ মাথা ঘুরে রিকশা থেকে পড়ে যাই।

-- কিছু খেয়েছেন? রান্না তো নিশ্চয়ই করতে পারছেন না।

-- হোটেল থেকে আনিয়ে খাচ্ছি মা।

-- আজকে থেকে আর হোটেল থেকে আনতে হবে না। যতদিন আপনি সুস্থ না হোন ততদিন আমি এসে রান্না করে দিয়ে যাবো।

-- না মা তুমি কেন শুধু শুধু কষ্ট করতে যাবে?

-- আন্টি আমাকে নিষেধ করবেন না। এতে যদি আমার পাপের বোঝা একটু কমে।

-- কিসের পাপের বোঝা মা?

-- না আন্টা ও কিছু না। আমার মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই তো, তাই আপনার সেবা করতে পারলে আমার ভালো লাগবে। আপনি আমাকে আর নিষেধ করবেন না মা। আপনি শুধু আমাকে বলে দিন কোথায় কি কি আছে। ও দুঃখিত আমি আপনাকে মা বলে ফেললাম।

-- ঠিক আছে এখন থেকে তুমি আমাকে মা বলেই ডেকো কেমন।

-- ঠিক আছে মা। এবার আপনারা বসুন আমি ঝটপট রান্না করে নিয়ে আসছি।

তারপর আমি রাতের খাবার রান্না করে টেবিলে পরিবেশন করলাম। মা আর তৌফিক সাহেবের অনুরোধে আমাকেও উনাদের সাথে ডিনার করতে হলো। তারপর আমি আমার মোবাইল নাম্বার দিয়ে বাসায় ফিরে আসি। আমি আজকে আমার অপরাধের কথা আর তৌফিক সাহেবকে বলতে পারলাম না। যদি আজকে বলে দিতাম তখন তারা হয়তো পুলিশ ডেকে আমাকে থানায় দিয়ে দিতো তাহলে উনাদের খাওয়া দাওয়ার খুব বেশি কষ্ট হয়ে যেতো। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম মা যতদিন সুস্থ না হবে ততদিন পর্যন্ত আমি উনাদের কিছু বলবো না।

এরপর থেকে সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে আর স্কুল থেকে ফেরার সময় আমি উনাদের বাসায় গিয়ে রান্না করে দিয়ে আসি। এভাবে কয়েকদিন পার হয়ে যায়। আজকে মা আমাকে বললেন,

-- মা তৌফিকের কিছু শপিং করা দরকার আমি তো যেতে পারছিনা, তুমি কি ওকে নিয়ে কাল পড়শু একটু বসুন্ধরায় যেতে পারবে?

-- জ্বী মা অবশ্যই। আমি আগামী শুক্রবার যাবো।

আজকে শুক্রবার আমার সাপ্তাহিক ছুটির দিন তাই আমি তৌফিক সাহেবকে নিয়ে বসুন্ধরায় আসি এবং আমি নিজে পছন্দ করে উনার এবং মায়ের জন্য কেনাকাটা করি। শপিং শেষে আমরা ফাস্টফুড কর্নারে দু'জনে বসে হালকা খেতে খেতে অনেক গল্প করি।

এভাবে আরো কয়েকটা দিন কেটে গেল।

আজকে আমি বাসায় থেকে বের হবো এমন সময় মা আমাকে কল দিলো। মা আমাকে এমন একটা কথা বললো যা শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। মা আমাকে বললো,

-- মা মিলি তুমি আর আমাদের বাসায় এসো না! কেন আসতে নিষেধ করছি সেটা জানতে চেয়োনা। তুমি যদি না আসো তবে তা তোমার এবং আমাদের সবার জন্য ভালো হবে।

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মা কলটা কেটে দিলো। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। তবে কি মা কোনোভাবে জেনে গেছে উনার ছেলের চোখের আলো নিভে যাওয়ার পিছনে আমি দায়ী? কিন্তু তা কি করে সম্ভব। না এটা কারো পক্ষে জানা অসম্ভব। তাহলে আর কি কারণ থাকতে পারে?

