ডিপিন ২০ (Deepin 20) রিভিউ: অন্যরকম সুন্দর 💕 (১৮৮৪ শব্দ)
একটা অপারেটিং সিস্টেম কতটা সুন্দর হতে পারে, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো ডিপিন। সুন্দরতম অপারেটিং সিস্টেমের তালিকায় শীর্ষস্থানটি সহজেই অর্জন করতে পারে এই চাইনীজ লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনটি। ডিপিনের আগের ভার্সনগুলোও সুন্দর ছিলো, তবে ডিপিন ২০-এ এসে তারা এটিকে নিয়ে গেছে নতুন উচ্চতায়। ডিপিন ২০, অন্যরকম সুন্দর একটি লিনাক্স ডিস্ট্রো।
শুরুতে অবশ্য এটাকে Deepin V20 বলা হচ্ছিলো, তবে শেষ পর্যন্ত Deepin 20 হিসেবেই রিলিজ হয়েছে। ১৫.১১ রিলিজের পর প্রায় ১৪ মাস ডেভেলোপমেন্টের মধ্য দিয়ে গেছে ডিপিন ২০, বোঝাই যাচ্ছে এটা একটা মেজর আপগ্রেড যেখানে আগের ভার্সনটি থেকে বিশাল রকমের পরিবর্তন আছে আর এখনো এটা ইনোভেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ইন্সটলার থেকেই পরিবর্তন চোখে পড়বে। নতুন ইন্সটলারটি আগেরটি থেকে একদমই আলাদা। শুধুমাত্র পার্টিশনের কাজটুকুই ইন্সটলারে করতে হবে, ইউজার তৈরি ও অন্যান্য ধাপগুলো ইন্সটলের পর। পার্টিশন এডিটরে এখন আর সিম্পল অপশনটি থাকছে না, এডভান্সড এবং ফুল ডিস্ক দুটি অপশন থাকছে।
ইন্টারফেসের পরিবর্তন চোখে না পড়ার কোন সুযোগ নেই। নতুন আইকন থিম দুর্দান্ত এক কথায়। নতুন লঞ্চার (স্টার্ট মেনু) চমৎকার লেগেছে, বেশ কমপ্যাক্ট। আগের মতই ফুল স্ক্রিন করার সুযোগ আছে এবং সেখানে ক্যাটাগরী অনুযায়ী বিন্যাস দারুণ দেখায়। যদি এটাকে দেখে Mac OS Big Sur এর মত মনে হতে পারে, তবে এটার প্রিভিউ কিন্তু Big Sur রিলিজের অনেক আগেই প্রকাশিত হয়েছে।
ডিপিনের অন্যতম একটি ফিচার, সাইডবার হিসেবে থাকা কন্ট্রোল সেন্টার এবার বাদ দেওয়া হয়েছে। এটাকে অনেকেই হয়ত মিস করতে পারে, তবে কন্ট্রোল সেন্টার সাইডবার হিসেবে থাকার চেয়ে এটাই সম্ভবত বেশি কনভিনিয়েন্ট। আর নতুন কন্ট্রোল সেন্টারটি আগের চেয়ে অনেক উন্নত এবং এডভান্সড।
সাইডবারে এবার দেওয়া হয়েছে নোটিফিকেশন সেন্টার। এটা অনেকটা অ্যান্ড্রয়েডের মত, ওরকম গ্রুপ সুবিধা আর ক্লিয়ার অল বাটন আছে। তবে কোন ডু নট ডিসটার্ব মোড দেখলাম না।
পরিবর্তন প্যানেলেও এসেছে। আগের মতই ইফিশিয়েন্ট মোড এবং ফ্যাশন মোড দুটো মোড থাকছে। এখন নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ইচ্ছেমত উচ্চতা নির্ধারণ সম্ভব, যেখানে আগে শুধু তিনটি সাইজ ছিলো। ফ্যাশন মোড বিশেষ করে বড় রকম উন্নতি পেয়েছে, এখন এটা সম্প্রসারিত। অ্যাপ্লিকেশন আইকনগুলো মাঝে থাকছে, ট্রে আইকন, সময়-তারিখ এখন ইফিশিয়েন্ট মোডের মতই।
লিনাক্সে টাচস্ক্রিন নিয়ে অনেকের অভিযোগ দেখেছি। আমার ডেস্কটপ টাচস্ক্রিন না, তাই টাচস্ক্রিন সাপোর্ট বাস্তবে কতটা ভালো তা জানি না। তবে পুরো ইউআই ডিজাইন টাচ ফ্রেন্ডলি হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে করা হয়েছে, টপবার, বাটন, আইকনগুলো দেখে যা পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায়।
ডিপিন ইন্সটল ও সেটআপের পর প্রথম কাজ ছিলো বাংলা লেআউট যোগ করা। ডিপিনে প্রথমে বাংলা লেআউট সরাসরি প্রথমে নেই, Control Center>Keyboard and Language>System Language>বাংলা (২য়টি) যোগ করে নিয়ে এরপর Keyboard Layout এ গেলে Bangla (আমি ব্যবহার করি, জাতীয়-র মত) বা Probhat পছন্দেরটি যুক্ত করে নিতে হবে।
এরপরের কাজ ছিলো LibreOffice আর Firefox আনইন্সটল করা। হ্যাঁ, ডিপিন এবার WPS Office ও Chrome এর বদলে আর বেশিরভাগ লিনাক্স ডিস্ট্রোর মত ওপেন সোর্স LibreOffice আর Firefox প্রিইন্সটলড দিয়েছে। তবে লিব্রেঅফিসের যে ভার্সনটি তারা যুক্ত করে দিয়েছে তার অবস্থা দেখে ১৯৯৫ সালের কথা মনে পড়ে গেলো...
তবে আনইন্সটল করে সফটওয়্যার সেন্টার থেকে ইন্সটল দেওয়ার পর সমাধান হলো। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ডিপিনের ক্ষেত্রে সফটওয়্যার সেন্টার আর টার্মিনাল থেকে ইন্সটলের মধ্যে পার্থক্য আছে। এ নিয়ে পরে আরো বলছি।
অন্যদিকে Firefox ESR তথা Extended Support Version এখানে দেওয়া হয়েছে। ESR হলো ফায়ারফক্সের এমন ভার্সন যা দীর্ঘদিন ধরে সাপোর্ট দেওয়া হয়। ফলে এটি বেশি স্ট্যাবল, তবে লেটেস্ট নয়। অন্য লিনাক্সে ফায়ারফক্সে মেনুবার হাইড করা গেলেও ডিপিনে যাচ্ছিলো না, দুঃখজনকভাবে স্টোর থেকে Firefox Quantam (EN) ইন্সটল দেওয়ার পরও এটা সমাধান হয়নি। বাট নট এ বিগ ডিল।
ফায়ারফক্সে গুগল সার্চসহ কিছু জায়গায় ফন্ট নিয়ে সমস্যা ছিলো, যার সমাধান সহজ। সেটিংস থেকে বাংলা ভাষার জন্য Noto Sans Bengali নির্বাচন করে দেওয়ার পর ঠিক হয়েছে।
ডিপিনে সার্ভার স্পিড সমস্যাটা এবার একদমই পাইনি। আমার ইন্টারনেট গতি এমনিতে স্লো, তবে তার বাইরে ডিপিনের সার্ভারজনিত কোন সমস্যা অনুভব করিনি। স্টোর স্বাভাবিক সময়ে লোড হচ্ছে, ডাউনলোড স্পিড বরং এভারেজ থেকে ভালো পেয়েছি। এজন্য ম্যানুয়ালি কিছুই করতে হয়নি। তো, এটা বেশ চমৎকার ব্যাপার।
অন্য ডিস্ট্রোগুলোতে আমি টার্মিনাল দিয়েই সফটওয়্যার ইন্সটল করতে পছন্দ করি, তবে ডিপিনের ক্ষেত্রে সফটওয়্যার সেন্টার ইন্সটল করতে হয়েছে। এর সফটওয়্যার সেন্টারটি ওয়েব বেজড, অন্য লিনাক্সের সফটওয়্যার ম্যানেজার থেকে একদমই ভিন্ন। এটা অ্যান্ড্রয়েডের প্লে স্টোরের মত অনেকটা।
টার্মিনাল থেকে লিব্রেঅফিস ইন্সটল দিয়ে দেখলাম প্রিইন্সটল্ড ভার্সনটিই ইন্সটল হয়েছে, সেটিও ফুল প্যাকেজ না। অথচ সফটওয়্যার সেন্টারে একদম লেটেস্ট না হলেও বেশ নতুন ভার্সন আছে। আবার টার্মিনালে শুধু firefox-esr পাচ্ছিলাম, লেটেস্ট ফায়ারফক্স পাচ্ছিলাম না। সম্ভবত টার্মিনালে Debian Buster-এর রিপোজিটরী থেকে ইন্সটল হয়, আর ডিপিন স্টোরে আলাদা সোর্স আছে।
অ্যাপ স্টোরটিও বরাবরের মতই স্মরণমতে আমার দেখা সুন্দরতম অ্যাপ স্টোর। এর ইন্টারফেস খুবই ফ্রেন্ডলি। ব্যবহার করতে বেশ স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেছি। ওয়েব বেজড হওয়ায় ইন্টারনেট স্লো হলে ব্রাউজিং বেশ ধীর হতে পারে, তবে আমার আনস্ট্যাবল ইন্টারনেট নিয়েও তেমন সমস্যা বোধ করিনি।
প্রসঙ্গত, ব্রডব্যান্ড কানেকশন যখন নিয়েছিলাম তখন ছিলো ৫০০ টাকায় ১ এম্বিপিএস কানেকশন, পরে তারা প্যাকেজের গতি বাড়িয়েছে, তবে সত্যি বলতে আমি জানি না আসলে এটার বেজ স্পিড কত, কেননা কখনো একদমই পাই না, কখনো ০.৫, কখনো ১, কখনো ৩, কখনো ৫-৬ এম্বিপিএস পর্যন্ত পেয়ে থাকি।
চাইনীজ বেজড হওয়ায় অ্যাপ সেন্টারে প্রচুর চাইনীজ অ্যাপ বা বিভিন্ন অ্যাপের আলাদা চাইনীজ ও ইংরেজি ভার্সন চোখে পড়ে। এছাড়া প্রচুর ক্লোজ সোর্স অ্যাপ যেমন, গুগল ক্রোম, ডব্লুউপিএস অফিস, মেইলস্প্রিং এরকম অ্যাপগুলো এখানে আছে যা সচারচর লিনাক্স ডিস্ট্রোগুলোর সফটওয়্যার রিপোজিটরীতে থাকেনা। এমনকি ওয়াইন (উইন্ডোজ অ্যাপ চালানোর জন্য কম্প্যাটিবিলিটি লেয়ার) বেজড অ্যাপও এখানে আছে।
এবার লাইট-ডার্ক থিম দিনরাত্রি অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তনের অপশন আছে। একসেন্ট কালার পরিবর্তনের সুযোগ থাকছে যা একটা দারুণ ব্যাপার। উইন্ডো ইফেক্ট বন্ধ রেখে রিসোর্স ইউসেজ সুযোগ আগের মতই থাকছে, তবে এটা ব্যবহার করলে ট্রান্সপ্যারেন্সি, এনিমেশন, কার্ভড এজসহ বহু ফিচার অফ হয়ে যায়।
স্ক্রিনসেভার অপশন যুক্ত হয়েছে, যার কোন প্রয়োজন ছিলো কিনা জানি না, তবে উইন্ডোজ এক্সপি যুগের একটা ফিল পেতে পারেন। এখানে ১৯৯২ সালের xScreenSaver এর কয়েকটি আছে, যার কয়েকটি এই সময়ে এসে খুবই অদ্ভুত, অথবা ইন্টেরেস্টিং।
তবে আমার খুব পছন্দের একটি ফিচার এবার বাদ পড়েছে, হট কর্নারস। অর্থাৎ স্ক্রিনের কর্নারগুলোতে এখন আর কমান্ড বা শর্টকাট সেট করার অপশন নেই। এছাড়া আমি যেহেতু পপ ওএস থেকে এসেছি, পপ শেলের কীবোর্ড ন্যাভিগেশনগুলো মিস করছিলাম, যদিও ডিপিনেও মাল্টিটাস্কিং ভিউ এবং ইফেক্টিভ কিছু কীবোর্ড শর্টকাট দেওয়া আছে।
সব পরিবর্তন নিয়ে ডিসকাস করা আসলে সম্ভব হচ্ছে না। আরো কিছু বিষয় সংক্ষেপে তুলে ধরছি,
নতুন বুট স্ক্রিন পছন্দ হয়নি, আগে ডিপিন লোগো ফিল আপ হওয়ার সুন্দর একটা ইফেক্ট ছিলো, এখন শুধু ডিপিন লোগো ডার্ক-লাইট-ডার্ক এরকম হয়।
আগে ডিপিনের নিজস্ব অ্যাপগুলোতে আলাদা আলাদাভাবে ডার্ক/লাইট সুইচ করতে হত, সিস্টেম থিমকে ফলো করত না। এখন বাই ডিফল্ট সিস্টেম থিমকে ফলো করে, আবার কোন অ্যাপে আলাদাভাবে ডার্ক/লাইট সুইচের সুযোগও আছে।
সংযুক্ত অ্যাপগুলোতে বিভিন্নরকম উন্নতি এসেছে।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিকিউরিটিতে উন্নতি আনা হয়েছে।
নাইট লাইট ফিচার আছে, এটা আগের ভার্সনে সম্ভবত ছিলো না।
সংক্ষিপ্ত সময়ে নতুন ডিপিনের অভিজ্ঞতা আমার বেশ ভালো লেগেছে। একটা বড় ধরণের মেজর চেঞ্জের পর কেবলমাত্র স্ট্যাবল রিলিজ হয়েছে, সে অনুযায়ী যথেষ্ট সলিড ছিলো আমি বলব। আমার কনফিগারেশন হলো Intel Core i3-3220 সিপিইউ, সাথে 4GB র্যাম। এই কনফিগারেশনে বেশ স্বচ্ছন্দ্যেই চালাতে পারছি।
এ পর্যন্ত এসে হয়ত আপনার ডিপিন ব্যবহারের ইচ্ছে হতে পারে, সেক্ষেত্রে আমি কয়েকটি বিষয় তুলে ধরতে চাই। ডিপিন একটি চীনভিত্তিক ডিস্ট্রিবিউশন এবং এটাকে সেরকম করে বিশেষায়িত করা হয়েছে। বিশেষ করে স্টোরে প্রচুর পরিমাণ চাইনীজ অ্যাপ চোখে পড়ে। তবে বিশ্বজুড়েই এর ইউজারবেস রয়েছে, ভাষা নিয়ে কোন সমস্যা নেই, পুরো ইউআই ইংরেজি ভাষা সমর্থন করে। আগে সার্ভার সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করা হয়েছে।
বাংলা লেখা নিয়ে ডিপিনে কিছু সমস্যা ছিলো বিশেষ করে ১৫.৩ ভার্সনের দিকে। এখন প্রভাত কিংবা বাংলা লেআউটে সুন্দরভাবে লেখা যায় কোন অসুবিধা ছাড়াই, লেআউট যোগ করার পদ্ধতি উপরে আলোচনা করা হয়েছে। তবে যারা ফোনেটিকে অভ্যস্থ তারা হয়ত অভ্র কিংবা ওপেন বাংলা ব্যবহার নিয়ে জটিলতায় পড়তে পারেন। ডিপিনে আইবাস সমর্থনে সমস্যা আছে, তবে নতুন ভার্সনে তা সমাধান হয়েছে কিনা ট্রাই করে দেখিনি এখনো।
এরপর কেউ কেউ একে স্পাইওয়্যার হিসেবে সন্দেহ করে থাকেন। ডিপিন ওপেন সোর্স হলেও বিশেষ করে এর ওয়েব-বেজড অ্যাপ স্টোর অনেকের সন্দেহের কারণ, সেখানে ট্র্যাকিং কিছু প্রশ্ন উঠেছিলো। আর অবশ্যই সন্দেহের বড় কারণ হলো এটি একটি চাইনীজ ডিস্ট্রো, যার ভিত্তি উহান (হ্যাঁ, উহান) শহরে।
তাছাড়া পূর্ববর্তী ভার্সনে ক্লোজড সোর্স কিছু অ্যাপ, যেমন আরেকটি চাইনীজ সফটওয়্যার WPS Office, Google Chrome যুক্ত থাকতো, যা লিনাক্সে সচারচর প্রিইন্সটল্ড দেখা যায় না। এমনকি Crossover এর একটি বিশেষ সংস্করণ যুক্ত ছিলো, যা কিনা একটি কমার্শিয়াল সফটওয়্যার, সম্ভবত তাদের মধ্যে কোন চুক্তি ছিলো বা আছে। যাই হোক, নতুন ভার্সনে লিব্রে অফিস, ফায়ারফক্স দেওয়া হয়েছে, ক্রসওভার নেই।
সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ একদমই দেখি না। যখন আমরা যখন নিশ্চিন্তে উইন্ডোজ, গুগলের সার্ভিস (গুগল কী পরিমাণ ডেটা কালেকশন করে তার কিছু ধারণা নিশ্চয়ই আছে) ব্যবহার করি, তখন ডিপিনের বিষয়টি একদমই গুরুতর না, আর ডিপিনের স্পাইওয়্যার হওয়ার কোন প্রমাণও নেই। তবে যারা নিরাপত্তা ও প্রাইভেসীর বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, তারা হয়ত ডিপিনকে এড়িয়ে চলতে পছন্দ করবেন।
পরের বিষয়টি হলো ডিপিন ডেবিয়ানভিত্তিক, সরাসরি উবুন্টুভিত্তিক নয়। তাই অন্যান্য উবুন্টু বেজড ডিস্ট্রো থেকে কিছুটা তফাৎ পেতে পারেন ব্যবহারে। নতুন কাউকে সাধারণত উবুন্টুভিত্তিক ডিস্ট্রো সাজেস্ট করা হয়, কেননা উবুন্টুর কমিউনিটি ও রিসোর্স সমৃদ্ধ। উবুন্টুও ডেবিয়ান বেজড, তবে ডেবিয়ানে স্ট্যাবিলিটি আরো বেশি প্রাধান্য পায়। এছাড়া এখানে PPA সমর্থন করে না।
তবে প্রথম ইমপ্রেশনে ডিপিন ডেস্কটপের সৌন্দর্য্য যখন দেখলে তখন আসলে এর কোনটিই বড় সমস্যা মনে হয় না। আর শুধু সৌন্দর্য্যই ডিপিন ব্যবহারের একমাত্র কারণ নয়। ফাংশনালিটির দিক দিয়েও ডিপিন যথেষ্ট ভালো, বিউটি উইথ ব্রেইন।
এর অসাধারণ সৌন্দর্য্য, স্মূথ এনিমেশন সত্ত্বেও রিসোর্স ব্যবহার খুব বেশি নয়। ২ জিবি র্যাম, Pentium IV প্রসেসরের একটা পিসি থাকলেই চলবে, লো কনফিগারেশন হলে অবশ্যই ইন্সটলের সময়ে বা পরে সয়াপ স্পেস যুক্ত করতে ভুলবেন না।
ডিপিনের কনসিস্টেন্সি লিনাক্সের মধ্যে সবচেয়ে ভালোদের কাতারে রাখা যায়। সংযুক্ত সফটওয়্যারগুলোর বড় অংশ নিজেদের ডেভেলোপকৃত, থার্ড পার্টি সফটওয়্যার অনেক কম। ক্যালেন্ডার, ক্যালকুলেটর, কন্ট্রোল সেন্টার থেকে শুরু করে ফাইল ম্যানেজার, টার্মিনাল, ইমেজ ভিউয়ার, ডিপিন স্টোর অডিও-ভিডিও প্লেয়ার, ড্র়ইং সফটওয়্যার থেকে এমনকি ডেস্কটপ ইন্টারফেসও তাদেরই ডেভেলোপকৃত।
অ্যাপগুলো খুব এডভান্সড না হলেও সাধারণ ব্যবহারের জন্য একদম ঠিকঠাক, পর্যাপ্ত ফিচার আছে। কয়েকটি অ্যাপের কথা বিশেষভাবে বলতে চাই। তাদের ভিডিও প্লেয়ার, Movie, অ্যাপটিতে VLC-র মত ২০০% পর্যন্ত সাউন্ড এনাবল করা যায়, সাথে আর সব লিনাক্সের মত ১৫০% পর্যন্ত ভলিউম বুস্টের সুযোগ আছে, মানে সমন্বয়ে ৩০০%? গাণিতিক হিসেব পুরোপুরি না মিললেও বেশ চমৎকার ব্যাপার।
এরপর তাদের সিস্টেম মনিটর অসাধারণ লেগেছে। খুবই সুন্দর আর গোছানো। এটা আমার সবচেয়ে পছন্দের সিস্টেম মনিটর। টার্মিনালের কথা তো ভুলে গেলে চলবে না, আর সব অ্যাপের মতই সিম্পল এবং সুন্দর। বিশেষ করে এখানে মেনু থেকে কাস্টম কমান্ডস বা কমান্ডের শর্টকাট তৈরির সুযোগ আছে, বেশ কাজের।
তবে যে অ্যাপটির কথা বিশেসভাবে বলতে হচ্ছে, তা হলো Screen Capture। ডিপিনের এই স্ক্রিন রেকর্ডার ইউটিলিটিটি খুবই কাজের। এখানে মাউস ক্লিক, কীবোর্ড কী প্রেস, ওয়েবক্যাম থাকলে ওয়েবক্যাম ক্যাপচার, সিস্টেম অডিও, মাইক্রোফোন অডিও ক্যাপচারের অপশন আছে। এটি দিয়ে একই সাথে JPG, PNG, BMP ফরমেটে স্ক্রিনশট ও 30FPS পর্যন্ত MKV, MP4 ফর্মেটে অথবা GIF এনিমেশন হিসেবে স্ক্রিন রেকর্ড করা যায়। এটা অসাধারণ লেগেছে।
এখানেই শেষ নয়, তারা আরো নতুন অ্যাপ নিয়ে কাজ করছে। তাদের ফেসবুক পেজে ফোন মাস্টার (স্মার্টফোন ইন্টিগ্রেশন), স্ক্যানার অ্যাপের স্ক্রিনশট ও আরো কিছু কার্যক্রম নিয়ে জানানো হয়েছে। ডিপিন ২০ এখনো ইনোভেশন আর উন্নতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
কনফিগারেশন তত ভালো না হলেও ডিপিনের পারফর্মেন্স খুব চমৎকার পেয়েছি। এনিমেশনগুলো খুবই স্মূথ, স্টার্টআপ বেশ দ্রুত, অ্যাপ ওপেনিং, ক্লোজিং সবকিছু বলা চলে বাটার স্মূথ। আর বাঘ-ভাল্লুক এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি, সলিড পারফর্মেন্স। বিটা ভার্সন যখন চালিয়েছিলাম, তখন কিন্তু মোটেও এমনটা ছিলো না, বেশ ভারি ফিল হচ্ছিলো। অবশ্য তখন র্যাম ২ জিবি ছিলো, তবে সম্ভবত পারফর্মেন্সের এই ইম্প্রুভমেন্ট শুধু বাড়তি র্যামের জন্য নয়।
সব মিলিয়ে, এরকম মেজর আপডেটের পর কিছু সমস্যা, কিছু ফিচার মিসিং পাবো মনে করেছিলাম, কিন্তু হট কর্নারের বিদায় নেওয়া ছাড়া দুদিনের ব্যবহারে আমার ধারণা সত্য প্রমাণিত হয়নি। তো, কেউ যদি ব্যবহার করতে চান, আমার বিশ্বাস হতাশ করবে না। অথবা আর কিছুদিন অপেক্ষা করতে পারেন, কেননা এখনো এটাতে হেভি ডেভেলোপমেন্ট চলছে। সামনের পয়েন্ট রিলিজগুলোতে আরো পূর্ণাঙ্গ হয়ে উঠবে আশা করছি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পুরো পোস্টে মেনশন করতে একরকম ভুলে যাচ্ছিলাম, ডিপিন কিন্তু কাস্টমাইজেবিলিটিতে কেডিই, এক্সএফসিই, মাতে, গ্নোম এদের থেকে পিছিয়ে থাকে। তবে উইন্ডোজের সাথে তুলনায় করলে এর কাস্টমাইজেবিলিটি অনেক ভালো। একসেন্ট কালার, ডার্ক মোড, আইকন থিম, প্যানেল পজিশন ও সাইজ, ফ্যাশন/ইফিশিয়েন্ট মোড এরকম সাধারণ কাস্টমাইজেশন ফিচারগুলো অবশ্যই থাকছে।
Nice