আজ তোমরা জানবে ইসলামি সোনালি যুগের অন্যতম বহুবিদ্যাজ্ঞ আল-রাজি সম্পর্কে। তিনি বিশ্বের সেরা মনীষীদের একজন। একইসাথে তিনি চিকিৎসক, চিকিৎসাবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও রসায়নবিদ হিসেবে খ্যাতিমান। আল-রাজির পুরো নাম আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে জাকারিয়া আল-রাজি। তবে তিনি আল-রাজি বা আর-রাজি নামে বেশি পরিচিত। পশ্চিমা বিশ্বে তিনি জযধুবং বা জধংরং নামে পরিচিত। বিশ্ব সভ্যতায় তার অবদান অসামান্য।
আল-রাজি ছিলেন তার সময়ের মুসলিম জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসক। জ্ঞানরাজ্যের অন্যান্য শাখাতেও তিনি অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। জন্ম পারস্যের (ইরান) রাই নগরে, যা বর্তমানে বৃহত্তর তেহরানের অংশ, ৮৬৫ সালে মতান্তরে ৮৬৪ সালে। মৃত্যু ৯২৫ সালে মতান্তরে ৯৩০ সালে।
রাই নগরে আল-রাজি অঙ্কশাস্ত্র, জ্যোতির্বিজ্ঞান, দর্শন প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেন। প্রথম দিকে বিজ্ঞানের প্রতি তার আগ্রহ ছিল না। ঘটনা বৈচিত্র্য আর প্রয়োজনের তাগিদে এ বিষয়ে তিনি ধীরে ধীরে আগ্রহী হন। এরপর চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী হিসেবে অসামান্য প্রতিভার পরিচয় দিয়ে দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞান থেকে বিজ্ঞানের প্রতি তার অনুরাগ শুরু হয়।
প্রথমে তিনি রাই সুলতানের চিকিৎসক ছিলেন এবং তার
রাজকীয় হাসপাতালের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর বাগদাদের হাসপাতালে একই পদে কাজ করেন।
তিনি চিকিৎসা বিদ্যায় এতই খ্যাতি অর্জন করেন যে, তাকে বিভিন্ন দেশের শাসনকর্তা বা রাজা-বাদশাহদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াতে হয়। হাম ও গুটিবসন্তের পার্থক্য নির্ণয়ে তার অবদান অসামান্য।
কেরোসিনসহ তিনি অনেক যৌগ ও রাসায়নিক পদার্থ আবিষ্কার করেন। ৯ শতকে তিনি তার বই কিতাব আল আসরার (ইড়ড়শ ড়ভ ঝবপৎবঃং)-এ কেরোসিন উৎপাদনের দু’টি পদ্ধতির কথা লিখেন।
এর অনেক পরে ১৮৪৬ সালে আব্রাহাম গেসনার পিচজাত কয়লা ও তেলশিলা থেকে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে ঝরানো পাতনের সাহায্যে কেরোসিন শোধন করেন। কেরোসিনের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ১৮৫৪ সালে।
আল-রাজি রসায়ন শাস্ত্রে অনেক নতুন বিষয় প্রবর্তন করেন। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রতীক চিহ্ন অন্যতম। তাকে বর্তমান রসায়ন শাস্ত্রের অন্যতম প্রবর্তক হিসেবে অভিহিত করা যায়। চিকিৎসাশাস্ত্রের তিনি বহু বই লিখেন। জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যামিতির ওপরেও তিনি বই লিখেন। বল-বিজ্ঞানে ওজন সম্পর্কিত তার একটি বইয়ের খোঁজ পাওয়া যায়, যার নাম মিজান তাবিই। পদার্থ ও আলোকবিজ্ঞান সম্পর্কেও তিনি বই লিখেন, যার বহুসংখ্যকই বিলুপ্ত।