ভালবাসার গল্প

4 21
Avatar for Kamrul16
3 years ago

ভার্সিটি ক্লাস শেষে নতুন বন্ধুর সাথে আড্ডা দেয়ার সময় একটা মেয়ে আমাদের সামনে এসে দাড়ালো। প্রথমে বন্ধুর সাথে কুশল বিনিময় করার পর আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে - হ্যাই,আমি সিনথিয়া।

আমি হাত না মিলিয়েই বললাম - হ্যালো, আমি জোবায়ের।

- বুঝিনি।

- আমার নাম ইমন।

- আগে কি যেনো নাম বললে?

- সেটা উচ্চারণ করতে বুঝতে কষ্ট হবে তাই এই ছোট নামেই ডেকো।

- আচ্ছা, ইমন তাই তো।

- হুম।আর কিছু বলবে?

- না, আমি আজ প্রথম আসলাম তাই ক্লাসের সবার সাথে পরিচিত হয়ে নিচ্ছি। সবাই হাত মিলিয়ে পরিচয় দিলেও তুমি মিলালে না।

- কিছু মনে করো না, আমি এসব পছন্দ করি না। দুঃখ পেয়ে থাকলে সরি।

- আরে না। আচ্ছা, ভালো থেকো। পরে দেখা হবে।

.

মেয়েটি চলে যাবার পর বন্ধুকে বললাম - মেয়েটাকে চিনো?

- একটু - আধটু।

- কে? এই এলাকারই নাকি?

- এখানে আগে দেখিনি তবে দুইদিন আগে দেখলাম ভার্সিটির কাছেই আমার বাসা থেকে একটু দূরে নতুন বাসায় উঠেছে। এখন কোথায় থেকে এসেছে সেটা জানি না।

- জানার দরকারই বা কি। এমন মডার্ণ মেয়ে থেকে দূরে দূরে থাকাই ভালো।

- ভাইরে, ঢাকা শহরে নতুন এসেছো তাই একে এমন মডার্ণ মনে হচ্ছে কিন্তু এখানকার বেশির ভাগ মেয়েই এমন গেটআপ নিয়ে চলে।

- তার মানে এসব স্বাভাবিক?

- হয় রে ভাই।

- ধূররু! আমি তাহলে এতদিন আদিম যুগে বসবাস করছিলাম। তবুও অন্ততপক্ষে আমায় সাবধান থাকতে হবে। ভূল বললাম নাকি?

- না। তুমি যেমন ছেলে এসব মেয়েদের এড়িয়ে চলাই ভালো।

- আচ্ছা, তাহলে আজ এই পর্যন্তই কাল আবার দেখা হবে।

- আচ্ছা যাও।

.

পরেরদিন,,

.

আমি ক্যাম্পাসে বসে সাহিত্যের বই পড়ছিলাম যদিও এই বই পড়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। আমি ম্যানেজমেন্ট-এর ছাত্র তবুও শখে সময় কাটাতে পড়তে হয়। এমন সময় বন্ধু পাশে এসে বসতে বসতে বলে - কি অবস্থা?

- এইতো ভালো। তোমার?

- চলছে।

- কেনো কি হয়েছে?

- আরে কিছু না, তুই বুঝবি না?

- ( -----)

- এই তুই করে বললাম কিছু মনে করো না। আমি বন্ধুদের তুই ছাড়া ডাকি না তো তাই মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে।

- আরে এতো না চেতলেও হবে। তুই ডাকটাই বন্ধুদের মাঝে ভালো লাগে। বল তোর কি সমস্যা হয়েছে? মুখটা এমন কালো হয়ে গেছে কেনো?

- একটু আগেই গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করে আসলাম।

- ভালো তো।

- ভালো মানে?

- সম্পর্কে ঝগড়া না থাকলে মজা লাগে?

- আরে ইয়ারকি করিস না। সত্যিই ঝগড়া হয়েছে। রাগ করে চলে গেছে।

- তুই কোন পাগল, আটকাতে পারলি না?

