পর দিন দুপুরে আমি আর মিনু খালা খেতে বসেছি ।
- খালামনি তোমার ফোনটা আমাকে ঘন্টা দুয়েকের জন্য দেয়া যাবে ?
- আমার ফোন দিয়ে তুই কি করবি ?
- আমার ফোনটা যার কাছে তার সাথে দেখা করতে যাবো ।
- কি বলিস ? তুই একা যাবি ?
- হুম , তাতে সমস্যা কি ? আমি তো আর ছোট নই ।
- তোর মা জানে ?
- আমার ফোন যে হারিয়ে গেছে আম্মু তো সেটাই জানে না । আর ফোন আনতে আমি একা যাব সেটা জানবে কি ভাবে ?
- আচ্ছা তুই আমাকে একটা কথা বলতো , তুই যে আমার সাথে এত খোলামেলা ভাবে কথা বলিস , তোর মার সাথে কেন এমন দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলিস বলতো ?
- তুমি কি মনে করো আমি আম্মুর সাথে এভাবে মিশতে চাই না । আমার খুব ইচ্ছে করে জানো , আমার সব কথা আম্মুর সাথে শেয়ার করতে , কিন্তু আব্বুর ঘটনার পর থেকে আম্মু কেমন জেনো হয়ে গেছে । সব কিছুতেই একটু দূরত্ব বজায় রাখতে চায় । তুমি চলে যাবার পর তো সেটা আরো বেড়েছে ।
- তোর মা না হয় দূরত্ব বজায় রাখে তুই তো সেটা ভেঙ্গে কাছে যেতে পারতি কিন্তু তুই তো তা করিস নি ।
- তুমি বুঝি আম্মুকে চেনো না , আম্মু যা বলে বা করে সেটার কেউ ব্যাতিক্রম করুক আম্মুর সেটা একে বারেই পছন্দ করেন না ।
- হুম বুঝলাম ।
- বললে না তো আমি তোমার ফোনটা নিতে পারবো কি না ।
- আমি তোর সঙ্গে যাই , কি বলিস ?
- তোমাকে নিলে তো ভালোই হতো , কিন্তু বাসায় এসে আম্মু যখন দেখবেন । আমরা দুজনেই বাসায় নেই তখন । আচ্ছা আম্মু গিয়েছে কই ? কিছু বলেছে ? আজ তো আম্মুর অফিস নেই ।
- কিছু তো বলেনি , বলেছে আসতে দেরি হবে । আমরা জেনো দুপুরে খেয়ে নেই ।
- আচ্ছা তুমি বরং বাসায় ই থাকো , আমি যাব ফোনটা নিয়েই চলে আসবো ।
- তুই একা যাবি ? যদি লোকটার মতলব খারাপ হয় । যদি কোন বিপদে ফেলে দেয় তোকে ।
- ফেলতে পারবে না , সি আর বি তে দেখা করবে । বিকাল বেলা ওখানে হাজার লোকের আনাগোনা হয় । এত মানুষের ভিড়ে কিছু করার সাহস ই হবে না ।
- তারপরও তুই একা একটা মেয়ে ।
- চিন্তা করো নাতো , ফোনে কথা বলে তো ভদ্রলোক ই মনে হলো ।
- তুই বরং অন্তূ কে নিয়ে যা ।
- কাল আম্মু কি বলেছে ভুলে গেলে । কথা বলতে বারণ করেছে আর তুমি বলছো ওকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে যেতে , তাহলে তো ঘরে কেয়ামত চলে আসবে । এমনি আম্মু রেগে আছেন আমার দুইদিন বাহিরে থাকা নিয়ে ।
- ওই দুদিনের ব্যাপারটা আলাদা , আমি তোর আম্মুকে সব বলেছি । তোর আম্মু বলছিলো উনাদের ফোন করবে , তোর কাছ থেকে নম্বরটি নিতে বলেছে আমাকে ।
- আম্মু ফোন করে কি বলবে বলো তো ?
- কি আর বলবে , কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে । সেটাই স্বাভাবিক তাই না ।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি রুমে এলাম , যাওয়ার আগে কি একবার ফোন করে দেখব । আজ ভদ্রলোক আসবেন কি না । মিনু খালার কাছে ফোন আনতে রুম থেকে বের হতে যাবো তখনই দেখি মিনু খালা আমার রুমে ঢুকলেন ।
- আমি তো তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম ।
- কেন ?
- তোমার ফোনটা দাও তো , ওই লোক কে একটা ফোন করে দেখি । আজ আসবে কি না ।
মিনু খালা কিছু না বলে ফোনটা আমার হাতে দিলেন । আমি আমার নম্বরে ফোন দিলাম , রিং হচ্ছে কেউ ফোন ধরছে না । বেশ কয়েক বার চেষ্টা করার পর , ফোনটা মিনু খালাকে দিলাম ।
- কি রে কি হলো ? ফোন বন্ধ করে রেখেছে ?
- না , রিং হচ্ছে কিন্ত কেউ ধরছে না ।
- মনে হয় কাজে ব্যস্ত ।
- হবে হয়তো ।
- ওই লোক ফোন না করলে শুধু শুধু যাওয়ার দরকার নাই । মোবাইল গেলে যাক আর একটা কিনে নেয় যাবে ।
- দেখিনা , পাঁচটা বাজতে এখনো অনেক দেরি ।
রোদেলা আজ একবার ও ফোন করেনি , এই মেয়েটার তো আর একবার ফোন করে নিশ্চিত হওয়া উচিত ছিল যে আমি আজ আসবো কি না । নাকি ধরেই নিয়েছে যে আজ আমি যাচ্ছি ।
- তুহিন খেতে আয় ।
মায়ের ডাকে তুহিনের চিন্তায় ছেদ পরলো ।
- মা আসছি ।
বলেই তুহিন নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এলো । তুহিন কে দেখে মিসেস রামিসা জানতে চাইলেন ।
- কিরে আজ কোথাও বের হোস নি যে ? শরীর খারাপ লাগছে ।
- কই না তো । বিকেলে বাহিরে যাব তাই আর সকালের দিকে বের হলাম না । তা তোমার ঐ রোদেলা ফোন করে ছিলো ?
- আমাকে করে নি , আমার নম্বর তো ওর কাছে নেই । তবে গতকাল তোর বাবাকে ফোন করেছিলো । ঠিক মত বাসায় গিয়েছে , আর আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ।
- যাক মেয়েটি তাহলে অকৃতজ্ঞ নয় ।
-অকৃতজ্ঞ হতে যাবে কেন ? যাওয়ার সময় ই তো কতবার করে ধন্যবাদ জানিয়ে গেছে । বলেছে এই ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারবে না ।
- ভদ্রতা জানে তাহলে ।
- তুই মেয়েটিকে এত খারাপ ভাবছিস কেন বলতো ?
- মা তুমি আজকাল কার মেয়েদের চেনো না । সবাই স্বার্থপর । শুধুমাত্র নিজের টাই বুঝে ।
- তুই মনে হয় অনেক মেয়ে কেই চিনিস ।
- চিনবো না কেনো ? স্কুল, কলেজ ভার্সিটিতে এখন অফিসে কম মেয়ের সাথে তো আর মেশা হলো না ।
- আমার ছেলে তো তাহলে ভালোই মেয়ে চেনে । বাদ দে এসব , তোর কি কোন পছন্দ আছে ? মা কে বলতে পারিস ।
- আছে না ছিলো ।
- ছিলো মানে কি ?
- ছিলো মানে হলো একজন কে পছন্দ করতাম , এখন আর করি না ।
- কই কখনো বলিস নি তো মাকে ?
- ভেবেছিলাম চাকরিটা পার্মানেন্ট হলে তোমাকে জানাবো । কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গিয়েছে ।
- কি নাম ছিলো রে মেয়েটার ?
- নীলা আমার সাথে ভার্সিটিতে পরিচয় ।
- কিন্তু সম্পর্কটা কে ভেঙেছে তুই না নীলা । তোর যা খুঁতখুঁতে স্বভাব আমার তো মনে হয় তুই কিছু করেছিস ।
- মা তুমি শুধু আমার দোষ টাই দেখো । ওই যে বললাম না , মেয়েরা শুধুমাত্র নিজের টা
বুঝে । আমার চাকরী কবে পার্মানেন্ট হবে সে অপেক্ষায় সে বসে থাকবে কেন । অস্ট্রেলিয়ার ছেলে পেয়েছে , ছেলে অনেক টাকা ইনকাম করে । এমন ছেলে পেলে আমার জন্য কেন সে অপেক্ষা করবে বলো ।
- ওদের কি বিয়ে হয়ে গেছে ?
- কেন বলতো ?
- না এমনি জানতে চাইলাম ।
- হ্যা , গত মাসে নীলার বিয়ে হয়ে গিয়েছে ।
তুহিন খাওয়া দাওয়ার পর মায়ের সাথে অনেক্ষন গল্প করে নিজের রুমে গেলো । গিয়ে দেখে রোদেলার ফোনে ছয়টা মিসড কল উঠে আছে । ছয়টা মিসড কল ই এসেছে মিনু খালার নম্বর থেকে ।
তুহিন ফোন ব্যাক করলো ।
- হ্যালো , আসসালামুয়ালাইকুম ।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম ।
- ফোনটা রোদেলাকে দেয়া যাবে ।
- একটু লাইনে থাকুন ।
তুষার ফোন কানে দিয়ে বসে রইলো , যিনি ফোন ধরেছেন উনি হয়তো মিনু খালা হবেন ।
- হ্যালো
- আপনি কি আজ আসবেন ?
- হ্যা । আপনি ?
- আমি তো আসবই , আপনার ফোনটা তো আর আমার কাছে রেখে দিতে পারি না ।
-তাহলে পাঁচটায় দেখা হচ্ছে । কিন্তু আমি আপনাকে চিনবো কি ভাবে ?
