পৃথিবীর সম্পদ সীমিত। তেল, গ্যাস, কয়লা সবকিছুই একসময় ফুরিয়ে যাবে৷
তারপর পৃথিবীর শক্তির সবচেয়ে বড় উৎস হবে সূর্য, বাতাস আর সমুদ্রের স্রোত৷ বৈজ্ঞানিকভাবে উন্নত সব দেশ বিস্তর গবেষণা করছে বিকল্প শক্তি উৎস নিয়ে।
তবে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, পানযোগ্য পানির উৎসও ধীরে ধীর কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, লবণাক্ত পানির স্তর বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে পানযোগ্য পানির পরিমাণ কমছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা অনুযায়ী পরবর্তী বিশ্বযুদ্ধ ঘটবে পানির জন্য।
আর এই সুপেয় পানির একটা বড় ভান্ডার ধারণ করে আছে পৃথিবীর বড় বড় হ্রদ গুলো।
ভূমিবেষ্টিত দেশগুলোর ব্যাবহারযোগ্য পানির প্রধান উৎস ই তাদের হ্রদসমূহ৷ দূর্ভাগ্যজনক ভাবে, পৃথিবীর হ্রদগুলোও এখন সুস্থ নেই।
সম্ভবত সবার আগে এই তিক্ত সত্যের মুখোমুখি হয়েছে পৃথিবীর দুর্ভাগা মহাদেশ আফ্রিকা।
আজ আলোচনা করবো আফ্রিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হ্রদ "চাদ হ্রদ"কে নিয়ে।
চাদ হলো একমাত্র হ্রদ যার নামে আস্ত একটি দেশের নামকরণ হয়েছে চাদ। উচ্চারণগত কারণে অনেক শাদ বলেও ডেকে থাকেন।
চাদ, নাইজেরিয়া, নাইজার, ক্যামেরুন এই চার দেশের সঙ্গমস্থলে চাদ হ্রদ অবস্থিত।
ভূমিবেষ্টিত এই দেশগুলোর পানির প্রধান উৎস, জীববৈচিত্র্য, অর্থনীতি, মৎস শিকার সবকিছুই এক সময় এই হ্রদনির্ভর ছিলো (নাইজেরিয়া ও ক্যামেরুন ভূমিবেষ্টিত দেশ নয় যদিও)। কিন্তু বিগত ৫০ বছরে এই হ্রদের আয়তন প্রায় ৯০% কমে গেছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৮০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই হ্রদের বর্তমান আয়তন ১৩৫০ বর্গকিলোমিটার। যা ১৯৭০ এর দশকে ছিলো প্রায় ১৭ হাজার বর্গকিলোমিটার।
তবে হ্রদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্যেও তোড়জোড় চলছে। ইতালিয়ান ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি "বনিফিকা" গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে অবস্থিত উবাঙ্গী নদী থেকে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি সরবরাহের জন্য ২৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক খাল খননের মাধ্যমে চাদ হ্রদের পানি বৃদ্ধির প্রকল্প পরিকল্পনা করে৷ প্রকল্পের প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছিলো ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রকল্পের সম্ভাব্যতা জরিপের জন্য ২০১৬ সালের ১৩ই ডিসেম্বর চীনা ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি পাওয়ারচায়না (PowerChina) এর সাথে LCBC (Lake Chad Basin Commission) এর মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়।
খালখনন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা নিয়ে ২০১৮ সালের ৭ই এপ্রিল সুইজারল্যান্ডে একটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো এই পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়ায়। ৫ই এপ্রিল, ২০১৮ তারিখে কঙ্গোর পরিবেশ মন্ত্রী এমি এম্বাটোবি তাদের সংসদে বলেন, উবাঙ্গী নদী থেকে পানি সরিয়ে নিলে নদীর জীববৈচিত্র্য, পানির নাব্যতা হুমকির মুখে পড়ে যেতে পারে। তখন চাদ হ্রদ বেষ্টিত দেশগুলোর মতো কঙ্গোকেও একই ভাগ্য বরণ করতে হবে।
আর নিজস্ব স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা না থাকায় বড় দেশগুলোও এই দরিদ্র দেশের পরিবেশ প্রকল্প নিয়ে মাথা ঘামায় নি।
কী ঘটবে ওসব দুর্ভাগা মানুষের ভাগ্যে, যাদের জীবন জীবিকা নির্ভরশীল ছিলো চাদ হ্রদের উপর? জঙ্গী গোষ্ঠী বোকো হারামের উৎপাত, নোংরা রাজনীতির চাপে আজীবন পিষ্ট এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর যেন কেউ নেই।
হুম হ্রদের পানিতো শুকিয়ে যায়। এটার দিকে সরকারের সাহায্য সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।