ছোট গল্প - ঘুরে দাঁড়ানো।

0 1
Avatar for Nipa1234
3 years ago

দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন আমি একবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম।' মেয়েটির কথায় চমকে উঠলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম,

-আপনি?

'জি।' বলেই মেয়েটি একটা অদ্ভুত হাসি দিলো। আত্মহত্যা করতে চাওয়ার অনেক কারণ হতে পারে। প্রথমত ফ্যামিলির চাপে। দ্বিতীয়ত রিলেশনে ব্রেকআপ হলে। অবশ্য আত্মহত্যা করার আরো অনেক কারণ আছে।

মেয়েটির দিকে আরেকবার ভালো করে তাকালাম। নাহ! বয়সে আমার চেয়ে বড় হবে। বিয়েও হয়েছে দেখা যাচ্ছে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম,

- কারণ?

'ধর্ষণের শিকার হয়েছিলাম।'

এইবার বেশ অবাক হলাম। খবরের কাগজে গতকাল ঘটে যাওয়া গণধর্ষণের পৃষ্ঠাটা দেখছিলাম। পাশের সিটে বসা মেয়েটি হুট করেই আমার সাথে কথা বলতে শুরু করলো। উনাকে ভালো করে দেখিনি বলেই পড়ছিলাম। নাহয় পড়তাম না।

আমি অবাক হয়ে বললাম,

- বলেন কী! আপনি কেস করেন নি?

মেয়েটি এইবার মুচকি হাসলো। তারপর বলল,

'আর কেস! ঘটনাটা শুনবেন? বেশ অবাক হবেন কিন্তু।'

আমি কিছুক্ষণ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। তারপর বললাম,

- আপনার যদি বলতে অসুবিধা না হয় তবে আমার শুনতে অসুবিধা নেই আপু। আমাদের শহরে পৌঁছতে পৌঁছতে আরো অনেক সময় লাগবে।

মেয়েটি আরেকবার মুচকি হেঁসে বলল,

'আচ্ছা ভাই, শুনো তবে।

আমার বাড়ি হচ্ছে গ্রামে। বাবা কৃষক, ক্ষেতে কাজ করেন। মা ঘরে থাকে। আমি বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। বাবার ইচ্ছে ছিলো আমাকে ডাক্তার বানাবে। গ্রামে তখন তেমন ভালো ডাক্তার ছিলো না। তাই বাবার স্বপ্ন তার মেয়ে অনেক বড় ডাক্তার হবে আর গ্রামের মানুষের সেবা করবে।

আমি পড়ালেখায় খুব ভালো ছিলাম। স্কুলে রোল এক সেই প্রথম শ্রেণী থেকে আমিই হয়ে আসছিলাম। এমন করতে করতে ক্লাস নাইনে উঠে গেলাম। বাবার স্বপ্ন তার সাথে স্কুল স্যারদের কথায় সাইন্স নিই।

ক্লাস নাইন আমার বেশ ভালোভাবেই কাটে। কোনো বিষয়ে আঁটকে গেলে স্যারদের সাহায্য নিতাম।

ক্লাস টেন এর শেষের দিকে, মানে ফাইনাল এক্সামের আগে স্যাররা বলেছিলেন বাসায় একটা স্যার রাখার যেন ব্যবস্থা করি। এতে করে আমার রেজাল্ট আরো ভালো হবে।

তখন গ্রামে তেমন শিক্ষিত লোক নেই। পাশের গ্রামের সাজ্জাদ নামের এক ছেলে ছিলো। কীভাবে যেন সে বাবার থেকে আমার যে বাসায় স্যারের দরকার তা জেনে যায়। সে ও ফিজিক্স নিয়ে পড়ছিলো তখন। শেষমেশ বাবার সাথে তার কথা হয় সন্ধ্যা থেকে আমাকে সে পড়াবে।

কথামতো পড়াতে শুরু করলো। পনেরো দিন যেতে না যেতেই সে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। আমি এই কথা কাউকে বলতেও পারছিলাম না আর সইতেও না। কোনোভাবে বাবা বা মা কাউকে বলার তেমন সাহস হয়নি।

এই সুযোগে সে একদিন তার নোংরা মন মানসিকতার পরিচয় দেয়। জোর করে আমাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে।'

মেয়েটির চোখ দিয়ে জল পড়তে শুরু করেছে। কেমন যেন আমারো খারাপ লাগতে শুরু করেছে। একটি মেয়ের চোখে জল দেখলে কার খারাপ লাগবে না!

আমি কিছু বলতে যাবো তখন আবার বলতে শুরু করলো।

'সেইদিন আমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার বিবেক আমাকে তা করতে দেয়নি। বাবা মায়ের সাথে কথাটা তিন চারদিন পরে শেয়ার করলে তারা আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদে। আমাকে বেঁচে থাকার সাহস জোগায়। তারপর থেকে আর সেই অমানুষের চেহারা দেখিনি। তারপর অনেক বছর কেটে যায়। জানো ভাই! আমি বাবা মায়ের স্বপ্ন পুরোন করেছি।

আজ আমি অনেক বড় ডাক্তার। তারপরও আমি সপ্তাহে দুইদিন গ্রামের মানুষদের ফ্রী তে চিকিৎসা করি।

আমি আটকে দিয়ে বললাম,

- আপনারা কী তখন আইনের সহায়তা নেননি?

উনি হেঁসে বলল,

'নাহ। তখন এসব লজ্জাজনক ব্যাপার বলে বাবা মা আর কিছুই করতে সাহস করে নি। তার উপর আমরা গরীব ছিলাম। ওই লোকটার শেষ খবর শুনবে?'

আমি তাড়াতাড়ি বললাম,

- জি, অবশ্যই।

আপুটা মুচকি হেঁসে বললেন,

'আমি যখন ইন্টারে পড়ছি তখন তাকে কয়েকজন লোক কুপিয়ে হত্যা করে চুরি করেছে বলে। অথচ সে কিছুই চুরি করেনি। গ্রামের মানুষ সহজ সরল। তাদের একটু লজ্জা শরম বেশি। কোনো এক মেয়েকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করাতে তাকে ছুরি দিয়ে ছিন্ন বিন্ন করে দিয়েছিলো। কিন্তু লোকসমাজে বলেছিলো চুরি করতে গিয়ে খুন হয়েছে।'

আমি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম আপু টির দিকে। তার চোখে মুখে এখন খুশির জোয়ার দেখতে পাচ্ছি। যেন এক সমুদ্র সুখ তিনি অনুভব করছেন। তিনি আমার সামনে দিয়ে বাস থেকে নেমে চলে গেলেন।

যাওয়ার সময় বললেন,

'ভালো থেকো ভাই। জানি না কথাগুলো কেন বললাম। তুমি যে লেখক তা আমি জানি। আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি ইচ্ছে করলে লিখতে পারো। ধর্ষিত মেয়েরা হয়তো সাহস পাবে এবং আত্মহত্যার পথে না গিয়ে আমার মতো বাবা মায়ের কথা ভেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবে।

চললাম, কোনো একসময় আবার দেখা হবে।'

~ছোট গল্প - ঘুরে দাঁড়ানো।

~লেখা - মোহাম্মদ নুরুল আজিম চয়ন।

1
$ 0.04
$ 0.04 from @TheRandomRewarder
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments