#আমি_রোদেলা
#পর্ব_১৭
- তা তো হবে না ।
- কেন ? আমি আপনার পাওনা বুঝিয়ে দিতে চাইছি । আপনার উচিত সেটা বুঝে নেয়া ।
- দেখুন পাওনাদার তো আমি তাইনা ।
-হুম ।
- আমার টা আমি আমার সময় মত বুঝে নিব ।
- না , তা হবে কেন ? আজই সব লেনদেন শেষ হয়ে যাক ।
- আপনার কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে । আমি সি এন জি ডেকে দিচ্ছি ।
বলেই তুহিন সাহেব দ্রুত রাস্তার কাছে চলে গেলেন আমাকে পেছনে ফেলেই ।
- এই যে শুনুন , তুহিন সাহেব আমার কথা তো শুনুন ।
- আমাকে তুহিন সাহেব তুহিন সাহেব করছেন কেন ?
- তাহলে কি ডাকবো ?
- নাম ধরেই ডাকুন না ।
- নাম ধরে ! ব্যাপারটা কেমন না ।
- তাহলে তুহিন ভাই ডাকুন । এটা তাও আপনার ওই সাহেবের তুলনায় অনেক ভালো ।
- ঠিক আছে ।
- এবার বলুন ডেকেছিলেন কেন ?
- বলছিলাম বিশ মিনিট আর কফির পার্ট টা আজ চুকে গেলে হতো না । আমার তো বাসায় যেতে এমনও দেরি হয়ে গিয়েছে ।
- আজ হচ্ছে না । সেটা অন্য দিনের জন্য তোলা থাকলো ।
তুহিন সাহেব একটা খালি সি এন জি দেখে হাত দেখিয়ে থামলেন ।
- নিন আজ আপনার গাড়ি পেয়ে গেছি । এবার উঠে পড়ুন ।
- আপনি তো আচ্ছা লোক একটু আগে আমাকে থাকার জন্য অনুরোধ করেছিলেন । এখন বিদায় দিতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন ।
- সেটা আপনি বুঝবেন না । আজ আপনি গেলেই আপনার সাথে আবার আমার দেখা হবার একটা সুযোগ থেকে যাবে ।
- আল্লাহ হাফেজ । ভালো থাকবেন ।
বলেই আমি সি এন জিতে উঠে বসলাম । তুহিন সাহেব ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে বললেন ।
- পৌঁছে কিন্তু কল দিয়েন । আমি কিন্তু চিন্তায় থাকবো ।
আমি সি এন জি থেকে নেমে এলাম । ব্যাগ থেকে ভাড়ার টাকাটা তুহিন সাহেবের বাড়িয়ে দিয়ে
বললাম ।
- এটা যদি না ফিরিয়ে নেন , তবে এই সি এন জি তে আমি যাবো না ।
- আপনি তো আচ্ছা মানুষ । এভাবে গাড়ি থেকে কেউ নেমে যায় ।
- অন্যদের ব্যাপারে জানি না । আমি এমন ই ।
- আপনার অনেক রাগ তাই না ।
ও দিকে সি এন জি ড্রাইভার হর্ন দিচ্ছে ।
- আপা যাবেন না ?
- যাবো একটু দাঁড়ান ।
- কি হলো নিচ্ছেন না কেন ?
তুহিন সাহেব আমার হাত থেকে টাকা টা নিতে নিতে বললেন ।
- আমি সত্যি অনেক কষ্ট পেলাম ।
- দুঃখিত , আমার কিছুই করার নেই ।
বলেই আমি সি এন জিতে উঠে বসলাম । ড্রাইভার জানতে চাইলো ।
- আপা ভাইজান যাবে না ।
- না , আপনি যান ।
রোদেলা চলে যাওয়ার পর তুহিন বেশ কিছুক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে রইলো । ও ভেবে পেলোনা মেয়েটি এমন কেন ? আর ভাড়া দেয়াতে এমন রেগে যাবার কি হলো ? কই নীলা তো কখনো রাগ করত না । বরং দিতে ভুলে গেলে বলতো , আমার নাকি দায়িত্ব বোধ নেই । রোদেলা মেয়েটা খুব অদ্ভুত কখনো রোদেলাকে খুব আপন মনে হয় আবার কখনো মনে হয় ওকে ঠিক বুঝতে পারি না ।
- ভাইজান একটু সাহায্য করবেন , বাচ্চাটা না খাইয়া আছে ।
তুহিন সামনে দাঁড়ানো মহিলাটির দিকে তাকালো । মহিলাটি পরনে ময়লা শাড়ি আর কোলের বাচ্চাটি দেখেই মনে হচ্ছে ক্ষুধার্থ ,ময়লা হাত মুখে দিয়ে রেখেছে । তুহিন হাতে ধরে রাখা টাকা গুলো মহিলাটির হাতে দিয়ে , হাঁটতে শুরু করলো ।
বাসায় ডোরবেল দিতেই , আম্মু দরজা খুলে
দিলেন ।
- কোথায় ছিলে এতক্ষন ?
- একটা কাজ ছিলো , তুমি কখন এসেছো ?
- আমি তো বিকেলেই চলে এসেছি । ভাবলাম আজ দুজনে বিকেলে এক সাথে চা খাবো । এসে শুনি তুমি নেই ।
আমি অবাক হয়ে আম্মুর দিকে তাকালাম ।
- তুমি আমার সাথে চা খাবে বলে তাড়াতাড়ি চলে এসেছো !
- কেন ? আমি কি তোমার সাথে বসে চা খেতে পারি না ?
- পারো , তবে এমন কখনো আগে ঘটে নি তো তাই ....আর তুমি এসে আমাকে ফোন দিলে না কেন ?
- তুমি তো শুনি সারাদিন বাসায়ই থাকো । তাই বেরিয়েছো শুনে ফোন দেয়নি ।
- তুমি কি চা খেয়েছো ?
- না , একা খেতে ইচ্ছে করে নি ।
- আম্মু তাহলে আজ আমি তোমার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসছি ।
- বাহির থেকে এসেছো আগে ফ্রেশ হয়ে এসো ।
- যাচ্ছি তার আগে চায়ের পানি বসিয়ে দিয়ে যাই ।
চায়ের পানি বসিয়ে দিয়ে , আমি আমার রুমে এসে তাড়াহুড়ো করে কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হলাম । রান্না ঘরে গিয়ে দেখি চায়ের পানি ফুটতে শুরু করেছে । পানিতে চা পাতা দিয়ে , কাপে দুধ চিনি দিতে গিয়ে খেয়াল হলো । আম্মু চায়ে চিনি কি পরিমান খান , না চা চিনি ছাড়া খান , তা তো আমি জানি না । আম্মুর কাছে জানতে চাইবো ? আম্মু কি ভাববেন ? আমি চিনি ছাড়াই দুকাপ চা আর ছোট একটা পটে করে চিনি নিয়ে আম্মুর রুমে গেলাম । আম্মু তখন বারান্দায় বসে আছেন ।
- আম্মু চা নিয়ে এসেছি ।
- চা নিয়ে বারান্দায় চলে এসো ।
আমি ট্রে নিয়ে বারান্দা গেলাম , অনেক বছর পর আম্মুর রুমের বারান্দায় এলাম । আম্মু আগে থেকেই আমার জন্য একটি চেয়ার আনিয়ে রেখেছেন । এই বারান্দাটা আমার রুমের বারান্দা থেকে অনেক বড় । আম্মু চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতে বললেন ।
- চায়ে চিনি দাও নি তো । আমি চায়ে চিনি খাই না ।
- না দেই নি ।
আম্মু চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন ,
- বাহঃ তুমি তো ভালো চা বানাতে শিখে গেছো ।
- এখন থেকে চা খেতে ইচ্ছে করলে আমাকে বলবে । আমি বানিয়ে দিবো ।
- ঠিক আছে । কি ভাবলে ?
- কোন ব্যাপারে ?
- তোমার নিজের ব্যাপারে ।
- আমি ঠিক বুঝি নি ।
- অনার্স তো শেষ , মাস্টার্স করবে না ?
- করবো , তবে কিছু একটা করতে চাচ্ছি মাস্টার্স এর পাশাপাশি ।
- কি করার ইচ্ছে ?
- শিক্ষকতা ।
- শিক্ষক হতে চাইছো কেন ?
- আমার বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে তাই ।
- বাচ্চা বলতে তুমি প্রাইমারী লেবেলে পড়াতে চাচ্ছ ?
- হুম ।
- ওই লেবেলের বাচ্চাদের হ্যান্ডেল করা তো অনেক কষ্ট কর । তুমি বরং হাই স্কুলের জন্য চিন্তা করো ।
- দেখি ।
- রোদেলা আমি তোমার বিয়ের কথা ভাবছি ।
- এত তাড়াতাড়ি ?
- বিয়ে তো করতে হবে তাই না ।
- হুম , কিন্তু আমি এখন বিয়ে নিয়ে ভাবতে চাচ্ছি না ।
- কেন ? তুমি কি কারো জন্য অপেক্ষা করতে চাইছো । এমন হলে আম্মুকে বলতে পারো । আমার মনে হয় আমরা আমাদের ব্যাপার গুলো খোলামেলা ভাবে আলোচনা করতে পারি ।
- না , তেমন কিছু নয় । আমি আমার জীবনের কিছুটা সময় আমার মত করে কাটাতে চাচ্ছি ।
- ঠিক বুঝলাম না ।
- বিয়ে মানেই তো দায়িত্ব পালন করা । একটা পিছুটানের মধ্যে থাকা । আমি ওগুলো ছাড়া স্বাধীন ভাবে থাকতে চাইছি ।
- কিন্তু আমি তো চাইছি তোমাকে বিয়ে দিয়ে । আম্মার সাথে গিয়ে থাকতে ।
- তুমি যাও না নানুমনির কাছে । তার জন্য আমাকে কেন বিয়ে দিতে চাইছো ?
- আমি চাইনা তুমি একা থাকো ।
- কেন খালামনি তো আছে ।
- বুবুর ও তো বয়স হয়েছে । উনি আর কতদিন তোমার পাশে থাকবে ?
- কেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ।
- রোদেলা আমি মনে হয় তোমাকে ঠিক মত বুঝতে পারছি না ।
- এখানে বুঝানোর কি হলো ?তুমি নানুমনির কাছে যেতে চাচ্ছ যাওয়া । কিছুদিন থেকে এসো ।
- আমি একে বারে যেতে চাইছি ।
আমি কিছু বললাম না , চুপ করে বারান্দার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে দূরের রাস্তার আলো দেখতে লাগলাম ।
- চুপ হয়ে আছো যে ?
- কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না ।
- আমি আপাতত একে বারে যাচ্ছি না । তোমাকে বিয়ে দেবার পর , হয়তো একে বারে থেকে যাবার কথা ভাববো । কারণ তোমার বিয়ে হয়ে যাবার পর তো আমি একা হয়ে যাবো তাই না ।
- কবে নাগাদ যেতে চাইছো ?
- এখনো ঠিক করি নি । তবে ছয় মাসের মধ্যেই যেতে চাইছি ।
- একেবারে ?
- না , প্রথম গিয়ে কিছুদিন থাকবো । পরে ....
- খালামনি কি কাল আসছেন ?
- না , আগামী সপ্তাহে আসবেন । বিকেলে ফোন করেছিলো । তোমাকে ও তো করেছে , তুমি নাকি ফোন ধরো নি ?
- ব্যাগে ছিল টের পাইনি । আমি নামাজ পড়তে যাবো ।
- ঠিক আছে যাও , তবে আম্মুর কথা কিন্তু এখনও শেষ হয়নি ।
আমি চায়ের কাপ গুলো নিয়ে বারান্দা থেকে চলে এলাম । কাপগুলো রান্না ঘরে রেখে , ওযু করে নামাজ পড়ে নিলাম । নামাজ শেষ হতেই খেয়াল হলো । খালামনি তো ফোন দিয়েছিলো । ব্যাগ থেকে ফোন হাতে নিয়ে দেখি তুহিন সাহেব তিনটি মেসেজ পাঠিয়েছেন ।
-- আপনি কি ঠিক মত পৌঁছে গেছেন ? আপনার কিন্তু জানানোর কথা ছিল ।
-- আমার আচরণে হয়তো আপনি বিরক্ত হচ্ছেন । আজ ঠিক করেছিলাম আপনি মেসেজ না দিলে , আমি ও দিবো না । কিন্তু আপনার সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে ।
-- কি হলো কথা বলবেন না ? না এখন ও রেগে আছেন ?
আমি মেসেজের উত্তর না দিয়ে খালামণিকে ফোন দিলাম ।
-আসসালা মুয়ালাইকুম ।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম , কেমন আছিস মা ?
- আমি ভালো , তুমি নাকি কাল আসবে না ?
- হ্যা , আমার পরিবর্তে এখানে যার আসার কথা ছিল । তার নাকি আসতে দুদিন দেরি হবে ।
- হুম , বুঝলাম । তুমি তাড়াতাড়ি আসবে তোমার সাথে জরুরি কথা আছে ।
- কিছু হয়েছে ? আমাকে বল ।
- তুমি আগে এসো তারপর বলবো ।
- জরুরী হলে তুই ফোনেই বল ।
- না , তুমি আসলে তারপর বলবো ।
- আমি আগামী সপ্তাহে আসছি ।
- তখন আবার কোন অজুহাত দেখাবে না তো ?
- না , সত্যি আগামী সপ্তাহে আসছি ইনশাআল্লাহ।
- ঠিক আছে , আল্লাহ হাফেজ ।
খালামনির সাথে কথা শেষ করেই ,আমি রামিসা আন্টিকে ফোন দিলাম ।
-হ্যালো ,
-আসসালা মুয়ালাইকুম ।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম , কে বলছেন ?
- আমি কি মিসেস রামিসার আহমেদ এর সাথে কথা বলছি ।
- জী , আপনি ?
- আন্টি আমি রোদেলা , কিছুদিন আগে আপনাদের বাসা ছিলাম ।
- রোদেলা , কেমন আছিস মা ?
- আলহামদুলিল্লাহ ভালো । আপনি , আঙ্কেল ভালো আছেন ?
- হ্যা ,আমরা ভালো আছি । তোমার শরীরের কি অবস্থা ।
- আন্টি ভালো ।
- আর বাসার সবাই ভালো আছে ? কোন ঝামেলা হয়নি তো ?
- জী না আন্টি , সবাই ভালো আছে ।
- শুনে ভালো লাগলো , চিন্তায় হচ্ছিল তোমার
জন্য ।
- সব কিছু ঠিক আছে চিন্তা করার কিছু নেই ।
- তোমার বাবার সাথে কথা হয়েছে ?
- না , আন্টি । আমি আব্বুর ফোনের অপেক্ষায় আছি ।
- তুমি ফোন দিলেই পারো ।
- হুম , দেবো ।
- ভালো থেকো , তোমার ফোন পেয়ে ভালো
লাগছে ।
- ধন্যবাদ আন্টি , আজ তাহলে রাখি । আল্লাহ হাফেজ ।
- ভালো থাকবে আর মাঝে মাঝে ফোন দিও ।
- ঠিক আছে আন্টি ।
আন্টির সাথে কথা শেষ করে ফোন রাখতেই দেখি নতুন দুটো মেসেজ এসেছে ।
-- কি হলো আমার মেসেজের উত্তর দিচ্ছেন না কেন ?
-- আমি জানি ফোন এখন ও আপনার হাতেই আছে । আম্মুর সাথে কথা বলেছেন একটু আগে ।
প্লীজ কিছু তো বলুন ।
তুহিন সাহেব তো নাছোড় বান্দা । আমি ও লিখলাম ।
-- হুম , কি বলবো ?
সাথে সাথেই উত্তর এলো ।
-- এতক্ষন অপেক্ষা করিয়ে রেখে শুধুই -হুম কি বলবো ? জানেন সেই সন্ধ্যা থেকে আপনার মেসেজের অপেক্ষায় বসে আছি ।
-- আমি কি আপনাকে অপেক্ষা করে থাকতে বলেছি নাকি ?
-- সেটা আবার বলতে হয় নাকি । আপনি তো জানতেনই আমি আপনার মেসেজে অপেক্ষায় থাকবো ।
--হুম
-- আবার হুম , আপনাকে না এই শব্দটি বলতে না করেছি ।
-- এবার বলুন কি বলবেন ?
-- সন্ধ্যায় এমন রাগ দেখিয়ে চলে গেলেন কেন ?
-- বাহ রে রাগ দেখাবো না । আপনি কেন আমার গাড়ি ভাড়া দিতে যাবেন ?
-- পুরুষ মানুষ হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে না ।
-- আছে তবে সেটা আপনার আপন মানুষ গুলোর জন্য ।
-- আপনি বুঝি তাদের মধ্যে পারেন না ?
-- অবশ্যই না । আমি কেন আপনার আপন মানুষদের মধ্যে পরতে যাবো ।
-- আপনি চাইলেই কিন্তু পারেন ।
চলবে .....
✍️রেহানা হক রেনু
গত পর্বের লিংক -১৬
https://www.facebook.com/groups/bdofficials/permalink/854695005335997/