করোনাকালীন শিক্ষা ব্যবস্থা ও আমাদের করণীয়

10 64
Avatar for Niloy150943
4 years ago



সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই জ্ঞান অর্জনের পথ কখনোই মসৃণ ছিল না। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের সময় থেকেই জ্ঞানপিপাসুদের হতে হয়েছে নানারকম বাধাবিপত্তির সম্মুখীন। কখনো কখনো রাজনৈতিক আন্দোলন কিংবা ষড়যন্ত্র আবার কখনো কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। আমরা প্রতিনয়তই আমাদের মুরুব্বিদের থেকে শুনে থাকি তারা কতটা কষ্ট করে তাদের শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করেছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিও আমাদের দাঁড় করিয়েছে এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তবে অবস্থাটা ঠিক পূর্বের মত নয়; তার থেকে বহুলাংশে সংকটাপূর্ণ। যেখানে কোনোকিছু্র অপ্রতুলতা নেই, তবুও যেন আমাদের হাত শিকলে বাঁধা।

সারা বিশ্বের এই অসহায়ত্ব অবস্থা এটাই ভাবায় যে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আরো বাস্তবমুখী ও সময় উপযোগী হওয়া এখন সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর অনলাইন শিক্ষা বা ই-লার্নিং পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ই-লার্নিংয়ের ৮০ শতাংশের বেশি পাঠ কার্যক্রম ইন্টারনেট নির্ভর। তাই একে ‘ডিসট্যান্ট লার্নিং’ও বলা হয়। ই-লার্নিংয়ের বেশকিছু ভালো দিক আছে। প্রথমত, এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা যে কোনো স্থান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারবে। তাকে কষ্ট করে আর শ্রেণীকক্ষে আসতে হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, যারা চাকরির পাশাপাশি লেখাপড়া করতে চায় তাদের জন্য সুবিধা হচ্ছে তারা যে কোনো সময় শিক্ষামূলক ভিডিওগুলো দেখে নিজের সুবিধামতো সময়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন। তাছাড়াও কোনো টপিক বুঝতে সমস্যা হলে পুনঃপুন প্লে করে দেখে নিতে পারছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত ১১ ই মার্চ কোভিড-১৯ এর এ পরিস্থিতিকে ঘোষণা করেছে প্যান্ডেমিক হিসেবে। তাই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। ইউনিসেফের একটি জরিপ অনুযায়ী, সারাবিশ্বে করোনার জন্য প্রায় ১.৭ বিলিয়ন শিক্ষার্থী পড়াশুনার বাহিরে আছেন। বিশ্বের ১০৬ টি দেশের সর্বত্র এবং ৫৫ টি দেশে অঞ্চলভেদে বন্ধ আছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যার ফলে বিশ্বের শিক্ষার্থীদের শতকরা ৯৮.৬০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি ৫ জনের মধ্যে ২ জন শিশুর বিকল্প পদ্ধতিতে ঘরে বসে শেখার কোন সুযোগ নেই। ইউনেস্কো রিপোর্ট অনুযায়ী, আমাদের দেশে প্রায় ৪০ মিলিয়ন শিক্ষার্থী যার মধ্যে ১৭.৩৩ মিলিয়ন প্রাথমিক, ১৫.৮ মিলিয়ন মাধ্যমিক আর ৩.১৫ মিলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী। এত বৃহৎ সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। মহামারীর এই সময়ে শিক্ষার্থীদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি শিক্ষার্থীদের মূল্যবান এই সময়টি হেলাফেলায় নষ্ট হতে দেওয়া কখনো কাম্য নয়। ইতোমধ্যে টেলিভিশনে এবং অনলাইন প্লাটফর্মে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম চালু করা হয়েছে। তবে তন্মধ্যে অনেক শিক্ষার্থীর ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বা ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার ফলে ক্লাস নেওয়া সত্ত্বেও তারা যুক্ত হতে পারছেন না।

এই দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে পরিকল্পিত ও ইনোভেটিভ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এখন আশু প্রয়োজন -

১. সেশনজট রোধে কারিকুলাম পুনঃসংস্করণ করে সময়োপযোগী পুনঃকারিকুলাম বাস্তবায়ন করা।

২. গ্যাপ যাওয়া পাঠ্যসূচিকে প্রতিটি সেমিস্টার/ইয়ারে সংযুক্ত করার চেষ্টা করতে হবে।

৩. বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন লার্নিং বাস্তবায়ন করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটর কোম্পানি সমন্বয়ে আহবায়ক কমিটি গঠন করে এবং প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনিক্যাল ও মনিটরিং কমিটি করে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

৪. অনলাইন প্লটাফর্ম হিসেবে জুম, গুগল মিট, গুগল ক্লাসরুম, ফেবুক লাইভ, হুয়াটস এ্যাপ, মেসেঞ্জার ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।

৫. শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইন ক্লাসগুলো রেকর্ডিং করে প্রদান করতে হবে যাতে যারা ক্লাস করতে পারছেনা, তারা পরে যেকোনো সময় সেগুলো সংগ্রহ করতে পারে।

৬. শিক্ষা উপকরণগুলো পিডিএফ বা ডক ফাইল আকারে সরবরাহ করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা পুনঃপুন সেগুলো পড়তে পারে। এক্ষেত্রে আরেকটি উপকার হচ্ছে, শিট বা চৌথা ফটোকপির হিড়িক কমবে।

৭. বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে মাধ্যমিক শ্রেণি থেকেই প্রতিটি শিক্ষার্থীদেরকে মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষার আওতায় আনা জরুরি। দেশে অহরহ শিক্ষার্থীদের আত্মহননের ঘটনা চোখে পড়ছে। করোনাকালীন সময়ে তারা আরও বেশি ডিপ্রেশনে পড়ে যাচ্ছে যার পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।

৮. পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নের পাশাপাশি সহশিক্ষা ও কো-কারিকুলার এক্টিভিটিজের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। কারণ অধিকাংশই এই সময়ে পড়াশোনা থেকে বিচ্যুত, আকস্মিকভাবে পড়াশোনা চাপিয়ে দিলে তা মোটেও সুফল বয়ে আনবেনা।

৯. শিক্ষা বাজেটে বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রত্যেক স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির আওতায় আনতে হবে।

১০. দেশের অনেক বেসরকারি ও সায়ত্ত্বশাসিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করে পাঠদান চালিয়ে যেতে সক্ষম এবং যাচ্ছেও। তাদের উচিৎ হবে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে কোলাবরেশন করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া।

১১. এই সময়ের মধ্যে অনেকেরই চাকরির বয়সসীমা অতিবাহিত হয়ে গেছে। তাই সুষ্ঠ পরিকল্পনার মাধ্যে এ বয়সসীমা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা উচিৎ।

১২. যেহেতু চাকরির বাজারে পদের সংখ্যার তুলনায় পদপ্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি, তাই শুধু চাকরির বয়স বৃদ্ধি করে এ সমস্যা নিরসণ সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদেরকে উদ্যোক্তা হবার ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলা প্রয়োজন।

১৩. Charity begins at home অথবা Parents are the first teachers যা-ই বলিনা কেন, এই সময়ে তা আরও বেশি গুরুত্ব বহন করে। সকলে নিজের বাড়িতে অবস্থান করায় মা-বাবার উচিৎ তাদের সন্তানের প্রতি সচেতন হওয়া। বিশেষ করে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ক্ষেত্রে সেটা আবশ্যিক।

১৪. স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমণ্ডলীকে পর্যায়ক্রমে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

১৫. সরকারি ব্যবস্থাপনারর মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা যেখানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সকল বিষয়ের স্টাডি মেটেরিয়াল থাকবে। ভবিষ্যতে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ভিত্তিক স্টাডি মেটেরিয়ালস গুলো সংযুক্ত করা যেতে পারে।

১৬. কোন কোন ক্লাসের পরীক্ষাগুলো নেয়া হবে কি হবে না কিংবা নিলেও কিভাবে নেয়া হবে তা সুষ্ঠ পরিকল্পনার মাধ্যে দ্রূত সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিতে হবে। কিছুদিন পর পর ভিন্নধর্মী মন্তব্য প্রদান করে শিক্ষার্থীদের বিচলিত করা উচিৎ না, এতে তাদের মনোবল নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে যারা পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে তাদের অভিভাবকদের উচিৎ সন্তানদেরকে মানসিকভাবে চাপে না রাখা।

১৭. দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন প্রদানের সরকারী উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে তা আসলেই দরিদ্র শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিৎ। যে সকল শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে স্টাটাস দিয়ে দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের Excuse দিয়ে ক্লাস করতে চায় না তারাও কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে, তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী এবং প্রকৃতপক্ষে তারা দরিদ্র নয়। তবে এটি সত্যি যে, মান-সম্মানের ভয়ে প্রকৃত দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীরা সামাজিকভাবে কখনো বলতে চায় না তারা দরিদ্র।

১৮. সরকারের পাশাপাশি প্রত্যেকটি বিভাগের শিক্ষক, এলামনাই এসোসিয়েশন, বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় প্রশাসন অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।

১৯. টেলিটক থেকে স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে,সেক্ষেত্রে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন।

২০. শুধু টেলিটক নয়, বাকি শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কোম্পানির সিমে ইন্টারনেট ক্রয় করে ক্লাস করছে কিন্তু নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে অনেকেই লাইভ ক্লাস করতে পারছেনা। সমগ্র দেশের নেটওয়ার্ক সিস্টেম ডেভেলপ করা এখন সময়ের দাবী।

২১. স্বল্পমূল্য হলেও এদেশের এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে হতদরিদ্র পরিবারের যাদের পড়াশোনা চলত টিউশনি করিয়ে। তাদের কথা বিবেচনা করে অন্তত কোয়ারেন্টাইন কালীন ইন্টারনেট বিনামূল্যে দেয়ার ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেদিকে সুনজর দেয়া উচিৎ।

২২. এই বিনামূল্যের ইন্টারনেট ব্যবহারকালে কেউ জুম থেকে অন্য ওয়েবসাইটে গেলে সেক্ষেত্রে মেগাবাইট বা ব্যালান্স কাটবে। এটির যেমন ভাল দিক আছে, তেমন মন্দ দিকও রয়েছে। যেসব স্টাডি মেটেরিয়াল আর ক্লাস রেকর্ডিং দেয়া হচ্ছে, সেগুলো ডাউনলোড করে পড়ার তো সুযোগ দিতে হবে!

২৩. সকল শিক্ষককে জুমে বিডিরেন এর আওতায় আনলিমিটেড এ্যাক্সেস দিতে হবে।

২৪. আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রতি শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ই-বুক আকারে প্রকাশ করা যেতে পারে। বিশেষ করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির বইগুলো ই-বুক ব্যাংক বা ই-লাইব্রেরির আওতায় আনতে হবে।

২৫. ওয়ালটনের সহযোগিতায় সরকারিভাবে ল্যাপটপ বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এই উদ্যোগটি যত দ্রূত সম্ভব সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনয়ন করতে হবে।

২৬. যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে তখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিকল্পিত উপায়ে পাঠদান করতে হবে।

২৭. বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের পরীক্ষা চলমান ছিল বা সামনে রয়েছে, সেসব শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামুলক কম হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি ও দূরত্ব বজায় রেখেই তা সম্ভব। অতঃপর যাদের ক্লাস চালু করা হবে, সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চাপ কিছুটা কমে যাবে।

২৮. যেসব বর্ষের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়ে গেছে, তাদের দ্রূত রেজাল্ট দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

২৯. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোকে পর্যাপ্ত জীবাণুনাশক, সাবান, স্যানিটাইজার, থার্মাল স্ক্যানারের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৩০. প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি করে অস্থায়ী ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে।

৩১. শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা পাঠ্য বিষয়ের ক্লাস তৈরি করে তা অনলাইনে সরবরাহ করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বিমুখ না হয়ে যায়।

৩২. যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির উপর মার্ক রয়েছে, এসব নম্বর বিভাজন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে হবে। অনলাইন ক্লাসে সকলের উপস্থিত থাকা সম্ভব না।

৩৩. অনলাইন ক্লাসে পরীক্ষা ও মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে হবে যা ইতোমধ্যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো নিচ্ছে। অনলাইন শিক্ষায় যদি পরীক্ষা ও মূল্যায়ন না থাকে তাহলে শুধু ক্লাস নিয়ে কোনো লাভ হবেনা তবে সেক্ষেত্রে সহজ ও সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।

৩৪. অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে গুগল ফর্ম, গুগল ক্লাসরুমসহ আরও বেশিকিছু থার্ড পার্টি অ্যাপস আছে যা দিয়ে আগে থেকে সময় নির্ধারণ করে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যায়, এক্ষেত্রে পরীক্ষার্থী ওই অ্যাপসটি বন্ধ করলে বা একই সময়ে অন্য কোনো এপস চালু করলে বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উত্তর না করতে পারলে তাদের পরীক্ষাটি বাতিল বলে গণ্য হয়। সুতরাং, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগ খুব কম থাকে। একই পদ্ধতিতে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি ও মূল্যায়ন সম্ভব। ইমেইলের মাধ্যমে এসাইনমেন্ট নেওয়া এবং প্রেজেন্টেশন সরাসরি ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে নেওয়া যেতে পারে।

৩৫. অনলাইন এসেসমেন্ট এর ক্ষেত্রে শিক্ষকগণকে সতর্ক থাকতে হবে । আমাদের শিক্ষার্থীরা যেহেতু গ্রামীন এলাকায়ও থাকে সেহেতু এসাইনমেন্ট বেশি ওয়ার্ডে না দিয়ে গবেষণার মতো মূল অ্যাবস্ট্রাক্ট এর মতো ১০০ শব্দে দেওয়া যেতে পারে। যার ফলে একজন শিক্ষার্থী স্মার্ট ফোন দিয়ে টাইপ করে যাতে সহজে এসাইনমেন্ট টি করতে পারে।

