ঘাসফুল

0 0
Avatar for Nipa1234
3 years ago

পর্বঃ ৯

দুইদিন মুখ গোমড়া করে থাকার পর আকাশের আজ মন ভালো। মিষ্টির মতো। পূর্বের ঘরটা মিষ্টির, নতুন ভোরের প্রথম ঝকঝকে রোদটা তাই সবার আগে এসে ওকেই একঝলক দেখা দিয়ে তারপর অন্য কাজে যায়। শুক্রবার সকালে মিষ্টির কোচিং থাকতো। ফজরের নামাজের পড়ার জন্য ঘুম ভাঙলেও আজকের মতো এই ঝকঝকে রোদ টা সময় নিয়ে উপভোগ করা হয়নি।

শুক্রবার সকালের নাস্তাটা এ বাড়িতে দুপুরের আগ পর্যন্ত চলে। রান্নাবান্না কিচেনে চলতে থাকে, এদিকে ডাইনিং টেবিলে গল্পগুজবও চলতে থাকে। জুম্মার নামাজের পর খাওয়া দাওয়া শেষ হতে হতে দুপুর তিনটে পেরিয়ে যায়। খাওয়া দাওয়া শেষ করেই তাওহীদ ভাইয়া তাগাদা দিলো মিষ্টিকে রেডি হয়ে নিতে।

কিন্তু রুমে শান্তি মতো তৈরি হওয়া এক প্রকার দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

‘যাস না মিষ্টি যাস না। একটাবার আমার কথা শোন। রাজশাহীতে আমি ভালো ভালো ছেলে দেখে এসেছি, একবার আমাকে নিউমার্কেট নিয়ে চল শুধু!’ তখন থেকে চেচিয়ে যাচ্ছে মিষ্টি আলু।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হিজাব পিন লাগাতে লাগাতে মিষ্টি আলুর প্রতিবিম্বের দিকে মুখ বাকালো মিষ্টি।

‘তোমার কথা তো শুনছিই।’ শ্রাগ করে বললো।

‘ও ছেলে তোকে কাঁদিয়ে ছাড়বে বলছি তো। ওকে মনে জায়গা দিস না, তোর মনটাই পুড়িয়ে দেবে। যাস না।’ বললো মিষ্টি আলু।

একথা শুনে হা হয়ে গেল মিষ্টি।

‘আমার খেয়ে, আমার পড়ে আমাকেই এতবড় অভিশাপ! দুধকলা দিয়ে এতোদিন ধরে সাপ পুষেছি আমি।’ কপাল ঠুকতে ঠুকতে বললো মিষ্টি।

‘তুমি আমাকে কি খেতে দাও আর কি পড়াও গো শুনি? আমি তোমার কিছুই নেইনা। ভালোয় ভালোয় দুটো কথা বললাম তাতে আমাকে সাপ বলে দিতে বাধলো না তোমার?’ আহত স্বরে বললো মিষ্টি আলু।

এবার মিষ্টি একটু শান্ত হলো। মিষ্টি আলুর পাতাগুলোয় হাত বুলালো।

‘তুমি যে আমার..কাজিনের নামে কূটনামি করলে এতক্ষণ সেটার বিচার কে করবে?’ প্রশ্ন করলো মিষ্টি। মিষ্টি আলু মিষ্টির সামনে আর তেমন কিছু বললো না। মিষ্টি বেরিয়ে যেতে কাঁদোকাঁদো গলা করে বললো,

‘কাজিন না আমার নকল মাটি!’

