পর্বঃ ৫৭
লেখাঃ আরিফুর রহমান মিনহাজ
আশা শীতে মুহ্যমান মানুষের মতোন ঠগঠগ করে কাঁপতে কাঁপতে দুটি শব্দ আওড়াল,
- কী চান?
- তোমাকে।
-ছাড়ুন।
বলে আশা পাষণ্ডটার বাহুবল থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য কেঁচোর মতো মোচড়ামুচড়ি শুরু করল। কিন্তু ওড়ম্বা বড় সাহেবের পৌরুষ্য শক্তির কাছে সেটা তেমন কাজে দিল না। চারিদিকে মিসমিসে অন্ধকার। লোকটা ধীরে ধীরে আশাকে কামরার ভেতরের দিকে নিয়ে যেতে বলল,
- বাঘ কখনো হরিণের শক্তিতে পরাজিত হয়েছে বলে শুনেছ? রাজি হয়ে যাও সোনা। নয়তো নিজেই কষ্ট পাবে। তুমি জানো আমি কি চাইছি।
কাম-লালাসায় ন্যালনেলে গলায় কথাগুলো বলতে বলতে লোকটা আশার আশার মুখ থেকে হাত নামিয়ে বক্ষদেশে হাত দিতে প্রবৃত্ত হলে আশা শেষ চেষ্টা সেরূপ ক্ষিপ্র গতিতে মুখ বাড়িয়ে কটকট করে তার আঙুল কামড়ে দিল। পরমুহূর্তেই সে আশার দন্তবিষে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কুকুরের ন্যায় আস্ফালন করে দূরে ছিটকে গেল। আশা একমুহূর্তও কালাতিপাত না করে হাঁপাতে হাঁপাতে মেঝেতে পড়ে থাকা হলুদ হার্ড টুপিটা উঠিয়ে নিয়ে সবেগে তার দিকে ছুঁড়ে মারল। এবারও হিংস্র পশুর মতোন চিৎকার ভেসে এলো অন্ধকারের বুক চিঁড়ে। অনাকাঙ্ক্ষিত দ্বিতীয় ক্ষিপ্ত আক্রমণে প্রতিপক্ষ কয়েক মুহূর্তের নিমিত্তে নাজেহাল হয়ে পড়ল। আশা একান্ত নিঃসহায়ভাবে চাপা সুরে ঠোঁট টিপে অশ্রুবর্ষণ করে বুঝতে পারল সে একা কোনোভাবেই এই পশুটাকেকে কাবু করার শক্তি রাখে না। ওদিকে লোকটা অন্ধকারে আশেপাশে কোথাও ব্যথায় চাপাস্বরে কুঁইকুঁই করছে আর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আজ আশার রক্ষা নেই এমন ইঙ্গিত দিচ্ছিল। বিধায়, সে এই সময়টায় সাহায্যের উদ্দেশ্য মেঝেতে নিপতিত মোবাইলটা দু'হাত ছড়িয়ে হাতড়াতে লাগল এবং একসময় পেয়েও গেল। ফোনটা হাতে নিয়েই সে দুরুদুরু কম্পমান বুকে থরথর করে কাঁপতে থাকা হাতে ডায়ালে থাকা অভিনবের নাম্বারটায় কল দিল। দুইবার রিং পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই রিসিভ হলো। আশা অকূলে কূল পেয়ে সশব্দ-অশ্রুবিকৃত কণ্ঠে আঁতকা চেঁচিয়ে উঠল,
-গায়ক,আপনি আসুন, দেখুন এই লোকটা কেমন করছে। আমার ভয় করছে অনেক।
অভিনবের মাথায় যেন আচমকা বাজ পড়ল। সে তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বলল,
- আশাবরি,কী হয়েছে,তুমি কোথায়?