মা যতোই নিষেধ করুক আমি বিকেলে শেষবারের মতো একটিবার যাবো‌। আমার অপরাধের জন্য আমি ক্ষমা চাইবো। এরপর উনি যা শাস্তি দিবেন মাথা পেতে নিবো।

বিকেলে আমি অফিস শেষে তৌফিক সাহেবের বাসায় ঢুকতে যাবো এমন সময় দাঁড়োয়ান আমাকে গেটে জিজ্ঞাসা করল,

-- ভাবী সাহেবা তৌফিক ভাই কেমন আছেন?

-- আপনাকে কে বলল আমি আপনার ভাবী হই? এসব ফালতু কথা বলেন কেন?

-- আপনি আমার উপর শুধু শুধু রেগে যাচ্ছেন, এই বিল্ডিং এর সবাই তো এই কথাই বলছে। গতকাল মিটিং এ এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

আমি আর একমুহুর্ত দাঁড়ালাম না তাড়াতাড়ি ভিতরের দিকে পা বাড়ালাম। ওহ এই ঘটনার জন্য তাহলে মা আমাকে আসতে নিষেধ করেছেন। আর আমি ভেবেছিলাম তারা হয়তো সেই ঘটনা জেনে গেছে। আমি বাসায় গিয়ে কলিং বেল চাপ দিলাম। আজকে মা দরজা খুলে দিয়েই বললেন,

-- কেন এসেছ‌ মা? তোমাকে তো আসতে নিষেধ করেছিলাম।

-- মা আপনাদের অনেক বেশি আপন ভেবে ফেলেছি অনেক ভালবেসে ফেলেছি তাই আপনাদের না দেখে থাকতে পারছিলাম না।

আমার আসার কারণ আমার অপরাধের জন্য ক্ষমা চাওয়া সেই কথা আমি আজকেও আর মাকে বলতে পারলাম না কারণ এই কথা বললে তারা আমাকে আর কোনোদিনই আসতে দিবে না।

-- দেখো মা মিলি তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে আমরাও তোমাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি, আপন করে ফেলেছি কিন্তু আশেপাশের লোকজন তোমার এখানে আসাটা ভালোভাবে নিচ্ছে না। ওরা নানা ধরনের আজেবাজে কথা বলছে। যেটা তোমার জন্য কোনোভাবেই ভালো হবে না তুমি এখনো অবিবাহিতা মেয়ে, তোমার তো একটা ভবিষ্যৎ আছে।

-- মা আপনি এই বিষয় নিয়ে ভয় পাচ্ছেন আমার সামনে এসে বলতে দেন। আর যদি আপনি লোকজনের কথায় এতই ভয় পান তাহলে আপনি যদি চান আর তৌফিকক সাহেব যদি রাজি থাকে আমি আপনাদের বাড়ির বউ হয়ে আসতে চাই।

-- এ তুমি কি বলছো মা! এটা কখনো সম্ভব না।

-- মা কেন সম্ভব না?

-- তুমি বুঝতে পারছ না মা তৌফিক একটা অন্ধ ছেলে ওকে কোনো মেয়ে বিয়ে করতে রাজি হবে না।

-- দেখুন মা আমি এই কয়েকদিনে যা বুঝেছি তৌফিক সাহেবের মতো ভালো মানুষ আর একটাও হয়না। উনার চোখের আলো নেই এটা কোনো সমস্যাই না। সত্যি কথা হলো আমার এই শহরে আপন বলতে কেউ নেই আমি আপনাদেরকে হারাতে চাইনা।

এতক্ষণ তৌফিক সাহেব আড়ালে দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের সব কথা শুনছিলেন এবার আড়াল থেকে বের হয়ে আসলেন।

-- দেখুন মিস মিলি আমরা আপনাকে সম্মান করেছি, ভালোবেসেছি। তার মানে এই নয় যে আপনি আমাদের করুণা করবেন। আমি একজন অন্ধ মানুষ বলে আপনি আমাকে আজকে করুণা করে বিয়ে করতে চাচ্ছেন।

