দুই বছরের সম্পর্কে আজ ওর সাথে দেখা করার জন্য জীবনে প্রথম শাড়ী পড়ে যাচ্ছিলাম।উদ্দেশ্য আজ ওকে চমকে দিবো।কিন্তুু গিয়ে যা দেখলাম তা দেখে আমি নিজেই চমকে গেলাম,,,
.
.
.
আমার বয়ফ্রেন্ড আমার সামনে আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড কে প্রপোজ করছে।আমার মনে হচ্ছিলো কেউ আমার কলিজাতে ছুরি চালাচ্ছে। আমি যতটা না অবাক হয়েছি আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছে।আমরা দুজনের মধ্যে কেউই কল্পনাও করতে পারি নি যে এমন কিছু ঘটবে।
মুমু অবাক হয়ে বললো,,"এসব কী বলছেন ভাইয়া?"
সৌরভ মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে বললো,,"আমি ঠিকই বলছি,আমি তোমাকে ভালোবাসি।"
মুমুরর অবাকের ধাপ যেনো আরো বেড়ে গেলো,ও বিষ্ময় নিয়ে বললো,,,"কিন্তুু আপনি তো নায়লাকে ভালোবাসেন,তাছাড়া নায়লা আপনার গার্লফ্রেন্ড। "
সৌরভ এবারো মাথা নিচু করে বললো,,"আমি ওকে ভালোবাসি না ওর প্রতি আমার ফিলিংস ভালো লাগা ছিলো ভালোবাসা নয়।আমি বুঝতে পেরেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি। "
একথা শুনে আমি অনুভূতিহীন হয়ে গেলাম,রাগ উঠতে লাগলো।তাও আমি নিজেকে শান্ত করে বললাম,,,"সৌরভ তুমি এসব কী বলছো?আমার সাথে মজা করছো তাই না?দেখো এ ধরনের মজা আমার মোটেও পছন্দ নয়।"
সৌরভ আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,"আমি মোটেও মজা করছি না,আমি সত্যি বলছি।আমি মুমুকে ভালোবাসি।ও আমার ভালোবাসা।"
আমি ওর দিকে করুনভাবে তাকিয়ে বললাম,, "তাহলে আমি কী? "
সৌরভ মুখ ছোট করে বললো,,"আবেগ।তুমি আমার আবেগ ছিলে।"
আমি চিল্লিয়ে বললাম,,"হোয়াটট,সৌরভ!!দুইবছর পর তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমার আবেগ ছিলাম।আমি তোমাকে গিয়ে বলেনি যে আমি ভালোবাসি, তুমি আমাকে এসে বলেছিলে যে তুমি আমাকে ভালোবাসো তাহলে এখন কেনো বলছো তুমি আমাকে ভালোবাসো না?"
সৌরভ আমাকে থামাতে থামাতে বললো,,"আস্তে বল,এত চেঁচাচ্ছো কেনো?সবাই আমাদের দেখছে।"
আমি সৌরভের কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলাম,আরো জোরে চেঁচিয়ে বললাম,,,"আস্তে কেনো বলবো?সবাই দেখলে দেখুক।"
সৌরভ বললো,,"দেখো নায়লা তুমি কিন্তুু সিনক্রিয়েট করছো।আমি তোমাকে তো আর ধোকা দিচ্ছি না, আমি ক্লিয়ারলি বলতেছি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি না।আর দুইবছর আগে আমার বয়স টা ছিলো আবেগের,, তোমার বয়সও ছিলো ঠিক তেমন।তুমি এখনও আবেগ দিয়ে চলতেছো।আমি প্রথমে বুঝতে পারি নি যে তোমার প্রতি আমার শুধু আবেগ ছিলো।কিন্তুু এখন বুঝতে পেরেছি যে তোমার প্রতি আমার ফিলিংস কেমন ছিলো।তোমার বয়সটাও এমন, তুমিও কিছু দিন পর বুঝতে পারতে যে তুমি আবেগ দিয়ে চলতেছো।তুমি দেখো কয়দিন পর সব ঠিকই ভুলে যাবা।"
সৌরভের কথা শুনে আমি হতভম্ভ হয়ে গিয়েছি,ও কী বললো?আমি ওর আবেগ?ওকে আমি ভুলে যাবো?
আমি রেগে বললাম,,,ইউ নো হোয়াট তুমি ঠিকই বলেছো,আমি আবেগ দিয়ে সিদ্ধান্ত নেই,তাই তো তোমার মত ছেলেকে মন থেকে ভালোবেসেছিলাম।"
সৌরভ চেঁচিয়ে বললো,,"হোয়াট ডু ইউ মিন বাই আমার মত ছেলে!"
এসব নিয়ে সৌরভের সাথে কথা কাটাকাটি করতে লাগলাম,এক পর্যায় সৌরভ আমাকে বলে ফেললো,,"তুমিও তোমার মায়ের মতো।"আরো অনেক আজেবাজে কথা বললো,শেষে আমার চরিএ নিয়ে কথা বলে ফেললো।আমি হতবাক হয়ে গেলাম।অবাক হয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।এদিকে সৌরভ আমাকে বলেই যাচ্ছে, আমি চুপ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।ও কতটা বদলে গেলো,ও একসময় আমাকে বলতো নায়লা তুমি না একদম অন্যরকম,তোমার মতো কেউ নেই,তোমার মতো এত নিষ্পাপ মেয়ে আমি কোথাও দেখি নি।আর আজ ও বললো আমি আমার মায়ের মতো!
আমি তাও আমার ইগোকে সাইড করে ওকে বুঝাতে লাগলাম,আমি ওকে ভালোবাসি,ও না ভালোবাসলেও চলবে।কিন্তুু ও আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,,"তুমি বুঝো না আমি তোমাকে ভালোবাসি না।"
ওর ধাক্কার সাথে আমি পড়ে যেতে নিলাম কিন্তুু তার আগেই কেউ আমাকে ধরে ফেললো,আমি তাকিয়ে দেখি মুমু।মুমু রেগে সৌরভকে বললো,,,"দুই বছর ভালোবাসার পর আপনি আজ ওকে বলছেন ও আপনার আবেগ।তাহলে আমিও যে আপনার আবেগ নই এটা কীভাবে মেনে নিবো?"
সৌরভ মুমুর সামনে এসে বললো,,"আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি।তাছাড়া নায়লার সাথে তো আমার তেমন সম্পর্ক নেই, আমি এই দুইবছরে ওর হাত টাও ঠিক মত স্পর্শ করি নি।তাহলে তোমার,,,
আর ওদের কথা শুনতে ভালো লাগছে না,ওদের কথার মাঝেই বলে উঠলাম,,"ভালো থেকো।"বলেই চলে আসতে লাগলাম।কত বার বুঝালাম একবারও আমার কথা শুনলো না।
আমার বুকের ভেতরটা হু হু করতে লাগলো।আমি বলে বুঝাতে পারবো না আমার কতটা কষ্ট হচ্ছিলো।চোখের পানি যেনো বাধঁ মানছিলো না,নদীর স্রোতের মতো বইতে লাগলো।
আমি সৌরভকে খুব ভালোবাসি,সৌরভও আমাকে ভালোবাসতো কিন্তুু আজ হঠাৎ কী হয়ে গেলো?কেনো এমন করলো?আমার না খুব খুব কষ্ট হচ্ছে।
ছোট থেকেই ছেলেদের সাথে কম মিশতাম, কারো সাথে তেমন কথা বলতাম না। বলতে গেলে ঘরবন্দী জীবন আমার,আমার এ জীবনের কারন হলো আমার মা। আমার যখন চার বছর বয়স তখন আমার মা চলে যায় আমাকে আর বাবাকে একা করে।মায়ের জন্য খুব কান্না করতাম, রাত দিন অপেক্ষা করতাম মা আসবে বলে।বাবা কেমন যেনো নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন,প্রথম প্রথম আমার খোজ -খবর নিলেও কিছুদিন পর আর আমার তেমন খবর নিতো না।
নিজে নিজে বড় হতে লাগলাম,সারাটা দিনদিন যেমন তেমন গেলেও রাতে আমি শুধু কান্না করতাম।কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়তাম,কেউ খবরও নিত না।মা ছাড়া সন্তান যে কতটা কষ্টে থাকে সেটা শুধু আমিই বুঝি।আমার বাবা চাকরী করে,সারাদিন কাজ করে রাত আট টায় এসে দেখতেন আমি ঘুমিয়ে পড়েছি, একবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়তো।