- কিভাবে আটকাবো কিছু শুনলে তো?

- বলতে হবে কেনো, সোজা হাত ধরে আটকিয়ে বলবি সরি।সম্পর্কে এমন একটু -আকটু ঝগড়া হয়েই থাকে তাই বলে রাগ করতে হবে।

- বাহ! অভিজ্ঞ প্রেমিকের মতো ভালোই পরামর্শ দিতে জানিস। তোর গার্লফ্রেন্ড কোথায়?

- নেই।

- নেই মানে? ব্রেকাপ হইছে?

- না। আমারটা বাদ দে। তোর গার্লফ্রেন্ড কোন ইয়ারে?

- সেম ইয়ার।

- সালা, আর কোনো মেয়ে পাইলি না সমবয়সী মেয়েই তোর পছন্দ হলো?

- কেনো সমস্যাটা কিসের? আমরা একে -অন্যকে ভালোবাসলেই ফুরে গেলো। কে কি বলল সেটা দেখার বিষয় আমার না।

- গুড। তা কতদিন হলো?

- আড়াই বছরের মতো।

- তার মানে একই মহল্লার?

- না, আমাদের মহল্লার পরের মহল্লায় থাকে।

- আমাদের ডিপার্টমেন্ট- এ পড়ে নাতো?

- আরে না। সাহিত্যের উপর পড়ছে।

- ভালো।

- আমারটার সম্পর্কে তো সবকিছুই জেনে নিলি। তোরটা কোথায় থাকে?

- থাকলে তো থাকবে?

- তোর গার্লফ্রেন্ড নেই, না বলতে চাচ্ছিস না ?

- বিশ্বাস কর আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড না ছিলো, না আছে।

- তুই আজও সিঙ্গেল শুনে হাসি পাইলো।

- কি করবো বল নসিবে নেই।

- শোন তুই যা করবি তাই নসিবে লেখা আছে। তুই কিছু না করলে কিছুই হবে না।

- দেখা যাক।

- আগে তোর গেটআপটা পাল্টাস তো, কি মডার্ণ হয়ে স্মার্ট হয়ে ঘুরবি তা নয় সাধারণ গেটআপ নিয়ে ঘুরিস। এতে কোনো মেয়ে পটবে মনে করছিস। আগে হুলিয়াটা বদলা।

- আমার প্রেম করারও দরকার নাই, গেটআপ পাল্টানোরও দরকার নাই। যেমন আছি বিন্দাস আছি, তোর মতো চিন্তা করতে তো হবে না আর গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে।

- সালা, মজা নিস। যেদিন তোর হবে না? সেদিন বুঝবি ঠেলা।

.

এমন সময় কালকের সেই মেয়ে সিনথিয়া এসে বলে - হ্যাই, কেমন আছো তোমরা?

বন্ধু - ভালো।তুমি?

- ভালো।

- দাড়ায় কেনো বসো?

আমাদের সামনে সিনথিয়া ও তার বান্ধবী বসে হাসি মুখে সিনথিয়া আমাদের উদ্দেশ্যে বলে- মিট মাই নিউ ফ্রেন্ড আশা।

বন্ধু কিছু না বলে অবাক হয়ে সেই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে - হ্যায়।

আমি - হ্যায়। আমি ইমন আর ও রিংকু।

আশা - জানি।

আমি - তোমরা চিনো দুজন - দুজনকে?

- না মানে। আপনার নাম শুনেছিলাম তাই বলছিলাম জানি।

সিনথিয়া - তা বলো তোমরা কি গল্প করছিলে?

আমি - এইতো বন্ধুর সম্পর্কে জানছিলাম আর কি?

আমি বন্ধুকে নাড়া দিতেই মনে হলো হুশ ফিরলো। এতক্ষণ আশার দিকে অবিরাম তাকিয়ে ছিলো আর আশা ক্ষুদ্ধ চোখে। বন্ধুকে নাড়া দিতেই বলে উঠল - কি হয়েছে?