-- না! আপনি যা ভাবছেন তা ঠিক নয়, আমি আপনাদেরকে ভালোবাসি, তাছাড়া আমি সত্যিই আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।

-- দেখুন এসব আপনার আবেগের কথা। আপনি আপনার বাসায় চলে যান। আপনি আর কখনো আমাদের এখানে আসবেন না।

-- ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি আমি আর কখনো আসবো না। তবে হ্যাঁ আমি সত্যিই আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি আপনার কলের অপেক্ষায় থাকবো।

আমি উনাদের বাসা থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে চলে আসলাম। আমি আর তৌফিক সাহেবের বাসায় যাইনি এভাবে প্রায় ১০-১৫ দিন কেটে যায়। আজকে আমি অফিসে বসে কাজ করছিলাম এমন সময় তৌফিক সাহেবের কল আসে।

-- কেমন আছেন আপনি?

-- আমি ভালো আছি। আপনারা ভালো আছেন?

-- আমরা আছি মোটামুটি। মা আপনাকে খুব মিস করছিলো তাই মা বলল আপনার সাথে একটু কথা বলতে।

-- শুধু কি মা মিস করছেন, আপনি মিস করছেন না আমাকে?

তৌফিক সাহেব কোনো কিছু না বলে চুপ করে রইলো।

-- আপনার এই নীরবতাই বলছে আপনি আমাকে মিস করছেন তারমানে আপনিও আমাকে ভালোবাসেন।

তৌফিক সাহেব আমি আপনাকে ভালোবাসি, আপনি আমাকে ভালোবাসেন এখানে আপনার চোখের আলোকে আমাদের মাঝখানে দেয়াল করে রাখবেন না।

-- আপনি কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসেন?

-- একজন মেয়ে মানুষ হয়ে আমি আপনাকে বারবার বলছি যে আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই। কারণ এই কথাগুলো বলার জন্য আমার আর কেউ।

আর হ্যা যদি আপনি আমাকে নাও ভালোবাসেন, বিয়ে না করেন তাহলে আমি আমার বাকি জীবন একাই পার করে দিবো।

-- এ আপনি কি বলছেন?

-- হ্যা আমি সত্যি কথাই বলছি। সিরিয়াসলি বলছি।

-- মিলি আপনি আমাকে এতটাই ভালোবাসেন! আমি আপনার ভালোবাসার জন্য আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছি। আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি আছি।

-- আপনি সত্যি বলছেন তৌফিক সাহেব?

-- হ্যাঁ সত্যি বলছি। তবে...

-- তবে কি?

-- যদি আপনি রাজি থাকেন।

হা হা হা হা...

ঠিক আছে আমি কালকেই আমার খালা-খালুকে নিয়ে আপনাদের বাসায় আসব। বিয়ে নিয়ে যা কথা বলা দরকার মুরুব্বিরা বলে নেবেন।

আজকে আমার অনেক আনন্দ লাগছে। আমার অনেক ভালো লাগছে এবার আমার উদ্দেশ্য সফল হবে। এবার আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করা হবে।

দুপুর ১২ টা।

আমি খালা খালু কে নিয়ে তৌফিক সাহেবের বাসায় আসি। মা আমাদের জন্য আজকে অনেক কিছু রান্না করেছেন। দুই পরিবার কথাবার্তা বলে সিদ্ধান্ত নিল যেহেতু ছেলে মেয়ে দুজনেই আছে এবং জানাশোনা আছে সেহেতু বিয়ের জন্য আর দেরি করা ঠিক হবে না। ঘরোয়া পরিবেশে আমাদের বিয়ে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন তারা। সন্ধ্যার দিকে কাজী আসলেন তারপর আমাদের বিয়ে পড়ানো হয়।

রাতে আমি মায়ের দেওয়া মায়ের বিয়ের শাড়িটা পড়লাম আর তৌফিক সাহেব পড়েছে উনার বাবার বিয়ের পাঞ্জাবী। বাসর ঘরে আমি খাটে বসে আছি কিছুক্ষণ তৌফিক সাহেব রুমে ঢুকলেন, আমি ওনার হাত ধরে এনে খাটে বসালাম।

-- কি থেকে কি হয়ে গেল! মিলি কখনো ভাবি নি আপনি আমার স্ত্রী হবেন। অথচ আমার দুর্ভাগ্য আমি আপনাকে দেখতে পাচ্ছি না। আম্মু বলেছেন আপনি নাকি অনেক সুন্দর।

-- তৌফিক সাহেব আপনি কিন্তু অনেক হ্যান্ডসাম। বড় কথা হলো আপনি অনেক ভালো মনের মানুষ। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনি একদিন আমাকে দেখতে পাবেন।

-- এ আর সম্ভব না। আমি আর কখনো দেখতে পাবো না।

-- আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি তো আপনি আমাকে দেখতে পাবেন। আচ্ছা আপনি কি আমাকে আপনি করেই বলবেন?

-- আপনিও তো আমাকে আপনি করে বলছেন।

-- ঠিক আছে আপনি এখন থেকে তুমি বলে ডাকবেন আর আমিও।

-- ওকে ঠিক আছে।

এরপর তৌফিক আমাকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে নিল। আমার কপালে তার উষ্ণ ছোঁয়া আমাকে সুখের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আমরা দুজন-দুজনার ভালোবাসায় পুরোপুরি ডুবে গেলাম।

এভাবে আমাদের দুজনের সংসার ভালই কাটছিল। আজ আমি স্কুল থেকে তৌফিককে ফোন দিলাম,

-- তুমি তৈরি হয়ে থাকবে আমি স্কুল থেকে ফিরে তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।

-- আমিতো অসুস্থ না তাহলে কেন আমাকে শুধু শুধু ডাক্তার কাছে নিয়ে যাবে?

-- আমি তোমাকে বাংলাদেশের একজন সেরা চোখের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।

-- দেখো ডাক্তারের কাছে গিয়ে আর কোনো লাভ হবে না।

-- তুমি এত কথা বলো না। লাভ হবে কি, হবে না সেটা সময় বলে দিবে।

-- আচ্ছা ঠিক আছে আমি তৈরি হয়ে থাকবো।

সন্ধ্যায় আমি তৌফিককে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে আসি। ডাক্তার সব কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানালেন যে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চোখ প্রতিস্থাপন করতে হবে আর নয়তো তৌফিক কোনোদিন চোখে দেখতে পারবে না। আমরা তারপরে বাসায় চলে আসি।

দুদিন পর ডাক্তার তৌফিকের নাম্বারে কল দেন। কল দিয়ে বললেন যে একটা চোখ পাওয়া গেছে একজন স্বইচ্ছায় আপনাকে তার একটি চোখ দান করতে রাজি হয়েছেন সুতরাং আপনি চাইলেই আগামী পরশুদিন আপনার চোখ অপারেশন করা যাবে।

আমরা সবাই তখন অনেক খুশি হই। তৌফিক তো আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে বলল,

-- মিলি আমি আবার চোখে দেখতে পারব, আমি আবার কবিতা লিখতে পারব, আমি কবিতা আবৃতি করতে পারব। আমি আবার মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারব। সবচেয়ে আনন্দের কথা আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে দেখতে পারবো। আমি প্রথম তোমাকে দেখতে চাই তুমি আমাকে কথা দাও যেন আমি চোখ খুলে প্রথমে তোমাকে দেখতে পারি।

-- না!

-- কেন?

--তুমি প্রথমে মাকে দেখবে তারপর আমাকে দেখবে।

-- ঠিক আছে আমি প্রথমে মাকে দেখব তারপর তোমাকে দেখব।

দুইদিন পর।

সবকিছু তৈরি হয়ে গেল আজকে তৌফিকের চোখের অপারেশন। তৌফিককে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে মা অপারেশন থিয়েটারের সামনে অপেক্ষা করতে লাগলো। আমি মাকে বললাম মা আমার একটা জরুরী ট্রেনিং আছে আমাকে কক্সবাজার যেতে হবে।

তৌফিকের অপারেশন আর তুমি এখন কক্সবাজারে যাবে!

