আমি_রোদেলা

0 1
Avatar for Nipa1234
3 years ago

- হচ্ছে না , তা বলবো না । তবে জেনে কি করবো বলুন ? ফোনটা পেলে তো আপনার সাথে যোগাযোগ করার আর কোন কারণ থাকবে না । শুধু শুধু কেন সময় নষ্ট করবো বলুন । ফোনটা দিয়ে দিন আমি চলে যাই ।

- আপনি তো সত্যি খুব আজব মানুষ ।

- আপনি যা ইচ্ছা ভাবতে পারেন , আমার কোন সমস্যা নাই । শুধু আমার ফোনটি দিয়ে দিন তাহলেই হবে ।

- আপনি আমার সাথে আগে কফি খাবেন কথা বলবেন তারপর আমি আপনাকে ফোনটা ফিরত দিব ।

খেয়াল করলাম আসে পাশের মানুষ জন আমাদের খেয়াল করছে । আবার কোন ঝামেলা পরতে হয় , তাই বললাম ।

- চলুন ।

রেস্টুরেন্টে ঢুকে বাহিরে খলামেলা জায়গায় একটা টেবিল দেখে বসে পরলাম , ভদ্রলোক ও এসে আমার সামনের চেয়ারে বসলেন ।

- শেষ পর্যন্ত আমার কথা শুনলেন তাহলে ।

- এবার বলুন আপনি কে ? কিভাবে আমার ফোন আপনার কাছে গেলো ?

- ধীরে , একটু অপেক্ষা করুন খাবারের অর্ডার টা আগে দিয়ে নেই । আপনার সাথে তর্ক করতে গিয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেছে ।

টেবিলে রাখা পানির বোতল খুলে গ্লাসে ঢেলে খেলে পানি নিলেন । তারপর ভদ্রলোক হাতের ইশারায় ওয়েটার কে ডাকলেন ।

-দুই কাপ কফি , সাথে আপনি কি নিবেন বলুন ?

- আমি কিছু নিব না । আপনি আপনার জন্য অর্ডার করুন ।

- তাহলে দুটো কফি আর দুটো স্যান্ডউইচ দিয়ে যান ।

ওয়েটার ছেলেটা চলে যেতেই বললেন ।

- আমি রায়হান আহমেদ তুহিন । একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত আছি ।

- পরিচিত হয়ে খুশি হলাম । তুহিন সাহেব এবার মনে হয় আপনি আমার মোবাইলটা দিয়ে দিতে পারেন।

- আপনার আর একটি প্রশ্নের উত্তর এখনো দেয়া বাকি আছে কিন্তু ।

- ঠিক আছে বলুন ।

- আমার আর একটি পরিচয় আছে যেটা বললে হয়তো আপনি বুঝতে পারবেন কি করে ফোনটি আমার কাছে এলো ।

- চাকরির পাশাপাশি আপনি কোন চোরাই দলের গ্যাং লীডার নন তো ?

- আমাকে দেখে কি আপনার তাই মনে হচ্ছে ?

- মানুষের বাহিরের টা দেখেতো আর বলা যায় না সে কি বা কেমন । তা ছাড়া আপনি যে ব্যাংকে চাকরি করেন সেটা যে সত্য তা কি করে ভেবে নেই বলুন তো ?

- আপনি আমাকে বিশ্বাস করছেন নাতো ?

তুহিন সাহেব পকেট থেকে আইডি কার্ড বের করে আমার সামনে দিয়ে বললেন ।

- এবার বলুন আমি সত্যি বলেছি কি না ?

আমি কার্ড টা হাতে নিয়ে দেখলাম । ফিরিয়ে দিতে দিতে বললাম

-দেখে তো আসল ই মনে হচ্ছে ।

আমার কথা শুনে তুহিন সাহেব কিছুটা রেগে গেলেন , রাগের কারণে উনার কপাল ঘামছে , মুখ ও লাল হয়ে যাচ্ছে । বোতল থেকে আরও এক গ্লাস পানি খেলেন । ভদ্রলোক কে রাগিয়ে দিয়ে আমার কেন জেনো খুব মজা লাগছে ।

- আপনার ধারণা এই আইডি কার্ড টি নকল ?

- নকল বলি নি , বলেছি হতেও তো পারে ।

- আপনি কি আমাকে রাগাতে চাচ্ছেন ?

