বাংলার উৎসব

0 25
Avatar for Kaushik12
3 years ago

বাংলাদেশের কিংবা বাঙালি রয়েছে নানা বৈচিত্রের বিভিন্ন ধরনের উৎসব।এগুলো বাঙালি তথা বাংলার সামাজিক উৎসব, প্রাণের উৎসব।বিশেষ উপলক্ষকে কেন্দ্র করে আনন্দময় কোন অনুষ্ঠান পালন করাকে মূলত উৎসব বলে।মানুষ সামাজিক জীব।সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করবে এটাই নিয়ম। আর এই সমাজবদ্ধতায় মানুষের কর্বমব্যস্ততা তাদের জীবনকে কুক্ষিগত করে রাখে।তাই মানুষ কখনো কখনো সামাজিক উৎসবের আয়োজন করে।

বিভিন্নতার ভিত্তিতে উৎসব কে কয়টি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়।

ব্যক্তিগত উৎসব

ব্যক্তিগত কেন্দ্রিক উৎসব ব্যক্তির নিজস্ব ব্যাপার হলেও ধরনের অনুষ্ঠান সমাজের ক্ষুদ্র একটি অংশ গ্রহণ থাকতে পারে। যেমনঃ জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী ইত্যাদি

সামাজিক উৎসব

এই উৎসব মূলত সার্বজনীন। সমাজের সবাই এতে অংশগ্রহণ করে।

যেমনঃ বিয়ে, নবান্ন অনুষ্ঠান ও মেলা বই মেলা, বসন্ত উৎসব ইত্যাদি।

জাতীয় উৎসব

উৎসবে দেশের সর্বস্তরের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। জাতীয় জীবনে সংঘটিত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা স্মরণ উৎসব পালন করা হয়।১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস,২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস।

ধর্মীয় উৎসব

ধর্মীয় উৎসবগুলো সাম্প্রদায়িক।বিশ্বে বিভিন্ন ধর্ম রয়েছে।তাই বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর বিভিন্ন অনুষ্ঠান রয়েছে যা তাদের রীতি নীতি অনুসারে পালন করা হয়। যেমনঃমুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযাহা, ঈদে মিলাদুন্নবী ইত্যাদি। হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য প্রধান উৎসব হচ্ছে দুর্গাপূজা কালীপূজা, লক্ষ্মীপূজা ইত্যাদি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা।

photo from google

বাঙালির সামাজিক উৎসব

প্রাচীনকাল থেকে বাঙালি আনন্দপ্রিয়।মনের দিক থেকে বাঙালির উৎসবপ্রিয়। অতীতে মানুষ সুখে শান্তিতে বাস করত আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল, ছিল গোলাভরা ধান,গোয়াল ভরা গরু,পুকুর ভরা মাছ।কিন্তু বাঙালির আর্থিক স্বচ্ছলতা এখন অনেকটাই স্তিমিত তবুও বাঙালির উৎসব এখনো চলমান।উৎসব মানে উৎসাহ, উৎসাহ মানেই উদ্দীপনা। বাঙালি সামাজিক উৎসবের মাঝে উদ্দীপনায় খুঁজে পাওয়া যায়।

বাংলা নববর্ষ বাঙালি সবচেয়ে বড় ও বৈচিত্র্যময় সামাজিক উৎসবের মধ্যে একটি।নববর্ষকে বরণ করে নিতে গোটা দেশের ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবাই মিলিত হয়।এছাড়া এদিন শহরে পালিত হয় বর্ণাট্য মঙ্গল শোভাযাত্রা, সংগীতের অাসর, আলোচনা সভায ইত্যাদি।সব মিলিয়ে বাঙালি বৃহত্তম মিলন মেলা রচনা করে পহেলা বৈশাখ উৎসব।নববর্ষের হালখাতায় ব্যবসায়ীরা তাদের হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নুতন খাতা খুলেন। এই উপলক্ষে তাঁরা নুতন-পুরাতন খদ্দের ও শুভাকাংখীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করতেন। চিরাচরিত পহেলা বৈশাখে হালখাতার এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমেই বাঙালির সম্পর্ক অটুট রাখার প্রয়াস। বছরের প্রথমদিন হালখাতার রেওয়াজ থাকলেও এটা প্রায় পুরো বৈশাখ মাস থেকে শুরু করে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত চলে।

গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় নবান্ন উৎসব এখন শহরেও পালিত হয়ে থাকে বেশ ধুমধামে। তারই অংশ হিসেবে পহেলা অগ্রহায়ণে জাতীয় নবান্ন উদযাপন পরিষদ আয়োজন করে নবান্ন উৎসব। এবারো তার ব্যত্যয় ঘটেনি। ওই দিন সকাল সকাল রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনের বকুল তলায় জাতীয় নবান্ন উৎসব উদ্বোধনের মাধ্যমে তা মাসব্যাপী বিদ্যমান থাকে। আর সেটিকে অনুসরণ করেই সারাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় একইসঙ্গে শুরু হয়। সে সব উৎসবে সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, নবান্ন শোভাযাত্রা, আদিবাসী পরিবেশনাসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনা সমেত ঢাক-ঢোলের বাদ্য আর বাহারি মুড়ি-মুড়কি-বাতাসা ও পিঠার আয়োজন। কিন্তু কোনো ধরনের প্রথাগত আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই আমাদের গ্রাম-বাংলায় গ্রামীণ মা-চাচি-দাদি, গৃহিণী, নববধূরা তাদের বাড়িতে এ নবান্ন উৎসব পালন করে থাকে। শহরের আয়োজনটি প্রতীকী হিসেবে এক-দুদিনের জন্য হলেও গ্রামেই চলতে থাকে মাসাবধি।

ঋতু ও ফসল পরিক্রমায় বাংলার কৃষিতে রয়েছে ব্যাপক বৈচিত্র্য। তারই অংশ হিসেবে আউশ, আমন, বোরোÑ এ তিনটি ধান। তারমধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূণর্ হলো আমন ধান। আমন ধান কাটার সময়টা প্রাকৃতিকভাবে খুবই সুন্দর। হালকা শীত শীত ভাব। চারদিকে মেঘহীন সুন্দর দিগন্তজোড়া আকাশ। সারাদিন মিষ্টি রোদ। বাতাসে শুধু নতুন ফসলের গন্ধ। তা ছাড়া কৃষকের ঘরে একটু অভাব অনটনের পরে বহু আকাক্সিক্ষত এ আমন ফসলটি। কাজেই সে ফসলটি উঠানোর সময় তাদের মুখের হাসি যেন ফুরোতে চায় না। সেই মুখের হাসিকে কাযের্ক্ষত্রে রূপান্তরের একটি বহিঃপ্রকাশ হলো এ নবান্ন উৎসব। নবান্নের এ সময়টাতে গ্রামের এ বাড়িতে ও বাড়িতে পিঠা-পুলির সুগন্ধ যেন আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়ায়।

একুশে ফেব্রুয়ারির সংগ্রামী চেতনা কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য পুরো ফেব্রুয়ারিজুড়ে পালন করা হয় একুশে বইমেলা। একুশে বইমেলায বই প্রেমী মানুষ,লেখক,কবি,প্রকাশককসহ বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের মিলন মেলায় পরিণত হয়।যা আমাদের মাঝে সাহিত্য-সংস্কৃতিবোধ জাগ্রত করে।

এছাড়াও আরও পালিত হয় পৌষ মেলা, পিঠা উৎসব, কবিতা বা নাট্যোৎসব,শিল্পীদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ইত্যাদি।

Photo from google

আধুনিক সময়ে মানুষের সামাজিক উৎসব এর ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয় কিছু নেতিবাচক দিক।অপসংস্কৃতির প্রভাবে অনেক উৎসবেই হারিয়েছে তার চিরচেনা রং।

এক একটি উৎসব বাঙালি জাতিকে সহমর্মিতায় ঐক্যবদ্ধ করে, অতীতের ঐতিহ্যকে ধারণ করে, গর্বিত হতে শেখায়,স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে অাত্মসচেতন করে তোলে।স্বাভাবিক আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি করে। বাংলার মানুষের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে যুগ যুগ ধরে ঠিকিয়ে রাখা ও চিত্তের বিকাশে এবং প্রসন্নতার জন্য মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে ও জাতীয় জীবনে উৎসবের গুরুত্ব অত্যাবশ্যকীয়।

2
$ 0.01
$ 0.01 from @TheRandomRewarder
Avatar for Kaushik12
3 years ago

Comments