আমি - কিছু না, তোর সম্পর্কে জানতে চায় এখন তুই বলা শুরু কর।

- কি?

- আমি কি জানি।

সিনথিয়া - গল্পের ফাঁকে ফাঁকে একে-অন্যের সম্পর্কে জানা হবে। কি বলো?

বন্ধু - তা তো অবশ্যই। তা সেদিন দেখলাম তোমাদের পরিবার সহ নতুন বাসায় উঠতে। আগে কোথায় থাকতে?

- মিরপুরে। তোমরা কোথায় থাকো।

- আমি এখানকার স্থানীয় আর ইমন এসেছে,,, কোথায় থেকে যেনো?

আমি - রাজশাহী।

বন্ধু - ভার্সিটির জন্যই তাহলে বাসা পাল্টাতে হয়েছে তোমাদের?

সিনথিয়া - হ্যাঁ, আমার সুবিধার জন্যই বাসা পাল্টানো।

- কি করেন তোমার বাবা?

- সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার অব আর্কিটেকচার।

- ও, খুবই ভালো ।

- তোমার বন্ধু কিছু বলছে না শুধু আমরাই বলে যাচ্ছি।রাগ করে আছে নাকি?

- না, ও এমনই। একটু লজ্জা বেশি।

- ও, আমি ভাবছিলাম আমাদের সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে নেই। তাই এমন চুপ হয়ে আছে।

- না, একটু কমই কথা বলে।

- আচ্ছা, আজ তাহলে আসি। কাল দেখা হবে।

- চলে যাবে?

- হুমম,কিছু বলবে?

- না, যাও।সাবধানে যাও।

.

সিনথিয়া ও তার বান্ধবী আড্ডাস্থান ত্যাগ করে চলে গেলে বন্ধু আমার গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ে। আমি বলি - কীরে এমন চুপসে গেলি কেনো?

- আরে, তুই আমাকে সম্পর্ক আটকানোর কি পরামর্শ দিলি তার চেয়ে বড় ক্ষতি করলি কথা না বলে চুপ থেকে।

- কেনো , কি হয়েছে?

- আরে আশা নামের ঔই মেয়েটাই আমার গার্লফ্রেন্ড। একটু আগে যার সাথে ঝগড়া হয়েছিলো।

- তে আমি তোর কি ক্ষতি করলাম?

- তুই কোনো কথা না বলে নিশ্চুপ থাকলি আর আমি সিনথিয়ার সাথে যত কথা বললাম।এখন আশা, নিশ্চিত আমাকে ভূল বুঝবে।

- কেনো?

- অন্য মেয়ের সাথে এমন হাসিমুখে কথা বলা আশা একদম সহ্য করতে পারে না। আবার নতুন হিসেবে সিনথিয়ার সাথে হাসিমুখে কথা না বললেও নয়। ফেললি তো গ্যারাকলে!

- হা, হা, হা।বসে গল্প করার আমন্ত্রণ তো তুই দিয়েছিলি। আমি কি বলেছিলাম তাদের বসিয়ে গল্পের আসর জুড়িয়ে দিতে?

- বাদ দে, যা হবার হবে। আমি আজ যাই, আশার আবার রাগ ভাঙ্গাতে হবে।

- আচ্ছা যা।

.

কয়েকদিন পর,,

.

ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসে বসে আছি এমন সময় সিনথিয়া একা এসে আমার পাশে বসে বলে - কেমন আছো?

- এই তো ভালো। তুমি?

- ভালো।

- তা আজ একা যে, তোমার বান্ধবী কোথায়?

- নেই।

- আজ আসেনি?

- এসেছে কিন্তু নিজের প্রেমিকের সাথে বেড়িয়ে পড়েছে।

- ও, তুমিও যাবে।

- কার সাথে?

- কার আবার তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে।

মৃদু হেসে - আমার বয়ফ্রেন্ড নেই। তা এখানে বসে কি করছিলে?

- বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

- তোমাকে তোমার বন্ধু বলেনি আশার সাথে তার রিলেশান আছে?

- হুম, বলেছে।

- তাহলে কার জন্য অপেক্ষা করছো? সে তো ঘুরতে চলে গেছে।

- সমস্যা নেই। তাকেও তো তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে সময় কাটাতে দেয়া উচিৎ।

- চলো, আমরাও ঘুরতে বের হই।

- কোথায়?

- আশেপাশেই কোথাও।

- তোমার সাথে?

- তো এখানে আর কে আছে যার সাথে ঘুরতে বের হবে?

- না কাউকে তো দেখতে পাচ্ছি না।

- তাহলে উঠো, চলো একটু ঘুরে আসি।

- আমি ঢাকা শহরে নতুন তেমন কিছু চিনিনা কিন্তু।

- চিনতে হবে না। আমরা তো আর হারিয়ে যাচ্ছি না।

- আচ্ছা, চলো।

ক্যাম্পাসের বাহিরে এসে বললাম - হাটবে না রিক্সা ডাকবো?

- আমার বাইক আছে।

- তুমি বাইক নিয়ে ভার্সিটিতে আসো!

- এতো অবাক হচ্ছো কেনো? আজ প্রথম শুনলে নাকি কোনো মেয়ে বাইক নিয়ে এসেছে।

- না, তবে আমার একটা সমস্যা আছে।আমি কোনো মেয়ের পিছনে বাইকে উঠতে পছন্দ করিনা।

- আচ্ছা, তুমি চালিয়েও।

.

সিনথিয়া বাইক ষ্ট্যান্ড থেকে তার বাইকটা নিয়ে আসলো। আমি ভাবছিলাম লেডিস স্কুটি হবে কিন্তু না এক্সএল বাইক।

বাইক চালালাম আমি সিনথিয়া পিছনে বসে কাধে হাত রেখে পুরোটা পথ পাড়ি দিলো। মাঝখানে একটা ফাঁকা জায়গায় দাড় করিয়ে গাছের ছাঁয়াতলে বসে পাশের টঙ দোকান থেকে চা অর্ডার দিয়ে এসে বলে - চা, খাও?

- অর্ডার যখন দিয়েছো তখন না করে লাভ কি?

- না খেলে জোর করে খাবে নাকি? দাড়াও আমি বলে আসছি। কফি খাবে?

- না, চা ঠিক আছে।

- তা তোমার ভালো নাম কি?

- ইমন নাম কি খারাপ?

- না। তবুও একটা নাম বলেছিলে জোবায়ের নাকি?

- হুম।তোমার পুরো নাম?

- সিনথিয়া রহমান অনু।

- সুন্দর নাম।

- তোমার পরিবারে কে কে আছেন?

- আপাতত এই জেনে নাও, আমি আমার বাবা- মার এক মাত্র সন্তান।

- ও, বাবা কি করেন?

- আপাতত এই পর্যন্তই জানো।

- ঠিক আছে। বলতে না চাইলে জোর করবো না। আমার পরিবার সম্পর্কে জেনে দেই, আমার বাবা- মা আর আমার একটা ছোট ভাই।

- একটা প্রশ্ন করলে কি মন খারাপ করবে?

- না, বলো।

- তুমি এরকম গেটআপ নিয়ে চলো বাবা- মা কিছু বলে না?

- না, আমি ছোট থেকে এমনই। কেনো বলো তো?

- না, । শার্ট-প্যান্ট পড় আবার বাইক নিয়ে ঘুরো তাই বললাম।

- আসলে আমি ছোট থেকেই খুব জেদী তাই যা চাই তা বাবা দিতে মানা করেন না। আমি ইচ্ছে মতো চলতে পারি।

- তবুও এতো খোলা- মেলা ভাবে না চলায় ভালো।

- কেনো তোমার এসব পছন্দ না?

- বলতে পারো এক রকম।অনেকটায় সময় পেরিয়ে গেলো, এখন ফেরা যাক।তুমি বাইক নিয়ে চলে যাও, আমি বিলটা দিয়ে রিক্সা করে চলে যেতে পারবো।

- বিল দিতে হবে না। অলরেডি বিল পে করে এসেছি আর রিক্সা করে যাবে কেনো? তোমাকে বাসা অবদি ড্রপ করে দিবো।

- দরকার নেই। তুমি যাও।

- ভার্সিটি এলাকায় গিয়ে নাহয় নেমো?একসাথে এসেছি আর একা ছেড়ে যাবো এটা কেমন দেখায়?

- আচ্ছা, চলো।

.

ভার্সিটি এলাকায় এসে আমাকে নামিয়ে দিয়ে তার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। এটুকু পথেও তার বাইক আনতে হয় ভাবতেই কেমন আয়েশি আয়েশি গন্ধ পাচ্ছি। এমন সময় বন্ধু ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে পিছন থেকে বলে - তা গুড বয়।এ কি দেখলাম?

- কী?

- এই কয়েকদিনের মাঝেই পটিয়ে ফেললি একজনকে?

- মানে? ও, আরে এমনি ঘুরতে গেছিলাম।

- যাই বল না কেনো? মানায়ছে হেবি।

- আমি আগেই বলেছিলাম, আমি এ ধরনের মেয়েদের পার্টনার হিসেবে পছন্দ করি না।

- তাহলে ঘুরা-ঘুরি?

- আরে তোর জন্যই তো। তুই তোরটা নিয়ে বেড়াতে গেছিস আর আমি এদিকে একা। সুযোগ পেয়ে সিনথিয়া এসে বাহানা করল ঘুরতে হবে। ভাবলাম সময় কাটানোর একটা পথ পেয়ে গেছি তাই ঘুরতে বের হলাম।তুই কোথায় গেছিলি?

- আশাকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট - এ গেছিলাম তারপর কিছুক্ষণ ঘুরা-ঘুরি।

- ও, তো এখন বাসায় যা আমিও যাই রেস্ট করতে হবে।

- ওকে,যা। বিকেলে টিএসসির মোড়ে আড্ডা দিতে আসিস?

- ঠিক আছে, আসবো।

.

পরেরদিন সকালে বাবাকে ফোন করলাম।প্রথমে সালাম দিলাম সালামের উত্তর দিয়ে বলেন - কেমন আছো ম্যাই সন?

- ভালো। তোমরা কেমন আছো?

- ভালোই। তা ভার্সিটি কেমন চলছে?

- ভালো তবে আজ বন্ধ। সময় কাটানোর জন্য আমার কিছু জিনিস চাই।

- কি লাগবে বলো? পাঠিয়ে দিচ্ছি।

- এই যান-যটে ভরা শহরে রিক্সা নিয়ে ঘুরতে ভালো লাগে না। আমার একটা বাইক লাগবে।

- ও, এই কথা। আজই পাঠিয়ে দিচ্ছি।

- বিকেলের আগে পেলে ভালো হতো। আজ ঘুরতে খুব মন টানছে।

- ওকে মাই সন, আজ প্রথম কোনো আবদার করলে আর তা পূরণ হবে না, তা কি করে হয়? আমি বিকেলের আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছি।

- সাথে আমার একাউন্টে কিছু টাকা পাঠিয়ে দিয়ো।

- কি হইছে মাই সন, এনি ক্যাইন্ড অব লাভ সিচুয়েশন।

- না, আরো কিছু কিনতে হবে তার জন্য। আর আমি রিলেশান করবো তুমি জানবে না? তোমাকেই তো সবকিছু আগে বলি।

- ওকে, মাই সন। আমি এখনই তোমার একাউন্টে কিছু টাকা পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করছি, বাইকটা পৌছতে একটু দেরী হতে পারে। ততক্ষণে তোমার যা লাগে তা নিয়ে নাও।

- থ্যাঙ্কিও ডাডি।

- ওয়েলকাম মাই সন। ভালো থেকো।

- তোমরাও, আমি বাইক পেলে তোমাদের ওখানে কালকেই যাবো।খুব মিস করছি তোমাদের।

- আচ্ছা, আমি বলে রাখবো তোমার আম্মুকে। নতুন বাসার খাবার কেমন লাগছে ভালো, না বাবুর্চি পাল্টাতে হবে?

- না, পাল্টাতে হবে না।

- এখন তাহলে রাখি, একটা ক্লায়েন্ট অপেক্ষা করছে আমার জন্য , তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

- আচ্ছা, সাবধানে থেকো।

.

ফোনটা কেটে দেবার কিছুক্ষণ পরেই আমার একাউন্টে টাকা এসেছে তার ম্যাসেজ আসলো। আমি বুট হতে টাকা তুলে শপিংমলে গিয়ে লেদার জ্যাকেট, গ্লাভস, নতুন সু আর কালো জিন্স প্যান্ট নিলাম।

.

দুপুর পেরিয়ে বিকেল হবার মতো অবস্থা এমন সময় একটা কুরিয়ার ভ্যান আসলো।বুঝতে পারলাম আমার বাইক চলে এসেছে। তাই সব ফর্মালিটি পূরণ করে নতুন বাইকটা পার্কিংলটে ঢুকালাম। হারলি ডেবিডসনের মডেল, খুব পছন্দের একটা বাইক। যে বাইক সচারচর দেখা যায় না শুধু প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়। তবে আমি বাবাকে একদিন বলেছিলাম আমি যেদিন বাইক চাইবো সেদিন যেনো এরকম বাইকই এনে দেয়। কারণ এতে একা ঘুরতে মজা বেশি। কিন্তু হেলমেট সঙ্গে পাঠায় নাই তাই আবারো মার্কেটে গেলাম কালো রঙের হেলমেট কিনতে।হেলমেট কেনা শেষে বাইকের কাছে ফিরে বাইকে নতুন লাগানো পলিথিনগুলো ছিড়ে ফেলে, চলার মতো উপযুক্ত করলাম। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম ট্যাঙ্ক পুরো ভর্তি তাই আলাদা করে কোনো পেট্রোল পাম্পে যাওয়ার ঝামেলা পোহাতে হলো না।

তাই ফ্রেশ হয়ে জ্যাকেট,গ্লাভস, সু আর হেলমেট পড়ে বেড়িয়ে পড়লাম অজানা পথে ঘুরতে এটাই আমার শখ।

.

কয়েক সপ্তাহ পর,,

.

বন্ধু আর আমি টিএসসির মোড়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম এমন সময় সিনথিয়া তার বাইক এনে আমাদের সামনে দাড়ায়। আমরা তখন ফানি মুডে ছিলাম তাই বন্ধু হাসিমুখেই বলে - কি অবস্থা? বাইক নিয়ে কই যাও?

- এইতো বিকেল বেলায় একটু ঘুরতে বের হইছি কিন্তু সঙ্গী খুঁজে পাচ্ছি না। তোমার পাশের জনকে বলো না সেই সঙ্গী হতে!

বন্ধু আমাকে ঘুঁতো মেরে বলে - যা ওপেন চান্স দিচ্ছে, মানা করিস না।

- এতোই যখন মায়া তুই যা।

- আমাকে যেতে বললে তো চলেই যেতাম কিন্তু তোকে কত আদরের সঙ্গে ডাকছে। যা নাহয় কোমল হৃদয়টা দুঃখ পাবে।

- তোর কপালেও দুঃখ আছে পিছনে দেখ।

- পিছনে কি?

আশা তার কান ধরে পিছন ঘুরালো আর বলল - যেতে বললে চলে যেতে তাই না? কত লুচ্চামি আছে দেখে নিবো। চলো,,

বন্ধুকে নিয়ে আশা চলে গেলে আমি আর সিনথিয়া মুচকি হাসিতে মেতে উঠি। পরক্ষণেই সিনথিয়া বলে - এবার তো চলো?

- আজ ঘুরতে মন টানছে না?

- একা থেকেই বা কি করবে? ঘুরলে মনটাও একটু ফ্রেশ হবে।

- আচ্ছা, চলো।

- তুমি চালাও,

- আমার কিছু করতে ভালো লাগছে না, তুমি চালাও আমি পিছনে বসছি।

- তুমি নাকি মেয়েদের পিছনে বাইকে বসতে পছন্দ করো না।

- আচ্ছা, সড়ো। আমিই চালাচ্ছি। কোথায় যাবে?

- তোমার যেখানে মর্জি।

.

বাইক চালিয়ে আমার প্রিয় একটা জায়গায় এসে থামলাম। এখানে আমার খুব পছন্দের পেঁয়াজু আর সিংহারা পাওয়া যায়। যা মিস করতে পছন্দ করি না। তাই সিনথিয়াকে নিয়ে দোকানের একটা ব্রেঞ্চে বসে বললাম - গরীবের খাওয়ানোর সামর্থ্য এই পর্যন্তই। তোমাকে তো আর রেস্টুরেন্ট- এ খাওয়াতে পারবো না তাই এখানে নিয়ে আসলাম। কি খাবে বলো, পেঁয়াজু না সিংহারা? এখানকার পেঁয়াজু আর সিংহারার টেস্টটা দারুণ। একবার খেলে ভূলতে পারবে না।

- তুমি যা খাবে তাই অর্ডার করো,যেটা বলবে সেটাই খেতে পারবো সমস্যা নেই।

- আচ্ছা।

দোকানদারকে ডাক দিয়ে বললাম - চাচা,চাচিকে বলুন দুজনকে দুইটা সিংহারা আর একটা প্লেটে করে পেঁয়াজু দিতে। আর আপনি গরম গরম দুই কাপ দুধ চা বানান।

সিনথিয়া - প্রতিদিন আসো নাকি এখানে?

- না, তবে প্রায় প্রায়। মন খারাপ থাকলে এখানে এসে বসে থেকে সিংহারা নাহয় পেঁয়াজু আর এক কাপ খাঁটি গরুর দুধের চা খেয়ে মনটাকে কিছুটা শান্তনা দেই।

- নাও, পেঁয়াজু আর সিংহারা এসে হাজির, খেতে শুরু করো।

.

পেঁয়াজু আর সিংহারা শেষে চাচা দুধ চা এনে দিয়ে বলেন - আর কিছু লাগবে?

সিনথিয়াকে বললাম - কিছু মনে না করলে একটা সিগারেট অর্ডার করতে পারি?

- কে খাবে?

- আমি।

- তুমি এসবও খাও?

- মাঝে মাঝে, এখানে এলে খেতে হয়।

- না, আমি থাকাকালীন কোনো সিগারেট চলবে না। চাচা, ওকে কোনো সিগারেট দিবেন না।

চাচা মুচকি হেসে - ঠিক আছে, মামনি।

(চাচা চলে গেলেন)

আমি - সিগারেট-এ কি সমস্যা?

- আমি এর গন্ধ সহ্য করতে পারি না।কারো মুখ থেকে এর গন্ধ পেলে তার সাথে আর কোনো কথাই বলি না।

- তাহলে তো ভালোই। আমি সিগারেট টেনে আসি।বসো,

- এই খবরদার, আর একবার যদি সিগারেট- এর কথা মুখে আনো তাহলে খবর আছে?

নরম সুরে - কি করবে?

- কি করবো? তোমার,,,,,,,

- বেশি হয়ে যাচ্ছে না?

- কি বেশি হয়ে যাচ্ছে?

- শাসন -বারণ?

- ও, সরি । আমি আসলে,,,

- সমস্যা নেই, চলো এখন ফেরা যাক।

.

সিনথিয়া কোনো জবাব দিলো না। আমি চাচাকে বিলটা দিতেই চাচা হাসিমুখে বলেন - পরীর মতো মেয়ে পাইছো, হারাতে দিয়ো না।

আমি কিছু বললাম না চাচাকে। অন্য কেউ হলে তবুও কিছু বলা যেতো কিন্তু চাচাকে বুঝিয়েও কোনো লাভ নেই। চাচা বুঝবেন না বিষয়টা। আমি সিনথিয়া কাছে গিয়ে বললাম - সরি, এমন রিয়াক্ট করার জন্য।এখন চলো,

সিনথিয়া হাসিমুখে বলে - আরে আমিই একটু ওভার রিয়াক্ট করছিলাম। তোমার আলাদা করে কিছু খেতে হলে খেতে পারো।আমি কিছু মনে করবো না।

- না, কিছু খেতে হবে না। এখন উঠো, স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করো।

- আমি ঠিক আছি, চলো।

- সিউর?

- হুম,

.

সিনথিয়াকে নিয়ে আবার ফিরতি পথে চলে আসলাম। তবে এবার কিছুটা ব্যাতিক্রম অবস্থা, সিনথিয়া এবার পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। আমি বারবার ইঙ্গিত দেবার পরও সিনথিয়া ছাড়লো না। কি যেনো ভাবনায় ডুবে আছে যার জন্য আমার কোনো ইঙ্গিত বুঝতে পারছে না। হয়তো আনমনেই জড়িয়ে ধরেছে। এমনটা মনে করেই বাকিটা পথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যস্থলের কাছে এসে নেমে গেলাম আর সিনথিয়াকে বিদায় জানিয়ে বাসায় পৌছালাম।সন্ধ্যের প্রথম প্রহর অন্ত হবার পালা অল্পকিছুক্ষণের মধ্যেই রাতের আধার নেমে আসবে।রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। কিছুক্ষণ পর, পুরো শহর যখন একটু কোলাহলমুক্ত তখন পাশে রাখা গীটার নিয়ে বারন্দায় চলে আসলাম। এক সুরে গীটার বাজিয়ে চলেছি এর মাঝে বিঘ্ন ঘটলো ফোনের রিংটন- এর কারণে।চেক করে দেখলাম সিনথিয়ার ফোন। এত রাতে কি দরকার বুঝতে পারলাম না।ফোন ধরে - হ্যালো!

- কেমন আছো?

- এটা বলার জন্য ফোন করেছো? কয়েকঘন্টা আগেই তো দেখে গেলে।

- রাগ করলে?

- না, বলো।

- কি করছো?

- এই তো বসে আছি।

- একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো?

- হুম, বলো।

- আমি কি বেশিই রিয়াক্ট করে ফেলেছিলাম তখন?

- এখনও একই ভাবনা নিয়ে পড়ে আছো?

- আহা! বলো না।

- না কিন্তু আসার সময় জড়িয়ে ধরাটা বেশি হয়ে গেছিলো।

- আমি সরি। আমি তখন নিজের খেয়ালে ছিলাম না।একটা কথা কি জানো, আমি কাউকে কখনো সরি বলিনি।কিন্তু আজ একবার না দুবার সরি বলে ফেললাম। কেনো বলো তো?

- আমি এর উত্তর কিভাবে জানবো? তুমি নিজেই ভেবে কারণটা বের করার চেষ্টা করো । এখন ঘুমাও,রাখি হ্যাঁ,,

- ওকে, গুড নাইট।

- গুড নাইট।

.

কয়েকদিন পর,,

.

#অভিনয়

.

চলবে?

2
$ 0.00
Avatar for Kamrul16
3 years ago

Comments

ভালো লেখা। অনেকদিন পর এখানে ভালো গল্প লেখে বাঙালি কাউকে খুঁজে পেলাম। এভাবেই লেখা চালিয়ে যাও। শুভ কামনা।

$ 0.00
3 years ago

Tnk u so much

$ 0.00
3 years ago

খুব সুন্দর কাহিনী। পরের অংশ তাড়াতাড়ি দিলে উপকৃত হবো।

$ 0.00
3 years ago

Insallah deya hbe sate takun

$ 0.00
3 years ago