মা যেতেই হবে নয়তো চাকরিটা চলে যাবে। মা অপারেশনের জন্য তো অনেকগুলো টাকা লেগেছে, সবতো ধারদেনা করে দিয়েছি এগুলো তো পরিশোধ করতে হবে। তবে মা আমি কথা দিচ্ছি যেদিন তৌফিকের চোখের ব্যান্ডেজ খোলা হবে সেদিন আমি চলে আসব। মা আমাকে আর মানা করলেন না যেহেতু চাকরির বিষয়।

তৌফিকের অপারেশন সাকসেসফুল হওয়ার কয়েকদিন পর।

আজকে তৌফিকের চোখের ব্যান্ডেজ খোলা হবে।

আমি ও মা তৌফিকের সামনে দাঁড়িয়ে আছি ডাক্তার রফিকুল ইসলাম তোফিকের চোখের ব্যান্ডেজ খুলে দিলেন। তৌফিক মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। তারপর আমাকে খুঁজতে লাগলো তৌফিক আমাকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,

-- অপারেশন হয়েছে আমার, কিন্তু তোমার চোখে কিসের ব্যান্ডেজ?

আম্মু মিলির চোখে ব্যান্ডেজ কেন? বলো মিলির কি হয়েছে?

-- বাবা বিশ্বাস কর আমি কিছুই জানতাম না মিলি তোকে ওর একটি চোখ দিয়েছে। আর এইজন্য তুই চোখের আলো ফিরে পেয়েছিস।

-- এ কী বলছ আম্মু তুমি?

-- হ্যা বাবা, মিলি আমাকে আগে কিছু বলেনি যদি আমি ওকে বাঁধা দেই এইজন্য।

-- মিলি তুমি এটা কেন করলে?

-- তৌফিক সাহেব আপনি খুবই ভাগ্যবান আপনার স্ত্রী আপনাকে খুব ভালোবাসে উনিতো আপনাকে দুটি চোখ দান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা একটা সুস্থ মানুষের কাছ থেকে দুটি চোখ নিয়ে তার চোখের আলো নিভিয়ে দেওয়ার পক্ষে নই। তাই আমরা উনার একটা চোখ নিয়েছি।

-- মিলি তুমি এটা কেন করতে গেলে?

-- তৌফিক আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম তুমি আবার সবকিছু দেখতে পারবে। তুমি আমাকে দেখতে পারবে। তুমি আবার শিক্ষকতা করতে পারবে।

-- তুমি আমাকে এত ভালোবাসো! আমি তোমার এই ঋণ কোনোদিন শোধ করতে পারব না।

-- এ কি বলছ তুমি? তুমি আমার স্বামী তোমার চোখেই তো আমার পৃথিবী।

-- আর আমার চোখে তোমার পৃথিবী।

এরপর আমরা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেই। আমার মনে হচ্ছিল যেন চোখের জলের সাথে আমার মন থেকে সকল অপরাধবোধ দূর হয়ে গেল। আর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম কোনোদিনও তৌফিককে বলব না যে ওর চোখের আলো চলে যাওয়ার পেছনে আমিই দায়ী ছিলাম। যদি এই কথা তৌফিক জানে তাহলে তৌফিক ভাবতে পারে আমি ওকে ভালোবেসে নয় বরং করুণা করে আমার চোখ দিয়েছি। তৌফিক ভাববে আমি হয়তো আমার অপরাধের পায়শ্চিত্র করতে ওকে ভালোবেসেছি। তখন আমাদের মাঝে হয়তোবা দূরত্ব তৈরি হয়ে যাবে। আমি এটা কখনো সহ্য করতে পারব না। আমি যে তৌফিককে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।

সবাই শুভকামনা করবেন আমাদের ভালোবাসা যেন অমর হয়।

সমাপ্ত।

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পের ভালোলাগা ও মন্দ লাগা অবশ্যই জানাবেন। সবসময়ই আপনাদের পাশে চাই।)

লেখক: সাইফুল ইসলাম

https://m.facebook.com/groups/526513374820830?view=permalink&id=861089664696531

1
$ 0.07
$ 0.07 from @TheRandomRewarder
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments