#আমি_রোদেলা
#পর্ব_১৫
-আমারও তোমাদের সাথে থাকতে ইচ্ছে করছে , কিন্তু কি করবো বললো ? এত তাড়াহুড়ো করে এসেছি কাউকে আমার কাজ ঠিক মতো বুঝিয়ে দিয়ে আসতে পারি নি ।
-ঠিক আছে কাল তুমি যাও । কিন্তু দুদিন পর ফিরে আসবে । আমার একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয় বুবু ।
- তুমি ভেবোনা রোদেলা বড় হয়েছে । অনেক কিছুই না বললেও বুঝতে পারে । সেদিন না হয় ব্যাপারটা হটাৎ করে সামনে আসায় নিজেকে সামলাতে পারে নি ।
- আমরা ও তো চাইনি সেটা । কিন্তু সেদিন কি যে হয়েছিলো সাদির কথায় নিজেকে ঠিক রাখতে পারি নি । আর রফিকের উপর তো আগে থেকেই রাগ জমে ছিলো ।
- বুঝলাম , দুজনের ঝগড়ায় তোমরা রোদেলার কথাই ভুলে গিয়েছিলে । একটা মেয়েকে নিজের সন্তানের মত করে গড়ে তুলবে বলে এনেছো । সেই সন্তান কে ই তোমাদের অশান্তির কারণ বানিয়ে দিলে । কি দোষ ছিলো ওর বলতো ?
আমি ওয়াশ রুম থেকে বের হতেই দুজন কথা বন্ধ করে দিলেন । আমি বুঝতে দিলাম না যে আমি তাদের শেষ কথা টুকু শুনেছি ।
- আম্মু তুমি নামাজ পড়েছো ?
- না , এখনো পড়া হয়নি । আমরা যাচ্ছি তুমি নামাজ পড়ে খেতে আসো ।
- ঠিক আছে ।
খালামনি আম্মু বেরিয়ে যেতেই , আমি খাটে গিয়ে বসে পরলাম । আমার মাথায় তখন একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে , সেই সন্তান কে ই তোমাদের অশান্তির কারণ বানিয়ে দিলে । আমার জন্যই তাহলে আব্বু আম্মুর ডিভোর্স হয়েছে ? কিন্তু আমি কেন , কিছুই জানিনা । আমি ঠিক করতে পারছিলাম না কোন সমস্যা টা নিয়ে আগে ভাববো । আমার নিজের পরিচয় না আব্বু আম্মুর সমস্যা । বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর খেয়াল হলো আমি নামাজ পড়ার জন্য ওযু করে বের হয়েছি । নামাজ শেষ করে খাবার টেবিলে গেলাম । আম্মু আর খালামনি আগে থেকেই বসে আছে । আমাকে দেখে খালামনি জানতে চাইলেন ,
- এতক্ষন কি করছিল ? নামাজ পড়তে এতো সময় লাগে বুঝি ।
- হুম , তুমি কি কাল সত্যি চলে যাবে ?
- হ্যা , তবে দুদিন পর আবার ফিরে আসছি ।
কথাটা শুনে আমি এতো খুশি হলাম যে চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে খালামণিকে জড়িয়ে ধরলাম ।
- তুমি আমার লক্ষী খালামনি ।
- খালামনি কে এতো আদর ! আমি যে তোমার খালামণিকে রাজি করলাম কই আমাকে তো আদর দিলে না ।
কথা গুলো বললে আম্মু একটু হাসলেন ।
আমি অবাক হয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি , কারণ আম্মু কখনো এভাবে মজা করে কথা বলে না । আম্মু সবসময় একটা গম্ভীর পরিবেশ তৈরি করে রাখেন উনার চারপাশে ।
- কি হলো হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন ? আমি কি খারাপ কিছু বলেছি ?
আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম ।
- না কিছু না ।
- রাজিয়া কত বছর পর তুমি খাবার টেবিলে হেসে কথা বলেছো মনে আছে ? তোমার মেয়ে কেন আমিই তো অবাক হয়েছি ।
- কেন আমি বুঝি এভাবে কথা বলতে পারি না ।
- পার আমার ও চাই তুমি এভাবেই হাসি খুশি থাকো ।
- আম্মু তোমাকে হাসলে অনেক সুন্দর লাগে । তুমি কেন সবসময় এমন থাক না ।
- হয়েছে আর তেল মারতে হবে না । এবার খাও ।
- আম্মু তুমি কি বললে তেল মারা , তুমি এই শব্দ গুলো জানো ?
- আমি বুঝতে পারছি না আজ তুমি আমার কথায় এত অবাক হচ্ছ কেন বলো তো ?
- কারণ তুমি সব সময় খুব নিয়ম মাফিক কথা বলো । আর গত কয়েক বছরে আমাদের এভাবে সামনা সামনি বসে কোন কথা হয়নি । শেষে কবে তোমার সাথে খাবার টেবিলে বসে মজা করে কথা বলেছি আমি সত্যি ভুলে গেছি ।
- আমি সরি , এখন থেকে এমন আর কখনো হবে না আমি প্রমিস করছি ।
- রাজিয়া মনে থাকে জেনো , যা অতীত হয়ে গেছে সেটাকে সেখানেই থাকতে দাও । আমাদের উচিত বর্তমান কে সুন্দর ভাবে ব্যবহার করা , যেতে অতীত এসে বর্তমান কে জেনো নষ্ট না করে দেয় ।
- ঠিক বলেছো বুবু ।
রাতের খাবার শেষ করে ,আম্মু আর খালামনির সাথে কথা বলে আমি আমার রুমে চলে এলাম । হটাৎ আমার মনে হলো তুহিন সাহেবর সাথে তো আমি কথা শেষ না করেই ফোন রেখে
দিয়েছিলাম । টেবিলের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি পাঁচটা মেসেজ এসেছে ।
-- আজ আপনার সাথে কথা বলে মনে হলো , আপনার সাথে গল্প করা যায় । আর কেন জেনো মনে হয় আপনি আমার গল্প শুনবেন ।
-- কি আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে নাতো । আমি কিন্তু সত্যি বলছি ।
-- কি হলো চুপ হয়ে আছেন যে ? কিছু বলছেন না যে ।
-- আপনি কি খুব বিরক্ত হয়েছেন ? আমাকে কি আপনি হ্যাংলা ভাবছেন ?
-- আপনি মনে হয় সত্যি বিরক্ত হয়েছেন । আমি সরি , প্রথম পরিচয়ে এতো কথা বলা আমার উচিত হয়নি । সরি ...
মেসেজ গুলো পড়বার পর আমার খুব খারাপ লাগতে লাগলো । আমার তো উচিত ছিল উনাকে জানানো যে , পরে কথা বলবো । আমি একটু ব্যস্ত ।
আমার কি এখন উচিত হবে উনাকে মেসেজ
করা । কি ভাবলো উনি আমার সম্পর্কে । নিশ্চয় ভাবছে আমরা ওর এতো উপকার করলাম তার বিনিময় আমার সামান্য কথা শুনার তার সময় হলো না । না কাজটা আমি মোটেও ঠিক করি নি । আমার এখনই সরি বলা উচিত । আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম রাত সাড়ে এগারটা বাজে । এতো রাতে মেসেজ করা কি ঠিক হবে ? না করেই ফেলি কাল যদি আবার ভুলে যাই ।
-- আমি সত্যি অনেক দুঃখিত , তখন খালামনি চলে আসতে আপনার সাথে আর কথা বলা হয়নি ।
আমার উচিত ছিল সেটা আপনাকে জানানো ,কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছিলাম । সত্যি আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ।
এটুকু লিখে বেশ কয়েক বার পড়লাম । পাঠাবো ? কিছুক্ষন ভাবলাম তারপর ঠিক করলাম লিখেছি যখন পাঠিয়ে দেই ।
মেসেজ পাঠানোর কিছুক্ষন পরেই এর উত্তর
এলো ।
- -দেরিতে হলেও আপনি উত্তর দিলেন তাহলে , আমি তো ভেবেছিলাম আপনি ইচ্ছে করেই কথা বলছেন না ।
-- তা কেন হবে , আপনার সাথে কথা বলার মাঝখানে খালামনি চলে এলো । তাই..
-- আমি কিন্তু রাগ করেছি , কিঞ্চিৎ অপমান বোধ ও করেছি এমন করে কথার মাঝখানে চুপ হয়ে যাওয়াতে ।
-- আমি সত্যি দুঃখিত ।
-- এভাবে দুঃখিত বললে তো হবে না ।
-- তা আমাকে কি করতে হবে ?
-- আপনি আমাকে কাল কফি খাওয়াবেন তারপর ভেবে দেখা যাবে ।
-- এটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না ।
-- সেটা আপনি বুঝবেন । আপনি সত্যি ই যদি দুঃখ প্রকাশ করতে চান । নয়তো আমার কিছু বলার নেই ।
-- ঠিক আছে , তবে কাল পারবো না । তার পর দিন । তা কোথায় খেতে চাচ্ছেন ?
-- সেট না হয় যেদিন খাওয়াবেন , সেদিন বলি ।
-- ঠিক আছে , সেদিন কিন্তু আমি বিল দিবো । আজকের মত আবার বলবেন না তো , জমা রইলো ।
-- ঠিক আছে বলবো না । পরশু আমাদের দেখা হচ্ছে ।
-- হুম
--আপনার ওই হুম আর ওহ এই দুটো শব্দ প্লীজ আমার সাথে কথা বলার সময় ব্যাবহার করবেন
না ।
-- কেন বলুন তো ?
-- আমার একদমই ভালো লাগে না ।
-- হুম , চেষ্টা করবো ।
-- আবারও ।
-- সরি অভ্যাস বসত লিখে ফেলেছি ।
-- আজ রাখি , শুভ রাত্রি ।
-- শুভ রাত্রি ।
ফোনটা রেখে আমি চিন্তা করতে লাগলাম তুহিন সাহেবের সাথে কি আমি একটু বেশিই খোলামেলা ভাবে কথা বলে ফেলছি না । এটা করা আমার মোটেও উচিত হচ্ছে না । এভাবে একদিনের পরিচয়ে একটা মানুষের সাথে দ্বিতীয় বার দেখা করতে যাওয়া একে বারেই ঠিক হচ্চে না । আমার উচিত এখন আমার নিজের সমস্যা গুলোতে ফোকাস করা । ওগুলোর একটা সমাধান আমাকে করতেই হবে । আমাকে জানতেই হবে আব্বু আম্মুর ঝামেলায় আমার কি ভূমিকা ছিলো । কিন্তু কার কাছ থেকে জানা যাবে । আব্বুর কাছে জানতে চাইবো ?
আমি বসে আছি ওয়েল ফুডে । আজ মনে হয় আমি একটু আগেই চলে এসেছি , আমার আসার কথা ছিল পাঁচটায় । এখন ঘড়িতে চারটা পঞ্চান্ন বাজে । আমি যেখানে বসেছি এখন থেকে পুরো রাস্তা দেখা যাচ্ছে । ওয়েটার এসে জিগ্যেস করে গেলো কি নিবো । বললাম একজনের জন্য অপেক্ষা করছি । ছেলেটি কিছু না বলেই মুখ কালো করে চলে গেছে । আমার কেমন জেনো অস্বস্তি হতে লাগলো , এখানে বসার জায়গা খুব সীমিত । আর আমি কিছু দিতে না বলেই বসে আছি । ছেলে টিকে ডেকে বললাম আমাকে এক পিস পেস্টি দিতে । আমি বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি সময় জেনো যাচ্ছেই না । তুহিন সাহেব এলেন ঠিক পাঁচটা পনেরো তে ।
- সরি , অফিস থেকে একটু আগেই বের হতে চেয়েছিলাম । একটা কাজ পরে গেলো সেটাও সময় মত শেষ করেছিলাম কিন্তু রাস্তায় জ্যাম ছিলো । জ্যামে আটকা পরে দেরি হয়ে গেলো । আমি সত্যি সরি ।
- ঠিক আছে । কফির অর্ডার করবো ?
- আপনি কি অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছেন ? কটায় এখানে এসেছেন ?
- আপনি কি নিবেন বলুন ?
-আপনি রাগ করে আছেন তাইনা । বললাম তো সরি । রাস্তায় জ্যাম ছিলো সত্যি বলছি ।
- আমি রাগ করতে যাবো কেন ? আমি আপনাকে কফি খাওয়াতে এসেছি রাগ করতে নয় ।
- আজ আমি আপনার পছন্দে খাবো ।
- আমি দুটা ক্যাপেচিনো একটা পেস্টি অর্ডার করলাম ।
খাবার আসতেই তুহিন সাহেব জানতে চাইলো ।
- পেস্টি একটা যে ?
- আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে একটা খেয়েছি । এখন আর খাবো না ।
- যাক আপনাকে তাহলে আমার বদলে পেস্টি সঙ্গ দিয়েছে ।
- বলতে পারেন ।
- আপনি মনে হয় হাসতে পছন্দ করেন না ।
- কেন বলুন তো ?
- আমাদের এই নিয়ে দুবার দেখা হলো আপনি কিন্তু একবার ও হাসেন নি ।
- হাসার মত কিছু ঘটে নি তাই হাসবার প্রয়োজন বোধ করি নি ।
- আপনি এমন গম্ভীর হয়ে কথা বলছেন কেন ?
- আপনার খাওয়া শেষ হলে আমি যাব ।
- এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন ? আমি তো ভেবেছি আপনার সাথে কিছুক্ষণ হাঁটবো গল্প করবো ।
চলবে ......
✍️রেহানা হক রেনু
গত পর্বের লিংক -১৪
https://www.facebook.com/groups/bdofficials/permalink/853008455504652/