বিকেলের দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সি নিলো তাওহীদ। প্রথমে সদরঘাট পর্যন্ত গেলো ওরা, সেখান থেকে ঘন্টায় দু’শ টাকা ভাড়ায় কাঠের নৌকা ঠিক করলো। মিষ্টি নৌকায় উঠতে অভ্যস্ত। ওকে উঠতে সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আগেই তাওহীদ অবাক হয়ে দেখলো মিষ্টি নৌকায় উঠে পড়েছে।

‌“তুমি তো দেখছি নৌকায় উঠতে অভ্যস্ত।”

মিষ্টি ‌নৌকার শেষ মাথায় পাটাতন এর উপর বসলো।

“রাজশাহীতে থাকতে শীতকাল ছাড়া পদ্মার পারে যতবার গেছি ততবারই নৌকায় চড়ে ওপারে চর থেকে ঘুরে এসেছি। নদী আমার খুব পছন্দ।” হেসে সাড়ম্বরে বললো মিষ্টি।

সাদা একটা আনারকলি পড়ে এসেছে সে, সাথে সাদা চুড়িদার, ওড়না। মাথায় ধূসর রঙের একটা হিজাব খুব সুন্দর করে বাধা। হাতে একগাছি রং-বেরঙের চুড়িও পড়েছে। ওর মুখোমুখি বসলো তাওহীদ। এসব নৌকায় ছাউনি থাকেনা, পুরোটা খোলা পাটাতন। মাথায় পড়ন্ত সূর্যটাকে নিয়ে শান্ত ধীরস্থির কালচে পানিতে নৌকা চলা শুরু করলো। জায়গাটা চিরায়ত ঢাকার কোলাহল, হই-হট্টগোল থেকে অনেক দূরে।

এখানকার স্থানীয়রা কাঠের নৌকায় যাতায়াত করছে, তবে তারাও যেন নদীর নীরবতাটা নিজেদের মধ্যে গেথে নিয়েছে। এখানকার মানুষগুলোর জীবনযাত্রা অন্যরকম। নদীই এদের জীবন। তাওহীদ আঙুল তাক করে দেখালো দূরে আহসান মঞ্জিল দেখা যাচ্ছে, একসময়ের ঢাকার নবাবেরা যেখানে থাকতো।

‌“জানেন, ছোটো থাকতে প্রতি শুক্রবার বিকালে বাবা পদ্মা গার্ডেনে নিয়ে যেত । একটু বড় হওয়ার পর ভাইয়া সাথে নিয়ে যেতো। তারপর কলেজে ওঠার পর বাজার এলাকাতেই সবকয়টা প্রাইভেট শুরু করলাম। তাই প্রায়ই প্রাইভেট শেষে বিকালে নদীর পাড়ে হাঁটতে যেতাম। পদ্মা নিশ্চয়ই আমাকে খুব মিস করে এখন।” নদীর শীতল জলধারায় আঙুল ডুবিয়ে দিয়ে বললো মিষ্টি। পানিটা ভীষণ ঠান্ডা, হাতটা শিউরে উঠলো ওর।

হাসলো তাওহীদ। “নিশ্চয়ই করে।”

“হাসলেন কেন? কোনো সন্দেহ আছে? আমি চলে গেলে আপনি আমাকে মিস করবেন না?” পানি নিয়ে খেলতে খেলতে জিজ্ঞেস করলো মিষ্টি।

“তুমি কোথায় যাবে?এখন তো তুমিও আমাদের জাহাঙ্গীরনগরেরই একজন ।”

মিষ্টি খেয়াল করলো তাওহীদ সরাসরি ওর কথার উত্তর দিলো না।

“বারে! আমার বাসায় যেতে হবেনা! আমিতো শুধু তিনমাসের প্রিপারেশন নিয়ে এসেছিলাম। অ্যাডমিশনের জন্য ডকুমেন্টস গুলোও আনতে হবে।”

“ঠিক আছে।” বললো তাওহীদ। নৌকা ততক্ষণে মাঝ নদীতে চলে এসেছে। মাঝে মাঝেই দুলে উঠছে। নদীর একূল ওকূল সমান দেখা যাচ্ছে। খোলা বাতাস ফুসফুস ভেদ করে ভেতরে গিয়ে হৃদযন্ত্রটাকে শীতল করে দিচ্ছে। মাঝি আপনমনে উদাস ভঙ্গিতে দাঁড় বেয়ে যাচ্ছে।

“এবার বলো পদ্মা বেশি সুন্দর না বুড়িগঙ্গা?” খানিকক্ষণ পর জিজ্ঞেস করলো তাওহীদ।

যেন এতে কোনো সন্দেহই নেই এমন একটা ভাব করে মিষ্টি বললো,

“অবশ্যই পদ্মা।”

তাওহীদ ভাইয়া আহত ভাবে তাকাতে তারপর বর্ণনার সুরে বললো, “সৌন্দর্যের দিক দিয়ে পদ্মা বেশি সুন্দর। তবে এই নদীটার আলাদা একটা জীবন আছে, নদীটাকে ঘিরে ব্যস্ত একটা জীবনযাত্রা আছে। একঘণ্টা এখানে থাকলে মনে হবে অন্য একটা দুনিয়ায় এসে পড়েছি। এই নদীটাও আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। এখানে যদি রোজ আসা যেত।” শেষের কথাটা মন খারাপ করে বললো মিষ্টি।

“রোজ মিস রাজশাহী?” একটা ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো তাওহীদ।

ওর মুখে মিস রাজশাহী কথাটা দারুণ লাগলো মিষ্টির। তারপর দিগন্তের পানে চেয়ে বললো,

“রোজ না হোক, বছরে হয়তো একদিন।”

“তোমার যখন আসতে ইচ্ছে হবে আমাকে বলবে। আমি নিয়ে আসবো।” বললো তাওহীদ।

“ইশ! আপনি কত ব্যস্ত! আমি বললেই নিয়ে আসবেন কেন!” হেসে উঠলো মিষ্টি।

“দুটো কারণ আছে।” চিবুকে হাত রেখে চিন্তা করে বললো তাওহীদ। “প্রথমত, তোমার জন্য আমি ফ্রি।” দৃঢ়ভাবে বললো তাওহীদ।

মিষ্টি কয়েক পলক তাকিয়ে থাকলো।

তাওহীদ ভাইয়াকে আজকাল ঠিক চোরাবালির মতো লাগে ওর। বালির ভাজে ভাজে সম্পৃক্ত হয়ে থাকা পানি, যা একবার টেনে নিলে বেরিয়ে আসার আর কোনো উপায় থাকে না। অন্তত মুভি গুলোতে তো তাই দেখায়। চোরাবালি কোথাও আছে জানলে কাছে না যাওয়াই নিরাপদ। যদিও বিজ্ঞান বলে চোরাবালি মোটেও অতটা ভয়ংকর না যতটা টিভি-সিনেমায় দেখানো হয়। চোরাবালির ঘনত্ব মানুষের শরীরের থেকে বেশি, কাজেই সেখানে ডুবে মরা সম্ভব না। আর অদ্ভুতভাবে মিষ্টির মনটা ফিকশন থেকে ফ্যাক্টেই বেশি বিশ্বাসী এক্ষেত্রে, তাই সেও দূরে সরে থাকতে চায়না।

কিন্তু মাথাটা বলে দূরে থাকতে। যতটা দূরে গেলে চোরাবালি একদম টানতে পারবে না ততটা দূরে। ডুববে কি ডুববে না সেতো আপেক্ষিক ব্যাপার। ভয়ের কথা হলো ডুববে জেনেও মিষ্টির অবচেতন মন সেই টানের দিকে পা বাড়াতে থাকে। বাড়াতেই থাকে। একসময় যখন সচেতন মনটা জেগে ওঠে ততক্ষণে মিষ্টি কোমর অবধি চোরাবালিতে ডুবে গেছে। সেখান থেকে টেনে তোলার জন্য তাওহীদ ভাইয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। মিষ্টি ভালোবাসা হয়তো বোঝে না, কিন্তু সেই টানটা বোঝে। সেই একই বিপজ্জনক টান যার কারণে তাওহীদ ভাইয়ার মতো মানুষও ঠিক-বেঠিকের শীর্ণ রেখাটা গুলিয়ে ফেলেছিল৷

এভাবে বলতে নেই। মনে মনে বললো মিষ্টি।

“কেন বলতে নেই?” জিজ্ঞেস করলো তাওহীদ।

অমনি স্তম্ভিত ফিরলো মিষ্টির। সে কি জোরে বলে ফেলেছে কথাটা?