- না , আপনাকে রাগাতে যাব কেন বলুন তো । আর দেখুন ফোনটি তখন দিয়ে দিলে কি ঝামেলা টা মিটে যেতো না । এতো কথার তো কোন প্রয়োজনে ছিলো না । কি বলেন ?

তুহিন সাহেব কিছুটা রেগেই বললেন ,

- আমি কবির আহমেদ ও মিসেস রামিসা আহমেদ এর ছেলে । যাদের বাসায় আপনি গতকাল সকাল পর্যন্ত ছিলেন । এবার নিশ্চয় বলবেন না যে এটাও আমি মিথ্যা বলছি ।

আমি অবাক হয়ে তুহিন সাহেবের দিকে তাকিয়ে রইলাম । কি বলবো খুঁজে পেলাম না । আমার তো আগেই বুঝা উচিত ছিলো । তুহিন সাহেবের চেহারা রামিসা আন্টির সাথে মিল আছে । আগে কেন ভালো করে খেয়াল করলাম না । আমি চুপ করে আছি দেখে , তুহিন সাহেব জানতে চাইলেন ।

- চুপ হয়ে গিয়েছেন যে ?

- সরি , আপনার প্রথমেই বলে উচিত ছিলো আপনি রামিসা আন্টির ছেলে । তাহলে এত ঝামেলা করার প্রয়োজন ছিলো না ।

- বলতে তো চেয়ে ছিলাম , তার আগেই তো আপনি আমাকে চোরদের লীডার বানিয়ে দিয়েছেন ।

-সেটা আপনার শুরুতেই বলা উচিত ছিলো ।

- বললেই কি আপনি আমাকে চিনতেন ?

- হ্যা , রামিসা আন্টি আপনার কথা বলেছে । আর আপনার চেহারা আপনার মায়ের সাথে মিল

আছে ।

- তাহলে প্রথমে দেখে কেন চিনতে পারেন নি ?

- আমার মাথায়ই আসেনি রামিসা আন্টির ছেলে আমার মোবাইল ফিরত দিতে আসতে পারে । আচ্ছা আপনি আমার মোবাইল পেলেন কি করে ?

আমার যত দূর মনে পরে আপনাদের বাসায় যাওয়ার পর আমি ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করিনি । তাহলে ?

- আপনি ঠিকই ব্যাগ থেকে বের করেন নি । আগেই সরি বলে নিচ্ছি । আপনার সম্পর্কে জানার জন্য আপনার ব্যাগ খুলেছিলাম ।

মোবাইল যেহেতু ব্যাবহার কারি সম্পর্কে অনেক তথ্য বহন করে তাই আপনার মোবাইলটা চেক করেছিলাম । কিন্ত মোবাইলে চার্জ না থাকায় অন্য জিনিস পত্রের সাথে মোবাইল ফোনটি রেখে দেয়া হয়নি । আর আপনি তো সকালবেলা চলে গিয়েছিলেন তাই ফিরত দেবার ও কোন সুযোগ পাই নি । সরি ।

- সরি হবার কিছু নেই , আমি যেই ভাবে আপনাদের বাসায় গিয়ে ছিলাম । যে কেউ ই জানতে চাই তো আমি কে ? কোথা থেকে এসেছি ? আমার উদ্দেশ্য কি ? আপনার আব্বু আম্মু অনেক ভালো মানুষ । কিছুই জানতে চান

নি । আমি সত্যিই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ ।

- তারমানে আমি জানতে চেয়েছি বলে কি আপনি আমাকে খারাপ ভাবছেন ?

- না না তা কেনো হবে । আপনার জায়গায় আমি হলে হয়তো তাই করতাম । আপনার কফি মনে হয় ঠান্ডা হয়ে গেছে । আর এক কাপ দিতে বলি ?

দুজনে কথায় এতো ব্যস্ত ছিলাম যে টেবিলে খাবার দিয়ে গেছে ভুলেই গেছি । ওয়াটার কে ডেকে নতুন করে কফি দিতে বললাম ।

- আপনি কিন্তু আপনার সম্পর্কে কিছুই বলেন নি ?

আর কি কারণে সেদিন আমাদের বাসায় গিয়েছিলেন তা কিন্তু জানা হলো না ।

- আমি রাফিকা সুলতানা রোদেলা , সমাজতত্ত্ব নিয়ে অনার্স করেছি । আপাতত বেকার , কিছুই করছি না ।

- বুঝলাম , আমাদের বাসায় ওভাবে কেন গিয়েছিলেন ? মানে আপনার সাথে সেদিন কি ঘটেছিলো তা কিন্তু বললেন না ।

- রামিসা আন্টি আপনাকে কিছু বলে নি ?

- না , আম্মু কিছু বলে নি , এড়িয়ে গেছেন । আপনার কাছ থেকেই না হয় শুনি ।

- থাক না , নাইবা জানলেন ।

- কেন খুব কি ব্যক্তিগত কিছু ? তাহলে থাক ।

- ধন্যবাদ ।

- ধন্যবাদ কেন ?

- এইযে জানতে চাইলেন না , তার জন্য । সন্ধ্যা হয়ে এলো আমাকে বাসায় ফিরতে হবে ।

- একটা কথা বলবো ।

- জী , বলুন ।

- আপনাকে কি মাঝে মাঝে ফোন করতে পারি যদি আপনি বিরক্ত না হন ।

- ফোন করার কি কোন দরকার আছে ?

- না , তবে মাঝে মাঝে মনে হয় না , কাউকে ফোন করে জানতে চাই সে কেমন আছে ?

- হুম করতে পারেন । রামিসা আন্টির নাম্বারটা দিবেন ? সেদিন নেয়া হয় নি ।

- হ্যা , অবশ্যই । আপনি ফোন করলে আম্মু খুশি হবেন ।

বলেই তুহিন সাহেব আমার ফোনটি আমাকে ফিরত দিলেন ।

- ধন্যবাদ ।

আমি রামিসা আন্টির ফোনে নাম্বারটা সেইভ করে রাখলাম । ওয়েটার এসে বিল দিলো , আমি ব্যাগ থেকে টাকা বের করতেই , তুহিন সাহেব টাকা দিয়ে দিলেন ।

- বিল আমার দেবার কথা ছিলো ।

- আমি যেহেতু আপনাকে জোর করে কফি খাওয়াতে এনেছি । আজ আমি বিল দেবো । আর আপনার টা জমা রাখলাম অন্য কোন দিনের

জন্য ।

- কাজটা কিন্তু আপনি ভালো করেন নি আমি কোন কিছু বাকি রাখাটা পছন্দ করি না । আমাদের তো আর দেখা হবার কোন সম্ভাবনা

নেই । আপনি বরং এই টাকাটা রাখুন ।

- সরি , টাকাটা রাখতে পারছি না । বললাম তো অন্য কোন সময় আপনার কাছ থেকে চেয়ে নিবো ।

- অন্য সময়টা যদি কখনো না আসে ।

- তাহলে কি আর করার ।

- আমি এখন যাবো , সন্ধ্যা হলে এখানে গাড়ি পাওয়া মুশকিল হয়ে যায় । তাহলে আল্লাহ

হাফেজ । ভালো থাকবেন ।

বলেই আমি উঠে পড়লাম । তুহিন সাহেব ও আমার সাথে উঠতে উঠতে বললেন ।

- একটু দাঁড়ান , আপনাকে গাড়ি তো ঠিক করে দেই ।

- না ,লাগবে না । আমি ঠিক করে নিতে পারবো ।

- বুঝলাম আপনি পারবেন । যতক্ষন না পাচ্ছেন ততক্ষণ নিশ্চই আপনার সাথে থাকতে পারি ।

আমি কিছু বললাম না । হাঁটতে শুরু করলাম , রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ালাম । যে কটা সি এন জি আসছে সব গুলোই যাত্রী নিয়ে আসছে আগে থেকেই ।

-এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে চলুন সামনের দিকে

যাই । আপনি কোথায় যাবেন ?

- আগ্রাবাদ ।

- তাহলে এদিকে চলুন ।

আমি আর কিছু না বলে হাঁটতে থাকলাম । তুহিন সাহেব আমার পাশে পাশেই হাঁটছেন । আমি মনে মনে বললাম , নামাজের সময়টা এখানেই পার করতে হবে । আমার আরো আগেই উঠে পরা উচিত ছিলো ।

- কি ভাবছেন ?

