আবুলের মা আজ বড় মাছের মাথা রেঁধেছেন। আবুলের বাপ আর আবুল দুই জনেরই সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। ভোরে উঠেই আবুলের বাপ রওনা দিলো হাঁটে। বাজারের সবাই তাঁকে দেখেই প্রশ্ন করেন, "ভাই, বেঁচে আছেন তাহলে! দিন কাল কেমন যায়?"
আবুলের বাপ সহজ সরল মানুষ। চোখ খুলে বাজারে যায় ,কান বন্ধ করে আবার ফিরে আসে।তাঁর ধারণা লোকে তাঁর সাথে রসিকতা ছাড়া অন্য কারণে কথা বলতে চান না।
যথারীতি তিনি বাইরে হাঁটতে বের হন, পাশের বাসার আকবর সাহেবের ছোট ছেলের কাছ থেকে বই আনতে বের হন কিন্তু তাঁর কান টোটালি বন্ধ। তাঁর মতে" পাছে লোকে কতো কথাই না বলে"_ বলবেই!
আকবর সাহেবের ছোট ছেলেও" আঙ্কেল আঙ্কেল এই নেন "বলে আবুলের বাপের হাতে একগাদা বই ধরিয়ে দেয়। সবাই মোটামুটি একটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে। আবুলের থেকেও আবুলের বাপকে নিয়ে সবার বেশি দুশ্চিন্তা।
যাক, মাছের মাথার কাছে ফিরে আসি।আবুলের মা খুবই দ্বিধার মধ্যে আছে। মাছের মাথা একটা কিন্তু খেতে বসেছে দুজন। কোন সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে আবুলের মা তরকারি রেখেই উঠে বলছে" হ্যাঁ, আবুল তরকারি নে। কি গো তরকারি নিতাছো না ক্যান!"
আবুলের বাপ"সুষম খাদ্যে মস্তিষ্কের বিকাশ " এই ধরণের একটি বাক্য শিখেছিলেন কিন্তু হাজার বার চেষ্টা করেও মনে করতে পারছেন না" সেক্ষেত্রে তাঁর ইজ্জতে আঘাত লাগতে পারে বলে তিনি ধারণা করেন। খেতে বসেই ছেলেকে প্রশ্ন করছে "সুষম খাদ্যে কি করে রে?"আবুল মাথা চুলকাচ্ছে আর ভাবছে। কোন সমাধান না পেয়ে বলে বসলো" আব্বা ইন্টারে আমি আছি দুই বছর কিন্তু আপনে এই বারো বছর এক জায়গায় আছেন। আমি কিছু কমু না পাশ আমারো করা লাগবো।দরকার হইলে খাইলাম না মাথা তয় আমি উত্তর কইতে পারুম না"।
বাপের মুখের উপর এমন কথা বলায় আবুলের বাপ ওরফে "আদু ভাই " হতাশার সমুদ্রে গা ভাসালেন।
বাহিরে বের হলে কোন কথা কানে নিতেন না কিন্তু আজ তাঁর ছেলে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকে আঙ্গুল তুলেছেন। তিনি বিষয়টা নিয়ে খুবই আহত।মনের উপর দিয়ে এতবড় ঝড় গেলো। খাবার রেখেই আবুলের বাপ উঠে পরলেন।
লেখাপড়া করতে করতে রাত পেরিয়ে সকাল হয়। এদিকে লক ডাউনে আদু ভাই কোন স্যারের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। আপাতত তাঁর ইন্টারের বারো বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছেন।
দিন নেই রাত নেই সংসার ত্যাগ করে তিনি লেখাপড়ায় মনোযোগ দিলেন। ছেলে পাশ করবে ভেবে ভেবেই আদু ভাইয়ের বাপ পৃথিবী ত্যাগ করলেন। নিজের স্বামীর ইজ্জতের কথা ভেবে রহিমা খাতুন সাংসারিক সব কাজ একাই সামাল দিচ্ছেন। বাপ বেটা দুই রুমে গলা ছেড়ে দিনরাত পড়ছে। এভাবে কেটে গেলো লক ডাউনের ৬ মাস। আদু ভাই এখন অস্বাভাবিক আচরণ করছে।মাঝে মাঝে চেঁচিয়ে উঠছে আবার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলছে "আমি আদু দুনিয়াতে চ্যালেঞ্জ নিয়ে বেঁচে থাকা এক সাধু।"
এই অবস্থায় এলাকার লোকজন ডেকে মিটিং করা হয় "আদু ভাইকে স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে দেওয়া হোক"। তাঁকে নিয়ে মজা করা যেন বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি যেন শান্তিতে মরতে পারেন।
রহিমা খাতুন স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চাইছেন কিন্তু আদু ভাই ক্ষণে ক্ষণে চেঁচিয়ে বলছেন " আমি আদু পৃথিবীতে চ্যালেঞ্জ নিয়ে বেঁচে থাকা সাধু।"
সবাই বুঝতে পারলো পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। আদু ভাই পরিক্ষা দিয়েই মরতে চান। তাঁকে মেন্টাল থেরাপি দিয়ে আবার পড়ার সুযোগ দেওয়া হলো।
ঠিক একমাস পরেই কয়েকজন লোক আদু ভাইয়ের বাড়ির সামনে এসে দাড়িয়ে আছেন। আদু ভাই এদের চেনেন না কারণ লক ডাউনে তিনি তাঁর স্যারদের চেহারাই ভুলে গেছেন!
আদু ভাইকে সালাম দিয়েই তাঁর স্যার একটা মিষ্টি তাঁর মুখে দিয়ে বললেন "ট্রিট কবে পাচ্ছি আদু?"
আদু ভাই লক ডাউনে শিক্ষিত হয়েছেন। ট্রিটের মানে বুঝে বললেন "কেনো,কি হয়েছে? "
এদিকে পাড়ার লোকে মালা নিয়ে হাজির।<আদু, তুই তো পাশ কইরা লাইছছ>বলেই এলাকার চা দোকানদার তাঁকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।
আদু ভাইয়ের দুচোখ ছলছল করছে।কেঁদে দিবে বলে মনে হচ্ছে। আকাশ বাতাস সব উজার করে আদু ভাই জায়নামাজে দাঁড়িয়ে শিক্ষমন্ত্রীর জন্য দোয়া করতে লাগলেন।
এখন পাড়ার চায়ের দোকানে রোজ আড্ডা দেন।জানতে পারলেন "ফেইসবুক " নামক একটা বইতে সব খবরাখবর পাওয়া যায় তাই বাপের জমি বেঁচে একটা স্মার্টফোন কিনলেন। ভালোই যাচ্ছে দিন। আপাতত স্বস্তি নিয়ে মরবেন বলে জানা গেছে।
রাতে খেতে বসে জানতে পারলেন এক মেয়ে পরিক্ষা দেওয়ার জন্য আগ্রহ এবং অনুরোধ প্রকাশ করেছে। এবেলায় আদু ভাই না খেয়ে বেরিয়ে গেলেন। মনে অশান্তি শুরু। পাড়ার মোড়ে এসেই একজন জানালেন "পরিক্ষা হচ্ছে " আজ ১৭ দিন আদু ভাই আইসিইউ তে। কে জানে আর কখনো বের হলে কান বন্ধ রাখতে পারবেন কিনা! নাকি "পরিক্ষা হচ্ছে " এটাই কানে বেজে যাবে আমৃত্যু।;
আদু ভাই এখন আইসিইউতে!