তাওহীদ মুখের সামনে তুড়ি বাজালো।

“কি হলো?”

“বলতে নেই কারণ.. কারণ বললেই কি আর আসা যায়। কত দূর মিরপুর থেকে সদরঘাট।” বললো মিষ্টি।

“আমি কিন্তু আসবো বলেই বলেছি। তোমার সাথে শুধু নদী না, আরও অনেক কিছু দেখতে ইচ্ছে করছে আমার। কেন বলতো?” বললো তাওহীদ।

“কেন?” রুদ্ধশ্বাসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো মিষ্টি। হার্ট টা মনে হয় একটা বীট মিস করে তাল হারিয়ে ফেলেছে। তাওহীদ ভাইয়ার সাথে ঘুরতে আসায় ওর হৃদযন্ত্রটা বড় বিপদে পড়েছে, যখন তখন বীট মিস করছে।

“মেয়েদের সাথে কোথাও বেড়ানো মানে জায়গাটা উপভোগ করা কম,ছবি তোলা বেশি। তুমি প্রথম মেয়ে দেখছি যে আসার পর থেকে শুধু নদী দেখতে আর নদীর বাতাস খেতেই ব্যস্ত আছো। তুমি ছবি তোলো না কেন বলো তো?”

“আমার ছবি ভালো আসে না।” লাজুক হেসে বললো মিষ্টি। তারপর প্রসঙ্গ পালটে জিজ্ঞেস করলো, “দ্বিতীয় কারণ টা কি?”

“কি?” সানগ্লাসটা চোখে গলিয়ে ভ্রুকুটি করে ওর দিকে ফিরলো তাওহীদ। রোদটা একেবারে পাকা কমলালেবুর রঙ ধারণ করেছে, সেই পাকা কমলালেবু রঙের আভা চোখে মুখে এসে পড়েছে তার।

“বললেন যে দুটো কারণ আছে নিয়ে আসার।” মনে করিয়ে দিলো মিষ্টি।

“ওহ! দ্বিতীয়টা হলো এখানে আসতে আমারও ভালো লাগে খুব, আলাদা একটা টান কাজ করে এখানে আসার। আর জানোই তো সবচেয়ে বড় শক্তি টানের শক্তি।”

“না, জানতাম না তো।” বললো মিষ্টি।

“ঠিক আছে,তোমাকে একটা গল্প বলি। মুঘল সাম্রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী সম্রাট কে ছিল বলো তো?”

কোথা থেকে কি! মাথা চুলকালো মিষ্টি। এরমধ্যে ইতিহাসের ক্লাস কোথা থেকে এলো!

“সম্রাট আকবর।” বললো মিষ্টি।

“রাইট। শুধু প্রভাবশালী না, মুঘলদের মধ্যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর রাজ্য বিস্তারেও আকবরের ধারেকাছে কেউ ছিল না। পুরো ভারত তখন ছিল আকবরের। একমাত্র বাংলা ছাড়া। এত প্ল্যানিং, রণশক্তি, ক্ষমতা কোনো কিছু দিয়েই বাংলা জয় করতে পারছিলেন না তিনি। আকবর হাল ছেড়ে দিলেন। তার পরে সিংহাসনে বসলেন তার ছেলে সেলিম এবং বসার পরই তার সেনাপতি ইসলাম খানকে পাঠালেন বাংলা জয় করতে। ইসলাম খান পুরো বাংলার ক্ষমতা সেলিমের হাতে এনে দিলেন। সেলিমের এমন কি ছিল যার কারণে আকবর যা সারাজীবনে পারলো না তা তিনি সিংহাসনে বসামাত্র করে ফেললেন?”