- আপনাকে চিনে নিতে হবে না , আমি ই আপনাকে চিনে নেব । যেখানে দাঁড়াতে বলেছি ওখানেই
থাকবেন ।
- জী আচ্ছা । আল্লাহ হাফেজ ।
- আল্লাহ হাফেজ ।
তুহিন ফোন রেখে ঘড়ি দেখলো , সাড়ে তিনটা বাজে । হাতে এখন ও সময় আছে । মোবাইলটা এভাবেই দিব, একটা প্যাকেট হলে ভালো হতো ।
- কিরে রোদেলা তুই কটায় বের হবি ?
- খালামনি আসরের নামাজটা পড়ে বেরহই । নয়তো দেখা যাবে বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় গিয়েছি তখন আযান পড়ছে ।
- ঠিক আছে ।
- আচ্ছা তোমার ফোনে , তোমার কল আসলে কি বলবো ।
- আমাকে ফোন দেবার তো কেউ নেই । দিলে হয়তো তোর আম্মু দিতে পারে ।
- আম্মু ফোন দিলে কি বলবো , ধরেই তো জানতে চাইবে তোমার ফোন আমার কাছে কেন ? তখন ।
- তুই ফোন রিসিভ করিস না । ফোন না ধরলে ঘরের নম্বরে ফোন দেবে । তখন কিছু একটা বলে দেয়া
যাবে । তুমি কিন্তু দেরি করবে না ।
- ঠিক আছে খালামনি ।
আমি নামাজ পড়ে কাপড় পাল্টে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম । নিচে নেমে ঘড়ি দেখলাম চারটা বিশ বাজে , সময় মত পৌঁছাতে পারবো কিনা সন্দেহ হলো । রাস্তায় কোন খালি সি এন জি নেই । আমি যখন সি এন জি পেলাম তখন চারটা পঞ্চাশ বেজে গেছে । আমার টেনশন হতে লাগলো । লোকটি যদি অপেক্ষা না করে চলে যায় । আমার যাওয়া টাই বৃথা হয়ে
যাবে । আমি খালামনির নাম্বার থেকে ফোন দিলাম ফোনে ব্যালেন্স নেই । মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো । আমার উচিত ছিলো বের হবার আগে ব্যালেন্স চেক করা । গাড়ি থামিয়ে টাকা ঢুকাতে গেলে সময় নষ্ট হবে তাই ঠিক করলাম । ওখানে যাওয়ার পর দেখা যাবে । আমি যখন সি আর বি তে পৌছালাম ঘড়িতে তখন পাঁচটা বিশ । গাড়ি থেকে নেমেই আমি আসে পাশে তাকাতে থাকলাম । এখানে তো অনেক মানুষ , ওই লোক কে কিভাবে খুঁজে পাবো ।
- আপনি অনেক লেট করে এসেছেন ।
আমার সামনে অনেক হ্যান্ডসাম একটা ছেলে হাসতে হাসতে বললো । আমি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম এই ছেলের সাথে তো আমার জীবনে ও দেখা হয়নি । তাহলে আমার ফোন এর কাছে গেলো কি ভাবে । দেখে তো চোর ও মনে হচ্ছে না । আর সবচেয়ে বড় কথা এই লোক আমাকে এত সহজে চিনলো কি ভাবে ?
- মিস রোদেলা কি ভাবছেন ?
- সরি , বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়ি পাচ্ছিলাম না । আমার ফোন এনেছেন ?
- আপনি আমাকে এতক্ষন দাঁড় করিয়ে রেখেছেন আগে চলুন কোথাও বসি । তারপর না হয় ...
- দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য সত্যি আমি দুঃখিত । ফোনটা দিয়ে দিলে আপনাকে আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হতো না ।
- আপনি তো অদ্ভুত মানুষ , আমি আপনার ফোন ফেরত দিতে আসলাম । এক কাপ কফি তো অফার করতে পারেন ।
- সরি , আপনি কি খাবেন বলুন । আমি বিল পরিশোধ করে দিচ্ছি ।
- আমি তো একা খাবো না । আপনি আমার সাথে ভেতরে গিয়ে বসবেন , আমাদের পরিচয়টা ই তো হয় নি । পরিচয় পর্ব শেষ করবো তারপর কফি এবং যাবার আগে আমি আপনার ফোন আপনাকে বুঝিয়ে দেবো ।
- এতো ঝামেলা কি দরকার বলুন । ফোনটি দিয়ে দিন , আমি আপনার খাবারের বিলটা দিয়ে দিচ্ছি ।
- আচ্ছা আপনার একবার ও এটা জানার কৌতূহল হচ্ছে না যে । আমি কে ? আপনার ফোনটা আমার কাছে এলো কি ভাবে ?
চলবে .......
✍️রেহানা হক রেনু
গত পর্বের লিংক -১১
https://m.facebook.com/groups/526513374820830?view=permalink&id=849406749198156