৩৭. শিক্ষার বিভিন্ন শাখায় বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি, মেডিকেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয় যেখানে ব্যবহারিক ক্লাস রয়েছে সেখানে সমস্যা রয়েই গেল। করোনা পরিস্থিতি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে স্বাভাবিক না হলে চলতি সেমিস্টারের ব্যাবহারিক কোর্স সমূহ পরবর্তী সেমিস্টারে অফার করার ব্যবস্থা করার বিষয়টি চিন্তা করা যেতে পারে।

৩৮. অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনির্ধারিত এই ছুটির সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে নিতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরে সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ অন্যান্য সময়ে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া যেতে পারে।

৩৯. কারিকুলামের পড়াশোনা ব্যতীত বিভিন্ন অনলাইন কোর্স করে অনেক নতুন বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানলাভ করতে পারে এবং অনেক উচ্চমূল্যের কোর্সগুলোও এখন ফ্রী করে দেয়া হয়ে। যেমন - Udemy, Coursera, Udacity, HarvardX, Future Learn ইত্যাদি।

৪০. দরিদ্র শিক্ষার্থী যাদের ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে তারা অনলাইনে ওয়ার্ক ফ্রম হোম ইন্টার্নশীপ গুলো করে তাদের টিউশনির ক্ষতিগুলো পুষিয়ে নিতে পারেন।

৪১. যতদিন না সরকারী কোনো বৃহৎ পদক্ষেপ আসছে ততদিন অনলাইন শিক্ষা প্লাটফর্ম থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন যেমন - টেন মিনিট স্কুল, অন্যরকম পাঠশালা, বাইজু, খান একাডেমি, স্কুল অব ফেলিসিটি ইত্যাদি।

৪২. সর্বোপরি, যেকোনো নতুন পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করা সময় সাপেক্ষ। জীবনের চেয়ে কোনোকিছুর মূল্যই বেশি নয়। তাই সকলকে ধৈর্যশীল হতে হবে। নিজের সময় প্রোডাক্টিভ ওয়েতে অতিবাহিত করতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে।

একটি প্রবাদ রয়েছে, "রোগীর চেয়ে ডাক্তারের সংখ্যা বেশি"। আমরা যত সমাধানই দেই না কেন তা যদি কর্তৃপক্ষের সুনজরে না পড়ে এবং সঠিক বাস্তবায়ন না হয় তবে আদৌ কোনো লাভ হবেনা। Education is the backbone of a nation তথা শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আমরা যদি এই পরিস্থিতিতে মেরুদণ্ড শক্ত না রাখতে পারি তবে আমাদের শিক্ষার দিক থেকে কুঁজো হয়ে যেতে হবে নিকট ভবিষ্যতে। ১৯৭১ সালের ১৪ ই ডিসেম্বর এদেশ একবার মেধাশূণ্য হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে ঠিক পূর্বের অবস্থাতেই ফিরে যেতে হবে আমাদের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের আসলে কোনো বিকল্প হয় না কারণ একজন শিক্ষার্থী শুধু লেখাপড়া শিখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায় না। এর আনুসঙ্গিক যে আচার, ব্যবহার, সামাজিকতা, মূল্যবোধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সে পেয়ে থাকে তা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে প্রদান করা সম্ভব না। তবে করোনাকালীন মহামারীতে বিকল্প হিসেবে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এই অনিবার্য সমস্যায় যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া নিরাপদ নয়, তখন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষার এই ধারাকে অব্যাহত রাখাই সবচেয়ে বড় সমাধান।

15
$ 0.00
Avatar for Niloy150943
4 years ago

Comments

করনা কালে বিদ্যালয় না খোলা সরকার একটা ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে।যার ফলে আমারা আগামী দিনের ভবিষ্যত শিশুদের করনা থেকে মুক্ত করতে পারছি।যদিও স্কুল খোলাও হয়

$ 0.00
4 years ago

The education system needs to be improved. We need to improve the quality of education. Then future generations will get many benefits. Our society will benefit by caste. The nation will be educated in good education

$ 0.00
4 years ago

বিপদের বন্ধু হলো আসল বন্ধু

$ 0.00
4 years ago

Nice

$ 0.00
4 years ago

Informative

$ 0.00
4 years ago

This is that type of informative article which is badly needed in this critical situation, i read the whole article and definitely its a great work by you... I am looking for your next article... Wish you all the very best

$ 0.00
4 years ago