ঠাস করে একটা চপেটাঘাত এসে পড়ল আশার কানে। মোবাইল উপুড় হয়ে ছিটকে গেল মেঝেয় পাতা বিছানায় এককোনায়। বিস্রস্ত চুল এলোমেলো হয়ে গালের ওপর হুড়মুড়িয়ে এসে পড়ল। মুখ গলে ব্যথাসূচক শব্দ নিঃসৃত হওয়ার আগেই গলায় শ্বাপদ থাবা অনুভব করল আশা। লোকটা আশার কণ্ঠরোধ করেছে।
- খুব বেড়েছ না? ভালোই ভালোই বললাম শুননি? এবার আসো। আমি জানি কীভাবে আদায় করতে হয়।
বলে আশার টুঁটি চেপে ধরে উর্ধ্বে তুলে বিছানার ওপর নিক্ষিপ্ত করল। আশা নিঃসীম ব্যথায় ককিয়ে উঠে হাত জোড় করে আর্তি জানাল,
- আল্লার দোহাই স্যার, আপনার পায়ে পড়ি৷ আমার গায়ে হাত দিবেন না।
কে শুনে কার কথা? যে পুরুষ নারীদেহে লালায়িত সে কি আর ধর্মের কথা শুনে নিরস্ত হয়? আশা পায়ে পড়ল,হাতজোড় করে সম্ভ্রম ভিক্ষা চাইল,তারও মা-বোন আছে সে-কথা স্মরণ করিয়ে দিল মুহুর্মুহু ;লাভ হলো না৷ পাষণ্ড সেসব কথা,কাতরোক্তি কামাগ্নিতে পুড়িয়ে, বদখত হাসিতে উড়িয়ে দিল। এরপর বিপুল ধস্তাধস্তির একটি পর্ব সাঙ্গ শেষে ক্যাঁচক্যাঁচ করে একটানে আশার পরনের বোরকা ছিঁড়ে-খুলে দূরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হলো। আশা একপল সময় পেয়ে অন্যত্র দৌড় দিল। পুরো কক্ষ আশাবরির বাঁচার দৌরাত্ম্যে এলোমেলো ধ্বংস্তুপের পরিণত হতে লাগল। চাপা সুরে ক্রন্দন চালিয়ে গিয়ে পিছু হটতে হটতে অগ্রসর হতে থাকা লোকটাকে আঘাত করে নিজে বাঁচার কোনো অবলম্বন যাচাই করতে লাগল অভাগী আশা। ঠিক সেসময় —সেই অশনি সময়ে আশার হাঁটু লেগে একটি টিপয় কাত হয়ে ঝনাৎ করে একটি লৌহ শব্দের তরঙ্গ উৎপন্ন হয়েই ধীরে ধীরে দেয়ালের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিলিয়ে গেল। পায়ের কাছে ঠেকল গোটাকতক আপেল,মালটা... ফল কাটার ছুরি! আশার উদভ্রান্ত মস্তিষ্ক নিজের অজ্ঞাতেই যার সন্ধান করছিল তারই শব্দ চিনতে নিমিষমাত্র দের হলো না। আশা আর আতিবিতি না করে নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করে অশ্রুরোধ করে ধীরে ছুরিটা হাতে তুলে নিল। লোকটা ফোসফাস করে এগিয়ে এসে আশাকে জাপ্টে ধরল৷ কেনই বা আশাবরি হঠাৎ নিজের দৌরাত্ম্য থামিয়ে আত্মসমর্পণ করল তাও তার কামস্পৃহ বোধিতে এলো না। সে তো ঝাপিয়ে পড়তে পারলেই বাঁচে! সে তো কামোন্মাদ! আশা সুযোগে অপেক্ষায় করতে পারল না। লোকটা যেই নিজের দু-হাতে আশাকে বিবসনা করতে হাত বাড়াল ঠিক সেই মুহূর্তে আশা অন্ধকারে সর্বোচ্চ শক্তিতে প্রশস্ত ছুরি চালাল। ছুরি কোথায় গিয়ে গেঁথে গেল কে জানে, ছলাৎ করে একগ্লাস রক্ত যেন আশার সারা মুখ ভরিয়ে দিল! বড় সাহেব সম্পূর্ণ ভিন্নরকম একটা শব্দে আর্তনাদ করে ওঠে ধীরে ধীরে আশার কাঁধ থেকে হাত শিথিল করে ধপাস করে পায়ের কাছে ছিন্ন লতার মতো নেতিয়ে পড়ল। মৃদু মৃদু গোঙানির মধ্য দিয়ে চিড়চিড় করে রক্ত ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে দিকবিদিকে শোণিতের থান বসাল৷ অল্পক্ষণ পরেই গোঙানি থেমে গিয়ে তড়পানো বন্ধ হয়ে গেল। আশা আঁধারের কোলে শব্দহীন নিষ্পলক দৃষ্টি মেলে ধরে ধীরে ধীরে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে শীতল মেঝেতে হেদিয়ে পড়ল। ভয়ে, আতঙ্কে হৃৎপিণ্ড যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে তার! কিন্তু আফসোস হচ্ছে না এতটুকুও! লোকটা কি মরে গেল?— পায়ের গোড়ালির কাছে উষ্ণ রক্তের কুটকুটে স্পর্শ পেল আশা। বজ্রাহতের মতো আঁতকে উঠল সে।
ধাম করে কামরার দরজাটা খুলে গেল... দেয়ালের সঙ্গে প্রকাণ্ড শব্দে বাড়ি খেয়ে কেঁপে কেঁপে থেমে গেল সেটি৷ পরক্ষণেই মানুষের সাড়াশব্দ পাওয়া গেল। অন্ধকারের ঘনত্ব ফালাফালা করে ক্রমান্বয়ে জন পাঁচেক লোকের হাতে জ্বলে ওঠল মোবাইলের তীক্ষ্ণ আলোর ফ্লাশলাইট। জুতা পরিয়ে লোকগুলোর এগিয়ে আসার শব্দে শব্দিত হলো মেঝেতে। সবশেষে দেয়ালের সঙ্গে সিঁটিয়ে গুটিশুটি মেরে বসে থাকা আশাবরির কানে পরিচিত নির্ভরযোগ্য একটি কণ্ঠ ভেসে এলো,
- আশাবরি...কোথায় তুমি?
