_দীর্ঘশ্বাস

0 0
Avatar for Nipa1234
3 years ago

আখি তাড়াতাড়ি মিরপুর আয় তো, তোর সাথে খুব খুব খুব জরুরী দরকার।।তাড়াতাড়ি আয়।।দেরি করিস না কিন্তু।। আমরা মা মানে আম আমিই অপেক্ষা করছি,তাড়াতাড়ি আয়।।

আমাল ফোন করে একদমে কথা গুলো বলল।।

আমি আমালের কোন কথাতেই না বলার মতো শক্তি পাই না,, তাই আর কথা না বাড়িয়ে আমার রুমমেট প্লাস বান্ধবী কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।।

ফার্মগেট থেকে মিরপুরের দূরত্ব খুব বেশি না হলেও যারা এই পথে চলাচল করে তারা জানে এই পথঘাট আর গাড়ি সম্পর্কে।।যাইহোক বান্ধবীকে নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম।।

যেতে যেতে বলি আমাল আমার খালাতো ভাই ইনফেক্ট বড় ভাই, কিন্তু কেন জানি না এই বড় ভাই ব্যক্তিটির উপর কোন কারণ ছাড়াই আমি ফিদা।।আমি যে এই মানুষটার উপর ফিদা তা তাকে একবার জানিয়েছিলাম, ফলশ্রুতিতে সে আমাকে বলেছিল থাপ্পড় চিনিস? থাপড়াইয়া গাল লাল করে দিবো।আর যেন এইধরনের কথা না শুনি।। তারপর থেকে আর কোন দিন জানানোর চেষ্টা করিনি যে, আমি তাকে কতটা ভালবাসি।।

ওফফ, শেষ পর্যন্ত মিরপুর এসে পৌছালাম। আমাল আমাদেরকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে বসল।।এখানে প্রথম থেকেই একটা মেয়ে বসেছিল।আমাল হয়তো কিছু একটা বলতে চায় কিন্তু একটু ইতস্তত করছিল। বুঝলাম আমার বান্ধবীর জন্যই হয়ত এই অস্বস্তি।। তাই তাকে বললাম ভাইয়া তুমি বিনা দ্বিধায় কথা বলতে পারো।।কারণ ও আর আমি একে অপরের অর্ধাঙ্গ।।

না না ওর জন্য কোন সমস্যা হচ্ছে না। আসলে আমি কোথা থেকে কি বলে শুরু করবো তাই বুঝতে পারছি না।।

আচ্ছা আমি সহজ করে দিই।।তুমি বরং এই মেয়েটির সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দাও।।

ওর নাম লুবনা,,মূলত ওর জন্যই তোকে ডাকা।।আমরা আজকে বিয়ে করতে চাই।।তুই আমাদের সাথে চল।।

কাউকে প্রচণ্ড পরিমাণে ভালোবাসলে তার সাথে অন্য একটা মেয়েকে দেখেও নিজেকে হয়তো স্বাভাবিক রাখা যায়,,কিন্তু সেই মানুষটা কাউকে বিয়ে করতে চলেছে আর এই কাজে আপনার সাহায্য চাইছে ঐ মুহূর্তে কিভাবে নিজেকে সামলানো যায় আমার জানা নেই।।কিন্তু তবুও আমি নিজেকে সামলেছি, কিভাবে সামলেছি জানি না।।শুধু জানি আমি আমার ভেতরকার ঝড়টাকে একটা #দীর্ঘশ্বাস এর মধ্যদিয়ে থামিয়ে দিয়ে তাকে বলেছিলাম, " খালামনিকে না জানিয়ে বিয়ে করাটা কি ঠিক হবে?"

আমাল--- না হয়তো হবে না, কিন্তু মা ওকে কখনোই মানবে না,আর আমার পক্ষেও ওকে ছাড়া সম্ভব না।।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওকে লুকিয়ে বিয়ে করার।।

আখি--- কিন্তু ভাইয়া,খালামনি যখন ঘটনাটা জানবে তখন??

আমাল--- তখনকারটা তখন দেখা যাবে।।

আখি--- ভাইয়া, আমাকে সাতদিন সময় দাও, আমি খালামনির সম্মতি নিয়েই তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করি।।কারণ বিয়েটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার,,মা কে না জানিয়ে বিয়ে করাটা খুব একটা ভালো কথা নয়।।খালু মারা যাবার পর খালামনি কতটা কষ্ট করে তোমাকে আজকের এই পর্যায়ে এনেছে তা তুমি সবচেয়ে ভালো জানো।।তাই এই ভূল কাজটা করো না।।

আমাল--- জ্ঞান দিস না।।তোর জ্ঞান শোনার জন্য তোকে ডাকি নি।।

আখি--- বিবেক বুদ্ধি লোপ পেলে জ্ঞান তো শুনতেই হবে ভাইয়া।।আর তাছাড়া রিভেঞ্জ অব নেচার বলে একটা কথা আছে জানো তো?? তুমি যদি এখন খালামনিকে ঠকাও,, জীবন ও তোমাকে ঠিক ততটুকুই ঠকাবে।।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমাল বলল,,"ঠিক আছে সাতদিন সময় নে,,কিন্তু তারপর তুই নিজে সময় ঠিক করে আমাদের বিয়ে দিবি। "

আখি--- আচ্ছা ভাইয়া তাই হবে।।

আমাল মেয়েটির হাত ধরে বের হয়ে বের হয়ে যায়।।

কাউকে প্রচণ্ড ভালোবাসার পর তাকে অন্যকারো হতে দেখলে বুঝি এতোটা কষ্ট হয়,,এতোটা......

আখি তুই নিজেকে সামলা,, প্লিজ।।

আখি--- আ আম আমি আমি আমি নিজেকে সাসামলে নেবো,,আমাকে একটু সময় দে বান্ধবী।। হাত পা কাঁপছে আমার।।এটা একটু স্বাভাবিক হোক,তারপর আমিও স্বাভাবিক হয়ে যাবো।।

মিশু-- আখি,, আমি তোর হাত পায়ের কথা বলিনি,,তোর ভেতরকার কথা বলেছি।।

আখি--- মিশু,,

মিশু-- চল এখান থেকে।।

আরো একটি দীর্ঘশ্বাসকে বাতাসে বিলীন করে চললাম নিজের গন্তব্যে।।

***

সময় বহমান,, সাতদিন পার হয়ে গেছে।।আমি হাজার রকম যুক্তি তর্ক করেও খালামণিকে রাজি করাতে পারি নি।।খালামণির এক কথা,," ওই মেয়েকে আমি যতটুকু চিনেছি ও আমার ছেলেকে ভালো রাখতে পারবে না।।বরং আমার ছেলে আরও মানসিক অশান্তি তে থাকবে।।একজন মায়ের চোখ কখনো ফাঁকি দেওয়া যায় না।।ওই মেয়েকে আমার চেনা হয়ে গেছে।।আর কোন দিন আমাকে এই মেয়ের সম্পর্কে কিছু বলবি না।।"

আমাল ভাইয়াকে সবটা জানানোর পর ভাইয়া আমাকে বলল, "আমি আগে থেকেই জানতাম এমন হবে।।তাই তোকে বলেছিলাম।।এখন বল কি করবি,,কবে আমাদের বিয়ে দিচ্ছিস??"

তোমরা তোমাদের সুবিধা মতো সময় ঠিক করে আমাকে জানিও,আমি চলে আসবো।।

এরপর একটা দিনক্ষণ ঠিক করে ঠিকই ভাইয়া আর ঐ মেয়েটির বিয়ে আমি দিয়েছিলাম,,যা জানাজানি হবার পর খালামণি ও অভিমান করে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।।

***

মাঝে কেটে গেছে পাঁচ পাঁচটি বছর।।জীবন বয়ে চলেছে বহমান নদীর মতো।।চারপাশের সবকিছুই পাল্টেছে,পাল্টাচ্ছে।। শুধু আমার ভেতরটাই ফাঁকা,,একেবারে শূণ্য।।যে শূন্যতার সৃষ্টি পাঁচ বছর আগে হয়েছিল তা আমি আজও বয়ে বেড়াচ্ছি,, মা বাবা সবাই মিলে চেষ্টা করেছে আমার জীবনের শূন্য জায়গাটা পূরণ করার।।কিন্তু আমি পারি নি,আজও পারিনি সেই জায়গায় অন্যকাউকে বসাতে।। মাঝে খুব জানতে ইচ্ছা করে ভাইয়া কেমন আছে তার ভালোবাসার মানষটির সাথে? কিন্তু আমি জানার চেষ্টা করি না,কারণ কিছু কিছু কথা হয়তো না জানাই ভালো।।থাক না কিছু ইচ্ছে দীর্ঘশ্বাসের আড়ালে।।আমি তো শুধু দিন রাত আল্লাহর কাছে এটাই দোয়া করি যেন,ভাইয়া খুব ভালো থাকে খুব।।খালামণি ঐ মেয়েটা সম্পর্কে যা যা বলেছিল তা যেন সত্য না হয়,,বরং যেন ঠিক তার উল্টো টা হয়।।ভাইয়া যেন খুব খুব খুব সুখি হয়।।

®Akhi Rahman

1
$ 0.06
$ 0.06 from @TheRandomRewarder
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments