#আমি_রোদেলা
#পর্ব_১৪
বাসায় আসতে আসতে অনেক দেরি হয়ে গেলো , আমি বাসায় ঢুকতেই মিনু খালামনি জানতে চাইলেন ,
- এতো দেরি করলি কেন ? আমার খুব চিন্তা হচ্ছিল ।
- আমি তো তাড়াতাড়ি ই ফিরতে চেয়েছিলাম । কিন্তু তুহিন সাহেব দেরি করিয়ে দিলো ।
- তুহিন সাহেব টা আবার কে ?
- যার কাছে আমার ফোনটা ছিলো ।
- জিগ্যেস করিস নি ফোনটা সে পেলো কোথায় ?
- পাবে আবার কোথা থেকে আমার ব্যাগ থেকেই নিয়েছে ।
- তারমানে তুই একটা চোরের সাথে সময় কাটিয়ে এসেছিস । তোর সাহস তো কম নয় যদি তোকে কিছু করতো ?
- খালামনি তুমি না ।
বলেই আমি হাসতে লাগলাম ।
- কিরে পাগলের মত হাসছিস কেন ? চোরদের কোন বিশ্বাস আছে নাকি ?
- ভদ্রলোক চোর নন , আমি ও তোমার মতো তুহিন সাহেবকে চোরের লীডার ভেবেছিলাম ।
- মানে কি ?
- তুহিন সাহেব হলেন , কবির আঙ্কেল আর রামিসা আন্টির একমাত্র পুত্র , বুঝলে ।
- কোন কবির আঙ্কেল ?
- ভুলে গেলে যাদের বাসায় আমি ছিলাম দুদিন আগে ।
- ওহ , বুঝলাম । কিন্তু তুই কবির আঙ্কেল ,রামিসা আন্টি বলছিস তাহলে তুহিনকে ভাইয়া না ডেকে সাহেব বলছিস কেন ?
- তাইতো , কিন্তু উনার সাথে তো ভাইয়া ডাকার মত কোন পরিচয় হয়নি ।
- সাহেব ডাকলে কেমন জেনো অপরিচিত অপরিচিত মনে হয় না ।
- কি যে বলো খালামনি , ভদ্রলোক তো
অপরিচিতই ।
- তুই ওর বাবা মাকে কি সুন্দর করে আঙ্কেল আন্টি ডাকছিস । আর তাদের ছেলেকে ভদ্রলোক , ব্যাপারটা কেমন না । তা ছেলেটা কি করে ?
- একটি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরী করে ।
- দেখতে কেমন বলতো ?
- ভালোই তো , কিন্তু তুমি এতো কিছু জানতে চাইছো কেন বলতো ?
- ছেলেটি কি বিবাহিত ?
- না । বিবাহিত হলে তো আন্টি বলতো ।
- কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক নেই তো ?
- খালামনি তুমি কি ভাবছো বলতো ? তুমি যদি বিয়ের কথা চিন্তা করে থাকো , তাহলে মাথা ওই চিন্তা বাদ দিয়ে দাও ।
- কেন ? বড় হয়েছিস বিয়ে তো করতেই হবে ।
- বিয়ে কেন করতে হবে ? তুমি আর মা ওতো বিয়ে করেছিলে লাভ কি হলো । আমার ওসবের দরকার নেই । আমি সারা জীবন তোমাদের সাথেই থাকতে চাই ।
- বললেই হলো নাকি ? তোর মা তোর জন্য ছেলে দেখছেন । আর শোন আমাদের সাথে যা হয়েছে তা তোর সাথে হতে যাবে কেন ?
- আম্মু ছেলে দেখছেন মানে কি ?
- বারে তোকে বিয়ে দিতে হবে না ।
- আম্মু তোমাকে বলেছে ?
- হুম ।
- খালামনি সত্যি করে বলতো , আম্মু হঠাৎ আমার বিয়ের জন্য এতো তারা হুর করছেন কেন ? কদিন হয়নি উনাদের ডিভোর্স হয়েছে এর মধ্যে আমার বিয়ে ?
- তোর বিয়ের চিন্তা আগে থেকেই ছিলো । আর তোর আব্বু আম্মুর ব্যাপারটা তো আরো আগেই হয়ে যেতো তোর আব্বুই তো কোন না কোন বাহানা দেখিয়ে পিছিয়ে নিয়ে গেছে । নয়তো দু বছর আগেই ডিভোর্স হয়ে যেত ।
- আমার এগুলো শুনতে ভালো লাগছে না , আমি রুমে গেলাম । এই নাও তোমার ফোন , কেউ ফোন দেয়নি তোমার নম্বরে । আর হ্যা তোমার ফোনে ব্যালেন্স নেই । তুমি মিষ্টিকে ইকটু আমার রুমে পাঠাও ।
মিষ্টি এসে জানতে চাইলো ,
- আফা কিছু লাগবো ?
মিষ্টির দিকে একটা ছোট কাগজ আর টাকা দিয়ে বললাম
- এখানে দুটো নাম্বার আছে দুটোতেই টাকা রিচার্জ করবি । নম্বরের পাশে টাকার পরিমাণ লিখা
আছে । আর শোন নীচ থেকে এসে আমার জন্য ভালো করে এক কাপ লিকার চা বানিয়ে দিবি । দেখিস নীচে গিয়ে আবার গল্প করতে শুরু করিস না ।
- কি যে কন আফা , আমার গফ করার টাইম নাই । যামু আর আমু ।
- ঠিক আছে এখন যা । খালামণিকে আমার রুমে একটু আসতে বলিস ।
- বড় খালাম্মা তো রান্না করতাছে ।
- ঠিক আছে তাহলে থাক ।
- যাবার আগে খালামণিকে জানিয়ে যাস যে তুই বাইরে যাচ্ছিস ।
- ঠিক আছে ।
মিষ্টি চলে যেতে আমি ব্যাগ থেকে মোবাইল ফোন বের করলাম ,চার্জে দেবার জন্য । ফোন হাতে নিয়ে দেখি ফুল চার্জ । তুহিন সাহেব তাহলে ফোন চার্জ করে রেখেছিলেন আগে থেকে । ফোনের স্কিনে দুটো মেসেজ এসেছে দেখাচ্ছে । মেসেজ দুটো তুহিন নাম দিয়ে সেইভ করা নম্বর থেকে এসেছে । আমার কন্ট্যাক্ট লিস্টে ওই নামে কেউ থাকার তো কথা না , কারণ আমি খুব কম মানুষের সাথেই ফোনে যোগাযোগ করি , তাহলে । আমি প্রথম মেসেজ টা ওপেন করলাম,
--ঠিক মতো বাসায় পৌঁছেছেন কি না , জানালে খুশি হবো ।
দ্বিতীয় মেসেজ ,
--সরি , আপনাকে না জিগ্যেস করেই আমার নম্বর টা সেইভ করে দিয়েছি ।
আমি মেসেজ দুটো কয়েক বার পড়লাম । উত্তর দেয়া কি ঠিক হবে ? না দিলে ও তো অভদ্র ভাববে , যে আমি একজন অকৃতজ্ঞ মানুষ । আমি মেসেজের উত্তর দিলাম ।
--জী , আমি ঠিক মত বাসায় পৌঁছে গিয়েছি ।
মেসেজ দেবার সাথে সাথেই উত্তর এলো ।
-- এটুকু জানাতে আপনার এত সময় লাগলো ? আমি তো চিন্তায় ছিলাম ।
--সরি , বাসায় ফিরে খালামনির সাথে কথায় ব্যস্ত ছিলাম ।কিছুক্ষণ আগেই আপনার মেসেজ
দেখেছি ।
-- সরি , বলার কিছু নেই , আমি কিন্তু এখনও সি আর বি তে বসে আছি ।
-- ওহ
-- শুধুই ওহ , জানতে চাইবেন না , কেন আমি এখানে এখন ও বসে আছি ?
-- আমার কি জানতে চাওয়া উচিত ?
-- আপনার কি কোন ব্যাপারই জানার কৌতূহল নেই ?
-- না ।
-- কেন বলুনতো ?
-- কেন আবার , আমি এমন ই ।
-- আমি কিন্তু এমন নই , আমার সব কিছুতেই একটু বেশি কৌতূহল ।
-- ওহ
-- বারবার ও ওহ , আপনি কি আমার সাথে কথা বলতে বিরক্ত বোধ করছেন ?
-- ঠিক তা নয় , কথার উত্তর কি দেবো তা খুঁজে পাচ্ছিলাম না । তাই ওহ লিখা ।
-- আমি ভেবেছিলাম আপনি বিরক্ত হচ্ছেন । আসলে হয়েছে কি , সুন্দর কোন কিছুই একা উপভোগ করে মজা পাওয়া যায় না । এখানের পরিবেশটা অনেক সুন্দর লাগছে , তাই কারো সাথে কথা বলতে মন চাচ্ছিলো । ভাবলাম আপনার সাথেই কথা বলি ।
-- আমি ই কেন ? আপনার তো আরও বন্ধু আছে তাইনা ।
-- তা আছে ।
-- তাহলে আমি কেন ?
-- তা তো জানি না ।
-রোদেলা ফোনে কি করছিস সেই কখন থাকে ?
মিনু খালা কখন রুমে এসেছেন খেয়াল করি নি ।
- তুমি কখন এসেছো ?
- বেশ কিছুক্ষণ হলো । বললি না তো ফোনে কি করছিস ?
- তুহিন সাহেবের সাথে মেসেজে কথা বলছিলাম ।
- তুহিন মানে তোর ফোন যার কাছে ছিলো । একটু আগেই না দেখা করে এলি । আবার কি কথা ?
- জানতে চাইছেন আমি ঠিক মতো বাসায় পৌঁছেছি কি না ।
- ছেলে টা তো ভালোই দায়িত্ববান মনে হচ্ছে ।
- হুম ।
- শোন তোর সাথে আমার কথা আছে ।
- কি খালামনি ? জরুরী কিছু ।
- না , তেমন জরুরী নয় । কাল সকালে খালামনি চলে যাচ্ছি ।
- মানে কি ? তুমি চলে যাচ্ছ ।
- এতো অবাক হচ্ছিস কেন ? আমি কি সারাজীবন এখানে থাকবো নাকি । আমার কাজ আছে না ।
- অবাক হবো না । দুই দিন হয়নি এসেছো এরই মধ্যে তুমি চলে যাবে । আর তোমার কি কাজ শুনি ? তুমি কি চাকরী করো নাকি ?
- হুম , করি তো ।
- চাকরী করো ! কোথায় কি কাজ ? এই বয়সে কেন তুমি চাকরী করবে ? তুমি না তোমার ভাইয়ের কাছে ছিল ?
- বাহব্বা এতো প্রশ্ন এক সাথে । কোনটার উত্তর দেব বলতো ?
- আগে বলো কেন তুমি চাকরী করো ?
- সময় কাটানো আর নিজের খরচের জন্য ।
-কি কাজ ? খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয় ।
- না , তেমন বেশি পরিশ্রম করতে হয় না । কাজটা করতে আমার খুব ভালোই লাগে । একটা আশ্রমে কাজ করি । তোর বাদল নানার কথা মনে আছে ? তোর মায়ের চাচা হন ।
- নাম মনে আছে একবার কি দুবার দেখা হয়েছিলো ।
- উনার একটা আশ্রম আছেন , ওখানে কিছু বয়স্ক মানুষ আর কিছু এতিম বাচ্চা আছে । আমার কাজ ওদের দেখাশুনা করা । মাস শেষে বেতন পাই আর ওখানেই থাকি ।
- কিন্তু আম্মু যে বলেছিলো , তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে থাকবে ।
-ওখানেই ছিলাম , ভাইয়ের দুটো বাচ্চা রেখে ভাবী মারাগেলেন । বাচ্চাদের দেখা শোনার জন্য ই আমি গিয়েছিলাম । ছয়মাস পর ভাই আবার বিয়ে করলো তাই ওখানে তো আমার কোন কাজ নেই ।
- তাহলে তুমি এখানে চলে আসোনি কেন ?
- আসতাম কিন্ত তোর মা তো আমাকে যেতে দিতে চায়নি । আমি জোর করেই গিয়েছিলাম । যাবার সময় তোর মা একটা কথাই বলেছিলো বুবু তোমাকে ফিরে আসতেই হবে দেখো । বিয়ের পর যে মেয়েদের বাপের বাড়ি থেকে না সেটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম বুঝলি । তোর মা সত্যি
বলেছিল ।
- তাহলে আসোনি কেন এখানে ? তুমি জানো আমি তোমাকে কত মিস করেছি ?
- আমার ও তো একটা আত্মসম্মান বোধ আছে । যেখান থেকে একবার চলে এসেছি সেখানে আবার ফিরে আসি কি ভাবে বল । ঠিক তখন বাদল চাচার সাথে দেখা । উনি তো আমার ব্যাপারে আগে থেকেই জানতেন । চাকরির প্রস্তাব টা পেয়ে , আর না করি নি ।
- তুমি আমাদের কখনই আপন ভাবো নি তাইনা ।
- কি যে বলিস ? তুই হলি আমার একমাত্র মেয়ে , আমার জান ।তোকে পাওয়া যাচ্ছে না শুনে , সব কিছু ফেলে ছুটে এসেছি ।
-তোমাকে কে খবর দিলো ?
- তোর মা ফোন দিয়ে জানতে চাইলো , তুই আমাকে ফোন করেছিস কি না । বললাম না , তোর মায়ের গলা শুনে মনে হয়েছিল কিছু ঘটেছে । জিগ্যেস করতে বললো এই এই ঘটেছে । রাত দশটা বাজে তুই তখনও ঘরে আসিস নি । ফোন ও ধরছিস না । শুনে তো আমার কলিজা শুকিয়ে গিয়েছিল । রাতটা কোন রকম কাটিয়ে ভোরের গাড়িতে এখানে এসেছি । এসে দেখি তোর মায়ের অবস্থা ও খারাপ , সাদি আর ওর বউ ছিলো সারা রাত । আমি এসেছি দেখে ওর ফিরে গেছে । যাই করিস রোদেলা , তোর মাকে বলতে না পারিস , খালামনি কে অন্তত বলিস । তুই জানিস যেখানেই থাকি আমার মন সবসময় তোর কাছেই থাকে ।
খালামনি কথা শুনে আমি কান্না করে দিলাম । খালামনি ও আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক ক্ষণ কান্না করলেন । আমি চুপিচুপি বললাম ।
- আমি ও তোমাদের অনেক ভালোবাসি খালামনি ।
- কি হয়েছে দুজন জড়িয়ে ধরে কান্না করছো কেন?
আম্মু কখন এসে আমার রুমের দরজায় দাঁড়িয়েছেন টের পাইনি । আম্মুর কথা শুনে আমি খালামনি কে ছেড়ে , চোখ মুছে নিলাম ।
- আম্মু তুমি কখন এসেছো ?
- আমি তো সেই কখনই এসেছি , এসে ফ্রেস
হলাম । তোমাদের সারা শব্দ না পেয়ে এখানে এলাম । এসে দেখি দুজন জড়িয়ে ধরে কান্না
করছি । ব্যাপার কি ? আমাকে বলা যায় ।
- আম্মু খালামনি নাকি কাল চলে যাবে ।
বলেই আমি আম্মু আর খালামণিকে রুমে রেখে ওয়াশ রুমে গেলাম মুখে পানি দিতে । নামাজ ও পড়া হয়নি , ওযু করতে হবে ।
রাজিয়া সুলতানা এসে বোনের পাশে বসলেন । বসেই জানতে চাইলেন ,
- বুবু তুমি তো আমাকে জানাও নি , যে তুমি কাল চলে যাবে ?
- তোমাকে জানতাম তুমি তো সেই সকালে বেরিয়ে গেছো । ভেবেছিলাম তুমি বাসায় ফিরলে জানাবো ।
- এসেছো তো মাত্র কদিন হলো । কিছুদিন থাকো আমার কথা না হয় বাদ দিলাম , তোমার মেয়ের জন্য কটা দিন থেকে যাও । রোদেলার মন ভালো নেই , দেখতে ওকে স্বাভাবিক মনে হলে ও ওর জন্য এটা একটা বড় ধাক্কা ছিল । তুমি পাশে থাকলে ও ভালো থাকবে ।
- সেটা তো আমি ও বুঝি । রাজিয়া তুমি ও মেয়েটাকে একটু সময় দাও । মেয়ে বড় হলে নাকি মা মেয়ে বন্ধু হয়ে যায় । কিন্তু তোমরা দুজন দুজনের মধ্যে খানে একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করে রেখেছো । এবার মনে হয় এটা ভাঙার সময় এসেছে ।
- বুবু তুমি তো সবাই জানো । আমি ওকে অনেক ভালোবাসি কিন্তু সেটা আমি কিছুতেই প্রকাশ করতে পারি না । ওর সামনে গেলেই আমি কেমন জেনো কঠোর হয়ে যাই ।
- তোমার এই কঠোর স্বভাবের জন্যই রোদেলা তোমাকে এড়িয়ে চলে । কোন কিছু তোমার সাথে শেয়ার করতে দ্বিধা বোধ করে ।
- বুবু তুমি আর কটা দিন থেকে যাও না ।
চলবে ........
গত পর্বের লিংক -১৩
https://www.facebook.com/groups/bdofficials/permalink/851272952344869/