পরম আস্থায় ভাগ্যাহত শুষ্ক চোখদুটো অশ্রুপূর্ণ হয়ে উঠল আশার। কেউ একজন সুইচবোর্ড টিপে লাইট জ্বালাতেই সবাই একসঙ্গে চমকে ওঠে দুপা পিছিয়ে গেল। সঙ্গে আসা দুইজন অসংযমী লোক চোখমুখ অস্বাভাবিক বিস্ফারিত করে করে ‘খুন খুন’ বলে চেঁচিয়ে উঠল। এতক্ষণে আশাবরিও দেখল লম্পট বড় সাহেবের ঘাড় ছুরিকাঘাতে এফোঁড়ওফোঁড়! নিকৃষ্ট চোখদ্বয় উন্মুক্ত, সেই লালায়িত জিহ্বা ওষ্ঠের কোণে এনে কামড়ে ধরেছে দাঁতে। প্রচণ্ড ঘোরে থাকা আশার মনে একটুও ভয়ের সঞ্চার হলো না। বরং লোকটি মরেছে, জাহান্নামের চৌরাস্তায় গিয়েছে,দ্বিতীয়বার ঝাঁপিয়ে পড়া কোনো সুযোগ নেই;এই ভেবেই তার মন এক্তিয়ারহীন খুশিতে ভরে গেল। অস্পষ্ট আবেদন নিশে নির্বিকার ছলছলে চোখ দু'টো তুলে অভিনবের দিকে তাকাল আশা।
অভিনবের কানে মোবাইল ধরা। আতঙ্কিত চোখে এই মাত্র যোগ হয়েছে কিছুটা স্বস্তি এবং ভয়। আশার ফোনটা এখনো অবধি চলমান থাকায় সে বুঝতে পেরেছিল আশার সঙ্গে কী হতে যাচ্ছিল...। আশার হাত থেকে মোবাইলটা ছিটকে পড়ার পরও কক্ষের ভিতরের সমস্ত কথা এবং ধ্বংসযজ্ঞ শুনে অভিনব প্রায় টালমাটাল হয়ে নিজের সহচরদের নিয়ে তল্লাশি চালিয়েছিল মেয়েদের ঘরগুলোতে। শেষে না পেয়ে ম্যানেজারের সাহায্যে আশার ঘরের খোঁজ নিয়ে এখানে পৌঁছা। কিন্তু এর আগেই যা ঘটার ঘটে গেছে।
সে দ্রুত রক্ত ডিঙিয়ে এসে অস্থিরচিত্তে আশার পাশে হাঁটু ভেঙে বসল। আশা একইভাবে ছলছল হাপুস নয়নে নির্বিকার তাকিয়ে রইল অভিনবের দিকে। গায়ককে এতোটা বিচলিত কখনো দেখেনি সে। সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ নিয়েছে!অন্যায় হয়েছে? অভিনব ভুরু সংকুচিত করে ফিসফিস করে বিপন্ন স্বরে বলল,
- এটা কী করছ আশা!
আশা আচমকা নিজের হৃদয়োচ্ছলতা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে মুখে হাত চেপে, হাঁটুতে মুখ গুঁজ ঝরঝর করে কেঁদে দেয়,
- আমি কিছু জানিনা, উনি আমাকে—
কথাটা শেষ করতে না পেরে কান্নার মহড়া দ্বিগুণ হলো আশার। অভিনব তৎক্ষনাৎ সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিতে আশার পিঠে হাত রেখে বলল,
- ওকে ওকে ওকে,আমি জানি আশা। একদম উচিত কাজটাই করেছ। ভয় পেও না৷ আমি আছি হাঁ?
আশা মুখ তুলে বলল,
- এখন কী হবে?
অভিনব চোখ সরিয়ে চিন্তাক্লেশে বলল,
- পুলিশকে তুমি সত্য কথাটা বলবে। কিচ্ছু লুকাবে না। বাকিটা আমি দেখব।
- পুলিশ! পুলিশ কেন! আশার কণ্ঠ উঁচু হয়, কান্নার দলায় বিকৃত হয়,ওরা আমাকে মেরে ফেলবে গায়ক। আপনি কিছু একটা করুন।
অভিনব অটল। আইন বহির্ভূত কিছুই সে করতে পারবে না। যদিও দেশে নীতির চেয়ে নেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় আইনকানুন ক্ষমতাসীন রাঘববোয়ালদের হাতের মুঠোয়! সেই ক্ষমতা তার হাতেও কম নয় বই কি। কাজেই প্রাণেশ্বরী আশাকে নির্বিচারে জলাঞ্জলি দেওয়াও সহজ নয়। অভিনব একপলক জঘন্য মৃত্যুলব্ধ লাশটার দিকে তাকিয়ে আশাকে আশ্বস্ত করে,
- লুকানো সমাধান নয়। চিন্তা করো না। আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন তোমার ওপর কোনো আঙুল উঠলেই সেই আঙুল আমি ভেঙে দিব৷
খবর পেয়ে পুলিশ আসতে দেরি হয় না। পিছুপিছু দলবেঁধে সাংবাদিকরাও এসে ভিড় জমায় বডিং এর বাইরে। অকুস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে অফিসার বুঝতে পারে মূল ঘটনা কী! তবুও নিহত যেহেতু প্রভাবশালী তাই তদন্তেরও একটা ব্যাপার চাপবে ভবিষ্যতে। কাজেই আশাকে একেবারে মুক্তি দিয়ে দেওয়া যায় না। এতে উপরমহল ক্ষেপার সম্ভাবনা শতভাগ। তিনি চিন্তিত অভিনবকে আশ্বাস দেন,
- অভিনব সাহেব, আশাকে পুলিশ হেফাজতে রাখতে হবে। স্যরি।
অভিনব বিষয়টা একইভাবে অনুমান করে রাজি হয়ে মাথা নাড়ল,
- বেশ,ওঁকে বোরকা পরিয়ে নিয়ে যান। ও এভাবে চলতে কনফোর্ট ফিল করে না। তাছাড়া প্রাইভেসির একটা ব্যাপার আছে।
- বোরকাটা একটি জরুরি নমুনা। ওটায় হাত দেওয়া যাবে না। আমরা ওকে চাদর আর হেলমেট পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। —আপনি বলেছিলেন ঘটনার সময়ে আশা আপনাকে কল দিয়েছিল,আমার বিশ্বাস আপনার ফোনে অটে রেকর্ডার আছে!
- আছে, কিন্তু সেটা আগে সাংবাদিকদের হাতে পৌঁছাবে,এরপর পুলিশের কাছে।
কোনো দুরভিসন্ধি না থাকায় পুলিশ অফিসার অভিনবেে বৃথা চাপ প্রয়োগ না করে প্রয়োজনীয় সব নির্দেশনা দিয়ে লাশ সরানোর আদেশ দেন।
একদম শেষ সময়ে আশাবরি অভিনবের দিকে তাকাল। কী সরল আর পরিচ্ছন্ন দৃষ্টি! কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে সে মন কেমন করা গলায় বলল,
- গায়ক,আমাকে কবে নিতে আসবেন?
অভিনব অন্তঃস্থলে কে যেন বেগার্তে শর নিক্ষেপ করল। নিজেকে সে কোনোপ্রকার নিয়ন্ত্রণ করে।
- আসব আশাবরি। খুব শীগ্রই। তুমি দোষী নও। বরং তুমি একজন কুলাঙ্গারকে উচ্ছেদ করেছ।
অফিসারের দিকে তাকিয়ে বলল,
- আমি নিশ্চিত যাচাই করলে এই লোকের বিরুদ্ধে শত নারী কর্মচারীর সম্ভ্রমহানির অভিযোগ পাওয়া যাবে।
আশাবরিকে দু'জন মহিলা পুলিশ বড় একখানা সাদা চাদর আর হেলমেট পরিয়ে বগলদাবা করে নিয়ে যায়। বেচারি বন্দিনী নয়নচকোর টলটলে চোখদুটো মেলে অসহায় দৃষ্টিতে অভিনবের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে থাকে আর সামনে অগ্রসর হয়। মুখভর্তি তার শুকনো রক্ত! অভিনব সারা তনু গলে যেন নিরাশার দীর্ঘশ্বাস নির্গমন হয়। সে ভাবে, আর কোন্ মেয়ের এমন কঠিন জীবন আছে? এই মেয়েটার কপালের লিখন কেন এমন? এমনই ইঁদুরপ বরাত নিয়ে পাঠালে খোদা,তবে এতো দেহসৌষ্ঠবই-বা কেন দিলে?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সপ্তাহ গড়ালো আশাবরি কারাগারে। তার বিরুদ্ধে কোম্পানির মালিককে ষড়যন্ত্র করে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা আশু কোর্টে উঠল। এরমধ্যেই প্রমাণ লুপাটসহ আশাবরিকে ফাঁসিয়ে হারানো সম্মান ফিরিয়ে আনতে নিহতের পরিবার কঠিন দাবার চাল চালছে ! দেশের সেরা লয়ারের হাতে পায়ে ধরে ধরে মামলা লড়তে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু লাভ বিশেষ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। অভিনবের মোবাইলের ফোন রেকর্ডটা সোস্যাল মিডিয়া সহ দেশের সর্বত্র সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে গেছে। কাজেই জনবল এখন আশার দিকেই। উপরন্তু, অভিনবের ধারণামতোই ওই কোম্পানির অনেক শারীরিকভাবে নির্যাতিত মহিলারা পরিচয় গোপন রেখে সংবাদ মাধ্যমে মালিকের বিরুদ্ধে সরাসরি ধর্ষণের অভিযোগ দিলেন। এতেকরে বাদীপক্ষ ততোধিক দুর্বল হয়ে পড়ল। সুতরাং ভিত্তি থেকেই প্রতিপক্ষের মামলা যথেষ্ট নড়বড়ে এবং বৃথা বলে জ্ঞান হলো সবার কাছে। অপরদিকে বিপর্যস্ত আশাকে দিনকতক নিয়মিত কেউ না কেউ দেখতে এলো আর সান্ত্বনা বাণী শুনিয়ে গেল। গায়ক তো প্রতিদিন আসে। আসে,বসে, জ্ঞানগর্ণ কথা বলে,মাথায় হাত বুলিয়ে পাথর আশাকে প্রসন্ন করার চেষ্টা করে। ইহিতা আর তারিন যুগপৎ এলো একদিন। কথায় কথায় তারিন রোষাবিষ্টা হয়ে বলল,
- বেশ করেছিস। একদম ভেঙে পড়বি না। তুই তো বাঁচিয়ে রাখিসনি। আমি হলে একেবারে যন্ত্র কেটে দিয়ে জিন্দালাশ করে দিতাম।
সময় গড়াল আরো। অভিনব পরিস্থিতি বুঝতে চুপ করে রইল। আদালতে নিতান্ত অযাচিতভাবে যুক্তি উপস্থাপন আর উত্তরোত্তর মিথ্যাচার করে ঘটনা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে শেষে দশাসই চেহারার জর্জ আশাকে দশবছরের অশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া দিল। তবে এটা প্রমাণিত হলো যে আশাবরি নিতান্ত সম্ভ্রম রক্ষার্থে এবং আত্মরক্ষার্থে এই কাজ করেছে। এজন্যই তার সাজা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে(?) মামলা যখন নিষ্পত্তি করে জর্জ কেটে পড়ল অভিনব তখন বিপক্ষ দলের লয়ারের দিগ্বিজয়ী হাসির ওপর মুখ বাঁকিয়ে বলল,
- হাইকোর্টে আমি আপনাকেই আবার দেখতে চাই৷
লয়ার শ্লেষ মাখিয়ে প্রত্যুত্তর ছুঁড়লেন,
- নির্বাচনে আমি আপনাকেই ভোট দিব অভিনব। একটু দয়া করবেন!
.....
রায় দেয়ার পর কোর্টের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের তোপের মুখে অভিনব হাসির লহর ছড়িয়ে দিয়ে বলল,
- আপনাদের দৌড়াদৌড়ি একটু বেড়ে গেল। চোখ-কান খোলা রাখবেন। কোথায় কী ঘটে তার ঠিক নেই!
সাংবাদিকেরা জানতে চাইল,
- আসলে কে এই ভাগ্যবতী আশাবরি।যার জন্য আপনি এতো আকুল! আপনার কারিশমায় তার একটা ছবিও তোলা গেল না। এর রহস্য কী?
- আশাবরি ভাগ্যবতি নয়। সে অদৃষ্টের পরিহাসের স্বীকার হওয়া একজন ভাগ্যাহত মেয়ে। সে চিরকাল আড়ালে রহস্যময় হয়েই থাকবে। শুধু আশাবরি বলেই নয়,আমি আজ পর্যন্ত সেখানে অন্যায় অনাচার দেখেছি সেখানে রুখেছি। ভবিষ্যতেও রুখব ইনশাআল্লাহ।...
ঠিকঠিক দুইদিন পর গোটা চট্টগ্রামে নগরে যেন বোমা বিস্ফোরণ হলো! অভিনবের উদাত্ত আহ্বানে দলে দলে সাধারণ আপামর, ছাত্রসমাজ রাস্তাঘাট ব্যানার, প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে অবরোধ করল। শ্লোগান উঠল,
“আশাবরির সাজা কেন? লম্পটের প্রতি মায়া কেন? জবাব চাই জবাব চাই।”
“আশাবরির নিঃশর্ত মুক্তি চাই”
ইত্যাদি ইত্যাদি...
বন্দরের রাস্তা বন্ধ, এয়ারপোর্টের রাস্তা বন্ধ, তথা প্রধান প্রধান সব যোগাযোগ মাধ্যম জলসাধারণের উশৃংখল পদচারণায় দলিতমথিত! সবার একটাই দাবি, নির্দোষ আশাবরির মুক্তি চাই। অথচ গুটিকতক মানুষ ভিন্ন বাকিরা জানেও না মূলত আশাবরি কে! তবু সাধারণ জনগণ অভিনবের প্রতি অগাধ বিশ্বাস আর ভালবাসাকে মিথ্যা প্রমাণিত না করে একডাকেই পথে নেমে এসেছে। বলা বাহুল্য অভিনবের সান্নিধ্যের লোভেও অনেকে এসেছে!... বাধ্য হয়ে পুলিশ এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ করল। কিন্তু কোনো কাজ হলো না। প্রবাহমান জল যেমন তুচ্ছাতিতুচ্ছ বালির বাঁধ দিয়ে আটকানো যায় না তেমনিভাবে জনস্রোতকেও পুলিশের দুয়েক ঘা লাঠিচার্জে বিন্দুমাত্র টলানো গেল না। এভাবে প্রায় দেড় দিন অতিবাহিত হবার পর অভিনবের ফোনে যোগাযোগ মন্ত্রীর কল এলো। তিনি রোষকষায়িত কণ্ঠে বললেন,
- অভিনব, দেশের একজন পরিচিত মুখ আর দলের একজন ভবিষ্যৎ রক্ষাকারী হিসেবে আমি তোমাকে স্নেহ করি। কিন্তু এই যে বাড়াবাড়ি করছ এটা কি ঠিক? তুমিতো অর্থনীতিকে একদিনেই ধসিয়ে দিচ্ছ!কয়দিন পর পেঁয়াজ সংকটে পড়বে। বন্দরে মণকে মণ পেঁয়াজ আটকে আছে। হচ্ছেটা কী? কে ওই আশাবরি?
অভিনব জবাব দিল,
- আশাবরি কে সেটা মুখ্য নয়। তার সঙ্গে কী অবিচার হয়েছে সেটাই দেখার বিষয়। আপনারাও তো সুন্দরী একটা মেয়ে আছে। ওইযে নাবিলা না কী যেন নাম! ফটোগ্রাফি করে দেশে দেশে...। ভাবুন তো একবার। তার সঙ্গে যদি এই ঘটনা হতো? সুবিচার কি শুধু প্রভাবশালীদের জন্যই তোলা?
- তোমার আস্পর্ধা দেখে অবাক হচ্ছি। তোমার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার আগেই যদি তুমি অরাজকতা সৃষ্টি করো তাহলে পরে তোমাকে সাহায্য করা অসম্ভব হয়ে পড়বে বাপু! মানলাম দেশখ্যাত গায়ক হিসেবে তোমার আলাদা প্রতিপত্তি আছে। কিন্তু সেটার অপব্যবহার তো মানা যায় না।
অভিনব ছোট করে বলল,
- আনিস সাহেব, আমার আস্পর্ধার জন্য দুঃখিত। আপনি বিচক্ষণ মানুষ। বিষয়টা ভেবে দেখবেন। আপনার মেয়ে হলে আপনি কি একই কথাই বলতেন? যে নিহত হয়েছে সে শত মহিলা কর্মচারীর সম্ভ্রমহানী করেছে। এটা কিছু ফেলে দেওয়ার মতো?
মন্ত্রী সাহেব দীর্ঘক্ষণ চুপ করে থেকে অবশেষে দলদলে কণ্ঠে বললেন,
- আমি দেখছি কী করা যায়। তোমার উশৃংখল চ্যালাদের হটাও আগে।
অভিনব ধূর্ত হেসে মোবাইলটা নামিয়ে রাখল। সে বিলক্ষণ জানে জনগনকে উসকে রাজপথে নামিয়ে দেওয়া ঝুকিপূর্ণ। তবুও আশাবরির জন্য সে যেকোনো ঝুঁকি নিতে রাজি আছে। মূলত তার সহযোদ্ধারা নির্বাচনের আগে নিজেদের প্রভাব কতোটুকুন তা দেখিয়ে দেওয়ার জন্যও নেমেছে বই কি! এক কাজে দুই কাজ আর কি! রথও দেখা হলো কলাও বেচা হলো!
দুই তিনদিন পরের কথা।
অভিনব কারাগারে আশাবরির সুমুখে বসে। হাতে দু'টো বিরিয়ানির প্যাকেট আর অন্য প্যাকেট ভর্তি সিঙ্গারা। কারাগারের ঢলঢলে বাসি ডালে মৃত পোকা দেখার পর অভাগী দু'দিন ধরে কিচ্ছুটি মুখে তুলেনি৷ কারারক্ষীর কাছে খবর শুনে তৎক্ষনাৎ খাবার হাতে ছুটে এসেছিল অভিনব। অভিনব নির্দ্বিধায় আশাবরির সুমুখে বসতেই আশা দুবলা অনাহার চোখদুটো তুলে দেখল,এই কয়দিনের বিরতিহীন ঝুট-ঝামেলায় অযত্নের ছাপ পড়েছে মানুষটার মুখে। একরাশ দাড়িগোঁফ বর্ধিত হয়ে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা! তবুও যেন কী অদ্ভুত সৌম্য, পরিপাটি মানুষটা। লোকটা এতো সুদর্শন কেন কে বলবে! একটা মিহি সুগন্ধ ছুটে আসছে তাঁর গা থেকে। আহা... আশাবরি দুর্বলভাবে জানতে চায়,
- কেমন আছেন?
অভিনব খাবারের প্যাকেটগুলে পাশ থেকে আশার সামনে এনে রেখে প্রসন্নভাবে বলল,
- বেশ ভালো।
আশাবরির দু-চোখ মুক্তির আনন্দে ঈষৎ চিলিক দিয়ে ওঠল,
- কোনো ভাল খবর?
- এখনো পর্যন্ত না। তবে খুব শীগ্রই পেয়ে যাবে। যোগাযোগ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তাকে একটু দুর্বল জায়গায় আঘাত দিয়ে দিয়েছি। কাজ হয়ে গেলেই বিয়েটা সেরে ফেলব ইনশাআল্লাহ। তোমাকে বেঁধে রাখতে শক্ত বন্ধনের বিকল্প নেই৷ ঘরছাড়া কন্যা একটা!
আশা ঈষৎ রাঙ্গা হয়ে চুপ করে রইল। অভিনব দেখল মেয়েটাকে৷ পিঠময় ছড়ানো দীর্ঘদিন চিরুনি না লাগা রুক্ষ-শুষ্ক চুল। মলিন জামাকাপড়, ম্লান মুখ,দিশেহারা গভীর দুটো চোখ। সুডৌল-পুষ্ট শুকনো ঠোঁটজোড়া একে-অপরকে জড়িয়ে আছে অসহায়ভাবে। কিছুক্ষণ পর আশা ক্ষীণ একটা শব্দ করে ঠোঁটের জোড়া ছাড়িয়ে হতাশাভরে বলল,
- আপনি আমার সঙ্গে মজা করছেন অথচ আমি—
- তো কী? এটাও অভিজ্ঞতা। অভিনব আশার নৈরাশা নস্যাৎ করার চেষ্টা করে, ছাত্র রাজনীতি করার সময় এক ছদ্মবেশীকে পিটিয়ে আমিও কি বিনাদোষে ছ'মাস জেল খাটিনি? ওসব কিছু না।
অনেকক্ষণ নীরবে কাটল। অভিনব ভাবতে লাগল খাবারের কথা কীভাবে আশাকে নিজের আকুলতা প্রছন্ন করে বলা যায়। ভেবে ভেবে একসময় বলল,
- ইয়ে আশাবরি,অনেক দুশ্চিন্তা হয়েছে। এবার এগুলো খেয়ে নাও।
আশা উন্মনা হয়ে কিছু একটা ভাবছিল,কিঞ্চিৎ চমকে ওঠা গলায় জানতে চাইল,
- কী এগুলো?
- দুটোতে বিরিয়ানি, একটাতে সিঙ্গারা।
কষ্টের মধ্যেও আশাবরি শিরদাঁড়া টানটান করে দুই ঠোঁটে প্রান্তভাগে সুক্ষ্ম মেদুর হাসি বলয় তুলল। পরক্ষণেই প্রত্যুত্তরে কিছু না বলে আশা সর্বপ্রথম সিঙ্গারা প্যাকেটটি নিজের কোলে তুলে খচখচ করে কাগজ ছাড়িয়ে তাড়াতাড়ি একটা তুলে নিয়ে তৃপ্তিভরে মুখে পুরল৷ আশ্চর্যরকম অনুভূতিতে অভিনব মুখ ফিরিয়ে হাসল! উহঃএই মেয়েটা এতোটা নির্মল না হলেও কি হতো না! তার অমানবিক নির্মলতাই তো অভিনবকে নিজের সীমা পেরিয়ে দুঃসাহসিক দুঃসাধ্য কাজগুলোতে হাত দিয়ে বাধ্য করছে! সে মানুষ নয় তার মানসী! একটা সময় এমন একজন হাবাগোবা নারীই তার কল্পনার রাজ্যে সর্বদা বিস্তার করতো। আশাবরি একসঙ্গে দু-তিনখানা সাবাড় করে একটু ক্ষান্ত হয়ে কথা বলল,
- দুইদিন খাইনি। আপনিও আসেননি। রাগ হয়েছিল খুব।
তার কণ্ঠে সরল অভিমান!
অভিনব নিঃশব্দ-প্রশস্ত হেসে ঈষৎ ঝুঁকে বলল,
- রাগ হয়েছিল? কই আমি তো টের পাইনি?
আশা মুখ নামিয়ে চুপ করে খেতে লাগল। অভিনব হেসে ওঠে বলল,
- সে যাইহোক, খালি পেটে এখন আর ওতো সিঙ্গারা খেও না। শেষে মেশিন অটো হয়ে গেলে দৌড়াদৌড়ি করে কে?
আশাবরি একথারও উত্তর না দিয়ে কিছুক্ষণ সলাজে চুপ করে আস্তে আস্তে খেয়ে চলল। এই জেলখানায়ও মানুষটার ভাঁড়ামো যায়নি! এতো সুন্দর মুখে এমন বিচ্ছিরি কথা কভু মানায়? বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর আশা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে সরু কণ্ঠে বলে,
- গায়ক,আমাকে কবে নিয়ে যাবেন?— আমি এখানে দশবছর কীভাবে থাকব? আমিতো অন্যায় করিনি!
অভিনব জানে ফাঁড়া অনেকটাই কেটে গেছে। সবরকম দাঁও মারা শেষ ইতোমধ্যে৷ তবুও সে আশাকে কিছু বলল না। প্রতিবারের মতো সান্ত্বনা বাণী ছুঁড়ল শুধু। যাওয়ার সময় হয়ে এলে অভিনব উঠে দাঁড়িয়ে অবশিষ্ট খাবারগুলোতে দৃকপাত করে বলল,
- ওগুলো তবে রাতে খেও। আমি একজন রক্ষীকে কিছু টাকাপয়সা দিয়েছি। ও তোমাকে লুকিয়ে খাবার এনে দেবে আর কোনো প্রয়োজন থাকলে তাকে জানাবে। আসি কেমন?
বলতে বলতে প্রস্থানোদ্যত হয়ে নিচু হয়ে সেল থেকে বেরিয়ে এলো অভিনব। আশাবরি ত্বরিত এগিয়ে এসে দু'টো লোহার শিক ধরে ব্যাকুলভাবে বলে ওঠে,
- কাল আসবেন?
কথা শুনে অভিনব ঘুরে তাকাতেই আশাবরি সসংকোচে মাথা নিচু করে নখ দিয়ে জং ধরা লোহার শিক খুঁটে। বুকের কোথাও একটা খচখচে চাপা বেদনা জেগে ওঠে তার।
অভিনব একটা নিশ্বাস টেনে লোহার শিকের ফাঁকে হাত গলিয়ে আশার যত্নবিবর্জিত গণ্ডে আলগোছে হাত রাখে,
- প্রতিদিন তো আসা যায় না আশাবরি। একটু ধৈর্য ধর হ্যাঁ?
আশাবরি বামে মাথা দুলিয়ে সায় দেয়। অভিনব মুচকি হেসে আশার গালে মৃদু মৃদু দু’টো চাপড় দিয়ে এক সিন্ধু অতৃপ্ততা নিয়ে বেরিয়ে আসে। আহা, খাঁচার ভিতরের বন্দি পাখির মতোন মেয়েটা কেমন ছটফট করছে! ভাবলেই অভিনবের রাতের ঘুম যেন হারাম হয়ে যায়। অন্যদিকে এতোকিছুর পর মা মত বদলায় কি না তা নিয়েও সে সন্দিহান। হাজার হোক,সমস্যায় জর্জরিত একটা মেয়েকে কেই-বা নিজের ছেলের বউ করতে চাইবে? আর যদি মা আশাবরির সংবেদনশীল সত্যটাও কোনোরকমে জেনে যান? তবে? তবে শুধু মা কেন? দুলু থেকে শুরু করে বাড়ির ঝি-চাকর পর্যন্ত বাড়ির কেউই চাইবে না আশাবরি এ-বাড়ির বধূ বেশে আসুক। কারণ পিতৃপরিচয়হীনদের শুধু মানুষ ওপর থেকে করুণাই করে চলার পথের সাথী কেউই করতে চায় না। এটাই কঠিন এবং ধ্রুব সত্যি। সুতরাং যা করার তাকেই করতে হবে এবং তা খুব দ্রুতই করতে হবে।
অল্পক’দিন পর মামলা হাইকোর্টে উঠল। আবারো সেই নাকউঁচু, কুচক্রী, আঁতেল লয়ারের মুখোমুখি হলো অভিনব। তিনি স্বভাবসিদ্ধ সুরে বললেন,
-আবার দেখা হয়ে গেল অভিনব। শুধু শুধু টাকা নষ্ট করে এতদূর আসলেন। যে লাউ সে কদু। আপনার আশাই পরিকল্পিত খুনি!
চলবে...