বউঃ আপনি আমার কাছে আসবেন না । আমি এক বাচ্চার বাবা কে কখনোই স্বামী হিসাবে মানতে পারবো না ।
বাসর ঘরে ঢুকেই নতুন বউয়ের কাছে বসতেই এই কথা শুনতে হলো আমায়। এটা ও কেন যে কোনো মেয়েই তো চাইবে না তার বিয়ে কোনো বিবাহিত পুরুষের সাথে হোক। তাতে আবার আমার একটা ৭ বছরের মেয়ে আছে ।
আমিঃ হুম। আপনি চিন্তা করবেন না আমি আপনার উপর জোর করে অধিকার ফলাবো না। তবে একটা রিকুয়েষ্ট করি?
বউঃ হুম বলেন।
আমিঃ আমার যে মেয়েটা আছে সে কিন্তু আপনাকে খুব ভালোবাসে। তাই ওকে একটু সন্তানের মতো দেখবেন। ও আপনাকে আম্মু বলে ডাকবে।
বউঃ না। আমি অন্যের মেয়ের আম্মু হতে পারবো না । আর যদি আমায় আম্মু ডাকে তাহলে আমি যেদিনে চোখ যায় সেদিকে চলে যাবো।
আমিঃ সেটার প্রয়োজন হবে না । আপনি ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ুন ।
আমি চলে আসতে লাগলাম ।
বউঃ শুধুমাত্র আজ আব্বুর জন্য আমার এই অবস্থা । আমার জীবন টা ধ্বংস করে দিলো নিজের হাতে ।
( বউ নিজেই নিজেকে বলছে)
আমি চলে আসলাম ।
আমি সুমন । আর যার সাথে কথা বললাম সে আমার সদ্য বিয়ে করা বউ মুমু।
আর আমার একটা মেয়ে আছে রুহী। জন্মের সময় ওর আম্মু দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে নেয়।
এরপর আমি অনেক টা ভেঙ্গে পড়ছিলাম ।
কিন্তু রুহীর মুখের দিকে তাকিয়ে আবার নতুন করে বাচার আগ্রহ জন্ম নেয়।
এরপর আমার পুরো পৃথিবী টা রুহীকে ঘিরেই শুরু হয়।
আমি রুহীর আম্মু আমিই ওর আব্বু ।
ব্যাবসার চাপের জন্য রুহীকে খুব বেশি একটা সময় দিতে পারছি না ।
তাই ওকে একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেই।
ভাবছিলাম ঐখানে নতুন বন্ধু হলে ওর সময়টা ভালোই কাটবে।
একদিন আমি ওকে স্কুল থেকে নিতে যাই সেই সময় ও আমায় মুমুকে দেখিয়ে দিয়ে বলে বাপি ঐ যে আম্মু।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি
মেয়েটা দেখতে অনেক টা রুহীর আম্মুর মতোই ।
কিন্তু রুহী তো ওর আম্মুকে দেখে নি তাহলে ঐ মেয়েটা কে আম্মু বললো কেন?
আমিঃ আম্মু তুমি ওনাকে আম্মু বললা কেন?
রুহীঃ বাপি ওটা তো আম্মু। দেখো ঐ যে আম্মু যাচ্ছে ।
এরপর থেকে যখনই রুহী মুমুকে দেখে আম্মু আম্মু বলে ডাকতে থাকে।
ও সব সময় আমায় বলতো আম্মুর কাছে যাবো। তুমি আম্মুকে নিয়ে আসো নয়তো আমায় আম্মুর কাছে দিয়ে আসো।
রুহীকে অনেক যত্ন করে আদর দিয়ে বুকে আগলে রেখেছি। ওর চাওয়া গুলো পূরণ করার সব সময় চেষ্টা করছি কিন্তু এটা তো অসম্ভব ।
কারণ আমি রুহীর আম্মুর জায়গাটা আর কাউকে দিতে চাই না । আর দিতে হয়তো পারবোও না
রুহী খুবই কান্না করতে শুরু করে ।
উপায় না দেখে মুমুর বাবার সাথে কথা বলি ওনাকে পুরোটা বলি ।
এরপর অনেক টা সমস্যার পর ফাইনালি আজ বিয়ে করলাম ।
যাই হোক
আমি রুম থেকে বের হয়ে বাইরে আসলাম।
রুহী ড্রয়িং রুমে টিভি দেখছে আমার এক বন্ধু সহ।
আমিঃ রুহী ঘুমাতে হবে না?
বন্ধুঃ আচ্ছা দোস্ত আমি তাহলে এখন আসি। কাল দেখা হবে ।
আমিঃ হুম ।
আমার বন্ধু চলে গেল । আমি গিয়ে দরজা লক করে দিলাম ।
এরপর রুহীকে নিয়ে পাশের রুমে আসছি।
রুহীঃ বাপি আমরা ঐ রুমে ঘুমাবো না আম্মুর সাথে?
আমিঃ না মা। আজ আম্মু খুব ক্লান্ত । তাই আজ আমরা এই রুমে ঘুমাবো।
রুহীঃ আম্মুর সাথে আমি দেখা করে গুড নাইট বলে আসি?
আমিঃ না। আম্মু হয়তো ঘুমিয়ে পড়ছে । তুমি কাল বলিও।
রুহী আর আমি পাশের রুমে এসে শুয়ে পড়লাম ।
রুহীঃ আম্মু অনেক সুন্দর তাই না বাপি?
আমিঃ হুম আম্মু । অনেক সুন্দর । তবে আম্মু কিন্তু তোমার উপর রেগে আছে ।
রুহীঃ কেন?
আমিঃ তুমি এতদিন তোমার আম্মুকে দূরে রাখছো তাই ।
রুহীঃ আমি তো ইচ্ছে করে রাখি নি। আম্মু কি আমার সাথে কথা বলবে না?
আমিঃ বলবে তবে এখন বলবে না। রাগ কমলে তারপর।
রুহীঃ আম্মুর রাগ কিভাবে কমে?
আমিঃ তুমি তোমার আম্মুর সামনে কোনো কথা বলবা না । এমন কি আম্মু বলে ডাকবা না। তবে আমার সামনে আম্মু বলবা সমস্যা নেই । কিন্তু তোমার আম্মুর সামনে বলবা না আর আম্মুকে বিরক্ত ও করবা না কেমন।
রুহীঃ কেন বাপি?
আমিঃ এসব করলে তোমার আম্মুর রাগ কমবে ।
রুহীঃ আচ্ছা বাপি আমি আম্মুকে একটুও জ্বালাবো না।
আমিঃ আমার লক্ষী মেয়ে ।
এরপর আমরা সারাদিন এ ঘটে যাওয়া সুন্দর সুন্দর ঘটনা গুলো বলি আর হাসি। একটু জোরেই হাসাহাসি করি । তবে আজ পুরো বিষয়টা মুমু অর্থাৎ রুহীর নতুন আম্মু কে নিয়ে ।
আমরা দুজন প্রতিদিন অনেক গল্প করি হাসাহাসি করি । এটা আমাদের নিত্য দিনের রুটিন ।
লক্ষ করে দেখলাম মুমু লুকিয়ে লুকিয়ে আমাদের দেখছে হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে আমরা কি নিয়ে এতটা হাসাহাসি করছি।
।
।
গল্পঃ আমার সন্তান
1⃣ম পর্ব
0
34
আজকের প্রথম পর্বতেই অনেক সুন্দর ভাষা দিয়ে বুঝিয়েছো।। গল্পটার ভিতর অনেক ভালোবাসা ও মমতা লুকিয়ে আছে । এই ধরনের লাভ স্টোরি আরো লিখবেন। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা গল্প উপহার দেওয়ার জন্য।।।