“কি?” মিষ্টি জিজ্ঞেস করলো।

“টান। বাংলার জন্য টান ছিল।” বললো তাওহীদ।

এবার মিষ্টি হেসে ফেললো। “সেলিমের কেন বাংলার প্রতি টান থাকবে? সে তো বাংলায় কখনো আসেইনি!”

“ঠিক বলেছো। সেলিম আসেনি। কিন্তু সেলিমের ভালোবাসার মানুষ মেহেরুন্নেসা কানিজ, যাকে আমরা আনারকলি নামে চিনি। তিনি ছিলেন বাংলার বারো ভূইয়া দের একজনের স্ত্রী। মেহেরুন্নেসা আকবরের রাজসভায় এক কর্মচারীর মেয়ে ছিলো, রাজসভায় সে নাচতো, গাইতো। সম্রাট আকবর সেলিম আর আনারকলির ভালোবাসা কখনো মেনে নেননি। তবে আনারকলির বাবার আনুগত্যের কথা মনে রেখে তার ছেলেকে ভালবাসার অপরাধে তিনি আনারকলিকে কঠিন কোনো শাস্তিও দেননি। বাংলার বারো ভূইয়াদের একজনের সাথে কানিজের বিয়ে দিয়ে তাকে সুদূর কোলকাতা পাঠিয়ে দেন। একবার ভাবো, দিল্লি টু কোলকাতা। আজকের দিনেও দিল্লি থেকে কোলকাতা বাই রোড যেতে ৪-৫ দিন সময় লেগে যায়।”

মিষ্টি গল্পের মধ্যে ডুবে গেছে। সেলিমের জন্য তার মায়া লাগতে শুরু করেছে। কেমন লেগেছিল সেলিমের তখন?

“হাও ট্রাজেডিক!” মন্ত্রমুগ্ধের মতো বললো মিষ্টি,

“তারপর কি হলো?”

“ইসলাম খান বাংলায় আক্রমণের সময় কানিজের হাসবেন্ড মারা যান। সেলিম যুদ্ধ শেষ হওয়া মাত্র কানিজ ও তার পুত্রকে দিল্লিতে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন এবং কানিজকে বিয়ে করেন।”

“আহা! হ্যাপি এন্ডিং!” তালি দিলো মিষ্টি।

“শুধু তাই নয়, সেলিমই উপমহাদেশের প্রথম মুঘল ছিলেন যিনি রাজার সিংহাসনের পাশে তার রানীর জন্যও সিংহাসন তৈরি করে দেন।”

“আমি আজ থেকে সেলিমের ফ্যান হয়ে গেলাম।।” বুকে হাত রেখে বললো মিষ্টি।

“তো মিস রাজশাহী, কি শিখলে সেলিম আর আনারকলির গল্প শুনে?” তাওহীদ জিজ্ঞেস করলো।

“এটাই, যে যদি কোনো মেয়ের মন জয় করতে চাও তো তাকে একট সিংহাসন বানিয়ে দাও।” তর্জনী নাচিয়ে জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব নিয়ে বললো মিষ্টি।

তাওহীদ হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে রইলো, “এতক্ষণে এই বুঝলে তুমি!” চেহারা দেখে মনে হলো যেন মিষ্টিকে এই গল্প কেন বললো তার আফসোস হচ্ছে।

মিষ্টির মাথায় হঠাৎ কোনো বুদ্ধি এসেছে এমন ভাবে লাফিয়ে উঠলো,

“পিস অফ অ্যাডভাইস! কাউকে প্রোপোজ করতে হলে তাকে একটা সিংহাসন অফার করবেন শুধু, যত কঠিন মেয়েই হোক গলে একেবারে নিউটেলা হয়ে যাবে। ইওর ওয়েলকাম।” বলে বো করলো মিষ্টি।

তাওহীদ ঠোঁট বাকালো। “আমি তাওহীদ কান ধরেছি, এই জীবনে আমি কাউকে, আই রিপিট, কাউকে প্রোপোজ করবো না।”

মিষ্টির মাথার উপর যে খুশির বেলুন গুলো ভাসছিল সেগুলো মুহূর্তেই টুপ করে ফেটে গেলো। ঠোঁটের উর্ধমুখী কোনদ্বয় নেমে এলো।

“কেন!”

“তুমি জানো কেন। একবার একজনকে ভালবাসি বলার পর যে ভোগান্তি শুরু হয়েছিল, আজও তা শেষ হয়নি।” চোখ বুজে মাথা নাড়লো তাওহীদ।

“কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন অভি ভাইয়ারা ওটা ভুলে গেছে।” মিষ্টি মনে করিয়ে দিলো।

তাওহীদকে হঠাৎ অপ্রসন্ন দেখালো, কেন মিষ্টি বুঝলো না।

“আমার কথা বাদ দাও। কিন্তু আমি যে তোমার হবু জামাইয়ের জন্য বিশাল একটা সমস্যা করে ফেললাম। তাকে তো আমার ওয়ার্ন করা উচিত এখনি। এতদিন যা করছিলে সব ভুলে যাও,টাকার পাহাড় বানাতে লেগে পড়ো। মিষ্টির মন জয় করতে হলে সিংহাসন বানাতেই হবে।”

মিষ্টি দ্রুত মাথা নাড়লো। “আমি কি সেই সিংহাসন চেয়েছি নাকি! আমাকে তার মনের মধ্যে একটা সিংহাসন বানিয়ে দিলেও হবে।” লাজুকলতার মতো বললো।

তাওহীদের চোখজোড়া যেন এবার নরম হলো। গভীর দৃষ্টিতে মিষ্টির মুখ পানে চেয়ে, স্মিত হেসে বললো,

“দেবে। তুমি যার জীবনেই যাবে তার মনে, তার জীবনে, তার ঘরে সব জায়গায় রানী হয়ে থাকবে।”

মিষ্টি ভাষা হারিয়ে ফেললো। এখান থেকে অনেক অনেক দূরে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে হলো। এই মুহূর্তে এখানে বসে থাকলে নির্ঘাত জ্ঞান হারিয়ে পানিতে পড়ে যাবে।

“ঐ দেখো সূর্যাস্ত!” সহসা তাওহীদ বলে উঠলো। মিষ্টি চমকে দেখলো দিগন্তে আঙুল তাক করে কিছু দেখাচ্ছে তাওহীদ। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে মিষ্টি তাকিয়ে দেখলো সূর্যটা সব আয়োজন সাঙ্গ করে মাঝনদীতে নেমে পড়েছে, একটু পর টুপ করে হারিয়ে যাবে। এ এক অন্যরকম সূর্যাস্ত দেখা। সূর্য পুরো পশ্চিম আকাশ টাকে রাঙিয়ে দিয়ে বিদায় নিলো। এজন্যই হয়তো রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,

যে নদীর তীরে সূর্যাস্ত দেখেনি সে কিছুই দেখেনি।

চলবে

আগামী পর্ব আসছে রবিবার।

ঘাসফুল লেখা যখন শুরুও করিনি, তখন থেকেই কয়েকটা পর্ব নিয়ে খুবই এক্সাইটেড ছিলাম, হাত নিশপিশ করতো লেখার জন্য। সেরকম একটা পর্ব ছিল আজকেরটা। কিন্তু যেভাবে ভেবেছিলাম তার অর্ধেকও লেখায় দিতে পারিনি। গতকাল রাত থেকেই লেখায় একদমই মন দিতে পারিনি। মন বসানোর জন্য কবিতা পড়েছি, পিয়ানো মিউজিক শুনেছি, ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লেখকদের ঠাণ্ডা, স্লো-মোশন লেখা পড়েছি। তবে কোনোটাতেই কাজ হয়নি। সেজন্য আমি দুঃখিত।

আগের পর্ব

https://m.facebook.com/groups/526513374820830?view=permalink&id=849773989161432&ref=m_notif&notif_t=feedback_reaction_generic

1
$ 0.02
$ 0.02 from @TheRandomRewarder
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments