আচ্ছা আমি যদি ধর্ষণ করি তাহলে এর পেছনের কারণটা কী হবে?
.
-যৌন উত্তেজনা? শরীরের চাহিদা?
--নাহ্ শুধু মাত্র যৌন উত্তেজনার বা শরীরের চাহিদা মেটানোর জন্য আমি ধর্ষণ নিশ্চই করব না। এমনটা হলে তো পুরো পৃথিবী জুড়ে দৈনিক লক্ষ কোটি পুরুষ ধর্ষণের পথ বেঁছে নেবে।
.
তাহলে?
-পর্ণ দেখে বা সিনেমা/গানের অশ্লিলতা দেখে তাদের না পেয়ে সুযোগ বুঝে কোনো মেয়েকে ধর্ষণ করব?
--না না, এ কারণে নিশ্চই ধর্ষণ করব না। হ্যাঁ পর্ণ, সিনেমা/গানে অশ্লিলতা দেখলে মনে কাম ভাব জাগা স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে তাদের না পেয়ে হাতের কাছে যাকে পাব হোক সে যুবতি, কিশোরী, বৃদ্ধা, নবজাতক শিশু তাকে ধর্ষণ করব এটা কেমন কথা। নাহ্ এ কারণেও তো আমি ধর্ষণ করব না। যদি বেশি সমস্যা হয় পর্ণ আর অশ্লিলতা থেকে নিজেকে দূরে রাখব। তাহলেই তো হলো।
.
-রাস্তা-ঘাটে টাইট পোশাক, একটু খোলামেলা পোশাক বা মেয়েদের ব্রার ফিতা দেখে কি ধর্ষণ করব?
--ধূরো এটা কেমন কথা। সামান্য ব্রার ফিতা দেখে কাম ভাব কীভাবে জাগতে পারে?
যাদের ব্রার ফিতা দেখেই নবাবজাদা দাঁড়িয়ে যায়। নিশ্চই মেয়েদের হাত ধরলেই তাদের অর্গাজম হয়ে যাবে। তাদের আসলে কলিকাতা হার্বালের দরকার।
আর খোলামেলা পোশাক?
সেটা রাস্তার পাগলিও পরে। তাই বলে কি পাগলিকে ধর্ষণ করব? নাকি সেদিক থেকে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেব। নিশ্চই নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেব। যদি পর্দা না করা অপরাধ হয় তবে কুনজরে তাকানোটাও অপরাধ।
.
-ক্ষমতার জোরে কি ধর্ষণ করব?
--এটা ভাববার বিষয়। যদি আমি প্রচুর ধন সম্পত্তির মালিক হই। টাকা দিয়ে সবার মুখ চুপ করিয়ে দিতে পারি। তাহলে কী কোনো সুন্দরী মেয়েকে ধর্ষণ করে টাকা দিয়ে ধর্ষিতা, সমাজ, প্রশাসনের মুখ বন্ধ করে দিব?
অথবা রাজনৈতিক কোনো নেতা হই কিংবা রাজনৈতিক নেতার/মামা/চাচা বড় ভাইয়ের সাথে সুসম্পর্ক থাকে। যদি মনে ভয় না থাকে যে ধর্ষণের পর জেল ফাঁসি হবে। যাই করি না কেন নেতা/মামা/চাচা/বড় ভাই সামলে নিবেন। তাহলে কী ধর্ষণ করব? যে মেয়েটার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি সে প্রত্যাখ্যান করলে তুলে নিয়ে ধর্ষণ।
আমি তো জানি আমার কিছু হবে না। তাহলে সমস্যা কোথায়।
হুম বড় জটিল সমিকরণ। আসলেই ক্ষমতার জোর থাকলে ধর্ষণে সাহস চলে আসে। কিন্তু ক্ষমতার জোড়ে আমি কী ধর্ষণ করব?
নাহ্ এখনো মন সায় দিচ্ছে না। অনেকে হয়ত ক্ষমতার জোড়ে ধর্ষণ করবে কিন্তু আমি মনে হয় পারব না। বিবেক বাঁধা দিবে।
.
তাহলে?
-কোন পর্যায়ে গেলে আমি ধর্ষণ করব?
--নিশ্চই আমার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটলে। বিবেক বাঁধা না দিলে। মানসিক রুচি নিচে নেমে গেলে। মানুষ হিসেবে জানোয়ার হলে। তখন হয়তো ধর্ষণ করব। কারণ তখন আমার নিজের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রন থাকবে না। আমি থাকব বিকৃত মানসিকতার জানোয়ার। যে সব করতে পারে।
.
পুরুষ হয়ে নিজেকে নিজে কিছু প্রশ্ন করে যা পেলাম যে নারীর পোশাক না বরং পুরুষের কুরুচি আর ক্ষমতার (টাকা, প্রভাব, রাজনৈতিক) কারণে পুরুষ ধর্ষণের দিকে যেতে পারে।
একজন পুরুষের মাঝে যতক্ষণ বিবেক, শাস্তির ভয়, মনুষত্ব থাকবে ততক্ষণ সে কোনো অবস্থাতেই কোনো নারীকে ধর্ষণ করতে পারে না।
.
ইদানিং যে হারে ধর্ষণ বাড়ছে তাতে বুঝা যাচ্ছে যে দিন দিন সমাজে কুরুচির পুরুষদের সংখ্যা বাড়ছে।
ফেসবুকে একটা ভিডিও দেখলাম যে এক লোক রাস্তার পাশে কুকুরের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করছে। ভিডিওটা দেখার পর বারবার মাথায় একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিলো যে, এটা কীভাবে সম্ভব!
মানুষ কুকুরের সাথে!
কতটা মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটলে, কতটা কুরুচির মানুষ হলে, কতটা নিচে নামলে একজন পুরুষ এ কাজ করতে পারে।
.
আরেকটা কথা। ধর্ষণ বলতে আমরা আমাদের সমাজ যা বুঝে যে ধর্ষণের পরে ইজ্জত যায় ধর্ষিতার। কত বড় একটা ভুল ধারণা আমাদের। যেই নেক্কারজনক কাজ পুরুষ করল। তাদের ইজ্জত গেল মেয়েটার? নাকি ওই পুরুষের ইজ্জত গেল যে এমন একটি জঘন্য কাজ করল?
অথচ ধর্ষণের পরে আমাদের সমাজে ধর্ষক তার পরিবার বুক ফুলিয়ে চলে আর ধর্ষিতা তার পরিবার ঘর থেকে বের হতে পারে না লজ্জায়। এ লজ্জা ধর্ষিতা বা তার পরিবারের নয়। এ লজ্জা আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির।
.
অনেক হুজুরটাইপ লোককে দেখলাম বিভিন্ন পোস্ট বা কমেন্টে নারীদের পোশাককে দায়ি করছে। তাদের বলি, ভাই ইসলাম ধর্মে পুরুষদেরও নিজের দৃষ্টি সংযত রাখতে বলা হয়েছে। কোনো হাদিস দেখাতে পারবেন না যেখানে লেখা আছে যে নারীরা পর্দা না করলে তাদের ধর্ষণ করার অনুমতি আছে। যেখানে তাকানোটাই নিষেধ করা হয়েছে সেখানে আপনারা ধর্ষণকে কীভাবে সমর্থন করতে পারেন?
আপনার তো ভাই মানসিক চিকিৎসা দরকার।
মানসিক চিকিৎসা দরকার তাদের প্রত্যেকের যারা ধর্ষণের কারণ হিসেবে নারীর পোশাককে দায়ী করছেন। একজন পুরুষ হয়ে বলছি, ধর্ষণের পেছনের প্রধাণ কারণ হলে ধর্ষক পুরুষের মানসিকতা।।