একবারও আমাকে তুলে প্রশ্ন করতো না,"মা, খেয়েছিস?"আর না আমাকে খাইয়ে দিতো।নিজে নিজে ছোট হাত দিয়ে যতটা খেতে পারতাম ততটা খেতাম।সকালে বাবা রান্না করে ফেলতো আর সেটাই খেতাম।বাবা আমার সাথে তেমন কথা বলতেন না।সবসময় একা একা থাকতেন।আমার না খুব কষ্ট হত। আকাশের দিকে তাকিয়ে তারার কাছে কেঁদে কেঁদে বলতাম, "আমার ভাগ্য কেনো এমন খারাপ?"যখন একটু বয়স হয়েছিলো ৮/১০ বছর তখন আশেপাশের মানুষের কাছে জানতে পেরেছিলাম আমার মা তার প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে চলে গিয়েছে।প্রথম না বুঝলেও পরে ঠিকই বুঝেছি এর মানে কী?এরপর থেকে মায়ের জন্য আর অপেক্ষা করতাম না।ছোট থেকেই আশেপাশের মানুষের কানা-ঘুষোতে অভ্যস্ত আমি।প্রথম প্রথম খুব বেশি খারাপ লাগতো,পরে আর এসবে নিজেকে মানিয়ে নিলাম।
যখন অষ্টম শ্রেনিতে উঠি তখন সৌরভকে আমার খুব ভালো লেগে যায়।সৌরভ তখন ইন্টারে পড়তো,স্কুল ছুটির পর প্রায় ওর সাথে দেখা হত।ও আমাদের এলাকারই কিন্তুু আমি চিনি না,কারন আমি সবসময় ঘরবন্দী থাকতাম তাই কোনো কিছুই চিনতাম না।সৌরভের সাথে আমার একটা সময় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে রিলেশন হয়ে যায়,কিন্তুু বিষয়টা শুধু আমি আর মুমু জানি।মুমু আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড, একই ক্লাসে পড়ি।ও অনেক মিশুক, আমার সাথে ওর ফ্রেন্ডশীপ টা ক্লাস ওয়ান থেকে।আমি একমাএ ওর সম্পর্কেই জানি, তাই সবসময় ওর কথা বলতাম।সৌরভের সাথে সবসময় ওর বিষয় নিয়ে পকপক করতাম।আমি কী জানতাম সৌরভ ওকে ভালোবেসে ফেলবে???
পুরোটা রাস্তা কান্না করতে করতে আসলাম,পথে অনেক মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।ঘরে ঢুকে সোজা রুমে চলে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম।হাতের ব্যাগ নিচে ছুড়ে মারলাম।আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখতে লাগলাম,কী এমন নেই আমার মধ্যে যা মুমুর মধ্যে আছে?মুমু আমার থেকে একটু ফর্সা, কিন্তু আমি মুমুর থেকে লম্বা।ওর ঠোঁট দুটি চিকন, কিন্তুু আমার চোখ গুলো টানা টানা।আমাদের ফিগার তো প্রায় সেইম।তাহলে কেনো ও মুমুকে ভালোবাসলো?"
আমি হাতের ছুড়ি খুলে আয়না মারতেই আয়না ভেঙ্গে গেলো,ভাঙ্গা আয়নাতে প্রতিচ্ছবি দেখে পাগলের মত কান্না করতে লাগলাম।কান্না করতে করতে ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসে পড়লাম।আমার ভেতরটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছিলো,যা আমি কাউকে কখনও বুঝাতে পারবো কী না জানি না।বিচ্ছেদের যন্ত্রণা কেনো এত কষ্টের?সবসময় কী এত কষ্ট থাকবে আমার কপালে?
আমার কী হলো জানি না,আমি উঠে গিয়ে ঔষদের পাতা থেকে ১০/১২ টা ঔষদ নিয়ে খেয়ে ফেললাম,কীসের ঔষদ ছিলো জানি না।তাও যেনো আমার মনে শান্তি এলো না, নিচে পড়ে থাকা ভাঙ্গা আয়না দিয়ে আমার হাত বারবার কাটতে লাগলাম।পুরো ফ্লোর রক্তে ভেসে যেতো লাগলো,একসময় যখন বুঝতে পারলাম আমার শরীরে আর শক্তি নেই তখন জোরে এক চিৎকার দিয়ে উঠলাম,, বাবাআআআ।চোখ যখন বুঝে আসছিলো তখন বাবাকে অস্থির হয়ে আমার দিকে আসতে দেখলাম।আমার মনে হচ্ছিলো এ বুঝি আমার শেষ সময়,তাও শেষ মুহূর্তে বাবার মুখ টা দেখে মুখে কষ্টের মধ্যেও হাসি ফুটে উঠলো,,,,
চলবে,,,,
#ভুলিনি_তোমায়💔
#পর্ব :১
1
22
খুব সুন্দর হয়েছে।