- কই কিছু না তো ।

- এই সময়টায় সি এন জি কম পাওয়া যায় । আপনি এর আগে এখানে এসেছেন ?

- হুম ..

- জানেন রাতের সি আর বি দেখতে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগে ।

- আমার কাছে রাতের তুলনায় ভোর বেলার সি আর বি বেশি ভালো লাগে । তখন এখানে তেমন মানুষ জন থাকে না । অনেক শান্ত লাগে পরিবেশ টা ।

- আপনি তাহলে ভোর বেলায় এসেছেন এখানে ।

- হুম , কখনো কখনো সকালে ক্লাস থাকলে কলেজে একটু আগেই চলে আসতাম শুধু মাত্র কিছুটা সময় এখানে কাটানোর জন্য ।

- আপনার তাহলে হৈচৈ পরিবেশ ভালো লাগে না ।

-হুম , আমার নিরিবিলি থাকতেই ভালো লাগে ।

- আপনার বন্ধু বান্ধব নেই যাদের সাথে হৈচৈ করে আড্ডা দেয়া যায় ।

- আমি মানুষের সাথে একটু কম মিশতে পছন্দ করি ।

বলেই আমি হাত দিয়ে একটা খালি সি এন জি থামালাম । ভাড়া ঠিক করে উঠতে যাব তখন তুহিন সাহেব বললেন ।

- রোদেলা একটু দাঁড়াবেন । আপনার সাথে কথা বলে খুব ভাল লাগলো ।

- আপনার সাথে ও , আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মোবাইল ফোনটি কষ্ট করে নিয়ে এসেছেন বলে । আর কফির জন্য ও ধন্যবাদ ।

- আপনাকেও ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা বিকেল উপহার দেয়ার জন্য ।

- আল্লাহ হাফেজ ।

- আমি কিন্তু আপনাকে ফোন করবো ।

আমি সি এন জি তে উঠে বসলাম । মনে মনে বললাম সময়টা মন্দ কাটে নি ।

তুহিন রোদেলা চলে যাবার পর , সি আর বি র নিচের গ্যালারিতে নেমে এসে ফাঁকা জায়গা দেখে বসলো । মেয়েটার মধ্যে কি জানো একটা কিছু আছে , অল্প সময়েই কেমন জেনো আপন আপন মনে হচ্ছে । অনেক দিন পর সুন্দর একটা বিকেল কাটলো । নীলার সাথে কাটানো বিকেল গুলো ও মনে হতো চোখের পলকেই শেষ হয়ে যেতো । নীলা চলে যাবার অনেক দিন পর আজ সেই অনুভুতিটা আবার হলো । বিকেলটা আর একটু বড় হলে কি এমন ক্ষতি হতো কার । তুহিন আসে পাশে তাকালো , অনেকেই জোড়ায় জোড়ায় বসে

আছে । অনেকে বন্ধুদের সাথে হৈ হুলর করে আড্ডা দিচ্ছে । কিছু বাবামা এসেছে বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে , তারা বাচ্চাদের পেছনে ছুটতে গিয়ে নিজের সময় দিতেই ভুলে গেছে ।

- স্যার , বাদাম দিমু ?

তুহিন তাকালো বাদমওয়ালার দিকে ,ছোট একটা ছেলে বয়স দশ বারো হবে ।

- স্যার , বাদাম দিমু ? ছেলেটি আবার জানতে চাইলো ।

- দাও ।

- কয় টাকার নিবেন ? আপনি কি একা আইছেন ?

- কেন ? ১০ টাকার দাও ।

- না মানে সন্ধ্যার পর তো কেউ এই খানে একা থাকে না । আফনারে একা দেইখা তাই

জিগাইলাম ।

তুহিন কিছু বললো না । বাদাম নিয়ে ভেঙে মুখে দিতে দিতে ভাবলো । আচ্ছা রোদেলা মেয়েটিকে আর একটু সময় আমার সাথে থাকতে বললে কি খুব খারাপ হতো ?

চলবে .......

✍️রেহানা হক রেনু

গত পর্বের লিংক -১২

https://m.facebook.com/groups/526513374820830?view=permalink&id=850519045753593

1
$ 0.01
$ 0.01 from @TheRandomRewarder
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments